মিরাজ এর সংজ্ঞা কী? তা কখন সংঘটিত হয়? মিরাজ কি জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয় নাকি নিদ্রা অবস্থায় সংঘটিত হয়? একটু যদি বলতেন তাহলে খুব উপকৃত হতাম। ধন্যবাদ



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

হাজার বছর পর হলেও আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, মিরাজের ঘটনা সত্য। এটি ছিল রাসূল (সঃ)-এর জীবনের সংঘটিত অন্যতম একটি মুজিযা। এর মাধ্যমেই রাসূল (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ আরো অনেক নিয়ামত মহান আল্লাহর কাছ থেকে হাদিয়াস্বরূপ পেয়েছিলেন। মিরাজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জমহুর আলেম বলেনঃ মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর সান্নিধ্যে রাসূল (সঃ)-এর উর্ধ্বাকাশ ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়। 

আল্লামা তাবারী (রঃ) বলেনঃ যে বছর নবী করিম (সঃ)-কে নবুওয়াত দান করা হয় সে বছরই মিরাজ সংঘরিত হয়েছিল। তাছাড়াও, ইমাম নবুবী ও কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ নবুওয়াত লাভের পাঁচ বছর পর মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। আবার আল্লাম মনসুরপুরী (রঃ) বলেনঃ রাসূল (সঃ)-এর নবুওয়াতের দশম বছরের ২৭ রজব মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। (আর রাহিকুল মাখতুম) — [বিঃ দ্রঃ- এরকম ২০টিরও বেশি মতামত বিদ্যমান রয়েছে]

রাসূল (সঃ)-এর মিরাজ জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছিল, নাকি নিদ্রা অবস্থায়, এব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অভিমত হলোঃ রাসূল (সঃ)-কে রাত্রিকালে ভ্রমণ করানো হয়েছিল। এরপর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহর যতদূর ইচ্ছা ছিল , ততদূর উর্ধ্বলোকে গমন করেছেন। এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের দলিল হলোঃ

"পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ১)


জনাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উপরোলল্লেখিত আয়াত বান্দা বলতে দেহ ও আত্মার সমন্বিত ব্যক্তিকেই রজনীযোগে ভ্রমণ করানোর কথাই বলা হয়েছে। তবে, কোনো কোনো আলেমের মতে, মিরাজ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নযোগে সংঘটিত হয়েছে। (তরীকুল ইসলাম, দ্বিতীয় খন্ড)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

মিরাজ এর আভিধানিক অর্থঃ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বগমন অন্য অর্থে ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ। মহান আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় তার সান্নিধ্যে রাসূল (সাঃ) এর ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়। এবং যে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাবার মসজিদ থেকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বলা হয়। পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (বানীইস রাঈলঃ ১) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত আলেমগণের মতে মিরাজ স-শরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। কারণ সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের এটিই বিশ্বাস করতেন। এছাড়া এক রাতে নিজের বান্দাকে নিয়ে যান এ শব্দাবলীও দৈহিক সফরের কথাই সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। স্বপ্নযোগে সফরের জন্য নিয়ে যাওয়া শব্দাবলী কোনক্রমেই উপযোগী হতে পারে না। তাছাড়া আয়াতে দেখানোর কথা বলা হয়েছে সেটাও শরীর ছাড়া সম্ভব হয় না। অনুরূপভাবে বোরাকে উঠাও প্রমাণ করে যে, ইসরা ও মিরাজ দেহও আত্মার সমন্বয়ে স-শরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের ৬২০ খ্রিষ্টাব্দ রজব মাসের ২৬ তারিখের দিবাগত ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথমে কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন এবং সেখানে তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি বোরাক নামক বিশেষ বাহনে আসীন হয়ে ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই সফরে ফেরেশতা জিবরাইল তার সফরসঙ্গী ছিলেন। মিরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনাঃ ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) তার তাফসীর গ্রন্থে বানী ইসরাঈলের এক নাম্বার আয়াতের তাফসীর এবং সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করার পর বলেনঃ সত্য কথা এই যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসরা সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন, স্বপ্নে নয়। মক্কা মোকাররমা থেকে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে করেন। তারপরের সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো, বায়তুল-মোকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকটি অদূরে বেঁধে দেন এবং বায়তুল মোকাদাসের মসজিদে প্রবেশ করেন এবং কেবলার দিকে মুখ করে দুই রাকআত সালাত আদায় করেন। অতঃপর সিঁড়ি আনা হয়, যাতে নীচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্য ধাপ বানানো ছিল। তিনি সিঁড়ির সাহায্যে প্রথমে প্রথম আসমানে, তারপর অবশিষ্ট আসমানসমূহে গমন করেন। এ সিঁড়িটি কি এবং কিরূপ ছিল, তার প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ তাআলাই জানেন। প্রত্যেক আসমানে সেখানকার ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং প্রত্যেক আসমানে সে সমস্ত নবী-রাসূলদের সাথে সাক্ষাত হয়, যাদের অবস্থান কোন নির্দিষ্ট আসমানে রয়েছে। যেমন, ষষ্ঠ আসমানে মূসা আলাইহিসসালাম এবং সপ্তম আসমানে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তিনি পয়গম্বর গণের স্থানসমূহও অতিক্রম করে এবং এক ময়দানে পৌছেন, যেখানে তাকদীর লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি ‘সিদরাতুল-মুনতাহা’ দেখেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙ এর প্ৰজাপতি ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলকে তার স্বরূপে দেখেন। তার ছয়শত পাখা ছিল। তিনি বায়তুল-মামুরও দেখেন। বায়তুল-মামুরের নিকটেই কাবার প্রতিষ্ঠাতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রাচীরের সাথে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এই বায়তুল মামুরে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। কেয়ামত পর্যন্ত তাদের পুর্নবার প্রবেশ করার পালা আসবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। সে সময় তার উম্মতের জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সালাত ফরয হওয়ার নির্দেশ হয়। তারপর তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেয়া হয়। এ দ্বারা ইবাদতের মধ্যে সালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি বায়তুল-মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন আসমানে যেসব পয়গম্বরের সাথে সাক্ষাত হয়েছিল তারা ও তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাবার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাযের সময় হয়ে যায় এবং তিনি পয়গম্বর গণের সাথে সালাত আদায় করেন। সেটা সে দিন কার ফজরের সালাত ও হতে পারে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মিরাজের রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। অতঃপর তা কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হল, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোন অদল বদল নাই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সাওয়াব রয়েছে। (সূনান আত তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৩)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ