Share with your friends
Call

আমরা বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্টানের বিজ্ঞাপনে দেখতে পাই, HbsAg পজেটিভ কে নেগেটিভ করি বা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করি। তারা নিজেই জানেনা এটা কোন রোগের নাম না, এটি একটি অ্যান্টিজেনের নাম। HbsAg মিনিং হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সার্ফেস অ্যন্টিজেন। এটা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে পাওয়া যায়। ইহা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সেলের বাইরে থাকে এবং রক্তে রিলিজ হয়। আমরা যখন এই অ্যন্টিজেন কারো রক্তে পাবো তখন বলবো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। HbsAg যদি ৬ মাস পর্যন্ত পজেটিভ থাকে তখন এটাকে, এ্যাকুট ইনফেকশন বলি। আর যদি তা ৬ মাসের বেশী সময় পর্যন্ত পজেটিভ থাকে তবে তাকে ক্রনিক ইনফেকশন বলি। ইহা সঠিক চিকিৎসা না হলে, সারা জীবন থাকতে পারে এবং লিভার সিরোসিস হয়ে লিভার ক্যানসার হতে পারে। এখন কথা হলো এ্যাকুট ইনফেকশন শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়ে, এমনি এমনি ভালো হয়ে যেতে পারে। সাধারনত ৯০% ক্ষেত্রে এভাবে এমনি এমনি ভালো হয়ে যায় এবং শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়ে, সারা জীবনের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে, অর্থাৎ শরীরে HbsAb নামক একটি এন্টিবডি তৈরী হয়। এটা কারো চিকিৎসার কেরামতি নয়, শরীরের কেরামতি। তাই এই সব চিকিৎসকদের বলবো জেনে কথা বলুন, না হয় চরম লজ্জায় পড়তে পারেন। আর রোগীদের বলবো যদি পরীক্ষায় HbsAg নেগেটিভ পান, তবে আরো একটি টেষ্ট HbsAb (হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সারফেস এন্টিবডি) করে যদি পজেটিভ হয় তবে বুঝে নিবেন আপনি হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত। জেনে নেওয়া যাক হেপাটাইটিস বি সম্পর্রকে - হেপাটাইটিস-বিঃ হেপাটাইটিস-বি একটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যমে এ রোগ দেখা দেয়। হেপাটাইটিস-বি এইডসের মতোই এক ঘাতক ব্যাধি। ঘাতক ব্যাধি এইচআইভি/এইডসের কথা আজ আমরা প্রায় সবাই জানি। গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের কারণে এ বিষয়ে অনেক সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রচারের কারণে এইচআইভি’র ভয়াবহ চিত্র আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হলেও প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাবে এইচআইভি’র চেয়েও বিপদ জনক আরও এক ঘাতক ব্যাধি হেপাটাইটিস-বি রয়ে গেছে আমাদের দৃষ্টির অগোচরে। নীরব ঘাতক এ সংক্রামক ব্যাধিটি প্রতি মিনিটে কেড়ে নেয় দু’জন নারী-পুরুষের প্রাণ। পৃথিবীতে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অর্থাৎ দুই বিলিয়ন নারী-পুরুষই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। পৃথিবীর প্রায় ৩৫ কোটি নারী-পুরুষ দীর্ঘমেয়াদের জন্য তাদের দেহে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের জীবাণু বহন করে চলেছে। প্রতি বছর ১০-৩০ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হচ্ছে। হেপাটাইটিস-বি ও এ রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে প্রতি বছর এক মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। হেপাটাইটিস- বি ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা এইচআইভি ভাইরাসের চেয়ে একশত গুণ বেশি। আর এ দুটো রোগ প্রায় একই উপায়ে সংক্রমিত হয়। বয়স্কদের তুলনায় শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদের ওপর এ রোগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব অধিক। আমাদের দেশেও এর ভয়াবহতা ব্যপক। বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে যৌন কর্মীদের মধ্যে শতকরা ৯ দশমিক ৭ ভাগ, শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮ ভাগ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। এছাড়া শিশুদের মধ্যে শতকরা ১৫ দশমিক ৪ ভাগ এবং পল্লী চিকিৎসকদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৫ ভাগ ‘বি’ ভাইরাস বহন করে থাকেন । কিভাবে ছড়ায় : মূলত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। তরল পদার্থ ও চামড়ার সংস্পর্শেও এ রোগ ছড়াতে দেখা গেছে | রক্তে হেপাটাইটিস বি ধারনকারী কাউকে রক্ত প্রদানে এ রোগ হতে পারে। এ ছাড়া যেকোন প্রকার যৌন আচরন- যেমনঃ যৌন মিলন, সমকামিতা, বীর্য পান করা , মুখে যৌন ক্রিয়া, অথবা চুম্বনের ফলেও এটি ছড়ায়। এছাড়া আকুপাংচার, মুসলমানী, নাক, কান ফুঁড়ানো, নাপিতের ক্ষুর ইত্যাদি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। দন্ত চিকিৎসা ও হাসপাতালে অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ঠিকমত অটোক্লেভ, (বয়েলিং) ইত্যাদি উপায়ে জীবাণু মুক্ত না করে ব্যবহার করার ফলে ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত মা থেকেও সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশুর সংক্রামন ঝুকি ৯০%। আক্রান্ত সন্তান থেকে মা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ২০%। এটি পরিবারের এক সদস্য থেকে দ্রুত অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হয়। এটি সহজে সনাক্ত করা যায় না।

Talk Doctor Online in Bissoy App