আরব ও মুসলিম বিজ্ঞানী ছাড়াও অনেক অনারব ও অ-মুসলিম বিজ্ঞানীও ইসলামী সভ্যতার বিজ্ঞানে অবদান রাখেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার জাতিগোষ্ঠীর শাসিত ছিল। সর্বাধিক ছিলেন পারস্যদেশ নিবাসীগণ, অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মুর, বার্বাস, আসিরিয়ান, আরবীয় এবং মিশরীয়। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধর্মীয় পটভূমি থেকে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলমান ছিলেন। কিন্তু এছাড়াও - কিছুলোক খ্রিস্টান, ইহুদি এবং নাস্তিকও ছিলেন। তবে - ইবনে সিনা, আল-বেরুনি - এরা নাস্তিক ছিলেন না।
তথ্যসূত্রঃ এখান দেখুন ।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম। তিনি সুন্নি ইসলামের হানাফি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন, এবং হানাফি মাজহাবের উপর তিনি অনেক অধ্যায়ন ও অবদান রেখেছিলেন। ইবনে সিনার অসংখ্য শিক্ষক ছিলেন হানাফি মাজহাবের, তার অন্যতম শিক্ষক আলী ইবনে মামুনের হানাফি আদালতে তিনি কাজ করতেন। ইবনে সিনা বলেছিলেন, ইসমাইলী শিয়াদের মিশনারীর প্রভাবে জীবনের প্রথম সময়ে তিনি প্রায় অবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন।
মধ্যযুগের অ্যারিস্টটল খ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী পন্ডিত। তিনি মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও প্রিয়। ইসলামী আইনশাস্ত্রের উপর তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল, অনেক অবদানও রেখেছিলেন তিনি। ইসলামী আইনশাস্ত্রের উপর তার বই ‘বিদায়াত আল মুজতাহিদ’ আজও সৌদি আরবের মদীনার সালাফি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হয়।
সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের জনক ইবনে খালদুন ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম। তিনি সুন্নি ইসলামের মালিকি মাজহাব অনুসরণ করতেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই আরবি ভাষাতত্ত্ব, কোরআন, হাদিস, শরিয়া (আইন), ফিকাহও (দর্শন) অধ্যয়ন করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের উপর লেখা তার বিখ্যাত বই ‘আল-মুকাদ্দিমা’ তে তিনি ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন, যেমন - খেলাফত, রাজতন্ত্র, সালতানাত। ইবনে তাইমিয়াও এরকম বিভক্তি করেছিলেন। তবে ইবনে খালদুন খেলাফতকে সর্বোৎকৃষ্ট ও শরীয়তসম্মত ব্যবস্থা মনে করেছেন।
ইসলামী দর্শনের জনক আল-কিন্দি ছিলেন একজন প্রথিতযশা সুন্নি মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি দর্শন ও ইসলামী ধর্মতত্ত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বিখ্যাত। তিনি মনে করতেন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে ভাবনার মধ্যেই পার্থিব সকল দর্শন নিহিত। অ্যারিস্টটলের দর্শন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি একদিকে অ্যারিস্টটলের অনেক মতের সমর্থন করেন আবার অন্যদিকে ধর্মের সাথে সমন্বয়ের খাতিরে অনেক মতের বিরোধীতা বা পরিমার্জন করেন।
মুসলিম দার্শনিক আল-ফারাবী সুন্নি ছিলেন নাকি শিয়া ছিলেন এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তাদের মতে আল-ফারাবী ছিলেন সুন্নি। আল-ফারাবী ইসলামিক নিওপ্ল্যাটোনিজমের "পিতা" হিসাবেও স্বীকৃত। তিনিই প্রথম ইসলামি দার্শনিক যিনি দর্শন এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছিলেন। তিনি অ্যারিস্টটল এবং প্লেটোর দর্শনকে কুরআনের মতবাদের সাথে সমন্বয় করার জন্য কাজ করেছিলেন।
আধুনিক শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির জনক আবুল কাসিম জাহরাবি ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম পণ্ডিত। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন মদিনা আল মুনাওয়ারার আনসার উপজাতির যারা আরব উপদ্বীপ থেকে এসেছিলেন মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে যারা পরবর্তীতে স্পেন জয় করেছিল এবং এরপর তিনি স্পেনে বসবাস শুরু করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর রচিত তিনি তার প্রতিটি পুস্তকে পরম করুণাময় আল্লাহর নাম নিয়ে লেখা শুরু করতেন এবং লেখা শেষ করেছেন।
মধ্যযুগের বহুবিদ্যাবিশারদ আল-বেরুনী ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম। তিনি সুন্নি ইসলামের আশাআরি মাজহাব অনুসরণ করতেন। তিনি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের জনক হিসেবে পরিচিত। ইসলামী ধর্মতত্ত্ব ও আইনশাস্ত্রের উপর তার ছিল অনন্য পাণ্ডিত্য।
বর্তমান তুরস্কের হারান নামক অঞ্চলে জন্ম নেওয়া ইসলামী স্বর্ণযুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-বাত্তানি ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল-বাত্তানির পরিবারের পূর্বপুরুষরা সাবিয়ান ধর্মের অনুসারী ছিলেন, সাবিয়ান সম্প্রদায়ের লোকেরা তারকার পূজা করতো। কিন্তু আল-বাত্তানি মুসলিম ছিলেন, তিনি সাবিয়ান ধর্ম অনুসরণ করতেন না।
বীজগণিত ও অ্যালগরিদম এর জনক মুসা আল-খোয়ারিজমি ছিলেন একজন পার্সিয়ান শিয়া মুসলিম। মুসা আল-খোয়ারিজমি এর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Gerald J. Toomer বলেছেন, মুসা আল-খোয়ারিজমি একজন অর্থোডক্স বা কট্টর মুসলিম ছিলেন।
পারস্যের বিখ্যাত বহুবিদ্যাবিশারদ আল-রাযী ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি সুন্নি ইসলামের শাফিঈ মাজহাব অনুসরণ করতেন। ইসলামী ধর্মশাস্ত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন একজন মুফাসসিরে কুরআন, অর্থাৎ তিনি কুরআনের তাফসির লিখেছিলেন, যার নাম তাফসির আল-রাযী। ইসলামী আইনশাস্ত্রের উপরও তিনি অনেক কাজ করেছিলেন। ইসলামী ধর্মশাস্ত্রের উপর রচিত আসাস আল-তাকদিস তার অন্যতম গ্রন্থ।
রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান ছিলেন একজন শিয়া মুসলিম ও শিয়া শাস্ত্রজ্ঞ। তিনি শিয়াদের অন্যতম প্রধান ইমাম জাফর আস-সাদিকের শিষ্য ছিলেন। আর জাফর আস-সাদিক সুন্নিদের কাছেও একজন সম্মানিত ইমাম হিসেবে সমাদৃত। সুন্নি মুসলিমদের হানাফি মাজহাব এবং মালেকী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা এবং ইমাম মালেক এই দুইজন জগৎবিখ্যাত মনীষীও জাফর আস-সাদিকের শিষ্য ছিলেন।
প্রামাণিক তথ্যসূত্র -
Ref. 1) Ibn Sina - https://books.google.ca/books?id=B8k3fsvGRyEC&pg=PA38&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
Ref. 2) Ibn Rushd -
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Averroes
Ref. 3) Ibn Khaldun -
i) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ibn_Khaldun,
ii) https://cutt.ly/V9IHsO0,
iii) https://cutt.ly/R9IGE8Y,
Ref. 4) Al-Kindi - https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Kindi
Ref. 5) Al-Farabi -
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Farabi
Ref. 6) Abul Kasim Al-Zahrawi -
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Zahrawi
Ref. 7) Al-Beruni -
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Biruni
Ref. 8) Al-Battani -
i) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Battani
ii) https://cutt.ly/A9IJ87j
Ref. 9) Musa Al-Khwarizmi -
i) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Muhammad_ibn_Musa_al-Khwarizmi
ii) https://cutt.ly/89IXbho
Ref. 10) Al-Razi -
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fakhr_al-Din_al-Razi
Ref. 11)
i) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jabir_ibn_Hayyan
ii) https://cutt.ly/29IKcNo