চাঁদ কি সত্যিই প্রতিবছর পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে?যদি যায় তাহলে এর কারণটা কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হ্যাঁ।চাঁদের তার কক্ষপথে পৃথীবিকে সমানভাবে আবর্তন করে না।কখনও দূরে সরে যায় আবার কখনও কাছে চলে আসে।এজন্যই অনেক বছর পর পর সুপারমুন হয়(যখন চাঁদ পৃথিবীর গড় দূরত্বের থেকে কাছে চলে আসে তখন তাকে সুপারমুন বলে)।তবে মহাবিশ্ব আজও প্রসারিত হচ্ছে।ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

যদিও এটা সত্যি যে চাঁদের কক্ষপথ (পৃথিবীর চারদিকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ) প্রতিবছর ৩.৮ সেন্টিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে (চাঁদের কক্ষপথ ৩৮৪,০০০ কি.মি. ব্যাসার্ধের)। তবুও আমি এটা কখনোই বলবো না যে চাঁদ সূর্যের নিকটবর্তী হচ্ছে বা চাঁদ সূর্যের দিকে সরে যাচ্ছে। চাঁদের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের যে অংশটি সূর্যের কাছাকাছি, সে অংশ বিবেচনা করলে চাঁদ সত্যিই সূর্যের নিকটবর্তী হচ্ছে। কিন্তু চাঁদের কক্ষপথের যে অংশটি সূর্য থেকে দূরবর্তী সে অংশটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে চাঁদ সূর্য থেকেও দূরে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ, চাঁদের কক্ষপথের বৃদ্ধির ফলে এটি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এই দূরে সরে যাওয়ার পিছনে সূর্যের কোন ভূমিকা নেই এবং চাঁদের গতি অবশ্যই সূর্যের দিকে নয়।

মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে চাঁদ ও পৃথিবী একে অপরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর উপর চাঁদের এই আকর্ষণের প্রভাব দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। পৃথিবীর যে পাশ চাঁদের দিকে থাকে সে পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব কম থাকায় আকর্ষণ বেশি থাকে, আর পৃথিবীর অপর পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব বেশি থাকায় আকর্ষণ কম থাকে। পৃথিবীর দুই প্রান্তে এই আকর্ষণের তারতম্যের কারণেই পৃথিবীর জ্যামিতিক আকৃতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। একে “Tidal Bulges” বলে। ফলে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়।

পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে  মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয়। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয়, তার কারণে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। পৃথিবী তার অক্ষে খুবই দ্রুত ঘুরে (২৪ ঘন্টায়), আর চাঁদের  লাগে ২৭.৩ দিন পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে। পৃথিবীর এই দ্রুত ঘূর্ণনের জন্য টাইডাল বাল্জ চাঁদ কে তার অরবিটে জোরে টান দেয়, তাতে চাঁদের গতি বৃদ্ধি পেয়ে তার অরবিট থেকে দূরে চলে যেতে থাকে (প্রতিবছর ৩.৮ সেন্টিমিটার হারে)।

চাঁদও টাইডাল বাল্জ এর উপর ফিরতি টান দেয়। ফলে পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারদিকের ঘূর্ণন ধীর গতির হয়ে যাচ্ছে । এই জন্যই প্রতি একশত বছরে দিনের পরিমাণ ২ মিলি সেকেন্ড বেড়ে যাচ্ছে।

কয়েক বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবীর আরো অনেক কাছে ছিল। পৃথিবী থেকে চাঁদকে আরও বড় এবং উজ্জ্বল দেখাতো। কিন্তু এই টাইডাল বাল্জ এর কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন কমে যাচ্ছে এবং চাঁদও পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, চাঁদ কি দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং এক সময়  চাঁদ আর পৃথিবীর চারদিকে না ঘুরে পৃথিবীর আকর্ষণ উপেক্ষা করে মহাবিশ্বে হারিয়ে যাবে? আসলে এমনটা না। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে। এর পর চাঁদ আর দূরে সরে যাবে না।  তখন চাঁদকে আজকের তুলনায় অনেক ছোট দেখাবে। পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হয়ে যাবে। এক সৌরদিন ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে আরো বেশি হবে। পৃথিবীর উত্তাপ বেড়ে যাবে। তখন আর কোন প্রকার গ্রহণ দেখা যাবে না (চাঁদ আর সূর্যকে ঢাকতে পারবে না)। জোয়ার ভাটা না হওয়াতে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। কিন্তু সে দিনের জন্য এখনও কয়েক মিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে!

অনেক পদার্থবিদই জোয়ার-ভাটার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে ‘জর্জ হাওয়ার্ড ডারউইন’ (চার্লস ডারউইন এর ছেলে), প্রথম গাণিতিক উপায়ে টাইডাল ফ্রিকশন ও চাঁদ এর কক্ষপথ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। মূলত তাকেই জোয়ার ভাটা সম্পর্কিত আধুনিক মতবাদ উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেয়া হয়।

তথ্যসূত্র : চাঁদ কি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে?

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ