স্বপ্নে দেখার প্রেক্ষাপটে অনেকবার শুনেছি,, কিছু মানুষ নাকি স্বপ্নে আল্লাহ বা তাহার ফেরেশতাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে বা সক্ষম হয়? এমন কি কোন ব্যাক্তি আছে বা ইসলামিত গ্রন্তের ও কোরআনের মাধ্যমে এর সত্যতা জানতে চাই? দয়া করে জানাবেন
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আল্লাহ তায়ালাকে দেখা তিনটি সময়ের সাথে সম্পৃক্ত, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় দেখা, আখেরাতে দেখা ও সপ্নের মাধ্যমে দেখা। অধিকাংশ বিদ্ধানের মতে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। আখেরাতে দেখার ব্যাপারে সকলে একমত এমনকি যারা নিরাকার আল্লাহতে বিশ্বাসি তারাও। দুনিয়ায় বসে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি না? সহিহ হাদিস মতে আমাদের নবী মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন। কিন্তু সাধরন মুসলিমগন স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখবেন কি না সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। কোন কোন আলেমের মত হলো, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর আসল রূপ নয়। কারন, বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়৷ তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন৷ আশ-শুয়ারা- ৪২:১১)। ১. কুরআনুল কারিমে বিভিন্ন আয়াত দ্বারা বুঝা যায় দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব নয়। ১.১ দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। আল্লাহকে কোন দৃষ্টিশক্তি আয়ত্ব করতে পারবেনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿ ﻟَّﺎ ﺗُﺪۡﺭِﻛُﻪُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﺼَٰﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﺪۡﺭِﻙُ ﭐﻟۡﺄَﺑۡﺼَٰﺮَۖ ﻭَﻫُﻮَ ﭐﻟﻠَّﻄِﻴﻒُ ﭐﻟۡﺨَﺒِﻴﺮُ ١٠٣﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٠٣ ] অর্থ: দৃষ্টিশক্তি তাঁকে দেখতে অক্ষম কিন্তু তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ব করে নেন৷ তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ৷ (সূরা আন‘আম ৬:১০৩)। ১.২ আল্লাহ তায়ালাকে নবী মুসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় দেখতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু পারেন নাই। এ সম্পর্কে তাদের কথোপকথোন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এ ভাবে তুল ধরেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ﻭَﻟَﻤَّﺎ ﺟَﺎٓﺀَ ﻣُﻮﺳَﻰٰ ﻟِﻤِﻴﻘَـٰﺘِﻨَﺎ ﻭَﻛَﻠَّﻤَﻪُ ۥ ﺭَﺑُّﻪُ ۥ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﺭِﻧِﻰٓ ﺃَﻧﻈُﺮۡ ﺇِﻟَﻴۡﻚَۚ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻦ ﺗَﺮَٮٰﻨِﻰ ﻭَﻟَـٰﻜِﻦِ ﭐﻧﻈُﺮۡ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟۡﺠَﺒَﻞِ ﻓَﺈِﻥِ ﭐﺳۡﺘَﻘَﺮَّ ﻣَڪَﺎﻧَﻪُ ۥ ﻓَﺴَﻮۡﻑَ ﺗَﺮَٮٰﻨِﻰۚ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺗَﺠَﻠَّﻰٰ ﺭَﺑُّﻪُ ۥ ﻟِﻠۡﺠَﺒَﻞِ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ۥ ﺩَڪًّ۬ﺎ ﻭَﺧَﺮَّ ﻣُﻮﺳَﻰٰ ﺻَﻌِﻘً۬ﺎۚ ﻓَﻠَﻤَّﺎٓ ﺃَﻓَﺎﻕَ ﻗَﺎﻝَ ﺳُﺒۡﺤَـٰﻨَﻚَ ﺗُﺒۡﺖُ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻭَﺃَﻧَﺎ۟ ﺃَﻭَّﻝُ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ অর্থ: অতপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে আকূল আবেদন জানালো, হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো৷তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে দেখতেপারো না৷ হাঁ সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও ৷ সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে৷ কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো৷ সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ পাক-পবিত্র তোমার সত্তা৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন৷ (সূরা: আল-‘আরাফ ৭:১৪৩) ১.২.১ মানুষের এমন কোন ক্ষমতা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। আল্লাহ সাথে ওহী অথবা দূতএর মাধ্যমে পর্দার অন্তরালার থেকে কথা বলতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻠِّﻤَﻪُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺣۡﻴًﺎ ﺃَﻭۡ ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺍٓﻱِٕ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺃَﻭۡ ﻳُﺮۡﺳِﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟٗﺎ ﻓَﻴُﻮﺣِﻲَ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎٓﺀُۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻋَﻠِﻲٌّ ﺣَﻜِﻴﻢٞ ٥١ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ : ٥١ ] অর্থ: “মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা আশ-শূরা ২৬:৫১)। এ সকল সুস্পষ্ট আয়াতের নির্দেশনার আলোকে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, পৃথিবীতে কেউ আল্লাহকে দেখতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয় নি, যাতে তিনি বলেছেন, আমি জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে বা মি’রাজে চর্ম চক্ষে বা অন্তরের চক্ষে আল্লাহকে দেখেছি। ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে (আল্লাহকে) অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন; (সহিহ মুসলিম কিতাবুল ঈমান -৩৩৪)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ