এই প্রশ্নের উত্তর চাই
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি— বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধে মহাবিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে ১৯৭২ সালের এ দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন। এবার এ দিনটি ফিরে এসেছে এমন এক সময়ে যখন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতির কলঙ্ক মোচনের স্বস্তি অনুভব করছে জনগণ।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে মহাবিজয়ের ফলে বাংলাদেশ যখন আনন্দ-উল্লাসে উত্তাল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী। গোটা জাতি তখন তার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে উত্কণ্ঠিত, তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় অধীর। বাহাত্তর সালের জানুয়ারির ১০ তারিখ বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত এ দেশের অগণিত মানুষ নিরাপদে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য রোজা রেখেছে, আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছে।

৮ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি থেকে রয়টার্স বার্তা সংস্থার ছোট্ট একটি খবরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সেখান থেকে পিআইএর একটি বিশেষ বিমান অজ্ঞাত গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর বেশ কয়েক ঘণ্টা আর কোনো খবর নেই। বাংলাদেশে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার প্রহর কাটে না। অবশেষে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেছেন। রেডিও পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান ত্যাগের খবর দিতে গিয়ে জানায়, প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বিমানবন্দরে শেখ মুজিবকে বিদায় জানান। বঙ্গবন্ধুর নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছার খবর পাওয়ার পর দেশের সর্বত্র আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও আসন্ন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-দালালরাও খুশি হয়েছিল। কারণ, তাদের বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ তাদের গণরোষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

লন্ডনে পৌঁছেই বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে ঢাকায় কথা বলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। লখনৌ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন। বিশেষ বিমানে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লিতে অবতরণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অকাতরে সব রকম সাহায্য দেওয়ার জন্য তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং দেশবাসীর মনোভাব সম্পর্কে সদাসজাগ বঙ্গবন্ধু একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাননি যে, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। তাই শ্রীমতি গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথম সুযোগেই বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশে ফেরার আগে আমি একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে জেনে যেতে চাই। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য কবে ফিরে আসবে? জবাবে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, আপনি যেদিন চাইবেন, সেদিনই।

১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। দৈনিক ইত্তেফাকের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কভার করতে গাড়িতে বিমানবন্দরে যেতে যেতে দেখলাম উল্লসিত মানুষের ঢল। প্রাণপ্রিয় নেতাকে বরণের জন্য ব্যাকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছে রেসকোর্সে, এয়ারপোর্ট রোডে এবং তেজগাঁও বিমানবন্দরে। সে মুহূর্তে তাদের অন্তর যেন নিঃশব্দে সোচ্চার ছিল এক অনুপম হূদয়সংগীতে : ‘তোমার পথের প্রান্তে মনের মণিদীপ জ্বেলে রেখেছি’। একজন নেতার জন্য অগণিত মানুষের অন্তরে কী প্রগাঢ় ভালোবাসা জমে উঠতে পারে, আর কী গভীর আস্থা ও বিশ্বাসে, ব্যাকুলতায় ও ব্যগ্রতায় ফুলের মতো তা ছড়িয়ে পড়তে পারে সে দৃশ্য দুই চোখ ভরে দেখছিলাম। আর চুপচাপ বসে বসে ভাবছিলাম, ইতিহাস কী অবিশ্বাস্য দ্রুততায় নিজেই নিজের হাতে আবর্তিত হয়। ভাঙে আর গড়ে। সূচনা করে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। ভাবছিলাম, যে পথ দিয়ে গাড়ি এয়ারপোর্টের দিকে এগিয়ে চলেছে এ পথ দিয়ে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডি থেকে এয়াপোর্টে এবং সেখান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেদিন তিনি ছিলেন বন্দী, দৃশ্যত পরাভূত। আর ১০ জানুয়ারি এ পথেই তিনি ঘরে ফেরেন বিজয়ী জাতীয় বীরের বেশে। আগে একবার এ এয়ারপোর্ট রোড ধরেই বিজয়রথে চড়ে তিনি শহরে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভের পর। এমনিভাবেই একাধিকবার বন্দী হয়েও তিনি মুক্ত হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন তার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। হেরে গেছে পাকিস্তানি শাসকরাই। জয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আসলে এ বিজয় ছিল বাংলার জনগণের। বাঙালি জাতিই সংগ্রাম করে, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জয়যুক্ত করেছে, ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে তাকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু কেন? এর একটাই কারণ। বাঙালি জাতির আত্মার অমোঘ বাণীকে।

তথ্য সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং তার পর দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।


বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

Advertisement

বাসস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে কারাগারে আটক করে রাখে।

শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাঁকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে তিনি পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।

১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাঁদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।

শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।

নয় মাসের যুদ্ধের একপর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।

১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্যের আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে।



“১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণহত্যা চালায়। এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। এরপরই পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে আটকে রাখে। সেখানে বঙ্গবন্ধু নয় মাস ১৪ দিন কঠিন কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস।” সূত্রঃএনটিভি

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ