ইসলামে কী তদবির করা জায়েয?
কারো ক্ষতি না করে কোনো তদবির করা জায়েয কীনা কিংবা তাবিজ ব্যবহার করা জায়েয কীনা?
যদি জায়েয হয় তাহলে কোন তদবিরের কীতাব সহীহ আকিদার?

বন্ধুত্ব করার তদবির , বিয়ে করার তদবির , কলোহ দূর করার তদবির , ;;;;ইত্যাদি.....এসব কী সঠিক?

হানাফি মাযহাবের আলেম যদি এই প্রশ্নের উত্তর দেই তো বেশি ভালো হয় ।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

এই বিষয়ে আপনি আশরাফ আলী থানবী রহমতুল্লাহি আলাইহির কিতাব পড়তে পারেন আমলে কুরআনী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

তদবীর অর্থ কোনো কার্য উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একমাত্র কুরআন সুন্নাহর আলোকেই তদবীর করা যাবে। অন্য কোনো পন্থায় তদবির করা যাবে। সহীহ তদবীর হলো, বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ, সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত হাদীসে অসংখ্য আমল ও দুআ বর্ণিত আছে। সেগুলো পাঠ করুন। সাথে সাথে আল্লাহর নিকট দুআ করুন। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো তদবির হয় না। বৈধ আকাঙ্খা পূরণের জন্য সালাতুল হাজত পড়া যেতে পারে। সব সমস্যা সমাধানের দুআই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন। সেগুলো গ্রহণ না তথাকথিত তাবিজ কবচ কিংবা তদবির গ্রহণ করা একজন মুসলিমের জন্য আদৌ শোভা পায় না।

বস্তুত আল্লাহ তাআলা যত ধরনের রোগ-ব্যধি দিয়েছেন তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছেন। জাবের রা. সূত্রে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবধরনের ব্যধিরই প্রতিষেধক রয়েছে। যদি কেউ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পথ্য গ্রহণ করে তবে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সে আরোগ্য লাভ করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৭১। তবে কিছু ব্যবস্থা আছে প্রত্যক্ষ; যথা, মধু, কালো জিরা, গাছ-গাছড়া প্রভৃতি এবং এ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ। আবার কিছু ব্যবস্থা আছে পরোক্ষ; যথা হাদীসে বর্ণিত রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন দুআ-দুরূদ। রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে এসব উপায় গ্রহণ তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর আস্থার পরিপন্থী নয়; বরং হাদীসের ভাষ্যমতে এসব উপায় গ্রহণই নববী কর্মপন্থা হিসেবে পরিগণিত। পক্ষান্তরে শর্ত সাপেক্ষে  যদিও তাবীজ-কবচ গ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করা হয় তবে এ মাধ্যমটি গ্রহণ করা উচিৎ নয়। কারণ :
১। এতে শিরকের মত মরণঘাতি ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
২। যে হাদীসটির উদ্ধৃতিকে তাবীজ-কবচের বৈধতার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তাতে ছোট ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এসব উপায় গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর বড়দের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুআটি পাঠের কথা বলা হয়েছে।
৩। অধিকাংশ তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত ও দুআ-দুুরূদের মধ্যকার বর্ণমালার মানসংখ্যা লেখা হয় যা শরীয়তসম্মত নয়।
৪। তাবিজের মধ্যকার কুরআনের আয়াত ও দুআ-দুরূদের যথাযথ মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না। 
৫। বর্তমান সমাজে তাবিজ-কবচের প্রতি মানুষের দুর্বলতা এতটা প্রবল যে, তারা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যধি নিরাময়ের ক্ষেত্রে এ মাধ্যমকেই একমাত্র প্রভাবক হিসেবে গণ্য করে থাকে।
৬। প্রচলিতি তাবিজ-কবচে খাজা বাবা, পীর বাবাসহ নানা রকম শরীয়ত গর্হিত শিরক-বিদাতের কথা লিখিত থাকে।
শিরক-বিদাতের এ ছিদ্রপথকে রুদ্ধ করার জন্যও তাবিজ-কবচের এ মাধ্যমকে পরিহার করা উচিৎ। তাইতো মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.বলেন,তাবীজ-কবচ করা জায়েজ হলেও তা না করাই উত্তম। ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮। অন্যত্র তিনি বলেন, তাবীজ-কবচের কারণে যদি জনসাধারণের আকীদা-বিশ্বাসে ত্রুটি আসে তবে তাদের উপর এ উপায় গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে তাবীজ-কবচকে পরিহার করা সর্বাবস্থায় শ্রেয়। সুন্নাহসম্মত পন্থা এতটুকুই যে, দুআ ও আয়াত পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর শুধু দম করা হবে। ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০। অতএব রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদের ক্ষেত্রে এ তাবীজ-কবচের পন্থা গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত মাসনূন দুআ পাঠ করা ও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। এটাই নিরাপদ ও সহীহ পদ্ধতি।সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০০, ফাতহুল বারী ১০/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮, ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২০/৬৩

উল্লেখ্য, আপনার ভিডিটির কিছু অংশ শুনেছি। তাতে বক্তা বলেছেন, ইবনে তাইমিয়া রাহ. এর গলায় তাবিজ ছিলো। আসলে ইবনেত তাইমিয়া রহ. এর গলায় মৃত্যুকালে যেটা পাওয়া গিয়েছিলো সেটা তথাকথিত তাবিজ ছিলো না। সেটা ছিলো একটি পারদের টুকরো। যেটা তিনি উকুননের উৎপাত বন্ধে ব্যবহার করেছিলেন জানা যায়। যেমনটি ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন। পারদ ধারনে উকুন সমস্যা হয় কি না এটা ভিন্ন একটি বিষয়। অথবা ইবনে তাইমিয়া রহ. এর পারদ ধারণের মূল রূপরেখা কি ছিলো সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। ইবনে কাসীর রহ. যে বাক্যে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তা নিম্নরূপ : ودفع في الخيط الذي كان فيه الزئبق الذي كان في عنقه بسبب القمل مائة وخمسون درهما

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ