Call

ছেলেবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়ি। আমার স্কুলে একটি লাইব্রেরি ছিল। সেখান থেকেই ধার নিয়ে আমার বই পড়া শুরু। তারপর যে কত জায়গা থেকে জোগাড় করে কত বই পড়েছি, তার হিসাব নেই। বাংলা- ইংরেজি সব ভাষার বইই পড়তাম। প্রিয় বইয়ের তালিকাটিও তাই বেশ দীর্ঘ। তবে বারবার মনে পড়ে যায় এমন বইয়ের কথা বলতে গেলে, পথের পাঁচালীর নামই বলব। কারণ, এই বইটি আমার ছেলেবেলাকে এক ধরনের মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এখনো রেখেছে। আমার ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে। গ্রামের ধুলো-মাটির সঙ্গে যে আমার গভীর মিতালি। যারা গ্রাম দেখেছে তারা এই বইয়ে নিজেকে খুঁজে পাবে। তাই আমি যেন নিজেকে খুঁজে পেতাম পথের পাঁচালীর অপু চরিত্রে। বারবার মনে হতো অপু মানে আমি। দুর্গা যেন আমারই বোন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই বইটি যখন পড়লাম আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৬০ বা '৬১ সালের কথা। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে এনেই পড়েছিলাম। তারপর কেমন যেন একটা ঘোর লেগে গেল। নিজেকে অপু ভাবতে খুব ভালো লাগত। সারা দিন অপু অপু ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। শুধু আমি না, সে সময়ের আরো যারা বইটি পড়েছিল, তারাও মুগ্ধ হয়ে থাকত। কারণ, গ্রামের কোনো এক কিশোরের জন্য অপু যে স্বপ্নের চরিত্র। পথের পাঁচালীর প্রত্যেকটি লাইনে যে আবেগ, অনুভূতি আর আপনজনের প্রতি ভালোবাসা, তাতে মুগ্ধ না হয়ে কি উপায় আছে! তবে যখন স্বপ্নটা ভেঙে যেত, বুঝতাম আমি আসলে অপু নই; তখন মনটাই কেমন খারাপ হয়ে যেত। অতৃপ্তি ঘিরে ধরত চারদিক থেকে। বারবার মনে হতো, ইশ, আমি যদি অপুর মতো হতে পারতাম! এই আক্ষেপটা আজও রয়ে গেছে মনে। রয়ে গেছে সেই কান্নার অনুভূতিগুলোও। অপুর কষ্টে কত বুক ভাসিয়ে কেঁদেছি ছেলেবেলায়। দুর্গা মারা যাওয়ার পর অপু যখন বোনের চুরি করে আনা মালাটি খুঁজে পেল তখন তার মনের যে অনুভূতি, তা আমাকে দারুণ আলোড়িত করে। আমি এখনো কাঁদি। সেই ছেলেবেলার আবেগটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কারণ, পথের পাঁচালী তো সব বয়সীদের বই। বয়স যতই হোক, এই বই একবার পড়লে যেকোনো বয়সী পাঠকের মনে একটা অনুভূতি জেগে উঠবেই। বয়সভেদে যদিও সেটি একেক রকম হতে পারে। শেষবার বইটি পড়েছি, তাও বহু আগের কথা। এখন আর পড়া হয় না। তবে পথের পাঁচালী নিয়ে বানানো সত্যজিৎ রায়ের ছবিটি প্রায়ই দেখি। এই তো সেদিনও দেখলাম। বই পড়লে যেমন মনে হতো, ছবি দেখলেও ঠিক তেমন অনুভূতিই জেগে ওঠে। ইশ, আমি কেন অপু হতে পারলাম না!


আরো জানতে link

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ