অনেকদিন পর আজ দেশের বাড়িতে যাব তাই সকাল, সকাল বেরিয়ে পরেছি। সিএনজি যাবে এদিক দিয়েই তাই অপেক্ষা। হটাৎ করেই মনেপরলো হুমায়ূন আহামেদ এর একটা কথা। তাঁর মতে রিকশা একটি রাজকিয় যান। রিকশায় উঠে বুক টানটান করে বসে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার একটা মাজা আছে। ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই গালের এক কুনে একটু হেসেই ফেল্লাম।
আংকেল যাইবেন নাকি? বল্ল এক বয়স্ক রিকশা ওয়ালা।
কিছু না বলেই উঠে বসলাম।
-- চলেন।
-- কই যাইবেন?
-- সিএনজি স্টেন্ড।
আসলেই রিকশায় চড়ার একটা মজা আছে বটে। যদি রাস্তা ভালোহয়।
হটাৎ করেই একটা ট্রাক্টর এসে রিকশায় ধাক্কা মারলো। আমি ছিটকে পরলাম রিকশা থেকে আর আহহহ বলে চিৎকার করে উঠলাম।
আমার রোম্মেট বল্লো কিরে কিহলো।
না কিছুনা। আমি নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। ঘুমিয়ে ছিলাম খাটে। তারমানে এতক্ষণ যা হয়েছে সবি ছিলো কল্পনা। যাক এবারেরমত বেচেগেলাম। বুকের ভেতর এখনো কাঁপছে।
আসলেই বাড়িতে যাওয়ার প্লেন ছিলো।
মা গতকাল ফুন করে বল্লো
'বাবা বাড়িতে আসবি কবে তরে কতদিন তোরে দেখিনা'
তাই ভাবলাম একবার না গেলেই নয়।
ফ্রেশ হয়ে সকাল, সকাল বেড়িয়ে পরলাম। সিএনজির অপেক্ষা।
মনেপরলো হুমায়ূন আহামেদ এর সেই কথাটা।
তখনি "আংকেল যাইবেন নাকি"? রিকশা ওয়ালার প্রশ্ন করলো।
উঠেবসলাম রিকশায়। হটাৎ মনেপরলো সেই দুঃসপ্নের কথা। একটু অবাক হলাম কি বেপার? সবকিছু কেমন যেন ....... তবেকি.......???
আরে ধুর এগুলো কুসংস্কার। (সান্তনা দিলাম নিজেকে)
কই যাইবেন? সিএনি ষ্টান্ডে যান। ভালই লাগছে। পেছন থেকে একটা ট্রাক্টর আসছে। একটু ঘাবরে গেলাম! তবেকি সেই দুঃসপ্নই বাস্তব রুপ নিতে চলেছে?
আমি লাফ দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু একি তেমন কিছুতো ঘটলোনা। ট্রাক্টর টা পাশ কাটিয়ে চলেগেলো! (ওহহহহ) রড় করে নিশ্বাস ছারলাম। কিছুক্ষণের মদ্যেই গন্তব্যে পৌছালাম।
পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম মানিব্যাগ ফেলে এসেছি রোমে। বুক পকেটে চেক করতেই ৫২ টাকা বেরিয়ে এলো। যাক এবার বুঝি আল্লাহ ইজ্জত রাখলো। কিন্তু মানিব্যাগতো আনতে হবে।
কি অবাক কান্ড বলানেই কওয়ানেই হটাৎ বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে! এটা হলো কিছু? ছাতাটাওতো ফেলে এসেছি। এখন কিন্তু নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু লাভকি? যাক এখন একটা আশ্রয় এর সন্ধানতো করতে হবে। একটা চায়ের দোকানে বসলাম। কিন্তু কাষ্টমার না হয়ে দোকানে বসে থাকতে আমার মোটেই ভাল লাগেনা। তাই এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম চিনি কম আদা, লেবুর রংচা।
একটা পিচ্চি চা নিয়ে এসেছে। চায়ে চুম্বক দিতেই বুঝতে পারলাম নিসন্দেহে ভাল চা। আমার মনমত হয়েছে।
এই ছেলে। ডাকলাম পিচ্চিকে।
-- বলেন।
-- চা কে বানিয়েছে?
-- আমি। কেন খারাপ হইছে?
-- নাহহ খুব ভালো হয়েছে।
-- নামকি তুমার।
-- নজরুল।
-- পুরো নাম?
-- কাজি নজরুল ইসলাম।
-- কাজি নজরুল ইসলাম একজন মহান বেক্তির নাম। জান?
-- হুমমম
-- তিনি কি করতেন?
-- আগে বাড়িতেই ঘুরাফেরা করতেন এখন চা বানায়।
-- মানে?
-- মানে আমি আগে বাড়িতে ঘুরাফেরা করতাম এখন চা বানাই।
-- হাহাহাহাহা
-- লেখাপড়া করনা?
-- না।
-- কেন?
-- লেখাপড়া করলে আপনারে এত মজার চা কে খাওয়াইতো?
-- কথাতো যুক্তিসম্পন্য। (মজা করলাম)
...........................
-- কি ভাবতাছেন?
-- নাহ কিছুনা।
একটা মিত্যা কথা বল্লাম। আসলে ভাবছি এভাবে এত কিছু মিলেগেলো কি করে? এমনতো কখনো হয়নি।
আর এই পিচ্চিকে দেখে মনেপরলো আমার জীবনে সবছে খারাপ একটি দুর্ঘটনা। যা শিখিয়েছে আমাকে অনেক কিছু।
মন্টু মিয়া নামে পরিচিত সবার কাছে। মন্টু কাকা বলে ডাকতাম। পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন। উনার স্ত্রী মারাগেছে। শুনেছি হারুনের জন্মের সময় উনি মারাযায়। অনেক কষ্ট করে হারুনকে বড় করেছে। মায়ের স্নেহ কেমন তা সে যানেনা।
হারুন আমার বন্ধু। শুধু বন্ধু বল্লে ভুল হতেপারে। বলাযায় খুব ভালো বন্ধু।
তখন আমরা ক্লাস 5 এ পড়ি। মন্টু কাকা আগের মত কাজ করতে পারেনা। ৩ বেলা খাবারের টাকা জোগাড় করতেই কষ্ট হয় বারতি খরচ আসবে কোত্থেকে! হারুনের পড়ালেখা এখানে ইতি টানতে হয়। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের কোনো ভাটা ধরেনি। হারুন একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। চা বানায়। মন্টু চাচার হার্ট এর সমস্যাটা বেরেছে ভালো ডাক্তার দেখানোর সামর্থ নেই। বুকে বেথা বাড়লে ফার্মেসি থেকে হালকা কিছু ঔষধ এনে খেলে একটু দমন হয় সামইকের জন্য।
হটাৎ একদিন ঘুম ভাংতেই শুনলাম হারুনের বাবা মানে মন্টু কাকা চলেগেছে না ফেরার দেশে। তখন আমি 6 এ ভর্তি হয়েছি।
হারুনের আর কেও রইলোনা। আত্বীয় স্বজন বলতে তেমন কেও নেই তার।
এক খালার বাড়ি আছে পাশের গ্রামেই। তবে তাদের অবস্থাও তেমন ভালনা নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন থেকে সে ঐ খানেই থাকবে। সেই থেকে আর আগের মত দেখাহয়না। ২/৩ দিনে ১ বা ২ বার।
২ বছর পরের কথা। আমি রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম আর খুব গভীর ভাবে কিছু একটা চিন্তা করছিলাম। হটাৎ করে কে যেন আমাকে সজোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। লক্ষ করলাম ১ টা ট্রাক্টর ভুনকরে চলে গেলো আমার পাশদিয়ে। আর একটু দুরে কেও রক্তাক্ত হয়ে পরেআছে। এতক্ষনে লোকজন দৌড়ে এসে তাতে তোলে নিয়েছে।
আমি দৌড়ে গেলাম। একি হারুন!!? রিতিমত সক খেলাম। সে অজ্ঞান, তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আমি উদ্ধার কারিদের সাথে হাসপাতালে যেতে চাইলেও তারা আমাকে নেয়নি। আমি আলাদা ভাবে চলেগেছি সেখানে। এতক্ষনে ইমার্জেন্সি থেকে সরাসরি ওটিতে নিয়েগেছে। আমি অপেক্ষা করছি কখন বন্ধুকে দেখবো। কিন্তু জানতে পারলাম আজ নাকি ওর সাথে কারো দেখাহবেনা। তাই বাড়ি ফিরে এলাম রাতে ঘুম হয়নি ।পরদিন সকালে কাওকে কিছু না বলে চলে এসেছি হাসপাতালে। এসে পেলাম হারুনের খালা আর খালাতো ভাইকে। খুজ নিয়ে জানতে পারলাম ঘন্টা খানেক পর দেখা করাযাবে।
আরো জানতে পারলাম সে মাতায় প্রচুর চাপ পেয়েছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ভেতরে ঢুকলাম। হাত পায়ে বেন্ডেজ আর মাথায়।
ওর এই করুন অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি কেঁদেই ফেল্লাম।
-- তোর এই অবস্থা কি করে হলো?
-- (চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। ছুট্ট করে একটা হাসির ভান করে) ধুর বুকা কাঁদছিস কেন? আমার তেমন কিছু হয়নি।
-- তুই ঐখানে কি করছিলি?
-- এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম তুই নিচের দিকে তাকিয়ে মাঝ রাস্তা ধরে হাটছিস। একটা ট্রাক্টর আসছে হর্ণ দিচ্ছে দুরে থেকে। কিন্তু এর গতি কমছেনা আবার আমিও তোকে ডাকলাম, তুই সারা দিচ্ছিস না তাই দৌড়ে এসে তোকে ধাক্কা মারলাম ততক্ষণে সে ট্রাক্টরটি আমাদের কছে চলে এসেছিলো।
-- কিন্তু তুই এতবড় রিক্স নিলি কেন?
-- (আমার হাতে হাত রেখে) বন্ধু, এই পৃথিবীতে আপন বলতে আমার তেমন কেও নেই। আমার জন্য অপেক্ষা করারও তেমন কেও নেই কিন্তু তোর আছে। আমি না থাকলে কারোকিচ্ছু যায় আসেনা কিন্তু তোর দিকে তাকিয়ে আছে তোর পরিবার। কিন্তু আমি শুধু আমার জন্য তাই আমারছে তোর বেচেথাকাটা অনেক বেশি প্রয়োজন।
চোখ থেকে আপনা আপনি পানি ঝরছে আমার।
--তুই আমার বন্ধু না শত্রু?
-- কেনরে?
-- তরমত একজন বন্ধু ছারা আমি বাচব কি করে?
-- কই আমিতো মরেযাইনি বেচে আছি বেচে থাকবো তোর মাঝে। কিবলিস আমার বাচিয়ে রাখবিনা তর মাঝে??
ভাই কি হইছে আপনার কান্দেন কেন। বল্লো পিচ্চি।
-- কই না এমনি।
-- চোখে পানি যে?
-- কিছু পরেছে হয়ত।
বৃষ্টি থেমেগেছে। একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
পৃথিবীতে এমন কিছু বন্ধু বেচে আছে বলেই পৃথিবী এত শুন্দর।
আর বন্ধুত্বের রংদিয়ে এমন কিছু গল্প তৈরি হয় যা পৃথিবীরছেও শুন্দর.............