কানে শোনা একটি ইন্দ্রিয় অনুভূতির বিষয়, যা নির্ভর করে কানের সম্পূর্ণ অঙ্গ, শ্রবণ স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকর ও নীরোগ অবস্থার ওপর। কানে কম শোনাকে বলা হয় শ্রুতিক্ষীণতা বা বধিরতা। শ্রুতিক্ষীণতা বা বধিরতার ধরন শ্রুতিক্ষীণতাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। * কনডাকটিভ বা পরিবহনজনিত * সেনসরিনিউরাল বা স্নায়ুজনিত * মিশ্র * সাইকোজেনিক বা মানসিক কারণ বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের অসুখ সাধারণত কনডাকটিভ ডেফনেস বা পরিবহনজনিত শ্রুতিক্ষীণতা সৃষ্টি করে। অন্তঃকর্ণ, অডিটরি নার্ভ বা শ্রবণ স্নায়ু ও মস্তিষ্কের অসুখ সেনসরিনিউরাল বা স্নায়ুজনিত শ্রুতিক্ষীণতা সৃষ্টি করে। এই দুই ধরনের মিশ্রণের ফলে যে শ্রুতিক্ষীণতা হয়, তাকে মিশ্র শ্রুতিক্ষীণতা বলে। আর সাইকোজেনিক না মনোরোগজনিত বধিরতায় কান, শ্রবণ স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কোনো আঙ্গিক ত্রুটি থাকে না। পরিবহনজনিত শ্রুতিক্ষীণতা * জন্মগত কারণে বহিঃকর্ণের শ্রবণ পথ না থাকা বা খুব চিকন থাকা বা মধ্যকর্ণের অস্থি স্বাভাবিক না থাকা। * কানে ময়লা জমা ও বহিঃকর্ণে কোনো বস্তু আটকে যাওয়া। * বহিঃকর্ণের প্রদাহ। * অটোমাইকোসিস (ফাংগাল প্রদাহ)। * বহিঃকর্ণের শ্রবণপথ আঘাতজনিত, বহিঃকর্ণের টিউমার, কানের হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে সরু হলে। * মধ্যকর্ণের প্রদাহ ও মধ্যকর্ণে পানি বা রক্ত জমা হওয়া। * কানের পর্দা কোনো কারণে ফেটে গেলে। * মধ্যকর্ণের অস্থিগুলোর মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে বা নড়ে গেলে। * মধ্যকর্ণের অস্থির নড়াচড়া কোনো কারণে কমে গেলে * মধ্যকর্ণের টিউমার। স্নায়ুজনিত শ্রুতিক্ষীণতা চিকিৎসাঃ বধিরতার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা দরকার। প্রথমত যে কারণে বধিরতা সৃষ্টি হয়েছে, সেই রোগের চিকিৎসা করা বা কারণ দূর করা। যেমন : * ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বধিরতা হলে ওষুধ বদলে বা বন্ধ করে দিতে হবে। * শব্দদূষণের জন্য বধিরতা হলে তীব্র শব্দ থেকে দূরে থাকতে হবে। * কানে ময়লা জমার কারণে বধিরতা হলে কান পরিষ্কার করে নিতে হবে। * মধ্যকর্ণে আঠালো পদার্থ জমলে মাইরিংগোটমি ও গ্রোমেট টিউব লাগাতে হবে। * অটোস্ক্লোরোসিস হলে স্টেপিডেক্টমি নামের শল্যচিকিৎসা করা যেতে পারে। * কিছু ক্ষেত্রে টিম্প্যানোপ্লাস্টি করতে হতে পারে। অনেক বধিরতাই চিকিৎসা করে ভালো করা যায় না, বিশেষ করে জন্মগত কারণে যেসব বধিরতা হয়। সাধারণভাবে যখন কোনো বধিরতা ওষুধে চিকিৎসা বা শল্য চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে না, তখন হিয়ারিং এইড ব্যবহার করা যেতে পারে। মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির যাদের হিয়ারিং এইড দিয়েও কানে শোনানো যায় না, তাদের 'ককলিয়ার ইমপ্লান্ট' সার্জারি করা যেতে পারে। সুত্রঃ কানে কম শোনেন? | ডাক্তার আছেন | কালের কণ্ঠ | kalerkantho