যারা ১ম বর্ষে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের ১০,০০০ টাকা আর যারা শুধুমাত্র ভর্তি হয়েছে তাদের ৭,৫০০ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে দ্বৈত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যুর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাতিল ফি এবং জরিমানা আদায়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু ভর্তি বাতিল ছাড়া কোনোক্রমে একজন শিক্ষার্থী এক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থাকা অবস্থায় অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। এরপরেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী কী করে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করে মেধার ভিত্তিতে আবারো একই নামে ভর্তি হতে পেরেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই দায় না নিয়ে উল্টো দ্বৈতভর্তির অভিযোগে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করছে। অথচ কোনো কোনো শিক্ষার্থী পূর্ববতী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাতিল ফি প্রদানেরও দাবি করেছে। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। গত ১৩ মে অনার্স এবং ১৭ মে মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি আদায়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির নোটিশ প্রদান করে। সেই হিসেবে অনেকেই ভর্তি হয়ে যায়। পরে ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলে ভর্তি বাতিলের আবেদন করে। তখন নির্দিষ্ট ফি আদায়ের মাধ্যমে ভর্তি বাতিলের পর তাকে তার মূল সনদ ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং সেগুলো জমা দিয়ে আবার নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই নিয়মে পূর্বের ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি বাতিল সাপেক্ষেই তারা মূল সনদ তুলে নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করেছে। সেই বিবেচনাতেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল ফি আগে না নেওয়ার বিষয়টি বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য অধ্যাপক জাহিদ মাহমুদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন দ্বৈত ভর্তির কথা বলছে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা যখন একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাতিল করে অপর প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে তখন দ্বিতীয়বার তার ভর্তি অনুমোদন হয়েছে কিভাবে। প্রযুক্তিগতভাবে (সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ধারিত) তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কারণ তখনো তার পূর্বের ভর্তি বাতিল হয়নি। নিয়মানুযায়ী, একটি ভর্তি বহাল থাকা অবস্থায় একই শিক্ষার্থীর আবার ভর্তির সুযোগ থাকে না। অপরদিকে, শিক্ষার্থী যথানিয়মে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পূর্বের ভর্তি বাতিল করে নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফি বাতিলের বিষয়টি আমলে না নিয়ে আবারো ভর্তি বাতিলের ফি দাবি করছে শিক্ষার্থীর কাছে। এদিকে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্র্র্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাতিলের নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় একই কথা বলেছেন সরকারি হাজি মুহাম্মদ মুহসিন কলেজের অধ্যক্ষ অঞ্জন দত্ত। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্দেশনা একইসঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্র্থী উভয়কেই ভোগান্তিতে ফেলেছে। এখানে তিনটি বিষয় আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী কী করে অপর প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদনের সুযোগ পায়, ভর্তির সময়ে কেন শিক্ষার্থীটিকে বাদ দেয়া হলো না এবং তাকে কেন মেধাভিত্তিতে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়া হলো? সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন বলেন, ‘আমি গত বছরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি বেসরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। এর ৭ মাস পরে আমি ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন করি। এরপর ভর্তি বাতিলের জন্য কলেজ কার্যালয়ে আরো ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে ৭০০ টাকা ভর্তি বাতিলের ফি হলেও বাকি টাকা গাজীপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত খরচ হিসেবে রাখা হয়। এরপর আমার মূল সনদ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অথচ সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়ার ১০ মাস পরে এসে শুনছি আমার ভর্তি বাতিল হয়নি। আমাকে নতুন করে আবার ভর্তি বাতিল ফি ৭০০ টাকার সঙ্গে জরিমানা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ১৭ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের পূর্বে মাস্টার্স (নিয়মিত ও প্রাইভেট) প্রোগ্রামে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এবং ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের পূর্বে মাস্টার্স প্রফেশনাল কোর্সে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৭০০ টাকা ভর্তি বাতিল ফি আদায় করতে হবে। অপরদিকে, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের পূর্বে মাস্টার্স (নিয়মিত ও প্রাইভেট) প্রোগ্রামে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি এবং ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের পূর্বে মাস্টার্স প্রফেশনাল কোর্সে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের প্রত্যেককে ৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও ৭০০ টাকা ভর্তি বাতিল ফি আদায় করতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ