জানা যায় হাদিসে নাকি কোন প্রকার নামাযের পর মোনাজাত নেই।।। কিন্তু কেউ সুন্নত নামাযের পর একাকি মোনাজাত করে এটা কোন হাদিসে আছে।।। আবার কেউ বলে সম্মিলিত ভাবে কোন মোনাজাত নেই।। কিন্তু আরাফাত ময়দানে তো সম্মিলিত ভাবে মোনাজাত করে।হাদিসের দলিল সহ জানতে চাই
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ইসলামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কোরআন ও হাদিসে অতি উদারতা ও অতি রক্ষণশীলতা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, অতি উদারতা ও অতি রক্ষণশীলতার কারণে এ উম্মতের ওপর কখনো কখনো বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর মূল কারণ, ব্যক্তিবিশেষের ভিন্নমত সাধারণ উন্মতের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। যেমন একটি মাসয়ালা হলো ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা। কিছু লোকের অতি রক্ষণশীলতার কারণে এটি মতানৈক্যপূর্ণ মাসয়ালার রূপ ধারণ করেছে। একদিকে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা খুবই প্রয়োজনীয় কাজ মনে করা হচ্ছে, অন্যদিকে এটিকে বিদ'আত ও ঘৃণিত কাজ মনে করা হচ্ছে। অথচ এই দুই অতিরঞ্জিত মতামতের মাঝখানে হলো এ মাসয়ালার আসল সমাধান। অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা যেমন বাধ্যতামূলক নয়, তেমনি এটি বিদ'আতও নয়। বরং এটি একটি মুসতাহসান বা উত্তম কাজ। কেউ যদি স্বেচ্ছায় করে ভালো, না করলে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এটি একটি সুন্নাত আমল। এটিকে বিদ'আত বলার কোনো অবকাশ নেই। ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদিসের ছয়টি নির্ভরযোগ্য কিতাব অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার মাধ্যমে প্রমাণিত। অন্যদিকে দোয়ার সময় হাত তোলার কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই, যাতে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাকে হারাম কিংবা নিষেধ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার নিয়ম চলে আসছে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এবং ইমাম আহমেদ (রহ.)-এর মতো অগণিত ফকিহ ও মুহাদ্দিস চলে গেছেন। কোনো একজন ইমামও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি। শুধু ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ও ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) আপত্তি জানিয়েছেন। তথাকথিত আহলে হাদিসের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানীর অনুকরণে বর্তমানে কিছু লা-মাজহাবি আলেম ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত সম্পর্কে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা শরিয়তের যুক্তিতে কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হ্যাঁ, যাঁরা ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাত করাকে বাধ্যতামূলক মনে করতেন, তাঁরাও ভুলের মধ্যে আছেন। জায়েজ কাজকে বাধ্যতামূলক মনে করাও শরিয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। এতে সন্দেহ নেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নাজদির উত্থানের আগ পর্যন্ত এবং পেট্রো ডলার পাওয়ার আগ পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মোনাজাতের আমল জারি ছিল। এমনকি লা-মাজহাবিদের বড় বড় আলেমও তা সমর্থন করেছেন। যেমন সায়্যিদ নাজির হোসাইন, নাওয়াব সিদ্দিক হাসান (ভূপালি), সানাউল্লাহ, হাফেজ আব্দুল্লাহ, মাওলানা মুবারকপুরীর মতো বড় বড় আলেম নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাকে বিদ'আত বলেননি। কয়েকজন লোকের ভিন্ন মতের কারণে উম্মতের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি আমলকে বিদ'আত বলা কখনো যুক্তিসংগত হতে পারে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

হাদিসে এই বিষয়ে কোন হাদিস নেই। কারন রাসূল সাঃ এর সময় এই বিষয়টি ছিল না। ফরয নামাজের পর উত্তম কাজ আল্লাহর জিকির করা। আর জিকির করবে আস্তে, ধীরে ও নীরবে। মুনাজাতের ফলে আমাদের এই বিষয়টি পরিত্যাগ করা হয়। আর রাসূল সাঃ সন্মিলিত মুনাজাত করেছেন। তবে তা সবসময় নয়। কিছু ক্ষেত্রে। রাসূল সাঃ জীবনে কোন দিন নামাজের পর হাত তুলে সন্মিলিত দোয়া করেছেন বলে কোন হাদিস নেই। যদিও রাসূল সাঃ ফরজ নামাজের পর কী জিকির করেছেন, কীভাবে মুখ নাড়িয়েছেন সে বিষয়ে অনেক হাদিস আছে। আর আমাদের দেশে নামাজের অংশ মনে করে, একটি প্রমানিত সুন্নতের খেলাফ করে, নিয়মিতভাবে যে ভাবে মুনাজাত করা হয়, তা নিসন্দেহে বিদাত। তবে জিকিরের ভিতর বা নামাজের পর একজন নিজের জন্য দোয়া করতেই পারে। তবে তা ব্যাক্তিগত। তবে তার আগে কিছুক্ষন আল্লাহর জিকির করতে হবে। তার জন্য হাত তোলার দরকার নেই। তা, হাত তোলা বিষয়টি কিছু ক্ষেত্রে প্রমানিত। তবে মুনাজাত শেষে মুখ মোছা বিষয়টি হাত তোলার মত প্রমানিত নয়। তাই সুন্নত প্রেমিক হিসেবে আমাদের উচিত রাসূল সাঃ এর পরিপূর্ন অনুসরন করার চেষ্টা করা ও সকল বিদাত পরিহার করা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ