"আকাশ সংস্কৃতি যুব সমাজকে পথভ্রষ্ট করছে" শিরোনামটির পক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের জন্য সুন্দর এবং মার্জিত স্ক্রিপ্ট লিখে দেন প্লিজ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Mh Sakil

Call

একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সে দেশের তরুণ সমাজ। এ ভবিষ্যৎকে নষ্ট করার অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে বাস্তবে তা প্রয়োগ করা। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণীদের উপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। তারা আজ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি অনুশীলনে মেতে উঠেছে।

সিনেমার কাহিনী, নাচ, গান, পোশাক-আশাক ইত্যাদি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন উদ্ভটভাবে সন্নিবেশিত হয়ে থাকে। জনসাধারণ অতি সহজেই আমোদ-আহ্লাদের উপকরণ খুঁজে পায়। তরুণ-তরুণীরা সিনেমার উদ্ভট অবাস্তব জীবনকেই অনেক সময় বাস্তব জীবন বলে ভুল করে এবং সিনেমা জগতের কায়দা-কানুন, রীতি-নীতি অন্ধভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে কৃত্রিমতা ও অপসংস্কৃতির স্বীকার হয়। আজ তরুণ সমাজ নিজস্ব জীবনদর্শনকে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের জীবন আচরণের যা বাহ্যিক কালিক-স্থানিক তাকেই অবলম্বন করছে। সংস্কৃতি বলতে বুঝায় সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতিচর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয় হিংসা বিদ্বেষ নাশ হয়, প্রেম ও সৌন্দর্য জীবনকে মহিমান্বিত করে। কিন্তু অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণকে শালীনতা দেয় না তাই আজ আমাদের তরুণ সমাজের মজ্জার ভেতর আধুনিকতা নাম ধারণ করে ঢুকে গেছে। ফলে তরুণ সমাজ হচ্ছে বিপথগামী।

তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক আছে উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ। এর একটা মোহ আছে। তরুণরা চঞ্চল। তারা চায় নতুন কিছু করতে, নতুনের সাথে চলতে। এ চলতে গিয়ে, নতুন কিছু করতে গিয়ে তারা যে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে তা তারা বুঝতে পারছে না, তাদের ধ্বংস তারা দেখতে পাচ্ছে না। আমাদের সমাজে বর্তমানে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে অবাধ দুর্নীতি। দুর্নীতি যে সমাজে আসন গেড়ে বসে, সে সমাজে সংস্কৃতি টিকে থাকে না। তাই সংস্কৃতি স্থান দখল করে নিয়েছে অপসংস্কৃতি। সত্য ও সুন্দরকে ত্যাগ করে তরুণ সমাজ তাই আজ উগ্র জীবনযাপনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে এবং চরম অবক্ষয়ের মাঝে জীবনবোধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। টেলিভিশন, সিনেমার যেসব ছবি দেখানো হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের মন-মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অথচ এসব অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি আমাদের তরুণ-তরুণীদের অতি প্রিয় হয়ে গেছে। তাদের এ আচার-আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ তেমনই অপসংস্কৃতির সহায়ক। আমাদের তরুণ সমাজ আজ এ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। সংস্কৃতি আসলে একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, একটি জীবনবোধ বিনির্মাণের কলাকৌশল। এটি মানুষের জীবনের একটি শৈল্পিক প্রকাশ, সমাজজীবনের স্বচ্ছ দর্পণ। এ সংস্কৃতির দর্পণে তাকালে কোন সমাজের মানুষের জীবনাচার, জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। অন্য কথায়, সমাজ মানুষের জীবনাচার, দৃষ্টিভঙ্গি আর বোধ-বিবেচনা থেকেই সে সমাজের সংস্কৃতি জ্ঞান লাভ করে

। তবে সংস্কৃতি এমন কোন জিনিস নয় যে, এটি একবার ছাচে তৈরি হবে, তার কোন পরিবর্তন করা যাবে না। বরং সমাজ ও জীবনের পরিবর্তনের এবং সময়ের ধারায় এ সংস্কৃতি পরিবর্তিত হতে পারে। এমনকি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এমনকি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। অন্যদিকে ভিনদেশি সংস্কৃতির তোড়ে নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব হারিয়েও ফেলতে পারে। আর দুভাগা পরিণতি যে সমাজের হয় সে সমাজেই সাংস্কৃতিক বন্ধাত্বের জন্ম হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে ঠিক তাই ঘটেছে। মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির তোড়ে নিজের সংস্কৃতির নামে স্যাটেলাইটের নগ্ন আর আস্তবাদী সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে এমন আঘাত করেছে যে তোড়ে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির নাভীশ্বাস উঠেছে। সংস্কৃতি আদানপ্রদানের মুক্তবাজারে আমরা মার খেয়ে বসেছি। পশ্চিমা চটকদার সংস্কৃতি আমাদের হাজার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। ফলে আমরা আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ক্রমেই সাংস্কৃতিক দৈন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যে রঙিন জীবনবোধ আমাদের দেশীয় জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিকেও প্রতিনিয়ত আঘাত করছে অপসংস্কৃতি রূপে স্যাটেলাইটে প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে বস্তুবাদিতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, আর নগ্নতার হাজারোপাঠ। এই সব অপসংস্কৃতির রঙিন বিষয়বস্তু অনেক রঙ ঢঙ আর লালসার আবরণ লাগিয়ে পসরা সাজিয়ে তুলে ধরছে আমাদের সামনে। ফলে মনের অজান্তেই আমরা ছুটছি এই স্বপ্নীল ভুবনের দিকে। হারিয়ে ফেলছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব জীবনবোধ। আমাদের এই আত্মবিস্মৃতিই আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হতাশার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে সমাজে ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।

আকাশ সংস্কৃতির নামে এই অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজ কাঠামো ও সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠন ও প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের পরিবার কাঠামো পারিবারিক জীবনে সুমধুর বন্ধনকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পশ্চিমা সমাজের বিবাহহীন অবাদ যৌনাচারের সংস্কৃতি ও পারিবারিক বন্ধনহীন বাউন্ডলের জীবনের বিকৃত ধারা আমাদের হাজার হাজার বছরের পুরোনো পারিবারিক জীবনের ধারাকে প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছে। সামাজিক রীতি-নীতি প্রায় বিলুপ্ত। বয়োজৈষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ এখন নেই বললেই চলে। তরুণরা আজ অনেক বেশি স্বাধীনতা চায়। কিন্তু তারা জানে না যতটুকু স্বাধীনতা দরকার তার মাত্রা অতিক্রম করলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের সমাজে তাই হচ্ছে। ফলে তরুণ সমাজ আজ পথভ্রষ্ট। সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তাঁর মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। মা, মাটি ও দেশকে স্বাধীনতা করতে শেখায়। এ অপসংস্কৃতির চমক মরীচিকার মত। এর চমক মানুষকে বিবেক বর্জিত পশুতে পরিণত করে।

খারাপ কোন কিছুকেই পরিকল্পনা করে সমাজ থেকে দূর করা যায় না। অপসংস্কৃতির এই ভয়াল থাবা থেকে সমাজ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা, সংস্কৃতি, ও অপসংস্কৃতির মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। সমাজকে করতে হবে দুর্নীতিমুক্ত। সমাজে দুর্নীতি থাকলে অবাধ ভোগের উৎস থাকবে। ইন্টারনেট, টিভি খুললে অশ্লীল দৃশ্য থাকবে অথচ অপসংস্কৃতি থাকবে না, এটি কল্পনা করাও মুর্খামি। শিতি শ্রেণীত সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিদেশি কোন কালচার গ্রহণ বা প্রচার করার পূর্বে ভেবে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন গঠন ও উন্নয়নে কতটা সহায়ক। যদি তা আমাদের মূল্যবোধের সাথে গ্রহণযোগ্যতা না হয় তবে তা বর্জন করতে হবে। যুব সমাজের সামনে নৈতিক উৎকর্ষের দৃষ্টান্ত রাখতে হবে, যা ভাল তাতে পুরস্কৃত করতে হবে, মন্দকে শাস্তি প্রদান করতে হবে। অসুন্দর, অপ্রেম, অকল্যাণের বিপে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে বিশেষ করে যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ