রোহিংগা নারীদের মধ্যে অধিকাংশই যৌন নির্যাতিত। তাদের মধ্যে যারা এখনো যৌন নির্যাতিত হয় নি এমন কেউ যদি নিজের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য আত্মহত্যা করে তাতে কি পাপ হবে ? যদি বলেন পাপ হবে, তাহলে বলতে হবে, এতোদিন শুনেছি মুসলিম নারীরা লজ্জাস্থান হেফাজতের মাধ্যমে জান্নাত পাবে, এখন বলতে হবে মুসলিম নারীরদের নিজেদের লজ্জাস্থান রাস্তার কুত্তাদের মানে (বৈদ্ধদের) বিলীন করে দিয়ে জান্নাত কামাই করতে হবে। তাহলে কি এই ভাগ্য নিয়েই মুসলিমগণ জন্মে ছিল। এখন প্রশ্ন হয় আল্লাহ কি দেখেন না ? মুসলিম ধর্মে জন্ম নেওয়াই কি আমাদের অপরাধ ?

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
ভাই ! আপনার প্রশ্নের দুটি দিক ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যা বিধিত কিনা ? মুসলিম নারীদের কি নরপিশাচদের হাতে নিজেদের ইজ্জত বিলিয়ে দিয়ে জান্নাত লাভ করতে হবে ?  এ ভাগ্য নিয়েই কি মুসলিমগণ জন্মে ছিল ? মুসলিম ধর্মে জন্ম নেওয়াই কি আমাদের অপরাধ ? আল্লাহ কি এসব দেখেন না ?

উত্তর :

ইসলামিক আইনে আত্মহত্যাকে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে কেউ যদি নিজের ইজ্জত আব্রু রক্ষার্থেও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তাহলেও সে মহাপাপ বলবৎ থাকবে সারকথা, ইসলামী আইনে ইজ্জত রক্ষার্থেও আত্মহত্যা অনুমোদিত নয় আর নারীরা লজ্জাস্থান হেফাজতের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করবে বলে যে কথা আপনি শুনেছেন তা যথার্থ  পবিত্র এ বক্তব্যের অর্থ হলো, নিজের সবটুকু ইচ্ছা ও শক্তি সামর্থ দিয়ে নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে; জীবনের বিনিময়ে নয় কোনো নারীর ইজ্জতের উপর আঘাত আসলে সে যথাসাধ্য তার ইজ্জত রক্ষার চেষ্টা করবে। এতে যদি ঐ জানোয়ারটাকে হত্যাও করতে হয় কিংবা করা যায় তবে তা করে হলেও সে তার ইজ্জত রক্ষা করবে। যদি জোরপূর্বক কোনো নারীর ইজ্জত ছিনিয়ে নেয়া হয় তাহলে সে ইসলামী আইনে মজবুর বা বাধ্য বলে বিবেচিত এ ইজ্জত হরণের কারণে সে পাপের ভাগী হবে না সে মাজলুম বা অত্যাচারিত বলে বিবেচিত হবে এবং ইজ্জত রক্ষার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করার কারণে এ ইজ্জত হরণ তার জান্নাত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় সৃষ্ট করবে না বস্তুত সে নিজের ইজ্জত হেফাজত করেছে বলেই বিবেচিত হবে


উত্তর :

ভাই ! এ জাতীয় আরো অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রশ্নের সমাধান প্রতিটি মুসলিমকেই দিতে হবে। এখন প্রশ্ন করার সময় নয়। এখন সমাধানের সময়। এখন উত্তরণের পথ অনুসন্ধানের সময়। আজ আমার লাখো মা বোন ধর্ষিতা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি কতটা দায়মুক্ত ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল মুমিন এক দেহের ন্যায়। তার চোখ ব্যথিত হলে পুরো দেহ ব্যথিত হবে। তার মাথা ব্যথিত হলে পুরো বডি ব্যথিত হবে। আজ মুসলিম বেদনায় আমরা ব্যথিত হই না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন ঘটেছিল ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে বিজয়ী করে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। দীনকে বিজয়ী রাখার দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পন করে গেছেন। আমরা সে দায়িত্বের কতটুকু পালন করেছি বা করছি ? আমাদের অবহেলায় আমরা স্পেন হারিয়েছি, বুখারা সমরকন্দ হারিয়েছি, পূর্বি তিমুর হারিয়েছি, সুদান হারিয়েছিপর্যালোচনায় হারানোর ফিরিস্তি আরো কত প্রলম্বিত হবে তার ইয়ত্তা নেই। আমরা তো মুসলিম। মুসলিম এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। পৃথিবী নামক এ গৃহটি আমাদের। উত্তর হতে দক্ষিণ মেরু আমাদের। সবুজ এ পৃথিবীটা আমাদের মতৃভূমি। আমরা তো তরবারীর ছায়াঘেরা পরিবেশে লালিত পালিত হয়েছি। মুসলিম তো সিংহের জাতি। মুসলিম তো মার খেতে জানে না। মুসলিম অভিধানে পরাজয় বলতে কোনো শব্দ নেই। মুসলিম জীবনেও বিজয়ী মরণেও বিজয়ী।  মুসলিম হুঙ্কারে পুরো বিশ্ব থরথর করে কেঁপেছে। কিন্তু মুসলিমদের সে আদর্শিক শক্তি ও প্রতাপ আজ কোথায় ? সে সিংহের গর্জন আজ কোথায় মিলিয়ে গেল ? সিংহ আজ বিরালের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিড়ালের আঁচড়ে আজ সিংহের জাতি পৃথিবীর পথে পথে রক্তাক্ত। চড়ুই পাখির অত্যাচারে আজ ঈগল পাখি দিশাহারা। কেন মুসলিম জাতি এমন লজ্জাকর পরিস্থিতর শিকার ? আল্লাহ তো স্পষ্ট করেই বলছেন, আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যাবত না তারা নিজেদের অবস্থাকে নিজেরাই পরিবর্তন করে। সূরা রা’দ ১১। আল্লাহ তাআলা বলছেন, তোমাদের কি হলো যে, তোমরা যুদ্ধ করছো না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী এবং শিশুগণের জন্য, যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক ! এ জনপদ- যার অধিবাসী জালেম তা হতে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট থেকে  কাউকে আমাদের অভিভাবক করো এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় করো। সূরা নিসা ৭৫। এখানে ভূখণ্ডগত কোনো সীমা রেখার প্রবেধ করা হয় নি। কুরআনের এ বাণী কাকে আহ্বান করছে ? এখানে শ্মশ্রুমণ্ডিত, শ্মশ্রুহীন, টুপি জুব্বাধারী, কোর্ট প্যান্টধারী, হানাফী, আহলে হাদীস, আওয়ামী লিগ, বিএনপি কিংবা জামায়াত জাপা- কাউকেই আলাদা করা হয় নি। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের জন্য কুরআনিক এ নির্দেশনা  মুসলমানের প্রতিটি সন্তানকেই আহ্বান করছে কুরআনিক এ প্রবচন। কোথায়, কেউ তো সাড়া দিচ্ছে না পবিত্র এ আহ্বানেকেউ তো হুঙ্কার ছাড়ছে না অত্যাচারী জালিম শাহীর বিরুদ্ধে। মুসলিম মন্ত্রী নীরব, মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান নীরব, মুসলিম আপামর জনতা নীরব। মুসলিমরা কি আসলেই অক্ষম ? বস্তুত মুসলিমরা এখনো অক্ষম নয়। মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের অক্ষম করে নিয়েছে। মুসলিমদের ঘুরে দাঁড়াবার এখনো যথেষ্ট শক্তি আছে। প্রয়োজন শুধু দৃষ্টভঙ্গিগত পরিবর্তনের, প্রয়োজন শুধু আদর্শিক পরিবর্তনের। একজমন মুসলিমের আদর্শিক শক্তি এতটাই পাওয়ারফুল যে তার সামনে শত পারমাণবিক বোমাও অকেজো হতে বাধ্য।  আল্লাহর নির্দেশে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে ! সূরা বাকারা ২৪৯ কুরআনিক এ বাণীর শত দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় পাতায় আজো দেদীপ্যমান।  এসব পরিস্থিতির জন্য আল্লাহ মোটেই দায়ী নন। আমরাই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কাল যে আমরা রোহিঙ্গাদের পরিণতি বরণ করবো না তার গ্যারান্টি কে দিবে ? ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি কি আমাদের আছে ?

আর ভাই ! আল্লাহ সব দেখেন। আল্লাহ তো জয় পরাজয়ের মূলনীতি বলে দিয়েছেন। সে মূলনীতি থেকে সরে এসে পরাজয় ও লাঞ্ছনার শিকার হলে তার জন্য আমরাই দায়ী। দোষ ভাগ্যেরও নয়। ভাগ্য তার স্থানে যথাযথ অবস্থান করছে। দোষটা আমাদের কর্মের। মুসলিম ধর্মে জন্ম নেয়াটা আমাদের অপরাধ নয়; বরং মুসলিম হয়ে জন্ম নেয়াটা আমাদের গর্ব। তবে সে গর্বটা অটুট রাখা আমাদের গুরু দায়িত্ব। এটা রোহিঙ্গা ভাই বোনসহ যেসব মুসলিম মা বোন নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের জন্য পরীক্ষা এবং আমরা যারা সুখে আছি বলে মনে করছি তাদের জন্যও পরীক্ষা। জানি না, এ পরীক্ষায় কে কতটুকু উত্তীর্ণ হতে পারছি।

পুনশ্চ : আপনার প্রশ্নের উপস্থাপনায় ধর্মীয় দিক থেকে কিছুটা অসংলগ্নতা বোধ হলেও সম্ভবত আপনার হৃদয় পরিস্কার। বৌদ্ধ নামের ঐ সকল নরপিশাচদের উপর চরম ক্ষোভ ও নির্যাতিত মুসলিম ভাই বোনদের ব্যাপারে সীমাহীন বেদনাবোধ থেকেই সম্ভবত আপনার প্রশ্নটি উসারিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ