আমার ইন্টারনাল পাইলস হয়ে গেছে। আর এটা থেকে অনবরত পায়খানার সাথে মিউকাস যাচ্চে। কিন্তু রক্ত যায়নি। যার ফলে আমি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পরেছি। অনেক ঔষধ খাচ্চি কিন্তু কাজ হচ্চে না। এখন আমি চাচ্ছি অপারেশন করাতে। অপারেশনে নাকি খুব কষ্ট। তাই জানতে চাই,,, এটার কোন আধুনিক অপারেশন পদ্ধতি আছে কি না???? যাতে ব্যাথা ও মলদ্বার কাটাচিরা না লাগে।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পাইলসের চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। সব ধরনের চিকিৎসাই চালু আছে বংলাদেশে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকায় প্রতি মুহূর্তেই মানুষ শিকার হয়ে থাকেন অপচিকিৎসায়। বলতে গেলে আমাদের দেশের বেশিরভাগ পাইলস ও পায়ুপথের রোগীই অপচিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন। ফলে রোগ জটিল হয়ে পড়ে। কখনো কখনো জীবন সংশয়ও দেখা দিয়ে থাকে। তবে রোগীদের যখন বলা হয় অপারেশনের প্রয়োজন, তখন তারা ভয় পেয়ে যান। আসলে পাইলস চিকিৎসায় আধুনিক অপারেশনগুলোয় ভয়ের কোনো কারণ নেই। সাধারণত অ্যাডভান্সড স্টেজ অর্থাৎ থার্ড ডিগ্রি ও ফোর্থ ডিগ্রি পাইলসের ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পাইলসে জটিলতা দেখা দিলে ও অন্যান্য রোগ, যেমনÑ এনাল ফিসারের সঙ্গে পাইলস থাকলেও অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের পাইলসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমানে যে আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে, অর্থাৎ লঙ্গো অপারেশনÑ তা করা সম্ভব। এ অপারেশনে বাইরে কাটাছেঁড়ার ব্যাপার না থাকায় অপারেশন পরবর্তী সময় ব্যথা একেবারে হয় না বললেই চলে। অপারেশনের সময় রক্তপাত হয় না। রোগী একদিনের মধ্যে বাসায়ও চলে যেতে পারেন। তিন-চার দিনের মধ্যে অফিসের কাজকর্মসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। পাইলস রোগীর অপারেশনের ক্ষেত্রে আরেকটি ভয় হচ্ছে মলত্যাগ নিয়ে। পায়ুপথে অপারেশন হয়েছে, মলত্যাগ কীভাবে হবে, এ ভয়ে অনেকে অস্থির থাকেন। এসব রোগীর অস্থিরতা দূরীকরণে এ কথা বলা যায়, লঙ্গো অপারেশনের পর পরই রোগী স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারেন। তবে পাইলস বড় হয়ে গেলে কিংবা পাইলসের সঙ্গে এনালফিসার থাকলে রোগীর মলত্যাগে কষ্ট হয়। এ অপারেশনের মাধ্যমে সমস্যাগুলো দূর হওয়ায় রোগী অপারেশনের পরই আরামে মলত্যাগ করতে পারেন। অপারেশনের আগে তীব্র ব্যথা বা বাধা, কোনোটাই থাকে না। এ অপারেশনে বাইরে কাটাছেঁড়া না থাকায় দীর্ঘদিন বেদনাদায়ক ড্রেসিংও করতে হয় না। ফলে রোগী যন্ত্রণাদায়ক ড্রেসিং থেকে মুক্ত থাকেন। পাইলস রোগীরা একটি প্রশ্ন করে থাকেন আর তা হলোÑ অপারেশনের পর রোগ আবার দেখা দেবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে এককথায় বলা যায়, না। মূলকথা হচ্ছে, সঠিক নিয়মে অপারেশন করলে এবং অপারেশন পরবর্তী সময় নিয়মকানুন ঠিকমতো মানলে এ রোগ নতুন করে দেখা দেয় না। রোগী সারা জীবন স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call
অধ্যাপক ডা: এন্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমো, ইতালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যার নাম Longo Operation বা Stapled Haemorrhoidectomy । অর্থাৎ অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন। এ পদ্ধতির Concept বা চিকিৎসার দর্শন যুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। এ ক্ষেত্রে পাইলসটিকে একটি ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ড হিসেবে মনে করা হয়। এই ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের (Hemorrhoidal circular stapler, Elthicone Endosurgery, USA) সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলেপড়া পাইলস ভেতরে ঢুকে যাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এ পদ্ধতিতে আসলে পাইলসের স্থানে বা মলদ্বারে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটাছেঁড়া হয়। তবে তা মলদ্বারের অনেক গভীরে। এ যন্ত্রটি রেকটামের ভেতর একটি চক্রাকার মাংসপিণ্ড কেটে নিয়ে আসে। কাটাছেঁড়া করে ওই যন্ত্রটিই আবার সেলাইও সেরে দেয়। যার কারণে কোনো তস্থান থাকে না। আর তস্থান থাকে না বলে শুকানোর প্রশ্ন আসে না। মলদ্বারের অনেক গভীরে যে স্থানটির নাম রেকটাম সেখানে কোনো ব্যথার অনুভূতি নেই। তাই এই অপারেশনের পর কোনো ধরনের ব্যথা হয় না। তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়। যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাইলসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ রেকটামের ভেতর অপারেশনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অত থাকে। মলদ্বারে সামান্যতম কোনো কাটাছেঁড়া নেই। এটিই এ অপারেশনের নতুন দিক। যার কারণে অপারেশনের পর প্রচণ্ড ব্যথা নেই। রক্ত বা পুঁজ পড়ার সমস্যা নেই । মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই। দীর্ঘ দিন ব্যথার ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘ দিন বিশ্রাম বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। পায়খানা আটকে রাখার মতা ব্যাহত হওয়ার ভয় নেই। সর্বোপরি আবার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য অর্থাৎ শতকরা দুই ভাগ। এ অপারেশনে অজ্ঞান করা হয় না তবে কোমরের নিচের দিক অবশ করা হয়। অপারেশনের জন্য রোগীকে দুই-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। একটি অত্যাধুনিক বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় । যন্ত্রটির মূল্য ৩০ হাজার টাকা। ৫-১০ দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ