তারাবীর নামাজ কতো রাকাত তা নিয়ে অনেক মতোভেদ রয়েছে । তবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সুন্নী-মুসলিমগন ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ আদায় করে থাকেন । তবে আপনার প্রশ্নের মাঝে আলসেমি শব্দটি আমার নজর কেড়েছে । ইবাদত অলসতা বা তারাহুড়া ভাবে করার কোনো বিষয় নয় । যদিও ইদানিং বেশ কিছু মসজিদে রমজান মাসে তারাবীর নামাজ খুব দ্রুততার সাথে পড়া হয় , এমন কি কুরআনের আয়াত গুলো ও খুব দ্রুত পাঠ করা হয় এতে নামাজী গন কোনো আয়াত ই পষ্টভাবে শুনতে ও বুঝতে পারেন না , যা মোটেই উচিত নয় ।
★★★★★
তারাবী নামায এর রাকাত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু করে এ যাবত কত রাকাত পড়া হয়েছে? এবং আমাদের জন্য কত রাকাত পড়া উচিৎ? এ সম্পর্কে নিম্নে একটি পর্যালোচনা পেশ করা হল ।
#রাসুল_সাঃ_ও_আবু
পবিত্র রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীর নামায পড়েছেন, এ ব্যপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু কত রাকাআত পড়েছেন, এ ব্যপারে তালাশ করলে বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তার মাঝে তিনটি বর্ণনা প্রশিদ্ধ।পর্যায
(১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাআত তারাবী ও বিতর পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২য় খন্ড, ৩৯৪ পৃ; ৭৭৭৪ আসসুনানুল কুবরা বায়হাকী-২য় খন্ড ৪৯৬ পৃষ্ঠা)
এর মাঝে হযরত আয়শা রা: ও হযরত জাবের বর্ণিত হাদীস দু’খানা সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। এখন আমরা হযরত ইবনে আব্বাস রা: কতৃক বর্ণিত হাদীস সস্পর্কে আলোচনা করছি। হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানী রহ: বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেই দুই দিন জামাআতের সাথে তারাবীর ইমামতি করেছিলেন সেই দুই দিন বিশ রাকাআত নামায পড়েছিলেন। (আত্তালখিসুল হাবীর: ১ম খন্ড ১১৯ পৃষ্ঠা)
উক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকাআত তারাবী পড়েছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিক এই আমলের প্রচলন করেননি, কেননা তার আশংকা ছিল যে, ধারাবাহিক করলে আল্লাহ তাআলা যদি এই আমলকে ফরজ করে দেন? তাই তিনি নিয়মতান্ত্রিকভ
#হযরত_উমর_রাঃ_ও_
আমাদের দেখতে হবে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ সাহচার্য গ্রহণ করে যারা দ্বীন শিখেছেন। সে সব সাহাবীদের আমল কেমন ছিল। তাদের অনুসৃত পথই সুস্পষ্ট করে দিবে যে এটাই তো রাসূলের পথ। কেননা জেনে শুনে কখনোই তাঁরা রাসূলের পথের বিপরীদ কোন আমল করেননি। এবং কাউকে করতে দেখলে তারা চুপ করেও বসে থাকেননি।
সুতরাং কোন ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত পোষন করার অর্থই হবে যে এর বিপরীদ পথ কখনোই রাসূলের পথ নয়। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
عليكم بسنتي ، و سنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي ، تمسكوا بها ، و عضوا عليها بالنواجذ،
আমার স্ন্নুত ও আমার হেদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগনের সুন্নতকে আকড়ে রাখবে। একে আবলম্বন করব এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে প্রানপন করে কামড়ে রাখবে।
(সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৪৬০৭ , জামে তিরমিযী হাদীস: ২৬৭৬)
রাসূলের উক্ত হিদায়েত মুতাবিক আমরা তালাশ করে দেখি, তারাবীর নামাযের রাকাআতের সংখ্যার ব্যপারে তাদের থেকে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় কি না।
হযরত আব্দুর রহমান আলক্বারী রহ: বলেন, আমি রমযান মাসে একদা হযরত উমর রা: এর সঙ্গে “মসজিদে গেলাম, তখন দেখলাম লোকজন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারাবী নামায পড়ছেন। কেউ একা পড়ছেন আবার কেউ দু চার জন সঙ্গে নিয়ে পড়ছেন। তখন হযরত উমর রা: বললেন তাদের সবাইকে যদি এক ইমামের পেছনে জামাআত বদ্ধ করে দেই তাহলে মনে হয় উত্তম হবে। এর পর তিনি তাদেরকে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: এর পেছনে এক জামাআতবদ্ধ করে দিলেন।
(বুখারী শরীফ ২য় খন্ড, ২০১০পৃষ্ঠা, মুয়াত্তা মালেক ১খন্ড, ১১৪পৃষ্ঠা)
হযরত ওমর রা: এর উক্ত সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ইবনে আব্দুল বার রহ;: তার বিখ্যাত গ্রন্থ আত তামহীদ এ লিখেন, হযরত উমর রা এখানে নতুন কিছুই করেননি। তিনি তাই করেছেন যা খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি শুধু এই আশঙ্কায় যে নিয়মিত জামাআতে পড়লে উম্মতের উপর তারাবীর নামায ফরজ হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি নিজে জামাআতের ব্যবস্থা করেননি। উমর রা: বিষয়টি ভালোভাবে জানতেন। তিনি দেখলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর ওহী বন্ধ হয়েগেছে। সুতরাং তারাবীর নামায ফরজ হওয়ার এখন আর আশঙ্কা নেই। তখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পছন্দ অনুযায়ী ১৪ হিজরীতে জামাআতে পড়ার ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা যেন এই মর্যাদা ও সুযোগ তার জন্যই রেখে দিয়েছিলেন। (আততামহীদ ৮ম খন্ড, ১০৮-১০৯ পৃষ্ঠা)
হযরত উমর রা: এর সুচিন্তিত রায় ও উপস্থিত সাহাবাদের সম্মতিক্রমে বিশ রাকাআত তারাবীর ধারাবাহিক আমল এর বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
১. হযরত ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা রা: থেকে হযরত সায়েব ইবন ইয়াযীদ বলেন: তারা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে ২০ রাকাআত তারাবী পড়তেন । তিনি আরও বলেন যে, তারা নামাযে শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সুরা সমূহ পড়তেন এবং উসমান ইবনে আফফান রা. এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের কেউ কেউ লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতেন।
(আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী-২/৪৯৬)
২. সাহাবী হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. এর অন্য আরেকটি বিবরণ হল: আমরা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে বিশ রাকাআত এবং বিতর পড়তাম। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী-১খন্ড,
৩. তাবেয়ী আব্দুল আযিয ইবনে রুফাই রহ. এর বিবরণ: হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. রমযান মাসে মদীনায় লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবী এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২খন্ড, ২৮৫পৃ:)
মোট কথা উপরোক্ত বর্ণনা এবং এ ধরণের অন্যান্য সহীহ বর্ণনার ভিত্তিতে এবং সাহাবা ও তাবেয়ীনের যুগ থেকে চলে আসা সম্মিলিতও অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে আলেম গণের সর্বসম্মতি বয়ান হল এই যে, হযরত উমর রা: এর যুগে মসজিদে নববীতে বিশ রাকআত তারাবী হত।
এ ব্যপারে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেছেন: এ বিষয়টি প্রমানিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রমজানে তারবীতে মুসল্লিদের কে বিশ রাকআত পড়াতেন এবং তিন রাকআত বিতর পড়াতেন। (মাজমূউল ফাতাওয়া: ১৩তম খন্ড,১১২-১১৩ পৃষ্ঠা)
৪.বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ: বলেন: হযরত আলী রা: রমযানে কারীগণকে ডেকে একজনকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকআত পড়েন ।
(আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১খন্ড, ৪৯৬,৪৯৭ পৃষ্টা)
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট হচ্ছে যে, হযরত উমর , রা: হযরত উসমান রা: এবং হযরত আলী রা: এর খেলাফত কালে জামাআতের সাথে প্রকাশ্যে বিশ রাকাআত তারাবী নামায পড়া হত। এবং এই সোলানী যুগে বিশ রাকাআত তারাবীর আমল সাবীলূল মুমিনীন- মুমিনদের সকলের অনুসৃত পথ। বর্তমান যারা যারা বিশ রাকআত তারাবীর উপর আপত্তি করে এবং সুন্নাহ বা হাদীসের খেলাফ বলে তারা মূলত সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুতিই গ্র্রহন করে নিয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হল, মসজিদে নববীতে ১৪ হিজরী থেকেই হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: এর ইমামতিতে প্রকাশ্যে বিশ রাকআত তারাবী পড়া হত। প্রশ্ন হল, সেই সময় মুসল্লী ও মুুক্তাদী হতেন কারা? এই মুহাজির ও আনসারী সাহাবীগনই সেই মুবারক জামাতের মুক্তাদী ও মুসল্লী ছিলেন। শীর্ষ স্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম যাদের থেকে অন্যান্য সাহাবী দ্বীন শিখতেন যারা কুরআনের শিক্ষা, হাদীস বর্ণনা ও ফিকহ-ফতওয়ার স্তম্ভ ছিলেন তাদের অধিকাংশই তখন মদীনায় ছিলেন। দুই একজন যারা মদীনার বাইরে ছিলেন তারাও মক্কা মদীনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং খলিফায়ে রাশেদের কর্ম সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওয়াকেফ হাল থাকতেন, তাদের একজনও কি বিশ রাকাআত তারাবীর বিপক্ষে কোন আপত্তি করেছেন? তাই তো আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ: আলইস্তিযকার কিতাবে বলেন, এটাই হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা: থেকে বিশুদ্ধ রূপে প্রমাণিত এবং এতে সাহাবীগণের কোন ভিন্নমত নেই ।
(আল ইসতিযকার ৫ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন: এটা প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রা: রমযানের তারাবীতে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত পড়তেন এবং তিন রাকাআত বিতির পড়তেন। তাই অধিকাংশ আলেম এই সিন্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে এটাই সুন্নত। কেননা উবাই ইবনে কা’ব রা: মুহাজির ও আনসারী সাহাবাগনের উপস্থিতিতেই বিশ রাকাআত পড়িয়েছেন এবং কোন একজন সাহাবীও তাতে আপত্তি করেননি।
(মাজমুউল ফাতওয়া, ইবনে তাইমিয়া: ২৩ খন্ড, ১১২,১১৩ পৃষ্ঠা)
আল্লামা কাসানী রহ: বলেন : উবাই ইবনে কা’ব রা: সাহাবাদের নিয়ে প্রতিরাতে বিশ রাকাআতই পড়তেন এবং সাহাবীদের একজনও এ ব্যপারে আপত্তি করেননি। সুতরাং এ ব্যপারে তাদের সকলের ইজমা সম্পন্ন হয়েছে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১ম খন্ড, ৬৪৪ পৃষ্ঠা)