গলার স্বর সুস্থ রাখতে যে বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার :
১। ভোকাল কর্ড সুস্থ থাকলে গলার আওয়াজ সুন্দর ও সঠিক থাকে।
২। জোরে আওয়াজ করে কথা বললে স্বর তন্ত্রের ক্ষতি হয়।
৩। একইভাবে ক্ষতি হয় ফিসফিস করে কথা বললে।
৪। কোন অনুষ্ঠানে সোর-গোলের মধ্যে কারো সাথে জোরে জোরে আলাপ করলে স্বরতন্ত্রের ক্ষতি হয়।
৫। ঠা-া সর্দির সময় বেশি জোরে আওয়াজ করে কাশি দিলে বা কথা বললে ভোকাল কর্ডের ক্ষতি হতে পারে।
৬। সিগারেট ভীষণ খারাপ গলা নষ্ট করার জন্য। ধূমপান অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।
৭। সঠিক ভঙ্গিতে বসা উচিত, মেরুদ-, ঘাড়, মাথা সোজা করে বসা বা দাঁড়ানো বা হাঁটার অভ্যাস করা উচিত।
৮। ঠা-ায় বা কোন কারণে গলা বসে গেলে আওয়াজ করে কথা বলা যাবে না। ই,এন,টি চিকিৎসকের জরুরি ভিত্তিতে পরামর্শ নিন।
গলার স্বর সুন্দর রাখার কিছু নিয়ম :
১। পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে; অ্যালকোহল এবং চা কফি জাতীয় পানীয় শরীরকে পানি শূন্যতার দিকে নিয়ে যায় ফলে এগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।
২। ধূমপান পরিহার করতে হবে, ধূমপান গলার ক্ষতি এবং ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ, এমনকি পরোক্ষ ধূমপানেও স্বরতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।
৩। স্বরের উপর অত্যাচার বা স্বরের অপব্যবহার করা যাবে না। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে চেঁচামেচি বা জোরে চিৎকার করা যাবে না। যদি কথা বলতে বলতে স্বর শুষ্ক, ক্লান্ত বা খসখসে মনে হয়, তবে কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে, তা না হলে স্বরতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
৪। প্রতিদিন কিভাবে কথা বলছেন তার প্রতি খেয়াল করুন কারণ ভুলভাবে কথা বলার ধরণ আপনার স্বরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে সঠিক উচ্চারণে বাংলা, ইংরেজী বা অন্য ভাষা যুক্ত করে কথা বলা বা ভাব বিনিময় মেধা বা ব্রেনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে (তবে ঋগ রেডিওর ধরণ মোটেও নয়)।
৫। যারা সুন্দরভাবে বা সঠিক উচ্চারণে যত্ন নিয়ে কথা বলেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ রাখা এবং নিয়মিত ওই সকল অনুষ্ঠান দেখা বা অংশ নেয়া যেখানে উচ্চারণ তত্ত্বকে বা প্রমিথ ভাষার চর্চাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনার বলার ধরণ তেমনি হবে যেমন শুনবেন। আপনি যে শব্দ ভা-ারের মধ্যে থাকছেন, শোনছেন বা বলছেন হঠাৎ করে কোন অনুষ্ঠানে বা ব্যক্তির সাথে যদি অন্য সুরে বা টোনে নিজেকে কথার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেন তবে আপনার কৃতিমতা এসে যাবে। এতে বিষয়টি আরো শ্রুতিকটু হয়ে যেতে পারে এবং গলার মাসল টোনের উপর চাপও পড়তে পারে।
কণ্ঠস্বর খুব গুরুত্বপূর্ণ অন্যের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা, উন্নয়ন এবং যোগাযোগ করার জন্য। একজন সঙ্গীত শিল্পী, শিক্ষক, আইনজীবী, পারফর্মার, অভিনয় শিল্পী, বক্তা অথবা একজন প্রেজেন্টারের জন্য কণ্ঠস্বর যত্ন নেয়া খুব দরকার। অধিকাংশ লোকেরই কণ্ঠস্বরের ছোট-খাটো সমস্যা থাকে যা প্রতিদিনের কিছু এক্সারসাইজ দ্বারা প্রতিরোধ এবং সুস্থ রাখা যায়। যেমন:
১। প্রতিদিন সকালে মৃদুভাবে গুনগুন বা ঘুঘু পাখির মতো আওয়াজ করে ওয়ার্ম আপ প্রাকটিস করতে পারেন।
২। দিনের মধ্যে কয়েকবার করে ঘাড়ের, গলার, কাধের চোয়ালের পেশীর ব্যায়াম করতে হবে।
৩। নিয়মিত নি¤œ উল্লেখিত প্রাণায়মগুলো করা উচিত।
(ক) যে কোন একটি ধ্যান আসনে মেরুদ- সোজা করে দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে নাক দিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিন। এবার দশ সেকেন্ড দম আটকে রেখে আস্তে আস্তে নিশ্বাস ছাড়তে থাকুন। যেন পেটের পেশী আস্তে আস্তে ভিতরের দিকে যেতে থাকে এবং শ্বাস নিতে যত সময় লেগেছে তার বেশি সময় ধরে নিশ্বাস ছাড়–ন। এভাবে ২৫ বার করুন।
(খ) যে কোন একটি ধ্যান আসনে মেরুদ- সোজা করে বসুন। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান নাক বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন। এবার বাম নাক বন্ধ করে ডান নাক দিয়ে নিশ্বাস ছাড়–ন এবং ওই নাক দিয়েই শ্বাস নিন ও অন্য নাকে ছাডুন এভাবে ১৫ বার করুন।
(গ) যে কোন একটি ধ্যান আসনে মেরুদ- সোজা করে দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে বসুন। এবার নাক দিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিয়ে নিশ্বাস ত্যাগ করার সময় যতটুকু সম্ভব জোরে (আওয়াজ করে) নাক দিয়ে নিশ্বাস ছাড়–ন এভাবে ৩০ বার করতে হবে।
৪। একই আসনে বসে (সিংহাসন) মুখ হা করে জিভ যতটা সম্ভব বাইরের দিকে বের করে ‘আ’ আওয়াজ করতে হবে। এতে স্বর সুন্দর হবে। (সম্ভব হলে জিভটাকে হালকাভাবে টেনে ধরে আওয়াজ করুন, এতে স্বর আরো আকর্ষণীয় হবে)
৫। ঝাল মসল্লাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এটা স্বরতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
৬। আপনার ইএনটি বা মুখগহ্বরের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে টুথপেস্ট/ব্রাশ, মাউথওয়াস ঠিক করে নিতে পারেন।
উপসংহার : পারস্পরিক যোগাযোগ, ভাব বিনিময়, সম্পর্ক উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম কথা। সুতরাং কথা বলার ভঙ্গি শব্দ প্রয়োগ, শব্দ উচ্চারণ যা গলার ভোকাল কর্ডের নিপুণতা বা সুস্থতার উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। সুতরাং সেই ভোকাল কর্ডের সুস্থতা এবং ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কণ্ঠস্বর ঠিক রাখার জন্য আপনাকে অবশ্যই কণ্ঠস্বরের অনুশীলন ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একটু ভেবে-চিন্তে যত্ন করে সঠিক শব্দে এবং উচ্চারণে মনের ভাবটি প্রকাশ করুন, সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠুন।
সূএঃড. মো. আলমাসুর রহমান
কাউন্সিলর: হলিসটিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাঃ ০১৭১৬-৫০০২৩২