.
.
বাম থেকে ডানে এবং ডান থেকে বামে....
উভয়ক্ষেত্রে এই দিক কি তাত্‍পর্য বহন করে ?

. আরবি ছাড়া অন্য কি কি ভাষা লেখার সময় ডান থেকে বামে যাওয়া হয় , এবং কোন ভাষাগুলোতে বাম থেকে ডানে লেখা হয় তা জানতে চাই ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

অনেকেই জানেন, সেমিটিক ও নন-সেমিটিক এই ‘দুই' জনকওমের মধ্যে যে অতি প্রাচীনকাল থেকেই শত্রুতা চলে আসছে- তা তাদের লিপি- ভাষা, জাতি, ধর্ম, সাহিত্য এবং মানস-চেতনাকে এখনও আচ্ছন্ন করে আছে। এ রকম বিদ্বেষ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি মহাদেশের নন-সেমিটিক নানা জাতি ও জনসমষ্টির মধ্যেও বিদ্যমান। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণতর শ্রেণীর মধ্যে- যেমন লিপি, ভাষা, ধর্ম ও জনবিদ্বেষ আছে, তেমনি আছে মুছলিম ও হিন্দুদের মধ্যেও। এ উপমহাদেশের মুছলমানরা, অমুছলমানদের লিপি-ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য ইত্যাদি ঘৃণা করেন না। কিন্তু হিন্দুরা মুছলমানদের লিপি, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, এমনকি ব্যক্তিনাম পর্যন্ত ঘৃণা করে। অনেক সামাজিক-আচার-আচরণেও তারা বিরুদ্ধ পন্থা গ্রহণ করে। তারা আরবী-ফারছী, উর্দু, বাঙালা (মুছলিম-বাঙালা ভাষা, ইছলাম ধর্ম ও মুছলমান জনগোষ্ঠীকে শত্রু মনে করে। মুছলমানরা ‘পানি' বলে। তারা বলে ‘জল'। মুছলমানরা যাকে গোশ্ত বলে, তারা তাকে বলে ‘মাংস'। মুছলমানরা গণভোজের সময় কলাপাতার যে পাশে ‘ভাত' খায়; হিন্দুরা তার বিপরীত পাশে খায় ‘অন্ন'। মুছলমানরা এদেশে চিরকাল বই-কেতাব-ডান দিক থেকে লেখা শুরু করে বাম দিকে শেষ করত। হিন্দুদের রীতি হল উল্টো। হিন্দুদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেও যে এ রকম রেষারেষি, বিরোধ, বিদ্বেষ, আড়াআড়ি আছে তা ড. দীনেশ চন্দ্র সেন উদাহরণ দিয়ে বলে গেছেন। এ রকম উল্টো-পাল্টা, আড়াআড়ি যে কেবল এ কালের ঘটনা নয়, শত শত, হাজার হাজার বছর আগে থেকেই সারা বিশ্বে অব্যাহত রয়েছে। তারও ঐতিহাসিক নজির আছে। বিদ্যার্থীও সে কথার উল্লেখ করেছেন।

কেবল লেখালেখির দিকে মনযোগ দিলে দুটো লিপির কথা সহজেই মনে পড়ে। তার একটা খরোষ্ঠী, অপরটা ব্রাহ্মী। খরোষ্ঠী সেমিটিক লিপি। ব্রাহ্মী ভারতীয়। ‘খরোষ্ঠী- ডান দিক থেকে বামদিকে লেখা হত; ব্রাহ্মী বাম দিক থেকে ডাইনে। খরোষ্ঠীর রীতি আরবী লেখন-রীতি অনুসারী। ফারছী-উরদুর রীতিও তাই। অন্যদিকে সংস্কৃতি ও সংস্কৃত বাঙালা এবং হিন্দি, নেপালী, আসামী, গুজরাটী, পাঞ্জাবী ইত্যাদি লেখা হয়-ব্রাহ্মী-রীতি অনুযায়ী। বিশ শতকের প্রথম ভাগ অবধি মুছলমানরা তাদের ফারছী বাঙালায় বই-কেতাব লিখত-ছাপত আরবী রীতিমাফিক ডানদিক থেকে বামে। আর হিন্দুরা তাদের চিরাচরিত বিরোধী ধারায় বাম দিক থেকে ডাইনে। এখন আমরা সবাই লিখি ‘হিন্দু রীতি' অনুসারে, মুছলিম বিরোধী-ধারায়।

কিন্তু একটি ক্ষেত্রে এখনও কারো পক্ষে ডান থেকে বামে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তা হল-কাব্যাদিতে লিখিত রচনাকাল নির্ণায়ক ও হিসাব গণনায়। গবেষকগণ লক্ষ্য করেছেন, প্রাচীন ও মুছলিম আমলের যেসব কবি তাদের রচিত আখেরী অংশে দুর্বোধ্যভাবে কবিতার ভাষায় রচনাকাল নির্দেশ করেছেন- সেগুলোর অর্থ উদ্ধার করে, নির্দিষ্ট সময়কাল জানতে গেলে একটি সূত্র অনুসরণ করতে হয়। সে সূত্রটি হল ‘অঙ্কস্য বামা গতি।' যেমন: শেখ ফয়জুল্লাহ, তাঁর ‘সত্যপীর' নামক কেতাব-রচনার, কালের উল্লেখ করতে, কবিতায় লিখেছেন-

‘মুনি রস বেদ শশী মাকে রহে সন।

শেখ ফয়জুল্লাহ ভনে ভাবি দেখ মন।'

এ দু'টি চরণের প্রথমটিতে হেয়ালীপূর্ণ বা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করে, যে অনুক্রমে বাক্য সাজানো হয়েছে। সে অনুক্রমে সংখ্যা সাজিয়ে প্রকৃত সময় ঠিক করা যায় না। যেমন- হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ মুনি বা ঋষি সাতজন। তাঁদের একে ‘সপ্তর্ষি' বলা হয়। তাঁরা নাকি আকাশে সাতটি নক্ষত্র রূপে বিরাজমান। আর কাব্য-বিচারে রস ছ'রকম একইভাবে হিন্দুদের বেদের। সংখ্যা চার। আর শমী বা চাঁদ তো আকাশে একটাই। ফলে, এ অনুক্রমে সংখ্যাগুলো সাজালে পাওয়া যায়- ৭৬৪১ শক। কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নিয়ম হ'ল- এসব ক্ষেত্রে অঙ্ক বা সংখ্যা লিখতে হবে বাম থেকে ডাইনে। যেমন ১৪৬৭। অথবা ১৪৯৭ শকাব্দ। কারণ রসকে ৬ বা ৯ও ধরা যায়। ষড়রস ও নবরস-উভয়ই কাব্য বিচারে প্রযোজ্য। তাহলে কোথায় ৭৬৪১ বা ৭৯৪১ শকাব্দ আর কোথায় ১৪৬৭ বা ১৪৯৭ শকাব্দ।

এ রকম হেয়ালীযুক্ত সমস্ত কাব্যের রচনাকালই ‘অঙ্কস্য' ‘বামাগতি' বিধি অনুযায়ী না লিখে উপায় নেই। আর এ নিয়ম যে, আরবী বা সেমিটিক রীতি তাতেও কোন সন্দেহ নেই।

অতএব, এই ‘বামাগতি' লেখন-রীতির মধ্যে যে কোন রহস্য আছে তা সত্য। পদ্ধতিটা কেবল দুর্বোধ্য শব্দের গাণিতিক বিন্যাসে নয়, সুবোধ্য শব্দের বানান বিন্যাসেও প্রয়োগ করে দেখা যেতে পারে। এ রকম চিন্তার বশবর্তী হয়ে আমি আলোচ্য তৃতীয় পদ্ধতির ওপর বিশেষ মনোযোগ অর্পণ করি। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ‘বাঙালা শব্দ' ‘উল্টো বানানে' লিখলে কি ফল পাওয়া যায়- তা লক্ষ্য করতে থাকি। বিশেষ করে বাঙালা ভাষায় আগত সংস্কৃতিজ ও অন্যান্য শব্দ ডান থেকে বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে এবং সংস্কৃত, প্রাকৃত, বাঙালা ভাষার প্রচলিত ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম মেনে কিছু রদবদল ঘটালে, সত্যি সত্যি আরবী শব্দ পাওয়া যায় কিনা- তা লিখিতভাবে পরীক্ষা করতে থাকি। এভাবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত নেশাগ্রস্তের মত, আমার শব্দ বিচুর্ণন চলতে থাকে। আর সেই সাথে এ রকম আর কোন লেখা কোথাও পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজতে থাকি।

সুখের বিষয়, অল্প ক'দিন আগে এ ধরনের আর একটা লেখা নজরে পড়ে; যা আমার দশ বছর আগে শুরু করা কাজের পোষকতা করছে। যদিও তা ভিন্ন কারণে, অন্য উদ্দেশ্যে।

লেখাটির নাম- ‘শব্দের খেলা'। লেখক তারিনীচরণ দাস। আসামের ‘শিলচর নর্মাল স্কুলে'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও ‘শিক্ষা-সেবক' পত্রিকার মানেজার ছিলেন তিনি। রচনাটি প্রকাশিত হয়- ঐ পত্রিকার ১৩৪১ সালের শ্রাবণ সংখ্যায়।

খুব ছোট্ট এই লঘু প্রবন্ধে লেখক ছাত্রদের অবসর সময় কাটাবার শিক্ষণীয় উপায় দেখাতে,-এটি রচনা করেন। শিক্ষকদের এই খেলায় ছাত্রদের উৎসাহ দেবার পরামর্শে তিনি লেখেন-‘ছাত্রেরা যখন ক্লাসে অবসন্ন হইয়া পড়ে অথবা যখন ঘণ্টা বাজিবার পূর্বেই তাহাদের নির্দিষ্ট বিষয়ের পাঠ শেষ হইয়া যায়, কিংবা যখন বৃষ্টির দরুন, বিশ্রামের ঘণ্টায়, বাহিরে গিয়া তাহারা খেলাধূলা করিবার সুযোগ পায় না, সেই সময় ছাত্রদিগকে শব্দের খেলায় ব্যাপৃত রাখিতে পারিলে তাহাদের যুগপৎ আমোদ ও শিক্ষা উভয়ই হইয়া থাকে।

লেখক এ রকম আট দফা খেলার (নজীরসহ) উল্লেখ করেছেন। তার তিন, চার ও ছ'নম্বর আইটেম-এর দিকে পাঠকগণের নজর আকর্ষণ করছি। তারিনী চরন, তিন নম্বর আইটেমে লিখেছেন- শিক্ষক ছাত্রদের ‘‘এমন শব্দ গঠন’’ ক'রতে বা খুঁজতে ব'লবেন, ‘‘যাহা উল্টাইলে ঠিক সেই শব্দ হয়।’’ যেমন- ‘‘সরস, সরস, নয়ন, নবীন, নন্দন, সহিস, নগুণ, কনক।’’

তারপর লিখেছেন- শিক্ষক ছাত্রকে ‘‘এমন শব্দ গঠন’’ করতে বলবেন, ‘‘যাহা উল্টাইলে ভিন্ন শব্দ গঠিত হয়।’’ যেমন- মজা-জাম, নব-বন, লতা-তাল, কাচা-চাকা।

আর ছ'নম্বর আইটেম হ'ল- ‘‘বর্ণবিপর্যয় করিয়া এক শব্দ হইতে অন্যশব্দ গঠন।’’ যেমন- ‘‘সকল হইতে কলস, কমল হইতে কলম, চারক হইতে চাকর।’’

বলা আবশ্যক যে, কেবল এই তিন রকম নয়; আরও অনেক রকমে শব্দের চেহারা বদল সম্ভব। সে-বিষয়ে পরে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে।

বর্তমান- প্রসঙ্গ শুধু এটুকু বলা জরুরি যে, শব্দের বর্ণ-বিন্যাস একটা নির্দিষ্ট নিয়মে, ডান থেকে বাম দিকে উল্টো সাজিয়ে লিখলে, তা একটা খেলার মত লাগে বটে; কিন্তু খেলা শব্দটাই, উল্টো লিখলে কি পাওয়া যায় দেখা যাক। যথা- খেলা = আ ল এ খ = আলেক > আলেক। এই ‘আলেক' শব্দটি আরবী ‘আলাক' বই কিছু নয়। এভাবে শুধু সাধারণ বাঙালা শব্দ নয় বাঙালায় টেনে আনা, বেশুমার অ-সংস্কৃত ও সংস্কৃত নাম- শব্দ এবং অন্যান্য শব্দও উল্টো লিখলে, আরবী নামশব্দ ও অপরাপর শব্দ, বাক্য, বাক্যাংশ ইত্যাদি পাওয়া যায়।

নজীর দিতে, ঐ ‘‘অঙ্কস্য বামাগতি’’ সূত্র প্রয়োগ করে বাঙালা ভাষায় প্রচলিত, এক শ' একটি সংস্কৃতজ শব্দ লিখলে কি দাঁড়ায়- তা দেখা যেতে পারে। যথা- ১. রাম- এটি একটি সংস্কৃতি নাম- শব্দের- নাম। স্মরণীয় যে, প্যালেস্টাইনের একটি স্থানের নাম- রামাল্লা (রাম + আল্লাহ)। ধ্বনিতত্ত্ব অনুযায়ী ‘র-লয়োভেদ নাস্তি। ‘র' ও ‘ল'-এর কোন ভেদ নেই। এই বিধি অনুসারে ‘র' = ‘ল', রাম = লাম। অতএব রাম > লাম। এটি একটি আরবী বর্ণ উচ্চারণ ‘লাম'। এ শব্দের (Sound) অন্তাক্ষর ‘ম' ছাকিন (লোপ) করলে পাওয়া যায়- লা। একটি খাঁটি আরবী শব্দ (Word)। অর্থ- না, নেই।

২. হরি- এ শব্দটি উল্টো করে বা ডান থেকে বাম দিকে অক্ষর সাজিয়ে লিখলে- ই র হ = ‘ইরহ' পাওয়া যায়। উপরে বর্ণিত বিধি অনুসারে (র = ল) লিখলে শব্দটি হয়- ‘ইলহ'। এযে, আরবী ‘ইলাহ্' - তা নিশ্চিত। শব্দটির শেষ বর্ণে, স্বার্থে ‘আ' যোগ করলে পাওয়া যায় একটি খাছ আরবী শব্দ- ‘ইলাহা'। অর্থ- রব, প্রভু, উপাস্য।

৩. নারায়ণ- এখানে দু'টি এক শব্দে পরিণত হয়েছে। নার + অয়ন। ‘নার'- একটি খাঁটি আরবী শব্দ। অর্থ- আগুন। ‘অয়ন' অর্থ- প্রদক্ষিণ। অয়ন শব্দটি ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- ন অ (অন্তস্থ) অ = অন। ধ্বনি ত্বত্তের অপর বিধি অনুযায়ী ণ/ন = ল। যেমন- নুন = লুন, লাল (রং) = নাল (রং)। তেমনিভাবে- অন্ = আল। আর ‘নার্' শব্দে স্বার্থে আ-যোগে ‘নারা' বিপরীতক্রমে লিখলে হয় আ র আ না এবার ধ্বনিতত্ত্বের পূর্বোক্ত বিধি অনুযায়ী উল্টো লিখলে মেলে- আল আন > আল আন (ন-কে ছাকিন বা লোপ করলে পাওয়া যায়- ‘আলআ।'এ যে, ‘‘আল্লা’’ তা স্বীকার করা চলে। তাহলে, শব্দটির দু'অংশ জুড়লে (নার + অয়ন) পাওয়া যায় - আল্লা + অল (+ স্বার্থে আ) = ‘অ ল্লাল্লা'। এই ‘অল্লাল্লা' আদি বর্ণ বদলিয়ে ‘ই' লিখলে পাওয়া যায়- খাছ সংযুক্ত আরবী শব্দ ‘ইল্লাল্লা'- তাতে কোন সন্দেহ নেই।

উপরে আলোচিত তিনটি সংস্কৃত দেবনাম শব্দের স্বরূপ অনুযায়ী শব্দগুলো পর পর সাজালে (রাম-হরি-নারায়ণ) একটি বিস্ময়কর আরবী বাক্য পাওয়া যায়। তা হ'ল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা'। বলা দরকার যে, ঐ তিনটি দেবনামের প্রথমটি না-বাচক, দ্বিতীয়টি গুণবাচক এবং তৃতীয়টি কর্তৃবাচক। এ অর্থে নামটি কর্তাবাচক যে, হিন্দু মতে- তার তিন অবস্থা- তিন কর্ম। প্রথম অবস্থায় ‘সৃষ্টিকর্তা', দ্বিতীয় অবস্থায় ‘পালনকর্তা' এবং তৃতীয় অবস্থায় ধ্বংস-কর্তা। এই তিন অবস্থায় তার তিন নাম- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব বা রুদ্র। এ বিষয়ে সুধীরচন্দ্র সরকার লিখেছেন- ‘‘বিষ্ণু-নারায়ন, কৃষ্ণ।' অর্থাৎ যিনি বিষ্ণু, তিনি-ই নারায়ণ। ‘অবতার-শ্রেষ্ঠ' কৃষ্ণও তিনি-ই। লেখক আরও বলেছেন- মহাভারত ও পুরানে বিষ্ণু, প্রজাপতি ও শ্রেষ্ঠ দেবতা। (অবশ্য মনু-সংহিতায় ব্রহ্মাকে প্রজাপতি আখ্যা দেওয়া হয়েছে) প্রজাপতি হিসাবে তার তিনটি অবস্থার উল্লেখ আছে। প্রথমে সক্রিয় সৃষ্টিকর্তারূপে ব্রহ্মা, যিনি নিদ্রিত বিষ্ণুর নাভিপদ্মা হ'তে উত্থিত হ'য়েছেন। দ্বিতীয় বিষ্ণু, স্বয়ং রক্ষক হিসাবে অবতার, যথা- শ্রীকৃষ্ণ। তৃতীয় শিব বা রুদ্র; বিষ্ণুর কপাল-উদ্ভূত ধ্বংসের দেবতা।’’ মি. সরকার আরও লিখেছেন- ‘‘কোন কোন স্থানে ইনি আদিত্যের (সূর্যের সঙ্গে অভিন্নরূপে বর্ণিত হয়েছেন। কোথাও বা তিনি সূর্য্যরশ্মির সঙ্গে ব্যাপ্ত ব'লে বর্ণিত হ'য়েছেন ইনি (সূর্যের) সপ্তাকিরণের সঙ্গে ভূ-পরিক্রম করেন। ... ইনি ত্রিপদে জগত ব্যাপিয়া আছেন।’’ তাহ'লে বিষ্ণু নামাংকিত নারায়ন যে সূর্যের আগুন (নার)- তা সত্য। এখন এই আগুন বা অগ্নির পরিচয় খুঁজলে জানা যায়- হিন্দু মতে, ‘‘অগ্নি' পার্থিব দেবতাদের মধ্যে প্রধান।’’ এবং অগ্নির ত্রিমূর্তি (৩টি রূপ)- আকাশে সূর্য, অন্তরীক্ষে বিদ্যুৎ, পৃথিবীতে অগ্নি।’’ এ তিনটি যে, নারায়ন-(নার রূপে যিনি অয়ন বা ভ্রমণ করেন)। এর'-ই তিন রূপ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সৃষ্টি-স্থিতি ও ধ্বংস-কর্তার এই সত্ত্বাকে আল কোরআনে ‘নূর' বলা হয়েছে। আল্লাহ নিজেই নিজেকে ‘নূরের উপর নূর' বা ‘আলোর উপর আলো' বলেছেন। পাক কোরআনে সপ্ষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘‘আল্লাহই আছমান ও জমিনের আলো (নূর)। তাঁর জ্যোতির তুলনা এই যে, যেমন একটা তাক, তার মধ্যে একটা বাতি, বাতিটি কাঁচে ঘেরা, ঐ কাঁচ যেন একটা আলোকময় তারা, যা আলোময় করা হ'য়েছে, কল্যাণময় বৃক্ষ জয়। তুন-এর তেল দিয়ে, যা না পূর্ব-দেশীয়, না পশ্চিম দেশীয়। তার তেল এমনি আলোময় যে, আগুন ছোঁয়ার আগেই যেন জ্বলে ওঠে। (সে যেন) আলোর উপর আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন নিজের (এই) জ্যোতির দিকে পথ দেখিয়ে থাকেন- - -।’’

অতএব ‘নারায়ন' আর ‘নূর-উন্-নূর' (আল্লাহ) এক নন।

৪. কৃষ্ণ- পূর্বেই বলা হয়েছে- ‘কৃষ্ণ' নারায়নের পার্থিব অবতার। তাহ'লে এ শব্দের স্বরূপ কি, তা দেখা যেতে পারে, আগের পদ্ধতি অনুযায়ী এ শব্দ ভেঙে লিখে বাম থেকে ডানে বর্ণ বিন্যাস করলে কি হয়- তা দেখা যাক। যথা কৃষ্ণ = করিষ ণ। ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- ণ ষরিক। এখানে ঋ-কার = রি এবং ণ = ন = ল; আর ষ = শ ধ' বলে যাওয়া যায় - লা শরিক। অংশীহীন; তার মানে, শব্দটি কোন নাম নয়- একটি ধারণা মাত্র। অতএব ‘কৃষ্ণ'- অবতার কোন মানুষ অবতার নয়। একটি ধর্মীয় ধারণা।

তাই বাউল গানে বলা হয়েছে-

‘‘নন্দ-যশোদার ছেলে

কবে এসে ক'রলে লীলে?

প্রাণ-কৃষ্ণের এহি লীলে

ভেবে দেখ তাই\’’

-লালন শাহ্।

‘‘ব্রহ্ম- এবার ‘ব্রহ্ম' শব্দটি ভেঙে দেখা যাক। ব্রহ্ম = বরহম। বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- মহরব = মহ রব বা মহা রব। ‘রব' শব্দটি আরবী। অর্থ- প্রভু বা আল্লাহ। মহা রব তাই ‘মহা প্রভু'। ব্রহ্মাও তাই কোন নাম নয়- একটি ‘ধারণা' মাত্র।

৬. ব্রহ্মা- এ শব্দটি ‘ব্রহ্ম' শব্দের সঙ্গে স্বার্থে আ-যোগে গঠিত। অর্থ ও তাৎপর্য অভিন্ন।

৭. ঈশ- এ শব্দটি ডান থেকে বামে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- ইশ>শঈ। এই শাঈকে ‘শাহী' ধরা যেতে পারে। আর তা থেকে পাওয়া যেতে পারে- শাহী>সহি> ছহি। একটি আরবী শ্বদ। অর্থ-শুদ্ধ।

৮. ঈশ্বর- একইভাবে, ঈশ্বর = ঈশবর (ঈশা + বর = ছহী রব (বর উল্টো লিখলে ‘রব' পাওয়া যায়। তাহলে ঈশ্বর থেকে পাওয়া যায়- ‘ছহি রব। দুটোই আরবী শব্দ। অর্থ- শুদ্ধ/পবিত্র/পাক প্রভু। তথা আল্লাহ।

৯. ব্রাহ্মণ আলোচ্য শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- বরআহমন। একে পূর্বোক্ত নিয়মে লিখলে মেলে- নমহ আরব = নমহ আরব বা ‘নমস্য আরব'। আরব শব্দটি আরবী। ভারতীয় ব্রাহ্মণরা যে, আরব দেশের শ্রেষ্ঠ গোত্র কুরাইশ বংশের ইছলাম বিরোধী লোক এবং তারা মহানবী (দ.)-এর আবির্ভাবের পরে ভারতে আসেন, ব্রাহ্মণ শব্দটি তারই প্রমাণ বহন করে। ভারত বা তখনকার হিন্দের সাথে মক্কা-মদীনার লোকজনের সম্পর্ক-। ইছলাম প্রচারের আগেও ছিল, সে কথা হাদিছ সূত্রেও জানা যায়।

১০. বামন-এ শব্দটিও বর্ণিত নিয়মে লিখলেন বামন> নমআব নামাব তথা নবাব পাওয়া যায় ম-ব। এটি অন্তঃস্থব ওয়া শব্দটি আরবী। এটির নওয়াব রূপও প্রচলিত।

১১. নন্দ-‘নন্দ' ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় ননদঅ। ডান থেকে বামে হরফ সাজিয়ে লিখলে-অদনন হয়। এই অদনন> আদনান। একটি আরব গোত্র-নাম। আরবী শব্দ।

১২. হরিহর-এ শব্দটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়-হরইহর। বিপরীতক্রমে হরফ সাজালে দাঁড়ায় রহইরহ। র=ল অনুযায়ী লিখলে এবং শব্দটিকে দু'ভাগ করলে পাওয়া যায়-রাইরহ> লাইলহ এ থেকে -ল ইলহ মাঝের ‘হ' ছাকিন বা লোপে> লাইলাহা আদি ও অন্ত বর্ণে স্বার্থে আকার যোগে। অর্থ অপর কোন আল্লা নাই। প্রভু নাই।

১৩. কুশ-এই নাম শব্দটিও ভেঙে লিখলে মেলে কউশ। তার পর ডান দিক থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে হয়-শউক=শওক। শব্দটি আরবী। অর্থ-আন্তরিকতা, পছন্দ ইত্যাদি।

১৪. গোপাল-বর্ণিত নিয়মে শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়-গওপআল \ ডান থেকে বামে লিখলে দাঁড়ায়-লআ পওগ=লাপোগ=লা পাক (ও=আ) না পাক লে=ন, গ=ক)। অর্থ অপবিত্র। (পহেলা অংশ আরবী, পরের অংশ ফারছী)।

১৫. নিতাই-ঐ এক-ই নিয়মে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-ইআতইন=ইয়াতিন> ইয়াতিম (ন=ম)। শব্দটি আরবী। অর্থ-পিতামাতাহীন।

১৬. ভরত-এ শব্দটিও উপরে বর্ণিত নিয়মে লিখলে দাঁড়ায়-তরভ। তা থেকে তরফ (ভ=ফ)। আরবী শব্দ অর্থ-এলাকা।

১৭. অর্জুন-আলোচ্য শব্দটি ভেঙে লিখলে হয়-অরজউন। ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে মেলে-নউজরঅ=নুজর)> নজর (আদ্যে উ-কার লোপে)। আরবী শব্দ অর্থ দৃষ্টি।

১৮. অতুল-এশব্দটি বেশ মজাদার। ভেঙে লিখলে মেলে-অতউল। আর ভাঙা শব্দটি ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-লউতঅ=লুত। আরবী শব্দ। একজন রছুলের নাম। আল কোরআনে তাঁর বিশেষ উল্লেখ রয়েছে-ছুরা ৬, ৭, ১১, ১৫, ২১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩৭, ৫৩, ৫৪ ও ৬৯-এ।

১৯. তাল-এই নাম-শব্দটা ভাঙলে পাওয়া যায়-ও আলা। তার পর উপরে বর্ণিত নিয়মে লিখলে মেলে- লআত=লাত। পবিত্র কাবা শরীফে ইছলাম পূর্ব যুগে অবস্থিত-৬০টি মূর্তির একটির নাম। শব্দটি আরবী।

২০. তাল-বে তাল-এটি একটি শব্দ-তাল-ব-তাল। অর্থ-পরস্পর সম্পর্কিত। (যেমন-দস্ত, ব-দস্ত। দস্ত ফারছী শব্দ। পূর্বোক্ত নিয়মে সাজালে পাওয়া যায়-লাত এক লাত। ‘এ' লোপে হয়-লাত-ব-লাত। তার অর্থ-দেবতায় দেবতায়।

২১. মনু-এ দুহরফী শব্দের মধ্যে তিনটি বর্ণ আছে। যথা-মনউ। ডান থেকে বাম দিকে বর্ণগুলো সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-উনম। এতিন বর্ণের প্রথমটির মধ্যে আর মাঝেরটি প্রথম বসালে হয়-নউম। এর রূপান্তর ‘‘নŠম'। একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ-ঘুম। প্রতিদিন ফজরের আজান দেবার সময় মুয়াজ্জিন বলেন-‘‘আচ্ছালাতো খায়রুম মিনানৌম।। ‘ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম।'

২২. ররাহ-এই অবতার-নামটিতে আছে চারটি বর্ণ। বর আহ। শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-হআরব। অর্থাৎ -হারব। আদি হ-ধ্বনি বাদ দিলে মেলে ‘আরব।' এ শব্দ দিয়ে আরব দেশীয় কোন অবতার বা নবী-রছুলের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত ধারণাটি রাখা হয়েছে গোপন।

২৩. মৎস্য-আলোচ্য অবতার-নামটি ভেঙে সাজালে পাওয়া যায়-মৎসইয়। বাঁ দিক সাজিয়ে উল্টো করে লিখলে দাঁড়ায়-ইয়সতম। (ৎ=ত)। একে হাসতম রুপে লেখা চলে। এই হাসতম> হাসমত। আরবী শব্দ আড়ম্বর।

২৪. সিংহ-নৃ-সিংহ-অবতার হ'ল-নর রূপী সিংহ। তার অর্থ এটি নারায়ণ বা বিষ্ণুর সিংহ অবতার। এ সিংহ শব্দ ভাঙলে সইনহ পাওয়া যায়। শব্দটি ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায় হনইস=হনিস।> ইনিস (হ লোপে)। শব্দটি যে আমাদের চিরপরিচতি আনিস বা আনিছ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ আরবী শব্দটির অর্থ-বন্ধু, সাহায্যকারী। নৃসিংহ অবতারের উদ্দেশ্যও তাই। হিরন্যকশিপুকে হত্যা করে প্রহলাদকে সাহায্য করা।

২৫. কূর্ম্ম-এ অবতার নামটি ভাঙলে পাওয়া যায়-কঊরমম। শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-মমরঊধ। একে মমরুক এবং এ থেকে আদি ম-বে ন ধরলে নমরুক> নমরুদ (ক=দ) মেলে। শব্দটি আরবী। হজরৎ ইবরাহীম (আ.)-এর সমকালীন খোদাদ্রোহী বাদশাহ। আল কোরআনের ছুরা ‘বাকারা'য় তার উল্লেখ আছে।

২৬. কালা-কৃষ্ণ (দেবতা) অর্থে। ভেঙে সাজালে পাওয়া যায-কুআল আ। উল্টো করে পূর্বোক্ত নিয়মে লিখলে দাঁড়ায় আল আক= আলাক। যা আরবী শব্দ। শব্দটি আল কোরআনে পাওয়া যায়। অর্থ-বীর্য। ‘কৃষ্ণ' বীর্যবান বলেই কি এ নাম?

২৭. অরুণ-সূর্যের সারথি। এই নাম বাচক শব্দটি বেশ তাৎপর্যময়। এটি ভাঙলে পাওয়া যায়-অরউন। ডান দিক থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-ণ উ র অ। এ থকে আসে নূর। আরবী শব্দ। অর্থ আলো। সূর্যের সাতটি রশ্মির (সপ্তাশ্ব) সাথে যুক্ত অরুণ তাই সূর্যের নার (আগুন) নয়, আলো। নূর। (ণ=ন)।

২৮. অরবিন্দ-এ নিাম শব্দ ভাঙলে পাওয়া যায়-‘অরবইনদ' তারপর শব্দটি ডান থেকে বামে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে-দনই বরঅ=দনিবর। এ থেকে ‘ন' লোপ করলে পাওয়া যায়-দবির। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-লেখক।

২৯. রমেশ-এ নাম শব্দে চারটি বর্ণ আছে। যথা-র ম এ শ। ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে হয়-শ এমর বা শেমর। গ্রাম্য লোকেরা হজরৎ ইমাম হুসাইনের হত্যাকারী শিমারকে ‘শেমর' নামেই চেনে।

৩০. রাম বিলাস-নাম-বাচক এ শব্দ ভেঙে সাজালে দাঁড়ায় স আল ই ব ম আর=সালিব মার> সালিমার (ব-লোপে)। লাহোরে অবস্থিত বিখ্যাত মোগল উদ্যান। শালিমার বাগ। আরবী ‘শাল' শব্দ থেকে জাত। শাল অর্থ পশমী চাদর।

৩১. ঋক-এ বেদ নামটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়-রীক। তারপর পূর্বোক্ত নিয়মের ডান থেকে বা দিকে অক্ষর-বিন্যাস করে লিখলে মেলে কইর। এবার বাম পাশের ক মাঝে স্থাপন করলে পাওয়া যায় ‘ইকর।' একটি খাছ আরবী শব্দ। পবিত্র কোরআনের নাজিলকৃত প্রথম ছুরার প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দ। ইকুর বিছমে রবিবকাল্লাজি খালাক।' -‘পড়, তোমার রব আল্লাহর নামে, যিনি তোমাকে মাটি দিয়ে পয়দা করেছেন।

৩২. সাম-এ বেদ নাম শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় স আ ম। তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-মআছ। মআছ> মুআছ (আদ্যবর্ণে উ যোগে)। তারপর মধ্য বর্ণ অন্তে স্থানান্তর করলে মেলে-- ‘মুছা।' একটি আরবী শব্দ। আল-কোরআনে বর্ণিত একজন নবীর নাম।

৩৩. যজু-আলোচ্য বেদ নামটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে সাজালে পাওয়া যায-যজউ> উজয বা উজ্জা (স্বার্থে আ-কার যোগে)। একটি আরবী শব্দ। ইছলাম পূর্ব যুগে কাবাঘরে স্থাপিত ৩৬০টি দেব মূর্তির একটির নাম।

৩৪. অথবর্ব (বেদ)-এ বেদ-নাম শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়-দু'টি অংশ। অথ্+রবব (উচ্চারণ রবেবা)। উপসর্গ রূপে ব্যবহৃত-‘অর্থ'-আরবী artiche আলু (বা/অল)-এর ছদ্মরূপ (ল=থ)। আরবী নিয়মে ‘রবব'-এর পূর্বে আল্ শব্দ ব্যবহার করলে পরবর্তী শব্দের আল্ বর্ণের প্রভাবে সন্ধির নিয়মে আর রবেবা হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু ‘র' স্থানে ‘থ' বসিয়ে মূল শব্দ obscure করে দেওয়া হয়েছে। অতএব এটি (রব)ও একটি কোরআনিক আরবী ছদ্মবেশধারী) শব্দ।

৩৫. গীতা-এ নাম শব্দটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়-গঈত আ। তারপর ডান দিক থেকে বাঁ দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে-আতীগ= আতিক (ঈ= ই, গ= ক)। এটাও একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ- মুক্তিদানকারী।

৩৬. ভাগবত- এ নাম শব্দটি ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় ভ আগবত, তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে-সাজিয়ে লিখলে মেলে- তবগ আভ=ত ব গা ভ। এখন ধ্বনিতাত্ত্বিক নিয়ম অনুযায়ী ‘গ' স্থানে ‘ক' ও ‘ঙ' স্থানে ‘ত' বসালে পাওয়া যায়- ‘তবকাত'। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-স্তরসমূহ।

৩৭. বেদ-পূর্বোক্ত নিয়মে-ভাঙলে মেলে ব এ দ। শব্দটির শেষ হরফ দ স্থানে ত বসালে পাওয়া যায় বএত= বয়েত বা বয়ৎ। একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ দু'চরণওয়ালা কবিতা।

৩৮. বংশ- এ নামবাচক শব্দটির মূল রূপ- ব ন শ। এবার ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে পাওয়া যায়- শ ন ব। এবার মধ্যের ন আদ্য বর্ণ করলে শব্দটি হয় নশব। তারপর শ> স> ছ- অনুক্রমে ‘শ' স্থানে ‘ছ' লিখলে মেলে নছব। শব্দটি আরবী। অর্থ পরিবার বা বংশ।

পূর্বোক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘হরি-বংশ' গ্রন্থ নামের অর্থ-‘নছবে ইলাহী' বা ‘প্রভু-বংশ'।

৩৯. দেব-পূর্বোক্ত নিয়মে শব্দটি ভেঙে সাজালে মেলে-দএব= বএদ। এখন ‘দ' স্থানে ‘ত' বসালে পাওয়া যায় বএত বা বয়েৎ (বয়ৎ)। একটি আরবী শব্দ। অর্থ শ্লোক।

৪০. ঋষি-এ নাম শব্দটি ভেঙে সাজালে মেলে-রিষি- রইষই। একে র ই স ই 'ও লেখা যায় (ষ=স)। তারপর ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে মেলে-ইসইর বা ইসির। শব্দটির প্রথম বর্ণের পর ‘আ' বসালে পাওয়া যায়-ইআসির বা ইয়াসির তথা ইয়াসির। একটি আরবী নাম শব্দ। ইয়াসির আরাফাত-এর কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে।

৪১. কাশী- স্থান নামবাচক এ শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়-ক আ ই শ দ। এবার ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে দাঁড়ায়-ঈ শ আ ক। এবার মাঝের আ-ছাকিন বা লোপ করলে মেলে ঈশক বা ইশক। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-প্রেম। ‘ঈশ্বর'-প্রেমিকরা কাশীতে গিয়ে জড়ো হয় কি এ কারণে?

৪২. বারানসী- স্থান নামবাচক এ শব্দটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়- ব আ র আ ন স ঈ। তারপর ডানদিক থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-ঈ স ন আ রা ব। শব্দটি তিন ভাগ করে লেখা যায়-ঈসন আরব। অথবা ‘ইছন আরব' (এ আরব নয়)।

৪৩. কৈলাস-স্থান নামবাচক এ শব্দটিও ভেঙে লিখলে ক ঈ ল আ স মেলে। তারপর ডানদিক থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- স আ ল ঐ ক বা সালেক। এবার মধ্যস্থ ঐ-কার স্থানে ই-কার বসালে পাওয়া যায়- সালিক বা ছালিক। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-ধর্মপথের খাছ পথিক। শব্দটি উচ্চারণ অনুযায়ী ক ই ল আ স> সালিক> ছালিব রূপেও লেখা যায়।

৪৪. অলকা- এ নাম শব্দটিও পূর্বোক্ত রূপে ভেঙে ডান থেকে বামে সাজিয়ে লিখলে-অ ল ক আ> আকল বা আ'কল পাওয়া যায়। একটি খাঁটি আরবী শব্দ। অর্থ-জ্ঞান, বুদ্ধি ইত্যাদি।

৪৫. হাওড়া-আলোচ্য স্থান-নামটি ভেঙে সাজালে দাঁড়ায় হ আ ও ড় আ। তারপর পূর্বোক্ত নিয়মে বর্ণ-বিন্যাস করলে দাঁড়ায়- আ ড় ও আ হ বা আরোয়াহ্ (ড়-র)। এটি একটি আরবী শব্দ। ‘আরোয়া পাক' অর্থ পবিত্র কবর।

৪৬. কাপালিক-জাতি-নামবাচক এ শব্দটি ভেঙে সাজালে পাওয়া যায়- ক আ প আ ল ই ক। তারপর ডানদিক থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে হয়- ক ই ল আপ আক= কিলাপাক। আদি বর্ণ ক লোপ করলে দাঁড়ায় ইলাপাক। তারপর ই বাদ দিলে লা পাক (আ+ফা.)। শব্দদ্বয় ‘না পাক' রূপে সুপরিচিত। গোপাল দেখুন)।

৪৭. কিরাত= জাতি নাম-বাচক এ শব্দটি ভেঙে সাজালে পাওয়া যায়-ক ই র আত। তারপর ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে মেলে- ত আ র ই ক, বা তারিক। বিখ্যাত আরবীয় মুছলিম সেনাপতির নাম।

৪৮. ব্রাত্য- ইতর জাতি নাম-বাচক এ শব্দটি ভেঙে সাজালে দাঁড়ায়- ব র আ ত ই য়। তারপর ডান থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে-ই য় তা র ব, ই ই য় ৎ রা ব। তা থেকে আতরাব> আতরাফ। একটি আরবী শব্দ। অর্থ- নিচু শ্রেণীর মর্যাদাহীন লোক। (ব= ফ)।

৪৯. শূদ্র- এই জাতিবাচক নাম-শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- শ ঊ দ্ দ্ র। তারপর পূর্বোক্ত নিয়মে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে দাঁড়ায়-রদ্দউশা (ঊ=উ)। তা থেকে রদ্দিশ (উ=ই)। শব্দটির শেষ বর্ণ লোপ করলে একটি খাঁটি আরবী শব্দ মেলে। -রদ্দি। অর্থ-নিকৃষ্ট, খারাপ, বাজে ইত্যাদি।

৫০. বৈষ্ণব-জাতি- নামবাচক এ শব্দটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়-ব ই ষ ন ব। তারপর ডান দিক থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে মেলে-ব ন ষ ই ব, বা বনসিব (ষ=স)। শব্দটির আদ্যাক্ষরের পর ‘দ' বসালে হয় বদনসিব বা বদনছিব (ফা.+আ.)। অর্থ দুর্ভাগ্য। আর আদ্যক্ষর ‘ব' বাদ দিলে হয়- নসিব> নছিব। আরবী শব্দ। অর্থ ভাস্য।

৫১. ব্রজ-স্থানবাচক এ শব্দটিও ভেঙে লিখে ডান থেকে বামে বর্ণ সাজালে-বরজ> জরব পাওয়া যায়। শব্দটি আরবী। অর্থ আঘাত করা। বৈষ্ণবদের ধর্মাচারের সাথে এর সম্পর্ক আছে। আবার বর্ণ-বিন্যাসএ পাশ করলে মেলে ‘জবব' ‘রজব' তিনটাই আরবি শব্দ।

৫২. ব্রত-এ নাম-শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে তিনটি হরফ পাওয়া যায়। যথা-ব র ত। তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে-সাজিয়ে লিখলে মেলে-তরব। তা থেকে, ব স্থানে ফ বসালে সুপরিচিত ‘তরফ' শব্দ রূপ লাভ করে। এ আরবী শব্দটির অর্থ একটি স্থানের অংশ বা এলাকা।

৫৩. রাধিকা-এ নাম-শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়-র স ধ ই ক আ। তারপর ডান থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে-আ ক ই ধ আ র, বা আধিকার> আকিদার (ধ=দ)। শব্দটির শেষ বর্ণ বাদ দিলে মেলে ‘আকিদা'। একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ-কোন বিশেষ ধর্মমত ও আচরণ।

৫৪. কুব্জা- এই নাম-শব্দটি ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় ক উ ব জ আ। তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে পাওয়া যায়- আ জ ব উ ক ‘আজবুক> উজবুক (আ=উ)। অভিধানাদিতে উজবুক শব্দটিকে ‘উজবেগ' তুরকী জনকওমের সঙ্গে সম্পর্কিত ধারণা করে তুরকী শব্দ বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে এটি আরবী শব্দ। অর্থ নির্বোধ নোংরা লোক।

৫৫. সীতা-আলোচ্য শব্দটিও ভেঙে পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে মেলে-আ ত ঈ স= আতীস। মাঝের ঈ-কার ডানদিকে নিলে হয়-আতসী। একটি ফারছী শব্দ। অর্থ-অগ্নিময়ী। এ প্রসঙ্গে সীতার অগ্নি-পরীক্ষার কথা স্মরণীয়। কিন্তু মধ্য বর্ণে ঈ-কার স্থানে ‘ল' বসালে পাওয়া যায় আতলস।

৫৬. কালী-কালী বা কালি-নাম শব্দটিও ভেঙে তারপর ডানদিক থেকে বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- ক আল ঈ> ঈ ল আ ক= ঈলাক> ইলা+ক (স্বার্থে যুক্ত)। ইলা>ইলা (ঈ-ই)। আরবী শব্দ। অর্থ প্রভু। হিন্দু মতে, এ-দেবী সকল সৃষ্টির মূল। তাই একে তন্ত্র মতে আদ্যাশক্তি বলা হয়। আসলে শব্দটি কোন নাম নয়, একটি ধারণা মাত্র। শব্দটি অন্যরূপেও ভাঙা এবং লেখা যায়। যথা- ক আল ই। ডান থেকে বামে লিখলে পাওয়া যায়, ই ল আ ক-ইলাক> আ লোক (ই=আ)। শব্দটি আরবী। অর্থ- বীর্য। অর্থাৎ শক্তি-ই। সে জন্যই কি এ দেবী ভয়ঙ্করী।?

৫৭. রমা- এ নাম-শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে, তারপর যথা নিয়মে ভেঙে সাজিয়ে লিখলে মেলে-র ম আ> আমর। আমর একটি আরবী শব্দ। অর্থ-আনুগত্য।

৫৮. কমলা-আলোচ্য নারী নাম-বাচক শব্দটি উপরে লিখিত নিয়মে ভেঙে, ডান থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-ক ম ল আ> আ ল ম ক। এবার শেষ হরফ ‘ক' বাদ দিলে পাওয়া যায়-আলম। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-দুনিয়া।

৫৯. আমিশ্যা-এ শব্দটিও ঐ নিয়মে ভেঙে, ডান থেকে বামে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে-আ ম ই শ আ। তারপর আ শ ই ম আ=আশিমা> আজিমা (শ=জ)। একটি আরবী শব্দ। আজিম শব্দের অর্থ মহান।

৬০. বিশাখা- এ-শব্দটিও পূর্বোক্তরূপে ভেঙে যথাবর্ণিত নিয়মে লিখলে দাঁড়ায়- বই শ আ খ আ> আ খ আ শা ই ব = > আকাশিব > আকাসিব একটি আরবী শব্দ। অর্থ- অধিক উৎপাদনকারী ব্যক্তি।

৬১. মায়া (বুদ্ধমাতা) - এ নাম বাচক শব্দটি ভেঙে লিখলে হয়- ম আ য় আ । ডান দিক থেকে বাম দিকে হরফ সাজালে দাঁড়ায়- আয়আম> আইয়াম। একটি আরবী শব্দ। অর্থ সময়, কাল, যুগ ইত্যাদি। ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত'-এর কথা সবাই জানেন। (য় = ই এবং আ = য়া)

৬২. উত্তরা- নারী-দেবতার নাম-বাচক এ-শব্দটিও ভাঙলে দাঁড়ায়- উত্তর আ। এরপর ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে মেলে- আরওউ> আরও > আরজ > আরজু (জ = জ্জ)। একটি আরবী শব্দ। অর্থ- কামনা শব্দটির ছহী রূপ - ‘উরজ্বহ।

৬৩. উমা- এ দেবী- নামটিও উপরের নিয়মে ভেঙে, ডানদিক থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে- উম আ> আ ম উ = আমু পাওয়া যায়। এটি একটি নদীর আরবী নাম। বিখ্যাত দু'টি নদীর একটি আমু দরিয়া, অপরটিও উপরের শির দরিয়া।

৬৪. পূজা- এই ধর্মীয় কর্ম-বাচক নাম শব্দটিও উপরের নিয়মে ভাঙলে দাঁড়ায়- প ঊ জ আ। তারপর ডানদিক থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে মেলে- আজপা > অজুপা তারপর অজুপা > অজিপা বা অজিফা (উ = ই, প = ফ)। একটি আরবী শব্দ। অর্থ আল্লাহ পাকের বিশেষ রকম ইবাদত।

৬৫. কীর্তন- বৈষ্ণবদের এ ধর্মীয় কর্ম-নামটি পূর্ববৎ ভেঙে ডান থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- ক ঙ্গ র ত ন > ন ত র ঙ্গ ক = ন, তরীক > লা তরীক। দু'টিই আরবী শব্দ। অর্থ- পদ্ধতি হীল, অনির্দিষ্ট। অর্থাৎ শব্দ। অর্থ- পদ্ধতি হীন, অনির্দিষ্ট। অর্থাৎ যার কোন নির্দিষ্ট ধারা বা তরীকা নেই।

৬৬. গয়া- স্থান বাচক এ নাম শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে, ডান দিক থেকে বাম দিকে বর্ণপাত করে লিখলে দাঁড়ায়- গ য় আ > আ য় গ। তারপর অন্তঃস্থ ‘য়' লোপে পাওয়া যায় আগ (আয় = আ) এটি একটি ফারছী শব্দ। অর্থ- আগুন।

৬৭. কোশী- এই নদী নামটি উপরে লিখিত নিয়ম অনুযায়ী লিখলে মেলে ক ও শ ঈ > ঈ শ ক (ও লোপ) = ইশ্ক। একটি আরবী শব্দ। অর্থ প্রেম।

৬৮. রেবা- এ নদী নামটি উপরে বর্ণিত নিয়মে ভেঙে, ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে পাওয়া যায়- র এ ব আ > আ ব এ র = আবের > আরেব (বর্ণ বদলে) আরেফ (ব = ফ)। একটি আরবী শব্দ। অর্থ ধর্মীয় জ্ঞানে বিশেষভাবে জ্ঞানী। শব্দটি সরাসরি রেবা > আরেব > এবং তা থেকে ‘আরেফ' রূপেও দেখানো যায়। শব্দটির শুদ্ধ রূপ আরীফ বা আরিফ।

৬৯. পদ্মা (পদদা)- এটি একটি দেবী নাম। আবার নদীরও নাম। সংস্কৃতি নিয়মের বদলে বাঙালা নিয়ম উচ্চারণ লিখলে হয়- পদ্দা। তারপর আগের নিয়মে ভেঙে, ডান দিক থেকে বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- প দ্ দ আ> আ দ দ্ প। এ শব্দের ‘প' বর্ণ বাদ দিলে পাওয়া যায় - আদ্দ বা আদ্ত = আদৎ। এটি একটি আরবী শব্দ। অর্থ মূল, গোঁড়া ইত্যাদি।

৭০. কমলিকা- এই নাম শব্দটি ভেঙে লিখলে মেলে ক ম ল ই ক আ। তারপর পূর্বোক্ত নিয়মে বর্ণ-বিন্যাস লিখলে পাওয়া যায়- আ ক ই ল ম ক > আকিলমক > আকিলম (অন্তাক্ষর লোপে) > পাওয়া যায় আলিম (মদ্যক্ষার লোপে)। আরবী শব্দ। অর্থ- বিদ্বান, জ্ঞানী। এ শব্দটি (আকিলস) থেকে আকিল, ও মাকিএ, আকলিমা, আকিলা, ইকলিম প্রভৃতি আরবী শব্দও পাওয়া যায়।

৭১. মালবিকা- এ নাম শব্দটি ভেঙে লিখলে মেলে ম আ ল ব ই ক আ। শব্দটি ডান থেকে বামে হরফ সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- আ ক ই ব ল আ ম = আকিবলাম > কিরলা (প্রথম ও শেষ বর্ণ বাদ দিলে। একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ- কা'বা শরীফের দিক-নির্দেশক, পিতা, অত্যন্ত সম্মানিত, অত্যন্ত পবিত্র ইত্যাদি।

৭২. অমিতা- এ নাম শব্দটি ভেঙে পূর্বোক্ত নিয়মে ডান দিক থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে- অ ম ই ত আ > আ ত ই ম অ = আতিম > য়াতিম বা এতিম। (আ = য়া = এ)। আরবী শব্দ। অর্থ পিতামাতাহীন গরীব শিশু। শব্দটি ‘ইয়াতীম' রূপেও পরিচিত।

৭৩. পাঁজা- এ উপাধি রূপ নাম- শব্দটি ভেঙে লিখলে পাওয়া যায়- প ন আ জ আ। তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে মেলে- আ জ আ ন প = আজানপ। শব্দটির শেষ বর্ণ বাদ দিলে হয়- আজান। একটি খাঁটি আরবী শব্দ। মুছলমানদের নামাজ পড়ার জন্য মছজিদে আসার আহবানের নাম ‘আজান'।

৭৪. দাস- এ উপাধি-নামটিও ঐ নিয়মে ভেঙে পূর্বের মত সাজিয়ে লিখলে মেলে, দ আ স > স আ দ বা সা'দ > ছা'দ। একটি আরবী শব্দ। অর্থ- পবিত্র, সুখী।

৭৫. শীল- এ উপাধি- নাম বাচক শব্দটি ভাঙলে দাঁড়ায়- শ ঈ ল। তারপর ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে পাওয়া যায়- ল ঈ শ। শব্দটির তিনটি বর্ণই আনুক্রমিকভাবে ধ্বনিতত্ত্বের নিয়ম মাফিক বদলালে মেলে র ঈ শ (ল = র) > রঈশ (ঈ = ই) > রইস (শ = স) এবং > রইছ (স = ছ)। একটি খাছ আরবী শব্দ। অর্থ - ধনী, অভিজাত।

৭৬. আচার্য্য- এ উপাধিবাচক নাম- শব্দটি ভেঙে লিখলে দাঁড়ায়- আ চ আ র য ই য়। তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে হয়- ইয়- ই য় য র আ চ আ। অর্থাৎ ইয়য্রাচা। তা থেকে ইজরাচা (ইয় = আ; ধ = জ) > ইজরা (চা বাদ দিলে) = ইজারা। একটি আরবী শব্দ। অর্থ- জমির ওপর মেয়াদী চুক্তিবদ্ধ মালিকানা সত্ত্ব।

৭৭. গুড়- ব্রাহ্মণদের এক বিশেষ শ্রেণীর উপাধি রূপ এই নাম শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- গ উ ড়। তারপর শব্দটির তিনটি বর্ণ যথাক্রমে ডান দিক থেকে বাম দিকে সাজিয়ে লিখলে মেলে- ড়উগ। এখন ড় = ট এবং ট = ত ধ' বলে পাওয়া যায়- ট উ গ > ত উ গ। তারপর- তউগ > ত ও গ (উ = ও ) এবং তা থেকে তওক (গ = ক)। তওক একটি আরবী শব্দ। অর্থ- শিকল। লানতের তওক-আল্লাহর অভিশাপের শিকল।

বলা দরকার যে, এই ‘গুড়' শব্দ থেকে ‘গৌড়' শব্দের উৎপত্তি। যেমন গৌড় দেশ, গৌড় ভূমি, গৌড় নগরী, পঞ্চ গৌড় ইত্যাদি। শব্দটি ব্রাহ্মণ-সম্পৃক্ত ব'লেই ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখকদের কাছে অতিশয় মর্যাদা জনক ও গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এটি অভিশপ্ত শব্দ। সেজন্যই কি গৌড় নগরী প্লেগে ধ্বংস হয়ে যায়?

৭৮. আদিগা- এই ভারতীয় খানদানী উপাধি-বাচক নাম-শব্দটি উপরে লিখিত নিয়মে ভাঙলে- আ দ ই গ আ পাওয়া যায়। তার পর পর, পূর্বধারা অনুসারে ডান থেকে বাম দিকে বর্ণ-বিন্যাস করে সাজালে মেলে- আ গ ই দ আ ? আগিদা। এবার শব্দ মধ্যে গ স্থানে ক বসালে হয়- আকিদা। একটি খাঁটি আরবি শব্দ। অর্থ ধর্মাচরণ, বিশ্বাস। (গ = ক)। এ থেকে তাকিদা (গ = ষ) ও তাকিদ (অন্তের আ-কার লোপে) মেলে। এটাও আরবী শব্দ।

৭৯. বেরা- একটা ভারতীয় কূল-বাচক উপাধি এবং নাম-শব্দ। শব্দটি ভেঙে, সাজিয়ে, ডান পাশ থেকে বাম পাশে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে, মেলে- ব এর আ > আ র এব = আরেব। তারপর ব স্থানে ফ বসালে পাওয়া যায়- আরেফ। একটি খাঁটি আরবী শব্দ। অর্থ- ধর্মীয় গুপ্তজ্ঞানে বা মারিফতে যিনি জ্ঞানী।

শব্দটির পদমধ্যস্থ এ-কার বাদ দিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- আরব। এটাও আরবী শব্দ।

৮০. মোদক- এই উপাধি বাচক নাম-শব্দটিও উপরের নিয়মে ভেঙে; তারপর ডান দিক থেকে বাম দিকে সাজিয়ে বর্ণ বিন্যাস করলে পাওয়া যায়- ম ও দ ক = ক দ ও ম > কদোম বা কদম। অর্থ পা, চরণ। একটি বিশিষ্ট আরবী শব্দ। পীর-দরবেশানের পা-কে কদম মোবারক বলে উক্তি ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

৮১. বড়া- এই আসামী উপাধি বাচক নাম-শব্দটিও ভঙে পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়- বড় আ > আড়ব। শব্দটির মাঝের ড় স্থানে র বসালে পাওয়া যায় দেশ- নাম- আরব। একটি আরবী শব্দ।

৮২. বড়- উপাধিবাচক। এ নাম শব্দটি যথানিয়মে ভেঙে; উপরে বর্ণিত আকারে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- ব ড় উ> উ ড় ব। তার পর উ স্থানে আ এবং ড় স্থানে ‘র' বসালে মেলে- আড়ব > আরব। আরবী শব্দ। এ থেকে আরব, আবরু, আবরা ইত্যাদি ফারছী শব্দও পাওয়া যায়।

৮৩. বড়ুয়া- আলোচ্য শব্দ রূপটিও উপাধি বিশেষ এবং নাম-শব্দ। এটিকে পূর্ববর্ণিত নিয়মে ভেঙে; ডান দিক থেকে বামে হরফ সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়- ব ড় উ আ> আউড়ব। এবার উ বাদ দিলে এবং ড় কে র করলে মেলে- আরব। এটিও একই আরবী শব্দ। তবে কি এই তিন রকম উপাধি বিশিষ্ট তিনটি গোত্রই আরব দেশ থেকে ভারতে, আসামে, বাঙালায় এসেছে?

৮৪. বচ্চন-এ ভারতীয় খানদানী উপাধিবাচক নাম-শব্দটি বর্ণিত নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ-বিন্যাস করে সাজালে পাওয়া যায়-বচচন> নচচব=নচ্চব বা নছব (চ্চ=ছ)। আরবী শব্দ। অর্থ-বংশ।

৮৫. আবীর-এ রঙ-নাম বাচক শব্দটি পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে; ডান থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-আবঈর>র ঈবআ-রীবা। শব্দটি আরবী। অর্থ সুদ। রীবা> রিয়া (র=য়) ও হ'তে পারে। সেটিও আরবী শব্দ। অর্থ কপট আচরণ বা কপটতা।

৮৬. বৈশাখ-এই মাস-নামটি উপরে বর্ণিত নিয়মে ভেঙে; তারপর ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে মেলে-বইশআখ>খআশইব=খাশিব>খাসিব। একটি আরবী শব্দ। অর্থ শুক্ক বা শুকনো। বৈশাখ মাস শুষ্ক মাস-ই।

৮৭. পৌষ-এ মাস-নামটি আলোচিত নিয়মে ভেঙে; তারপর ডানদিক থেকে বামদিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে-পঅউষ>ষউঅপ এবং তা থেকে ষুঅপ মেলে। অতঃপর ষ স্থানে খ বসালে খুঅপ> খুঅফ (প=ফ)> খওফ পাওয়া যায়। এটি একটি আরবী শব্দ। অর্থ-ভয় পাওয়া, পালিয়ে যাওয়া ঃ, অপ্রিয়, অস্বস্তি ইত্যাদি। পৌষ মাসের চারিত্র্যও এ রকম-ই। অস্বস্তিকর।

৮৮. মাঘ-এ মাস-নামটিও উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী ভেঙে; তারপর বর্ণিত নিয়মে ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-মআঘ>ঘআম=ঘাম। এবার ম-স্থানে ‘ব' বসালে পাওয়া যায়-ঘাব এবং ঘাব-এর ঘ-সরিয়ে ‘গ' লিখলে গাব। এটি একটি আরবী শব্দ। অর্থ-স্থবির, বিকাশহীন। মাঘ মাসের (তীব্র শীতের জন্য) চরিত্রও তা-ই।

৮৯. বর্ষা-ঋতু-নির্দেশক এ নাম-শব্দটি বর্ণিত উপায়ে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে সাজিয়ে নতুন বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে দাঁড়ায়-বরষআ>আষরব=আষরব। শব্দটির মধ্য বর্ণ ষ স্থানে স লিখলে হয় আসরব। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-অধিক পরিমাণ পানিপূর্ণ। এ শব্দটির মধ্যবর্ণ ষ লোপ করলে পাওয়া যায়-আরব। আর আসরব-এর শেষ হরফ ব বাদ দিলে হয়-আসর>আছর। এটাও আরবী শব্দ। অর্থ বৈকালিক নামাজের সময়।

৯০. বিছা-এ রাশিনাম বাচক শব্দটি যথা নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-বইছআ>আছইব=আছিব। এ থেকে উৎপন্ন হয়->আজিব (ছ=জ)>আজব (ই-কার লোপে) এটি একটি আরবী শব্দ। অর্থ-অদ্ভূত, বিস্ময়কর।

৯১. মীন-এ রাশি, নামটিও উপরের নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-মঈন>নঈম=নয়ীম বা নইম। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-সুখ, নেয়ামত, সম্পদ ইত্যাদি।

৯২. মকর-আলোচ্য রাশি নামটি উপরের নিয়ম অনুযায়ী ভাঙাগড় ছাড়া শুধু মাঝের হরফ প্রথমে বসালেই একটি শব্দ পাওয়া যায়। তাহলো-কমর। একটি আরবী শব্দ। অর্থ চাঁদ। এটি আল কোরআনের ছুরা আর রহমানে রয়েছে। শব্দটি ডানদিক থেকে উল্টো করে সাজালে পাওয়া যায়-রকম সেটাও আরবী শব্দ। অর্থ-ধরণ, শ্রেণী।

৯৩. তাল-সুরের টান নির্দেশক এই নাম-শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে, তারপর ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ-বিন্যাস করে লিখলে দাঁড়ায়-তআন>নআত=নাত। একটি আরবী শব্দ। রছুল (দ.)-এর প্রশংসা। এর শুদ্ধ লেখন রূপ-না'ত।

৯৪. বরা (ভয়)-‘বরা' একটি বিশেষ রকম ভীতির নাম-শব্দরূপে ভাঙলে মেলে বরআ। তারপর পূর্বোক্ত নিয়মে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-আরব=আরব। তাহলে-‘বরাভয়' অর্থ কি আরবদের ভয়? )অথচ শব্দটিকে এর মূল তাৎপর্যের বিপরীতে ‘অভয়'-অর্থে ব্যবহার করা হয়।)

৯৫. চেলা-এই নাম-বাচক শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-চএলআ>আলএচ=আলেচ>আনেছ (ল স্থানে ন এবং চ স্থানে ছ) এটিও একটি আরবী শব্দ। অর্থ-বন্ধু, সহচর। ব্রাহ্মণ-পুরোহিতদের সহকারীরূপে চেলা বা চ্যালা শব্দের এ অর্থগত সাদৃশ্য বিস্ময়কর।

৯৬. মাছি-আলোচ্য বিশেষ পোকা-নামটি আগের নিয়মে ভেঙে; তারপর ডানদিক থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-মআছই>ইছআম=ইছাম>ইছম (আ-বাদ)। শব্দটি আরবী। অর্থ(অতি পবিত্র) নাম। বিছমিল্লাহর মধ্যে এ শব্দটি আছে।

৯৭. কাছি-নৌকা বাঁধার দড়ি-বিশেষের এ নাম-বাচক শব্দটিও বর্ণিত নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ-বিন্যাস ক'রে লিখলে দাঁড়ায়-কআছই>ইছআক=ইছাক। একটি হিব্রু নাম-শব্দ। আর অন্তাক্ষর লোপে-ইছা। আরবী শব্দ। হজরৎ ইছা ঈসা (আঃ)।

৯৮. হুন-এ জাতি-নাম-বাচক শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে; পুনরায় ডানদিক থেকে বামদিকে বর্ণ সাজিয়ে লিখলে মেলে-হউন>নউহ=নূহ। একটি আরবী শব্দ। সুবিখ্যাত নবী হজরৎ নূহ (আ.)। তবে কি নূহের সাথে সম্পর্কিত জন-কওম বোঝাতে হুন বা হূন শব্দ ব্যবহার করা হয়?

৯৯. অদ্রি-পর্বত অর্থ বাচক এ নাম-শব্দটি বর্ণিত নিয়মে ভেঙে; ডানদিক থেকে বামদিকে হরফ সাজিয়ে লিখলে দাঁড়ায়-অদরই>ইরদঅ=ইরদ। এরপর ই স্থানে আ বসালে মেলে আর্দ। একটি কোরআনিক আরবী শব্দ। অর্থ-মৃত্তিকা, ভূমি। ইংরেজি আর্থ (earth) ও এক-ই ধ্বনি ও অর্থ-বাচক।

১০০. সফল-এ রকম একটা অতি সাধারণ শব্দও উপরে বর্ণিতরূপে ভেঙে, তারপর যথাপূর্বক ডান থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে মেলে-লফস>লফ্জ সেওজ একটি খাঁটি আরবী শব্দ। অর্থ-শব্দ ভাষা, কথা।

১০১. হাতা-এ-নাম-বাচক সাধারণ শব্দটিও পূর্বোক্ত নিয়মে ভেঙে; তারপর যথারীতি সাজিয়ে লিখলে পাওয়া যায়-হআতআ>আতআহ=আতাহ। তারপর শেষ বর্ণ নাদ দিলে মেলে-আতা। একটি আরবী শব্দ। অর্থ-দান।

উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, অঙ্কস্য বামাগতি সূত্র প্রয়োগ করে। বাঙলাসহ সংস্কৃত, ফারছী, উরদু ও ইংরেজি বহু শব্দ ডানদিক থেকে বামদিকে সাজিয়ে লিখলে অর্থবান আরবী শব্দ পাওয়া যায়। আর তা কেবল একটা নয়, তিন-চারটাও পাওয়া যায়। এ থেকে ঐসব ভাষার সব রকম শব্দের উৎস আরবী বলে যেমন প্রমাণ পাওয়া যায়; তেমনি আরবী ভাষার বিশাল শব্দ ভান্ডার-ই যে, নানা কালে, নানা দেশে, নানা জনকওমে, নানা নামের, নানা ভাষার সৃষ্টি করেছে-তা অস্বীকার করা চলে না।

আরও বলা দরকার যে, বাঙালা ভাষার ক্ষেত্রে, বাঙালিদের সাধারণভাবে উচ্চারিত এবং সে উচ্চারণ অনুযায়ী লিখিত প্রচলিত বানান উল্টো দিকে, বর্ণিত তরীকা মাফিক সাজিয়ে লিখলে, যে ফলাফল দৃশ্যমান; সে তরীকা অপরাপর ভাষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেও এক-ই ফল পাওয়া যাবে ব'লে ধারণা। প্রত্যেক ভাষাভাষী বিশেষজ্ঞগণ আলোচ্য বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখলে দেখতে পারেন।

এ রকম শব্দ-বিশ্লেষণ কম্পিউটারের সাহায্যে সহজে করা যেতে পারে। আর তা সারা পৃথিবীর আদি মানবগোষ্ঠীর একক একটি ভাষা একটি পরিবার (দম্পতি) থেকে উৎপত্তির মূলে বিজ্ঞান-সম্মত তথ্য দান করতে পারে।

  1. আরও বলা জরুরি যে, আমাদের বিশ্লেষিত পদ্ধতিতে আরোহ রীতি অনুযায়ী একটি শব্দে বর্তমানে ব্যবহৃত রূপ ভেঙে উৎসে যাওয়া হয়েছে এবং এ গমন পথে চার-পাঁচটি স্তরও অতিক্রম করতে হয়েছে। এ স্তরগুলোই একটি শব্দ-বদল (Language change)-এর প্রকৃত স্তর। আর তা ঘটেছে, দিনে দিনে, মাসে-মাসে, বছরে-বছরে তো বটেই; কিন্তু স্তরায়নের হিসেব করতে হবে-শ' শ' বছরের মাপকাঠিতে নয়; হাজার-হাজার বছরের মাপকাঠিতে। তাহলেই আমরা পৌঁছতে পারবো মূল ভাষা, জাতি ও ‘মানব' জন্মের আদি ভূমিতে।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

লেখার ক্ষেত্রে বাম থেকে ডানে এবং ডান থেকে বামে যাওয়ার তাৎপর্য রয়েছে। আরবীর ক্ষেত্রে ডান থেকে বামে যাওয়া হয়। এটা দুনিয়ার সমস্ত ভাষার মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ভাষা। হাদীসে এসেছে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আরবীকে তিনটি কারণে ভালোবাসি। ১. আমি আরবী ভাষাভাষী, ২. আল-কুরআনের ভাষা আরবী ও ৩. জান্নাতের ভাষা হবে আরবী। এ হাদীসের মাধ্যমে আরবী ভাষার মর্যাদা কোন স্তরের তা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের ভাষা আরবী, তার উপর নাযিলকৃত কুরআনের ভাষা আরবী এবং জান্নাতের ভাষাও আরবী হবে। এ দ্বারা আরবী ভাষার মাহাত্ম বুঝে আসে। আর ডান এবং বামের মধ্যে ডান হল বেশি সম্মানী। আবার ভালো কাজে ডানকে প্রাধান্য দেয়া সুন্নাত। সুতরাং আরবী লেখার ক্ষেত্রেও এই ডানকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

আরবী ছাড়া আরো কয়েকটি ভাষা রয়েছে যেগুলো ডান থেকে শুরু করতে হয়। যেমন উর্দূ, ফারসী ইত্যাদি। পক্ষান্তরে এই তিনটি ব্যতীত বাংলা-ইংরেজিসহ অধিকাংশ ভাষা বাম থেকে ডানে লিখতে হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ