শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য 

কুরআন হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া

বর্ণিত হয়নি। তবে আপনি বাংলায়ও

ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার 

ভাষায় দোয়া করতে পারেন।

.

এছাড়া কিছু কৌশল ও কর্মপন্থা আছে,

যেগুলো অবলম্বন করলে স্বামীর

ভালোবাসা পেতে পারেন। যেমন- 

-নারী প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল একজন স্ত্রী হিসাবে। একজন পুরুষের একাকিত্র দূর করার জন্য। তার পর এই নারীর পরিচয় হয়েছে মা হিসাবে। কৃষি বিজ্ঞানের মতে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল নারীদের হাত ধরে। পৃথিবীর প্রতিটি সুন্দরের সাথে নারী জড়িত। নারী পারে একটি বাসস্থানকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই আপনার ঘড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন; অন্তত আপনার স্বামী যতটুকু পরিচ্ছন্ন দেখতে পছন্দ করে। নারীসুলভ আচরণ (কোমল ব্যবহার) করুন, কেননা স্বামীরা তাদের স্ত্রীর জায়গায় কোন পুরুষ রূপী ব্যবহার চায় না।

-সুন্দর/আকর্ষণীও পোশাক পড়ুন। আপনার চুল সব সময় আঁচড়ে রাখুন। আপনি যদি গৃহিণী হন, সারাদিন ধরে রাতের পোশাক, ম্যাকসি(ঢিলাঢালা আরামদায়ক পোশাক) পরে থাকবেন না। নিজেকে আকর্ষণীও করে সাজান। ঘাম/মশলা জাতীয়গন্ধ থেকে পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত থাকুন। আপনার স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় দরজায় এমন ভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। দরজা খোলার সাথে সাথেই হাসিমুখে সালাম দিন। ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সমস্যার কথা বলা শুরু করবেন না। তাকে কিছুটা মানসিক বিরতি দিন। গুরুত্বপুর্ণ কথা হলে আগে তার শরীর ম্যাসেস করুন। যদি ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে কথা বলা থেকে দূরে থাকুন। আপনার স্বামী ঠিক বুঝে যাবে আপনি কিছু বলতে চান। তাই ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে সে আপনাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবে। আর যদি না করে তাহলে চা বানিয়ে আপনি পাণ করুন এবং তাকে দিন। চা পাণের মাঝে মাঝে কথা বলুন। দেখবেন আপনার উদেশ্য সফল হয়েছে। ইনশাল্লাহ।

-আপানর শাশুড়ির সাথে ভাল আচরণ করুন, যেমনটি আপনি চান আপানার স্বামী আপানার মায়ের সাথে করুক। আপনার স্বামীকে কোন কথা বলার পর বার বার জিজ্ঞেস করবে না, ‘কি ভাবছ?’ অন্যের কাছে নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার কথা বর্ণনা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন; এমনকি সাহায্য বা পরামর্শ চাওয়ার অজুহাতেও না, আপনি যদি মনে করেন আপনার বৈবাহিক সমস্যার আইনানুগ সমাধান প্রয়োজন, তাহলে এমন ব্যক্তির কাছে যান যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ। যার মধ্যস্থতা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুন্দর সমন্বয় আসে, অথবা উভয়পক্ষের সম্মতিতে সৌহার্দপূর্ণভাবে বিচ্ছেদ করাতে পারেন।

-ইসলামে স্বামী স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন। অধিকার আদায়ের চেয়ে আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদনের ব্যপারে আগে সজাগ হন। 

আপনার স্বামীর এমন বিষয়ে প্রশংসা করুন যে বিষয়ে তিনি নিজে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নন। আপনার প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। কক্ষনো আপনার স্বামীর সাথে অন্যদের স্বামীর তুলনা করবেন না, বরং বলুন, স্বামী হিসেবে তুমিই শ্রেষ্ঠ, বিনয় এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে, অহংকার ও কর্কর ভাষায় নয়। কখনও বলবেন না,‘অমুকের স্বামী তো এমন করে না, তুমি কেন এমন কর..। আপনার স্বামী যেমন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। কারণ, কেউ নিখুঁত নয়, আপনিও নন। আর যদি, ত্রুটিহীন, নিখুঁত সঙ্গী চান তাহলে জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সেখানে আপনি এবং আপনার স্বামী দু’জনেই হবেন নিখুঁত ও ত্রুটিহীন।

-আপনার স্বামীকে মাঝে মধ্যে কোন গৃহস্থালি কাজ দিন, কাজটি করে ফেললে তাকে ধন্যবাদ জানান। এতে সে আরও উৎসাহিত হবে। সে যখন কোন একঘেয়ে কথা বলে, তার কথা ধৈর্য ধরে শুনুন। মাঝে মাঝে তাকে প্রশ্নও করুন যাতে সে বুঝতে পারে আপনি তার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করুন। তার মেজাজ খারাপ থাকে, তাকে কিছুটা সময় একা থাকতে দিন। সে যদি আপানার সাথে রেগে গিয়ে চেঁচাতে থাকে, আপনি চুপ থেকে তাকে চেঁচাতে দিন। দেখবেন আপনাদের বিবাদ অনেক দ্রুত থেমে গেছে, ইনশাআল্লাহ। পরে যখন সে শান্ত হবে, তখন আপনি আপনার কথা বোঝাবেন। যখন আপনি তার উপর রেগে যান, তখন বলবেন না যে তিনি আপনাকে রাগিয়েছেন, বরং বলুন তার কাজে আপনি আপসেট হয়েছেন।

- মনে রাখবেন, আপনার স্বামীরও আবেগ অনুভুতি আছে, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। তাকে তার বন্ধুদের সাথে কোন রকম অপরাধবোধ ছাড়া কিছু সময় কাটাতে দিন, বিশেষতঃ যদি তারা ভাল মানুষ হয়। তাকে বাইরে যেতে উৎসাহ দিন যাতে সে নিজেকে ঘরের ভেতর ‘আবদ্ধ’ বোধ না করে। আপনার মনের কথা তাকে খুলে বলতে শিখুন; কেননা আপনার সব ইশারার কথা সে বুঝে নেবে বা অনুমান করতে পারবে এমন ভাবা ঠিক নয়। বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনার সময়টাকে কাজে লাগান এবং আপনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পাদন করুন। এতে আপনিও খুশি হবেন, আপনার স্বামীরও ভাল লাগবে।

-ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যাবেন না বরং হাসি মশকরা করুন, যাতে আপনাদের দুই জনের মনই প্রফুল্ল হয়। আপনার পরিচিত বা আত্মীয় স্বজনের কাছে কক্ষনও তার বদনাম করবেন না। তারা যদি একথা মেনে নেয় ও বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে তা আপানকেই পাল্টা আহত করবে। আপনি নিজেই তখন হীনমন্যতায় ভুগবেন এই ভেবে যে আপনার স্বামী খারাপ, আবার অন্যরাও ভাববে যে আপনার স্বামী খারাপ। আল্লাহ বলেছেন- ধ্বংস ওই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে পেছনে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। সুরা হুমাজা-১।

--তাই যা করেন তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করুন; দেখবেন আপনি যা করছেন আল্লাহ তায়ালা তাতে বরকত দেবেন। স্বামী স্ত্রী একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ, করণীও-বর্জনীয় বিষয়গুলো বিজ্ঞতার সাথে আলোচনা করবেন। স্বামীকে এমন ভাবে আদেশ বা নির্দেশ দেবেন না যেন মনে হয় সে আপনার ‘অধীনস্ত’। বরং কুরআনে বলা হয়েছে- তারা তোমাদের জন্য আবরণ, এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। সুরা বাকারা-১৮৭।

-আপনার স্বামীকে বারবার বলুন আপনি তাকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন, ভালোবাসেন..........। আপনার স্বামীর সাথে খেলাধুলায় প্রতিযোগিতা করুন এবং তাকে জিততে দিন। সুস্থ থাকুন, এবং নিজের স্বাস্থ্যের যত্ম নিন, যাতে বলিষ্ঠ ভাবে একজন স্ত্রী,মা ও গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ এতে আপনি মোটা হবেন না। আচার-আচরনে মার্জিত থাকুন (মনমরা থাকা, ঘ্যানঘ্যান করা, অতি উচ্চস্বরে হাসা বা কথা বলা, থপথপ করে সশব্দে হাঁটাচলা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন)।

-স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাহিরে যাবেন না, আর তাকে না জানিয়ে তো অবশ্যই বের হবেন না। আপনার স্বামী আপনার জন্য কষ্ট করে কাজ করে উপার্জন করছেন এবং আপনার খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করছেন- এই ব্যপারটির সবসময় প্রশংসা করুন। এতে তার কাজের স্পৃহা বাড়বে। মাঝে মাঝে উপহার দিন। উপহার স্বরূপ তাকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও দিতে পারেন। তার আগ্রহ ও শখের ব্যপারে আপনিও আগ্রহী হওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত কেনাকাটা করবেন না। আয় ও ব্যয়ের সাথে সমঞ্জস্য রাখুন। অতিরিক্ত খরচ করা ঠিক নয়।

আপনার ত্বকের যত্ম নিন, বিশেষতঃ চেহারার। চেহারাই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। অন্তরঙ্গ ব্যপারে যদি আপনার কোন অসন্তুষ্টি থাকে, তাকে জানান, তার সাথে কথা বলুন। তাকে বুঝতে সাহায্য করুন।

নীরব থেকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।

প্রতিদিন, প্রতি ওয়াক্তের নামাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের মধ্যকার ভালবাসার ও সহমর্মিতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেন এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। দোয়ার মত কার্যকরী কিছুই নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা তখনই থাকে যখন আল্লাহ তাদের মাঝে এটা দেন। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় তাকে ডাকুন এবং আপনার সাথে তাকেও নামাজ পড়তে বলুন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাদের দুজনকেই মুত্তাকী হতে সাহায্য করেন। 

সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করুন। যদি সমস্ত স্ত্রীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে, নিশ্চিতভাবেই তারা তাদের স্বামীদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। আর মনে রাখবেন, আল্লাহ যদি আপনার উপর সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ফেরেশতারা আপানাকে ভালবাসবে, সমস্ত সৃষ্টি আপনাকে ভালবাসবে। আল্লাহ যেন সকল স্বামী স্ত্রীর বন্ধনকে হেফাজত করেন, এবং দ্বীনের শ্রেষ্ঠ আদব সমূহ বোঝার এবং তা কাজে লাগিয়ে সংসার জীবনকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার তৌফিক দেন। আমীন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ