shohanrand1

Call

{সাবেক Grand Mufti of Saudi Arabia (1993-1999) আল-শায়খ ‘আব্দ আল-‘আযীয ইবনে ‘আব্দ-আল্লাহ ইবনে বায (রহঃ) (1910-1999) এর “মাজমু’ ফাতওয়া ওয়া মাকালাত মুতানাওয়ি’আহ” গ্রন্থের সপ্তম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৩২ থেকে সম্পূর্ণ উত্তরটি বাংলায় অনুবাদ করে দিলামঃ} “এই অজ্ঞতাকে কারণ এবং অজুহাত হিসেবে দেখানোর ব্যাপারটা যথেষ্ট আলোচনা সাপেক্ষ। অজ্ঞতার জন্য সবাই ছাড় পাবে না। ইসলামের মাধ্যমে আসা যেসমস্ত জিনিস আল্লাহর রাসূল(সাঃ) নিজে ব্যাখ্যা করেছেন, আল্লাহর কিতাবে স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ বিশেষভাবে জ্ঞাত; এমন ব্যাপারগুলোতে ছাড় নেই, বিশেষতঃ যদি সেটা আকীদা এবং দ্বীনের মূল বিষয়গুলোর কোনটা হয় হয়। আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে মানুষের কাছে পাঠান দ্বীনের শিক্ষা দেওয়া এবং ব্যাখ্যা করার জন্য। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) উম্মাহ’র কাছে আল্লাহর বাণী স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন এবং দ্বীনের সত্যতা বুঝিয়ে দেন। তিনি তাদের সবকিছুই ব্যাখ্যা করেন এবং তাদের জন্য একটি সরল পথের নিদর্শন রেখে যান। আল্লাহর কিতাবে আছে দিকনির্দেশনা আর আলোকবর্তিকা। কেউ যদি ইসলামের আবশ্যকীয় বিষয়গুলোর কোনটি না মানার ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণ প্রদর্শন করে অথচ যেগুলো মুসলমানদের মধ্যে সর্বজনীন; যেমনঃ শিরক করার ব্যাপারে নিজেকে অজ্ঞ দাবী করা অথবা সালাত আদায়, রমযান মাসে রোযা রাখা, যাকাত দেওয়া, সামর্থবান মানুষের জন্য হাজ্জ করা প্রভৃতির কোনটিকে আবশ্যক মনে না করা অথবা সদৃশপূর্ণ আরো যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলোতে অজ্ঞতার অজুহাত একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে বাস করে এমন মানুষের জন্য কখনোই গৃহীত হবে না, কেননা এগুলো মুসলিমদের মাঝে সর্বজনীন। এগুলো ইসলামের মূল ভিত্তি এবং মুসলিমদের সবাই এগুলোর ব্যাপারে কমবেশি জানে, তাই এগুলোর ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কোন যুক্তি নেই। হয়ত কেউ কেউ বলতে পারে সে কবরপূজা (মৃত মানুষদের ডাকা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তাদের কাছে বলি দেওয়া, মানত করা), দেবদেবী-তারকারাজি-গাছ-পাথর প্রভৃতির কাছে বলি দেওয়া, অথবা দেবদেবী, মৃত মানুষ, জ্বীন, ফেরেশতা, নবী-রাসূলদের কাছে বিপদে সাহায্য চাওয়ার মাঝে অন্যায় খুঁজে পায় না ... অথচ ইসলামে এগুলোকে বলা হয় সবচেয়ে মারাত্মক শিরক (আল-শিরক আল-আকবার)। আল্লাহর কিতাবে এগুলো স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে এবং আল্লাহর রাসূল(সাঃ) ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দান করেছেন। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) সুদীর্ঘ তের বছর মক্কায় শিরকের বিরুদ্ধে মানুষকে সাবধান করে গিয়েছিলেন, মদীনাতেও দীর্ঘ দশ বছর ধরে একই দাওয়াহ কার্য চালান। তাদেরকে বুঝিয়েছিলেন যে পরিপূর্ণুরূপে এবং আনুগত্যের সাথে একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ইবাদাত করতে হবে। তাদেরকে তিনি শুনাতেন আল্লাহর কিতাবের নিম্নোক্ত আয়াতগুলোঃ “তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া আর কারো ‘ইবাদাত কোর না” [আল-ইসরা’ ১৭ : ২৩] “আমরা কেবল তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি” [আল-ফাতিহা ১ : ৫] “তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে” [আল-বাইয়িনা ৯৮ : ৫] ‘কাজেই আল্লাহর ইবাদাত কর দ্বীনকে একমাত্র তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করে। জেনে রেখ দ্বীন (ইবাদাত এবং দাসত্ব) কেবল আল্লাহর জন্যই” [আয-যুমার ৩৯ : ২-৩] ‘বলো (হে মুহাম্মাদ), আমার নামায, আমার যাবতীয় ‘ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ (সবকিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর আমিই প্রথম আত্মসমর্পণকারী” [আল-আন’আম ৬ : ১৬২-১৬৩] এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল(সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ “আমি তোমাকে কাওসার (জান্নাতের একটি নদী) দান করেছি। কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর” [আল-কাওসার ১০৮ : ১-২] “মসজিদগুলো কেবল আল্লাহরই জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য আর কাউকে ডেকো না” [আল জিন্‌ন ৭২ : ১৮] “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকেও ডাকে, এ ব্যাপারে তার কাছে কোন দলীল প্রমাণ নেই, একমাত্র তার প্রতিপালকের কাছেই তার হিসাব হবে, কাফিরগণ অবশ্যই সফলকাম হবে না” [আল-মু’মিনূন ২৩ : ১১৭] তাদের জন্যও এসব প্রযোজ্য যারা দ্বীনকে নিয়ে মজা করে, আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে, বিদ্রূপ করে আর অপমান করে – এগুলো সবই বড় ধরণের কুফরির মাঝে পড়ে যেগুলো কোনটারই অজ্ঞতার অজুহাতে ক্ষমা হবার সুযোগ নেই, কারণ দ্বীন ইসলামকে আঘাত করা অথবা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) কে অপমান করা যে মারাত্মক ধরণের কুফরি, এটা মুসলমানদের সর্বজনীন একটি বিষয়। ঠাট্টা করার ব্যাপারটিও আঘাত বলেই বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “বলো, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে?’ অজুহাত দেখিও না; তোমরা ঈমান আনার পরে কুফরি করেছ” [আত-তাওবাহ ৯ : ৬৫-৬৬] আলেমদের দায়িত্ব হবে এই শিক্ষা মানুষকে জানিয়ে দেয়া, তাহলে সাধারণ মানুষ কোন অজুহাত দেখাতে পারবে না। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাগুলো পেয়ে মৃতের কাছ থেকে তারা সাহায্য চাওয়া ছেড়ে দিবে, হোক সেটা মিশর, সিরিয়া, ইরাক, কিংবা মদীনাতেই (রাসূল(সাঃ) এর রওযা মুবারাকে)। অথবা মক্কা বা অন্য যেকোন স্থানে; যাতে হাজী ও বাদবাকী মানুষেরা সচেতন হয় এবং আল্লাহর আইন ও দ্বীনের ব্যাপারে জানতে পারে। আলেমদের নিষ্ক্রিয় অবস্থানই সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার পিছনে অন্যতম কারণ। আলেমরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাঁদের দায়িত্ব হবে মানুষকে আল্লাহর দ্বীন, তাওহীদ এবং বিভিন্ন প্রকার শিরকের ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া যাতে তারা জ্ঞানলাভ করে শিরক থেকে মুক্ত হতে পারে এবং জেনে-বুঝেই আল্লাহর ইবাদাত করতে পারে। একইভাবে আল-বাদাভী, আল-হুসাইন(রহঃ), শায়খ ‘আব্দ আল-কাদীর আল-জিলানী (রহঃ) অথবা মদীনায় রাসূল (সাঃ) এর রওযা মুবারাক প্রভৃতিতে যা ঘটে সেগুলোর প্রতিবাদ করা আলেমগণের দায়িত্ব। মানুষের জানা দরকার যে ইবাদাত করতে হবে কেবল এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে, এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারবেনা, যেমনটি উপরে উল্লিখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা বলেছেন। অতএব মুসলিম বিশ্ব, মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকা সমূহ ও বাদবাকী সব জায়গায় যত আলেম আছেন, তাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর তাওহীদের ও ইবাদাতের শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে আল্লাহর সাথে কাওকে শরীক করা (শিরক) থেকে সাবধান করা কেননা এটাই সর্বনিকৃষ্ট অপরাধ। আল্লাহ দুইটি সত্ত্বা মানুষ ও জিন্‌নকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাতের জন্য, এবং তাদেরকে সে আদেশও দিয়েছেনঃ “আমি জিন্‌ন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে তারা কেবল আমারই ‘ইবাদাত করবে” [আয-যারিয়াত ৫১ : ৫৬] ইবাদাতের অর্থ হচ্ছে মহানুভব আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল(সাঃ)-কে মান্য করা করা। একাগ্রচিত্তে ও পরিপূর্ণভাবে তাঁর উপাসনা করা, এবং তাঁর প্রতি সমস্ত মনোযোগ জ্ঞাপন করা। আল্লাহে বলেনঃ “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ‘ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার” [আল-বাক্বারাহ ২ : ২১] এরপরও কিছু ব্যাপার যেগুলো অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে, যেমন কিছু নিয়মনীতি এবং সালাত ও সাওম সংক্রান্ত বিষায়াদি; কেউ যদি এগুলোর ব্যাপারে অজ্ঞ থাকে তবে সেগুলো ক্ষমা করা হতে পারে। যেমন করে আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন যে কিনা আলখাল্লা এবং সুগন্ধী গায়ে দিয়ে ইহরামে প্রবেশ করেছিল। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) তাকে বলেছিলেন, “তোমার আলখাল্লাটি খুলে ফেল এবং সুগন্ধী ধুয়ে এসো, এবং হাজ্জের সময় যা কর তাই করবে উমরাহের সময়”। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) লোকটির অজ্ঞতার জন্য তার কাছে কোন জরিমানা (ফিদিয়াহ) দাবী করেননি। একইভাবে, অজ্ঞ কোন ব্যক্তির কাছে যেসব বিষয় অস্পষ্ট, সেগুলো তাকে শিখিয়ে দেয়া উচিত যাতে সে বুঝতে পারে। কিন্তু আকীদার মূল বিষয়াদি, ইসলামের মূলভিত্তিসমূহ এবং স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষিত কাজগুলোর ব্যাপারে কোন অজুহাত গ্রহনযোগ্য হবে না যদি সে মুসলিমদের মাঝে বাস করে থাকে। যদি মুসলিমদের মধ্যে থাকে অথচ বলে “আমি জানতাম না যে যিনাহ(ব্যভিচার) করা হারাম”, এটা কোন অজুহাত হতে পারে না। সে যদি বলত, “আমি জানতাম না যে বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম” এটা কোন অজুহাত নয়, বরং সে শাস্তি পাবার যোগ্য। অথবা সে যদি বলত, আমি জানতাম না যে সমকামীতা হারাম” এটাও কোন কারণের পর্যায়ে পড়ে না। এগুলার ইসলামের সেসমস্ত কিছু বিষয় যেগুলো মুসলিমদের কাছে স্পষ্ট ও সর্বজনীন। কিন্তু সে যদি মুসলিম বিশ্ব থেকে অনেক দূরে বা আফ্রিকার কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে থাকে, যেখানে তার আশেপাশে কোন মুসলিম নেই, তাহলে অজ্ঞতার ব্যাপারটা তার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে; এবং সে যদি এই অবস্থায়েই মারা যায় তাহলে তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন; তার বিচার হবে সেইসব মানুষের মতই যারা ফাতরাহ'র ( দুই নবীর মধ্যবর্তী সময়ের ) সময়ের মানুষ ছিল। সঠিক মত হল এই যে, শেষ বিচারের দিনেই তাদের পরীক্ষা করা হবে (এ ব্যাপারে বিস্তারিত ফতওয়াহ: http://islamqa.info/en/ref/98714); যদি তারা আল্লাহর প্রতি সাড়া দেয় ও আনুগত্য প্রকাশ করে তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অন্যথায় তাদের স্থান হবে জাহান্নামে। কিন্তু যে ব্যক্তি মুসলিমদের মাঝেই বাস করত অথচ কুফরি কাজ করত এবং যে কাজগুলোকে সব মুসলিমই আবশ্যক জানত সেগুলো পালন করত না তার জন্য কোন সুযোগ নেই। কেননা ব্যাপারগুলো তার জন্য স্পষ্ট, তার আশেপাশেই মুসলিমরা আছে যারা রোযা রাখে এবং হাজ্জ পালন করে। এগুলো সবই মুসলিমদের মাঝে সর্বজনীন এবং বহুল প্রচলিত, সেহেতু এই অবস্থায় অজ্ঞতার দাবী করা মিথ্যে দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং আমরা কেবল এক আল্লাহরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। ” Collected From Brother Sami El Saeef

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ