Call

মিরাজ রজনীতে আমাদের প্রিয় নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে ঊর্ধাকাশে ভ্রমন করতে গিয়েছিলেন নাকি এটা স্বপ্নযোগে হয়েছিল এ বিষয়ে যথেষ্ঠ মতানৈক্য রয়েছে। তিনি স্বচক্ষে মহান আল্লাহ্ পাককে দেখেছেন কিনা এ ব্যাপারেও মতভেদ আছে বিস্তর। আমরা এবার এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখার চেষ্টা করবো প্রত্যেক আম্বিয়া আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত বিশেষ বিশেষ মুজিজা দান করেছেন।যেমন- হযরত মুসা আলাইহিস সালাম’র লাঠি মাটিতে ফেলা মাত্রই জীবন্ত সাপে পরিণত হত, তাঁর লাঠির আঘাতে মাটি হতে সুপেয় পানির প্রস্রবন প্রবাহিত হয়েছিল এবং তিনি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে সরাসরি কথোপকথন করার মত মহাসম্মানিত মর্যাদার আসনে অভিসিক্ত ছিলেন।হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম’র হাত থেকে আলো বের হত।তাঁর পবিত্র হাত মুবারাকের ছোঁয়ায় কুষ্ঠ রোগী সুস্থ্য হয়ে উঠত। বাতাস ও জ্বীন জাতি হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম’র কথা মেনে চলত।হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম’র পবিত্র হাত মুবারাকের ছোঁয়ায় শক্ত লোহা পর্যন্ত মোমের মত গলে যেত, ইত্যাদি, ইত্যাদি।ঠিক তেমনি ‘পবিত্র মিরাজ শরীফ’ও রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র অসংখ্য মুজিজা সমুহের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট মুজিজা।তাঁর নবুয়ত লাভের ১১ বছর ৫ মাস ১৫ দিনের মাথায় ‘মিরাজ শরীফ’ সংঘটিত হয়। মিরাজের পুরো ঘটনাক্রমকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- ১।মক্কা শরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত অংশকে বলে ইসরা। ২।বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত অংশকে বলে মি’রাজ। ৩।সিদরাতুল মুনতাহা থেকে লা-মকান পর্যন্ত অংশকে বলে ই’রাজ। আর সাধারণভাবে পূর্ণ ভ্রমন কাহিনীকে বলা হয় মি’রাজুন্নবী বা মি’রাজ। নবুয়তের একাদশ বছরের রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতের এক বিশেষ সময়ে পবিত্র নগরী মক্কাস্থ ‘মসজিদুল হারাম’ এর ‘হাতীমে কাবা’ থেকে যাত্রা শুরু করে মুহুর্তের মধ্যেই তিনি নবীদের শহর ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ এ সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি সহকারে সপ্ত আকাশ পাড়ি দেন।অতপরঃ সিদরাতুল মুনতাহা, বেহেশত-দোজখ, আরশ-কুরসী ভ্রমন শেষে ‘লা-মকানে’ মহাপবিত্র আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের নুরানী ‘দিদার’ লাভে ধন্য হন।মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে নব্বুই হাযার বাক্যালাপ শেষে পুণরায় মক্কার হাতীমে কাবায় ফিরে এসে দেখলেন, ‘তাঁর বিছানা মুবারাক তখনও গরম রয়েছে, ঘরের দরজার শিকল নড়ছে, তাঁর অযু করার পাত্রের পানি তখনও কাঁপছে’।এরপর দিন সকালে তিনি যখন তাঁর এ মুবারাক, পরম বিস্ময়কর, নৈশকালীন সংক্ষিপ্ত মহাকাশ সফরের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করলেন, তখন একমাত্র অবিশ্বাসী কাফিররা বরাবরের মত এ ঘটনাকে রীতিমত অস্বীকার করে বসলো।শুধু তাই নয়, তারা এটা নিয়ে নানারকম ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও তামাশা করতে লাগল।পক্ষান্তরে, মুশরিকদের সরদার আবু জেহেলের কাছ থেকে পবিত্র মিরাজের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সবার প্রথমে ‘পবিত্র মিরাজুন্নবী’ এর ঘটনাবলীর সত্যতায় অবিচল আস্থা ও সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে ‘সিদ্দিকে আকবর’ উপাধিতে বিভূষিত হলেন। মিরাজের আশ্চর্য্যজনক ঘটনার বণনা পবিত্র কুরআনের সুরা বনী ইসরাঈলের শুরুতেই এসেছে।মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন,‘‘পবিত্রতা তাঁরই জন্য, যিনি আপন(মাহবুব)বান্দাকে রাতারাতি নিয়ে গেছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পযন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত রেখেছি, যাতে আমি তাঁকে আপন মহান কুদরতময় নিদশনসমুহ দেখাই, নিশ্চয় তিনি শুনেন, দেখেন।’’ মিরাজের ঘটনা বর্ণনায়, পবিত্র কুরআনের বাকরীতি এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।অতি অল্প সময়ে মক্কা নগরীর পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে সুদুর জেরুজালেম শহরে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সপ্ত আসমান ও সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে লা-মকানে মহান প্রভূর সাথে দেখা ও বাক্যালাপ শেষে পূণরায় যথাস্থানে ফিরে আসাটা সত্যিই এক বিরাট বিস্ময়কর ব্যপার।আর মহাবিজ্ঞ আল্লাহতায়ালার অপার কুদরত ও নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসাধারণ মুজিজা তথা অলৌকিক ক্ষমতার সামনে এটা খুবই নগন্য একটা বিষয়।সাধারণ লোকজনের কাছে এটাকে আশ্চর্য্যজনক ঘটনা বলে মনে করাই স্বাভাবিক।এ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু মহাজ্ঞনী আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে হাকীমে ‘সুবহানা’ শব্দযোগে পবিত্র মিরাজ রজনীর ঘটনাবলী বর্ণনা করা শুরু করেছেন।যাতে সাধারণ মানুষজন এ ঘটনার অলৌকিকতার বিষয়টা খুব সহজভাবে বুঝে উঠতে পারে।আর ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই মিরাজের ঘটনাবলীকে বিনাবাক্যব্যয়ে সহজেই মেনে নেয়। আর তারা এটাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, মিরাজের এ নৈশ ভ্রমন আমাদের নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরেই ঘটেছিল। অথচ এখানেই অনেকের মনে সন্দেহের দোলাচাল, বুদ্ধির বিভ্রম ও যুক্তিনিষ্ঠার চেতনা এসে ঘুরপাক খায়। এটা ভেবে ভেবে যে, মিরাজের এ সফর কি নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরে ঘটেছিল, নাকি স্বপ্নযোগে হয়েছিল? মহা গ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী আর নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ নিসৃ্ত হাদীসের বর্ণনা সমুহের মুল সুরটাই এরকম যে, পবিত্র মিরাজের নৈশ ভ্রমন তাঁর স্বশরীরেই ঘটেছিল।এটা মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অসীম কুদরত ও নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য মুজিজা’রই একটা অংশ।সর্বোপরি আমাদের ঈমান কিন্তু, প্রতিটা মুসলমান নর-নারীর নিকট পবিত্র মিরাজ রজনীতে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলীর প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বাস স্থাপনের দাবীই করছে। এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’র আকীদা, বিশ্বাস ও ফতওয়া হল, ‘‘পবিত্র মিরাজের নৈশ ভ্রমন, আমাদের নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক স্বশরীরেই ঘটেছিল’’।কেবল স্বপ্নের মাধ্যমে তা ঘটলে, সেখানে অবিশ্বাসের বা আশ্চর্যের কোন ব্যাপারই থাকত না।আর কাফির ও মুশরিকরা এর কোন রকম বিরোধিতাও করত না।কারণ স্বপ্নের মাধ্যমে সাধারণতঃ অনেক কিছুই দেখা যায়।তছাড়া স্বপ্নের মাধ্যমে মিরাজের ঘটনাবলী ঘটলে, এ ভ্রমনের দ্বারা আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ মুজিজাও প্রকাশ পেত না।বরং রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজকে স্বশরীরে ঘটেছিল বলে মেনে নিলেই কিন্তু এ অলৌকিক ঘটনার যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয় এবং মিরাজ শরীফও মুজিজা হিসেবে আপনা আপনিই স্বীকৃ্তি পেয়ে যায়।তদুপরি এতে স্বশরীরে মিরাজের স্বীকৃ্তিদানকারী ব্যক্তির ঈমানের পূর্ণতাও প্রকাশ পায়। পরম মহিমান্বিত মিরাজ রজনীতে প্রিয় নুর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ্ পাককে স্বচক্ষে দেখেছিলেন কিনা তা নিয়ে ওলামায়ে কিরামগণের মধ্যে মতভেদ থাকলেও নির্ভরযোগ্য মত হলো, ‘‘নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রজনীতে মহান আল্লাহ্ পাককে স্বচক্ষে দেখেছেন’’। এ প্রসঙ্গে নিচে বিভিন্ন ইমামদের অভিমত তুলে ধরা হলঃ যেমন- হযরত মোল্লা আলী কারী হানাফী(রহঃ)- হযরত মোল্লা আলী কারী হানাফী(রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ ‘‘পবিত্র মিরাজ রজনীতে হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ্ পাককে স্বচক্ষে দেখেছেন’’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম নববী(রহঃ)।অধিকাংশ ওলামায়ে হাক্কানী’র অভিমত হল,‘নাবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রজনীতে নিজের প্রভূকে স্বচক্ষে দেখেছেন’। হযরত কাজী আয়াজ মালেকী (রহঃ), হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহুতাআলা আনহু’র বাণী উল্লেখ করে মিরাজ রজনীতে আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ্ তাআলাকে স্বচক্ষে দেখার অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘‘প্রখ্যাত সাহাবী ও তাফসীর বিশারদ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু’র সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উক্তি হল এটিই’’। ইবনে ইসহাক (রহঃ) বলেছেন যে, ‘‘মারওয়ান, হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রভূকে কি দেখেছেন? এর উত্তরে তিনি বলেছেন, হ্যা, দেখেছেন’।’’ হযরত নাক্কাশ (রহঃ), হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)এর উক্তি উল্লেখ করে বলেছেন যে, ‘‘নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রভূকে দেখেছেন। অবশ্যই দেখেছেন।’’ এভাবে তিনি এ কথাটি বার বার বলতে থাকেন, যে তাঁর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। আল্লামা কাজী আয়াজ (রহঃ)‘কিতাবুশ শিফা’য় লিখেছেন, ‘‘হযরত আবদূর রাজ্জাক (রহঃ) এরশাদ করেন, ‘হযরত ইমাম হাসান বসরী(রহঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেছিলেন, ‘নবীয়ে কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের রবকে দেখেছেন’।এই পার্থিব জগতে মহানবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক স্বচক্ষে নিজের রবকে দেখা এটা তাঁর বিশেষত্ব। কেননা এই পার্থিব জগতে আল্লাহর প্রিয় মাহবুব ছাড়া, অন্য কারো পক্ষে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখা অসম্ভব।অবশ্য স্বপ্নে বা অন্তরের চোখে যে কোন নবী ও অলী আল্লাহর পক্ষে মহান আল্লাহর মর্জি মুতাবিক আল্লাহকে দেখা সম্ভব’। যেমন – ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা (রহঃ) এবং হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) সহ আরো অনেকে আল্লাহকে স্বপ্নযোগে দেখেছেন। শায়খই মুহাক্কিক হযরত বাকি অংশ http://blog.sinhatalk.com/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF/

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

মুসলিম শরীফ এর ১ম খন্ডে মিরাজ সম্পর্কে বিস্তারীত আছে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ