শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

আসলে মানুষ যে কেন ঘুমায়, এটা এমনই এক রহস্য, বিজ্ঞানীরাও অনেক দিন এই রহস্যের কোনো কিনারা করতে পারছিলেন না! শেষমেশ তারা খুঁজতে শুরু করলেন, মানুষ না ঘুমালে কি হয়। আর তা জানা গেলেই তো বলা যাবে, মানুষ কেন ঘুমায়, তাই না? আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মানুষ ঘুমায় শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য। কিন্তু ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘুম নাকি খুব একটা কাজের নয়। ঝাড়া ৮ ঘণ্টা ঘুমালে তোমার শরীরের যে পরিমাণ ক্যালরি জমা হবে, সেই ক্যালরি নাকি একটা টোস্ট খেয়েই পাওয়া যায়! তাহলে ঘুমের রহস্যটা কি? দাঁড়াও, তার আগে শোনো ঘুমের স্তর কয়টা। ঘুমের স্তর মূলত ২টা- র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট স্তর, আর নন-র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট স্তর; সংক্ষেপে আরইএম আর এনআরইএম। এনআরইএম স্তরকে কিন্তু আবার ৪টা স্তরে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তরটা যখন আমরা কেবল ঘুমাতে শুরু করি, সেটা। হালকা একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব। আমরা ঘুমের এই স্তরে থাকি ১০ মিনিটের মতো। আর তারপর পরের স্তরে চলে যাই। এই স্তরে এসে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমতে থাকে। আর মোটামুটি ২০ মিনিট পরে আমরা গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। এই গভীর ঘুমের ২টি স্তর আছে। প্রথম স্তরে আমাদের মস্তিষ্ক আবার এক বিশেষ ধরনের তরঙ্গ (ফ্রিকোয়েন্সি) সৃষ্টি করে। আর এই স্তরে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি একেবারেই কমে যায়। আর তারপর এনআরইএমের শেষ স্তর। এই স্তরে আমাদের শরীর যাকে বলে একেবারে ছেড়ে দেয়। আর ঐ যে তোমাদের মধ্যে অনেকে রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করো, আবার অনেকে ঘুমের মধ্যে বিছানাকেই বাথরুম মনে করে বিছানায় ইয়ে করে দেয়, এসবই হয় ঘুমের এই স্তরে। এখন ঘুমের আরইএম স্তরে আমরা কখন প্রবেশ করি? প্রথমবার এই স্তরে প্রবেশ করি ঘুমানোর ৭০-৯০ মিনিটের দিকে, এনআরইএমের শেষ স্তরের পর, মানে ওই হাঁটাহাঁটি আর বিছানায় ইয়ে করে দেয়ার স্তরের পর। আর এরপর ঘুরে ঘুরে এক ঘুমে প্রায় ৩-৫ বার এই স্তর আসে। আর ঘুমের মধ্যে যে মজার মজার, কখনো বা আবার ভয়ংকর ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখো না? সেগুলো-ও কিন্তু আমরা এই স্তরেই দেখি। আর তখন আমাদের চোখ পিটপিট করে। এ কারণেই এই স্তরের নাম দেয়া হয়েছে র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট। কিন্তু এই স্তরে কিন্তু আমাদের শরীর একেবারেই অবশ হয়ে থাকে। আর তাই এ স্তরে ঘুম ভাঙলে আমরা স্বপ্ন মনে করতে পারি ঠিকই, কিন্তু শরীর কেন জানি কথাই শুনতে চায় না। এই স্তর শেষ হলে আবারও ঘুমের ঐ প্রথম স্তর শুরু হয়। এবার নিশ্চয়ই ঘুমের কারণ বুঝতে পেরেছো। ঘুম যতোটা শারীরিক ক্লান্তি দূর করার জন্য দরকার, তারচেয়ে বেশি দরকার মানসিক ক্লান্তি দূর করার জন্য। আমরা সারাদিনে যতো বেশি মাথা খাটাই, যতো বেশি নতুন জিনিস শিখি, ততো বেশি ঘুমানো জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ, ঐ যে ঘুমের আরইএম স্তর, যে স্তরে গেলে আমরা স্বপ্ন দেখি, সে স্তরে গেলে আমাদের মস্তিষ্ক সাজগোজের কাজ হয়, আমরা সারাদিন আমাদের মস্তিষ্কে যতো তথ্য আপলোড করেছি, সেগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়। আর তাই ছোটোদেরকে বেশি বেশি করে ঘুমোতে হয়। আর বড়রা ঘুমায় তুলনামূলক কম। তাহলে ঘুমানো কেন দরকার, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো। সেই সাথে আরেকটা জিনিস মাথায় রেখো, পরীক্ষার আগের রাতে ঘুম-টুম বাদ দিয়ে শুধু পড়া কিন্তু ভালো নয়। কারণ, সারারাত ধরে পড়ে পড়ে না হয় পরীক্ষার সব পড়া তুমি তোমার মাথায় আপলোড করলে। কিন্তু সেগুলো যদি মস্তিষ্ক আরইএম স্তরে সাজাতে না পারে, তাহলে তো পরীক্ষার হলে গিয়ে তোমার সব পড়া ওলটপালট হয়ে যাবে!

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ