শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করছি 'বাংলাপিডিয়া' থেকেঃ- কওমী মাদ্রাসা আরবি ‘কওমুন’ শব্দ থেকে ‘কওমী’ শব্দের উৎপত্তি। কওমী শব্দের অর্থ হলো জাতীয়। তাই কওমী মাদ্রাসার যথার্থ অর্থ হলো জাতীয় মাদ্রাসা বা জাতীয় শিক্ষায়তন। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে কেন্দ্র করে চারটি ধারা প্রচলিত রয়েছে: (ক) কিতাব বিভাগ বা দরসিয়াত বিভাগ, (খ) মক্তব বিভাগ, (গ) সহীহ কুরআন শিক্ষা ও কিরাত বিভাগ, এবং (ঘ) হিফ্জুল কুরআন বিভাগ। সরকারি সাহায্য ও প্রভাবমুক্ত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মাদ্রাসাই কওমী মাদ্রাসা। দরসে নিযামি শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষাদান করা হয় বলে এগুলিকে দরসে নিযামি মাদ্রাসা নামেও আখ্যায়িত করা হয়। হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহ.), মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.), মওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.) প্রমুখ আলেম জনগণের সহযোগিতায় ১৮৬৬ সালে প্রথমে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা এবং ১৮৬৭ সালে সাহারানপুরে মাজাহিরে উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ দেওবন্দ মাদ্রাসাই বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার উৎস। ১৮৯৯ সালে এ মাদ্রাসার আদলে চট্টগ্রাম দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে কওমী মাদ্রাসার সূচনা ও বিকাশ ঘটে। এজন্য এ মাদ্রাসাকে উম্মুল মাদারিস বা মাদ্রাসা সমূহের জননী বলা হয়। মোল্লা কুতুবউদ্দীন শহীদ (মৃ. ১৭১১ খ্রি.) উপমহাদেশে প্রচলিত দরসে নিযামিয়ার উদ্ভাবক হলেও তাঁর পুত্র মোল্লা নিযামুদ্দীনের (মৃ. ১৭৪৮ খ্রি.) সময় এ শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ও প্রসার লাভ করে এবং তা দরসে নিযামিয়া নামে অভিহিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশে প্রচলিত কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা দুটি পর্যায়ে বিভক্ত: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষা। দুটি পর্যায়ে ৬টি স্তর এবং এ ৬টি স্তরে ১৬টি শ্রেণি রয়েছে। আল্ মারহালাতুল ইবতিদায়িয়্যা বা প্রথম স্তরে আওয়াল, ছানী, ছালেছ, রাবে ও খামেছ এ ৫টি শ্রেণি রয়েছে। আল-মারহালাতুল মুতাওয়াস্সিতা বা দ্বিতীয় স্তরে আওয়াল, ছানী ও ছালেছ এ ৩টি শ্রেণি রয়েছে। আল-মারহালাতুছ ছানুবিয়্যাহ্ আল-আ’ম্মাহ্ বা তৃতীয় স্তরে আস সানাতুল উলা ও আস সানাতুছ-ছানীয়া এ দুটি শ্রেণি রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে ৩টি স্তর এবং ৬টি শ্রেণি। আল-মারহালা সানুবিয়্যাহ্ উ’ল্ইয়া বা প্রথম স্তরে রয়েছে আসসানাতুল-উলা ও আস সানাতুছ-ছানীয়া এ দুটি শ্রেণি। মারহালাতুল-ফযীলত (স্নাতক) বা দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে আসসানাতুল-উলা ও আসসানাতুছ-ছানীয়া এ দুটি শ্রেণি। মারহালাতুত-তাক্মীল (স্নাতকোত্তর) বা তৃতীয় স্তরে আসসানাতুল-উলা বা দাওরায়ে-হাদিস, আসসানাতুছ-ছানীয়া বা তাক্মীল ফিত্-তাখাস্ছুছ এ দুটি শ্রেণি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ কওমী মাদ্রাসাতে এ স্তরের কোর্স ১ বছরে দাওরায়ে হাদিস পর্যায়ে সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। ১৯৭৮ সালে দরসে নিযামি মাদ্রাসাগুলি পরিচালনার জন্য সর্বপ্রথম বিফাকুল মাদারিস নামে বেসরকারি কওমী মাদ্রাসা বোর্ড গঠিত হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রিক ইত্তেহাদুল মাদারিস, সিলেটের আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ, বগুড়ার জামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রিক তানযীমুল মাদারিস নামে এবং ফরিদপুরের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা কেন্দ্রিক বিফাকুল মাদারিসসহ আঞ্চলিক ভিত্তিতে আরও ১১ টি পৃথক কওমী মাদ্রাসা বোর্ড গড়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বিফাকুল মাদারিস-এর অধীনে ২,০৪৩টি মাদ্রাসা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে নিবন্ধিত হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ হাজারের অধিক কওমী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। তাক্মিল বা দাওরায়ে-হাদিস (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের প্রায় আড়াই শত এবং মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে অর্ধশত। মক্তব ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে শিশুকিশোরদের প্রাথমিক পর্যায়ের কুরআন শরীফ, দীনিয়াত ও আরবি শিক্ষার প্রাথমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানকে মক্তব, নুরানী বা ফুরকানিয়া মাদ্রাসা নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত স্থানীয় কোনো মসজিদে প্রাথমিক পর্যায়ের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনরাই সাধারণত এর শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭০ হাজার ফুরকানিয়া ও মসজিদ ভিত্তিক মক্তব রয়েছে। সহীহভাবে কুরআন ও কিরাত শিক্ষার জন্যও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া আল্-কুর্আন মুখস্ত করার জন্য গড়ে উঠেছে অনেক হাফেজিয়া মাদ্রাসা। ২০০৮ সালে এ মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ৪ হাজারের অধিক। স্বতন্ত্র মাদ্রাসা বাংলাদেশে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রিত এবং স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও সিলেবাসে পরিচালিত মাদ্রাসাসমূহের মধ্যে মৌলিকভাবে পাঁচটি শিক্ষা ধারা লক্ষ করা যায়। সেগুলি হচ্ছে: (১) কিন্ডার গার্টেন মাদ্রাসা ও ক্যাডেট মাদ্রাসা, (২) শর্ট কোর্স মাদ্রাসা, (৩) স্বতন্ত্র ও বিশেষ নেসাবের মাদ্রাসা, (৪) উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও বিশেষ কোর্সের (তাখাচ্ছুস) মাদ্রাসা, এবং (৫) আহলে হাদিস মাদ্রাসা। এ পাঁচ শ্রেণির মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম চার শ্রেণির মাদ্রাসার নির্ধারিত কোনো সিলেবাস নেই। ‘আহলে হাদিস’ কর্তৃক পরিচালিত নিজস্ব সিলেবাস অনুসরণকারী চল্লিশটির মতো মাদ্রাসা রয়েছে। এর অধিকাংশ বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশে এ জাতীয় সর্ববৃহৎ মাদ্রাসা হলো ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া এবং রাজশাহীর নওদাপাড়ার আল মারকাযুল ইসলামী আস সালাফী। কওমী মাদ্রাসার আদলে গড়া এ সকল মাদ্রাসা সম্পূর্ণ আহলে হাদিস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এগুলি জনগণের আর্থিক সহায়তা এবং আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহায্য সংস্থার অনুদানে পরিচালিত হয়ে থাকে। আরো তথ্য যোগ করছি যেঃ- মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা হয় হযরত মুহাম্মদ (স.) এর যুগে। তিনি ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মক্কার সাফা পাহাড়ের পাদদেশে দারুল আরকাম, হিজরতের পর মসজিদে নববীর উত্তর-পূর্ব দিকে সুফফা আবাসিক মাদ্রাসা এবং দারুল কুররাহ মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এ ছাড়া মসজিদে নববী (৬২২ খ্রি.) এবং মদীনার আরও ৯টি মসজিদ শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহূত হয়। খলিফাদের মধ্যে হযরত ওমর (রা.) সিরিয়ায় ও হযরত আলী (রা.) বসরা ও কুফায় বৃহৎ দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। উমাইয়া যুগে দেশের বৃহদায়তন মসজিদগুলি মাদ্রাসারূপে ব্যবহূত হতো। আববাসীয় বংশের শাসকগণ মাদ্রাসা শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাঁদের অনেকেই মসজিদ কেন্দ্রিক মাদ্রাসা নির্মাণ করা ছাড়াও আলাদা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় মসজিদে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক ছিল।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান দুই প্রকারঃ
· জাগতিক শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানঃ যে সকল প্রতিষ্ঠান দুনিয়ার কল্যানের জন্য শিড়্গার ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়।
· ইসলামী  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ যে সকল প্রতিষ্ঠান আখেরাত অর্থাৎ পরকালের কল্যানের জন্য শিড়্গা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়।
বাংলাদেশ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই প্রকারঃ
· আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা   প্রতিষ্ঠানঃ যা সরকারীভাবে খরচ ও নিয়ন্ত্রণে চলে। যাহাতে পুরাপুরি দ্বীনি ইলম শিড়্গার ব্যবস্থা নাই।
· কওমী মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ যা জনগণের সাহায্য সহযোগিতায়, হক্কানী ওলামায়েকেরাম দ্বারা, দারম্নল উলম দেওবন্দ (ভারত)-এর শিড়্গা কারিকুলাম অনুসরণ ও অনুকরণ করে পরিপূর্ণ দ্বীনি ইলম শিড়্গার ব্যবস্থা আছে।

উপরোক্ত প্রসঙ্গে নিম্নে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হইলঃ

কওমী মাদ্‌রাসা অর্থ কি?
কওম অর্থ জাতি, আর কওমী অর্থ জাতীয়। মাদ্‌রাসা আরবী শব্দের অর্থ বিদ্যালয়। সুতরাং কওমী মাদ্‌রাসা অর্থ জাতীয় বিদ্যালয়।


কওমী মাদ্‌রাসা শিক্ষার উৎস্?
হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পবিত্র মক্কা নগরীস্থ নূর পর্বতের গুহায় মানবজাতির কল্যাণে প্রভুর সান্নিধ্যে ধ্যানমগ্ন ছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা জিবরাইল (আ·) এর মাধ্যমে ইকরাপড়ুন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, আপনার প্রতিপালক অতি মহান (সূরা আলাক ১-৪) এ জ্ঞানের সূচনা করেন। অতপর মক্কা মুকার্‌রমার দ্বারে আকরামে, মদীনা মুনাওয়ারায়।


কওমী মাদ্‌রাসার মৌলিক উদ্দেশ্যঃ
কওমী মাদ্‌রাসার মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন-হাদীসের প্রচার-প্রসার এবং দ্বীন ইসলামকে বিশুদ্ধরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখা এবং দ্বীনের শাশ্বত শিক্ষাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া। ইসলামী শিক্ষার সুরক্ষার সাথে সাথে নিত্যনতুন সৃষ্ট ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, ফেতনা ইত্যাদি সম্পর্কে মুসলিমজাতিকে সতর্ক করা, তাদের হিংস্র থাবা হতে মুসলিমজাতিকে রক্ষা করা।


কওমী মাদ্‌রাসার বৈশিষ্ট্যঃ
কওমী মাদ্‌রাসা ছাত্রদেরকে কুরআন-হাদীসের আলোকে জ্ঞান দান করে, ত্যাগী, পরোপকারী, সমাজসেবক, অধিক ভোগ-বিলাসে নিরুৎসাহী এবং স্বল্প উপার্জনে সন্তুষ্ট থেকে জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলে। এখানে দুনিয়া বিমুখতা, কষ্ট, সবর, শোকর, আত্মীয়তার বন্ধন, ন্যায়পরায়ণতা, মমত্ববোধ, উত্তম আখলাক-চরিত্রের বিষয়গুলোই শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত তারা চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ভূমি দখল, হল দখল, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা, ব্যাভিচার, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা, অপকর্ম, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবী, অপসংস্ড়্গৃতি ইত্যাদির সাথে কোন রকমের সম্পর্ক রাখে না। এমনকি থানাগুলোতেও সন্ত্রাসীদের তালিকায় কোন কওমী মাদ্‌রাসার শিক্ষক বা ছাত্রদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলে না। খাঁটি মানুষ তৈরির কারখানাই হল কওমী মাদ্‌রাসা।


কওমী মাদ্‌রাসার প্রয়োজনীয়তাঃ

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা জাতির উন্নতির সোপান। শিক্ষা জাতিকে মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোর দিকে পথ নির্দেশ করে। শিক্ষা মানুষকে সুন্দর, পরিমার্জিত ও আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে মানবরচিত পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা কখনো মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত কুরআন ও নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থাই দুনিয়া ও আখেরাতের প্রকৃত সফলতা ও কামিয়াবী বয়ে আনতে পারে। এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর অত্যাবশ্যকীয় ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা ফরজ করে দিয়েছেন। এছাড়াও ইসলামী শিক্ষা হচ্ছে শাশ্বত শিক্ষা। এ শিক্ষাই মানুষকে নৈতিকতার উচ্চাসনে সমাসীন করতে পারে। আর কওমী মাদ্‌রাসা হচ্ছে এই ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ও সত্যিকার ধারক-বাহক। এজন্য কওমী মাদ্‌রাসা হতে শিক্ষাপ্রাপ্তরা সমগ্র দুনিয়াতে ইসলাম ও মানবতার খিদমতে নিয়োজিত। দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের হেফাজতের লক্ষ্যে তাঁরা খোদায়ী মদদে বুকটান করে এগিয়ে আসেন। তবে হঁ্যা জাগতিক জীবন পরিচালনার জন্য সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখযোগ্য, আর এজন্য কওমী মাদ্‌রাসাও এ ধরণের দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হতে কুরআন-হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের বিধি-নিষেধ মোতাবেক জীবনযাত্রা পরিচালনা করা একান্ত কর্তব্য। আর তাই একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়েছে যে, কওমী মাদ্‌রাসা ও কওমী মাদ্‌ারাসাভিত্তিক সঠিক ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।


কওমী মাদ্‌রাসার অবদানঃ
কওমী মাদ্‌রাসা সিরাতে মুস্তাকীমতথা সরল সঠিক পথের সংরক্ষক ও প্রহরী; যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সাহাবায়েকেরাম, সাহাবায়েকেরাম হতে তাবিঈন, তাবিঈন হতে তাবে তাবিঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন পর্যন্ত পৌঁছেছে। অতঃপর আইম্মায়ে মুজতাহিদীন হতে প্রত্যেক যুগেই এ আমানত উম্মতের নির্বাচিত শ্রদ্ধেয় মনীষীগণের মাধ্যমে পৌঁছেছে, নিঃসন্দেহে তা সামষ্টিকভাবে অক্ষত। এইভাবে দ্বীনের স্থায়ী সংরক্ষণ হয়ে আসছে। আল্লাহ তাআলা কওমী আলেম-ওলামা দ্বারা বিগত দিনগুলোতে দেশ-জাতি ও দ্বীনের যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন- তা      দৃষ্টান্তহীন। হেদায়াতের এমন কোন পথ নেই, যাতে কওমী আলেম দ্বারা পথনির্দেশিকা স্থাপন করা হয়নি। বিশ্ব পরিস্থিতিতে দ্বীনের অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার সম্পর্কে মুসলিমজাতিকে সচেতন করে তোলেন কওমী ওলামায়েকেরাম। তারা ধর্মহীনতা, বদদ্বীনি, নাস্তিকতার প্লাবনে ভেসে যাওয়া মুসলমানদের পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। তাঁরা বর্তমান সময়ে ইসলাম এবং মুসলিমজাতির হেফাযতের গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরাম হাদিস, ফেকাহ তাফসীরসহ বিভিন্ন শাস্ত্রের সহায়ক বহু গ্রন্থ রচনা করছেন। এর পাশাপাশি যারা তাফসীরের নামে পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যা, বিকৃত ব্যাখ্যা করে, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। মুসলিম উম্মাহকে এ সম্পর্কে সচেতন করেন। আমাদের দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁদের আদর্শ লালন করেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ওলামায়েকেরামের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। হিংস্র ইংরেজ ঔপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জিহাদের ফতোয়া প্রদান করেন ওলামায়েকেরাম। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্বেও ছিলেন ওলামায়েকেরাম। কওমী ওলামায়েকেরামের কর্ম তৎপরতার কেবলমাত্র শিক্ষা-সংস্ড়্গৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম উম্মাহর মাঝে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সুস্থ       চিন্তাধারার বিকাশ, দ্বীনের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ময়দানে যুগান্তকারী বিপ্লব সাধিত হয় কওমী মাদ্‌রাসার স্বর্ণ সন্তানদের মাধ্যমে। কওমী মাদ্‌রাসা ও তার স্বর্ণ সন্তানদের অবদানের মৌলিক দিকগুলো হচ্ছে-
১। ইসলামী শিক্ষা বিকাশে কওমী ওলামায়ে কেরামের বলিষ্ঠ ভূমিকা।
২। ইসলামী তাহযীব-তমাদ্দুন সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণকল্পে আত্মনিয়োগ।
৩। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় কওমী ওলামায়ে কেরামের অবদান।
৪। বিদআত-কুসংস্ড়্গার মোকাবেলায় ওলামায়ে কেরামের অবদান।
৫। ইসলামের প্রচার-প্রসার, ওয়াজ নসীহত এবং দাওয়াত ও তাবলীগ, গ্রন্থ সংকলন ও গ্রন্থ রচনা করা।
৬। রাজনৈতিক ময়দানে ইসলামী রাজনীতি বাস্তবায়ন।
৭। তাসাউফ তথা মানবিক আত্মশুদ্ধির ময়দানে কার্যকরী দিক-নির্দেশনা প্রদান।
৮। বিভিন্ন বাতেল ফেরকা বিরোধী কার্যকরী ভূমিকা জোরদার ও আন্দোলনে কওমী ওলামায়ে কেরামের অবদান।
৯। দুনিয়াবী সফলতার সাথে সাথে আখেরাতের মহাসফলতার সঠিক পথ প্রদর্শন।

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ