যখন, আপনার নতুন কম্পিউটার অথবা মোবাইল কিনতে, যাই ।তখন সর্বপ্রথম আমার , ফিচারগুলোর উপর বেশি নজর দেই।

কম্পিউটার বা মোবাইল এর সব থেকে বড় ফিচার হলো:  ওইটার প্রসেসর। কোন কম্পিউটার বা মোবাইল এর স্পিড বা টাস্ক পুরো করার ক্ষমতা নির্ভর করে তার প্রসেসর এর উপর। 

 

প্রসেসর কে, কম্পিউটার/ মোবাইল এর ব্রেন বলা হয়ে থাকে । কারন, প্রসেসর কম্পিউটার এর যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। 

 

একটি কম্পিউটার এর, পারফরমেন্স কেমন হবে ,তার পুরোটাই নির্ভর করে, প্রসেসর এর কোর এর উপর। প্রসেসর এর কোর (Processor Core) যত বেশি হবে, কম্পিউটার কার্যক্ষমতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।



প্রসেসর   কি?

 

>প্রসেসর কম্পিউটার এর, সব থেকে গুরুত্বপূর্ন  অংশ । কারনটা হলো, কম্পিউটার এর ভিওর সংঘটিত হওয়া কার্যক্রম গুলোর সব খরব গুলো প্রসেসর  এর কাছে থাকে। প্রসেসর এক, সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ ক্যালকুলেশন সম্পন্ন করতে পারে। 

 

প্রসেসর হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার  এর ভিওর সংঘটিত ইন্টারপ্রেটশন কে, বুঝে আমাদের সামনে আউট পুট প্রদান করে।প্রসেসর কে, সিপিউ ও বলা হয়ে থাকে। প্রসেসর , কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

একটি প্রসেসর কতটা দ্রুত কাজ করে, ওইটি পরিমাপ করা হয় , গিগাহার্জ হিসাবে।

 

কোর কি?

 

প্রসেসর হলো কম্পিউটার এর ব্রেণ , আর কোর হলো সেই প্রসেসর এর ভিওরের আর  একটি অংশ,  কোর প্রসেসর এর অংশ হলেও  , আলাদা  ভাবে একই কাজ করে থাকে ।

বলতে, পারেন কোর বলতে ,  একটি প্রসেসর এর ভিওর  আর একটি ফিজিক্যাল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। 

সিংগেল কোর প্রসেসর এ শুধু মাত্র একটাই , ফিজিক্যাল প্রসেসিং ইউনিট থাকে।  আবার ধরুন, ডুয়েল কোর প্রসেসর এর ভিওর. দুটি আলাদা আলাদা  ফিজিক্যাল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট থাকে। যার ফলে কাজে স্পিড কে দ্বিগুন করে দেয়। 

 

কোর এর সংখ্যার উপর, নির্ভর করে একটি প্রসেসর কতো গুলো কাজ করার ক্ষমতা রাখে।  কোর হলো, সিপিউ এর একটি কম্পিউটেশনাল ইউনিট। যা, ALU (Arithmetic Logic Unit) এর সাহায্যে,  কোন পার্টিকুলার অপারেশন এর জন্য ইন্সট্রাকশন কে  পড়ে থাকে।

 

কোন সিপিউ এ যদি, মাত্র ১টি কোর থাকে, এর মানে হলো সিপিউতে, একটিই মাত্র প্রসেসর ইউনিট আছে। 

আর এর সাহায্যে মাল্টিপল কাজ গুলো একসাথে করা সম্ভব নয়।  ধরুন, আপনি আপনার কম্পিউটার এর সাহয্যে,   গান শুনতে চান, সাথে গেম খেলতে চান, এবং ডাউনলোডও করতে চান।

 

ত্যাদি কাজ গুলো একসাথে করতে চাইলে, একটি সিংগেল কোর প্রসেসর এর পক্ষে, সব গুলো প্রোগ্রাম প্রসেস করা অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার বলতে পারেন।

 

এতো গুলো কাজ এক সাথে করলে , হ্যাং হওয়ার সম্ভবনা আছে।এই জন্যই ,কম্পিউটার এর পারফরমেন্স বৃদ্ধি করার জন্য, প্রসেসর এর এক এর অধিক কোর ব্যবহার করা হয়।



এক এর অধিক কোর যুক্ত প্রসেসর,  অনেক গুলো প্রসেস   একই সাথে অনেক দ্রুতার সাথে সম্পন্ন করতে পারে  ।

 

যার ফলে কম্পিউটার এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একের অধিক, কোর যুক্ত প্রসেসর কে, (Multicore Processor) মাল্টিকোর প্রসেসর বলা হয়ে থাকে।

 

কম্পিউটার আবিষ্কার এর, শুরু দিকে (৯০ দশক ) সিংগেল কোর প্রসেসর ব্যবহার করা হতো। যার ফলে, সেই সময়ের কম্পিউটার এর কার্যক্ষমতা অনেক কম ছিলো। তখন একটি সময়ে মাত্র ,একটি পার্টিকুলার কাজ করা সম্ভব ছিলো। 

 

কিন্তু বর্তমানে, মাল্টিকোর প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।  মাল্টিকোর প্রসেসর এর সাহায্যে , একটি প্রসেসর একই সাথে মাল্টিপল প্রসেস সম্পন্ন করতে পারে। যার ফলে ,কম্পিউটার অনেক ফার্স্ট হয়।





কোর প্রকারভেদ:

 

কোর অনেক প্রকার এর হয়ে থাকে, প্রসেসর এর ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কোর হয়ে থাকে। 

*সিংগেল কোর -  মাত্র একটি সিপিউ ইউনিট ব্যবাহার করা হয়।

*ডুয়েল কোর-  দুটি সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়।

*কোয়াড কোর- চারটি সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়।

*হেক্সা কোর - ছয়টি সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়।

*অক্টা কোর-  আটটি সিপিউ  ইউনিট ব্যবহার করা হয়।

*ডেকা কোর- দশটি সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়।

 

চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই:

 

সিংগেল কোর প্রসেসর:

 

সিংগেল কোর প্রসেসর , সব থেকে পুরানো প্রসেসর  বলতে পারেন, ৯০ এর দশকে এটি ব্যবহার করা হতো। সিংগেল কোর প্রসেসর কে, বেসিক প্রসেসর ও বলা হয়ে থাকে।

 

সিংগেল কোর প্রসেসর,  একবারে শুধু মাত্র ,একটাই কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তাই এই প্রসেসর এর সাহায্যে মাল্টি-টাস্ককিং করা অনেক কষ্টকর ছিলো।

 

এই প্রসেসর এর সাহায্যে, একই সময়ে, একাধিক এ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হলে, সিস্টেম স্লো / হ্যাং হয়ে যেত। একটি প্রসেস, সম্পূর্ন হওয়ার পরেই আর একটি প্রসেস ,শুরু করা যেত।

 

ডুয়েল কোর প্রসেসর:

 

>ডুয়েল কোর প্রসেসর হলো, একটি প্রসেসর যার ভিওর দুইট কোর (Core) ব্যবহার করা হয়। বলতে,পারেন একটি সিংগেল প্রসেসর এর ভিওর দুইটি ( সিপিউ ইউনিট) ব্যবহার করা হয়।

ডুয়েল কোর প্রসেসর, এর সাহায্যে মাল্টি-টাস্ককিং অনেক সহজেই করা সম্ভব।

 

ডুয়েল কোর প্রসেসর ,এর সাহায্যে কম্পিউটার এর প্রসেস টাস্ক গুলো দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এবং ওই টাস্কগুলো প্রসেসর এর , দুটি কোর আলাদা আলাদা ভাবে ,সম্পূর্ন করে থাকে।

এই Dual Core Processor ২০০৫ এর দিকে কম্পিউটারে ব্যবহার করা হতো।  সেই সময়ের দিক থেকে , এর পারফরমেন্স অনেকটা ভালো ছিলো ।

 

কিন্তু বর্তমানের , Heavy task গুলো, এই প্রসেসর এর মাধ্যমে প্রসেস করা অনেকষ্টকর।  Core i3 প্রসেসর ,এ এটি  ব্যবহার করা হয়।

 

কোয়াড কোর প্রসেসর:

 

>কোয়াড কোর প্রসেসর একটি মাল্টি প্রসেসর আর্কিটেকচার। এই প্রসেসর টি ডিজাইন করা হয়েছে, অনেক দ্রুত প্রসেস সম্পন্ন করার জন্য। 

 

এই প্রসেসর এ ব্যবহার করা হয়েছে, ৪টি কোর অর্থ্যাৎ এইপ্রসেসর এর ভিওর আছে , ৪টি সিপিউ ইউনিট। 

 

বলতে পারেন, ডুয়েল কোর প্রসেসর   এর দ্বিগুন সিপিউ ইউনিট । তাই এর কার্যক্ষমতাও ডুয়েল কোর প্রসেসর এর থেকে দ্বিগুন হয়ে থাকে।

যেহেতু, এই কোয়াড কোর প্রসেস এর ৪টি কোর ব্যবহার করা হয়। তাই কোন প্রসেস কে, চারটি ভাগে ভাগ করে, অনেক দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। 

 

অথবা, প্রতিটি কোর  কোন আলাদা আলাদা ইন্সট্রাকশনকে প্রসেস করতে পারে।  তো বলতে, পারেন এই প্রসেসর  এর সাহায্যে মাল্টি-টাস্ককিং সম্ভব।

এই প্রসেসর ব্যবহার করা হতো ২০০৯ এর দিকে।  বর্তমানের, Core i5 এর প্রসেসর এ , এটি ব্যবহার করা হয়। 

 

হেক্সাকোর প্রসেসর:

>হেক্সাকোর  আর একটি মাল্টি কোর প্রসেসর (Multi core processor) । এই প্রসেসর এ ৬টি কোর বা সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 

যেহেতু,  এই প্রসেসর এ, ৬টি কোর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাই  এই প্রসেসর টি, ডুয়েল কোর এবং কোয়াড কোর প্রসেসর এর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। 

 

এই প্রসেসর টি ব্যবহার করা হতো ২০১০ এর দিক এর দিয়ে।  বর্তমান Core i7 এর প্রসেসর গুলোতে  এটি   ব্যবহার হয় ।মাল্টি-টাস্কিং এর জন্য অনেক ভালো একটি অপশন ।

 

অক্টাকোর প্রসেসর:

 

>অক্টাকোর প্রসেসর আর একটি জনপ্রিয় প্রসেসর।  অক্টাকোর প্রসেসর এ ৮টি কোর বা সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়। 

 মাইক্রো ব্লগ

বুঝতেই পারছেন, ৮টি কোর ব্যবহার করা হয়। তাই এর স্পিডও অনেক বেশি হয়। এই প্রসেসর অনেক দ্রুত মাল্টি টাস্কিং সম্পূর্ন করতে পারে।  এই অক্টাকোর প্রসেসর এর স্পিড কোয়াড কোর প্রসেসর এর থেকে দ্বিগুন ।

এই অক্টাকোর প্রসেসর , Core i9 এ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 




ডেকাকোর প্রসেসর:

 

>ডেকাকোর কোর প্রসেসর , একই প্রসেসর এর ভিওর ১০টি কোর বা সিপিউ ইউনিট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা অনান্য প্রসেসর এর তুলনায় ১০গুন বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর। 

যেহেতু, দিন দিন মাল্টি টাস্ককিং বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই , প্রসেসর এর কোর এর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।  যাতে মাল্টি টাস্কিং সহজ হয়।




প্রসেসর এর কোর নিয়ে, অনেক রিসার্চ এবং ডেভলপমেন্ট হচ্ছে । যাতে কম্পিউটার এর স্পিড আরো বাড়ানো সম্ভব হয় । যেসব কোম্পানি, এই প্রসেসর/কোর তৈরি করে  তারা হলো:

Intel, AMD, Qualcomm, Nvidia, IBM, Motorola, HP ইত্যাদি কিন্তু এদের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হলো Intel এবং AMD এর প্রসেসর।




আরো বিস্তারিত জানতে



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে