ডার্মাটাইটিস বা একজিমা কাকে বলে?
ত্বকে প্রদাহ হওয়াকেই চিকিৎসা পরিভাষায় ডার্মাটাইটিস বলা হয়ে থাকে। এমন রোগ হলে চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া, ফোসকা পড়া, আঁশের মতো চামড়া ওঠা, ত্বকে লালা ভাব, চুলকানি এবং জ্বালা করার মতো লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। প্রসঙ্গত, এই ধরনের রোগের অনেক প্রকারভেদ আছে। সবক্ষেত্রেই যে একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেবে, এমন নয় কিন্তু।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরাই এর কবলে পড়ে (বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে)।

সবচেয়ে কমন ডার্মাটাইটিসের ধরনগুলি হল:

  • অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস
  • সংস্পর্শ একজিমা বা কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস
  • সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা


ডার্মাটাইটিসের প্রধান উপসর্গ এবং লক্ষণগুলি কি কি?
স্বাভাবিক লক্ষণগুলি হল:

  • লালভাব
  • ব্যথা
  • ফোস্কা গঠন
  • তীব্র চুলকানি
  • ফোলাভাব।


নির্দিষ্ট উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস: বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে কুনুইয়ের ভেতরদিকে এবং হাঁটুর পেছন দিকে যেখানে চামড়া ভাঁজ হয়ে থাকে।
  • কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: ত্বকে প্রদাহ বা জ্বালা/অস্বস্তি অনুভূত হয়, ত্বকের ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখতে পোড়ার মত লাগতে পারে, চুলকানির সাথে কিছু ফুটে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
  • সেবোরিক ডার্মাটাইটিস: ত্বকে লালভাবের সঙ্গে আঁশের মতো স্তর এবং খুশকি দেখা দেয়। শিশুদের মধ্যে, এটি মাথার উপরে দেখা যায় এবং এটি ক্রেডেল ক্যাপ হিসেবে পরিচিত।


ডার্মাটাইটিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
কোনও জিনগত কারণ, অ্যালার্জি, অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য অবস্থাগুলি বা বাহ্যিক কোনও ইরিট্যান্ট ডার্মাটাইটিস বা একজিমা সৃষ্টি করতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের ডার্মাটাইটিস ও তার কারণগুলি হল নিম্নরূপ:

  • জিনগত কারণ, ইমিউন ডিসফাংশন বা রোগ প্রতিরোধে অক্ষমতা, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বা বাহ্যিক কারণগুলির জন্য অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস হতে পারে।
  • ইরিট্যান্ট বা উত্তেজক যেমন বিষাক্ত আইভি, নিকেল যুক্ত গহনা, পরিষ্কার করার দ্রব্য, তীব্র পারফিউম বা সুগন্ধি, কস্মেটিক্স, এবং প্রিজারভেটিভগুলির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শও কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বা সংস্পর্শ একজিমা ঘটাতে পারে।
  • বিভিন্ন কারণে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা হতে পারে। যেমন মানসিক চাপ, ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়া, ব্যক্তির ত্বকের ওপর ইষ্টের উপস্থিতি এবং আরও অন্যান্য শারীরিক ব্যাধি ইত্যাদি।


কিভাবে ডার্মাটাইটিস বা একজিমা নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসক হয়ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কোন ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে, তা সনাক্ত করতে অ্যালার্জি প্যাচ পরীক্ষা হল প্রধান ডায়গনিস্টিক বা নির্ণায়ক টুল বা সরঞ্জাম।

নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হয়:

  • প্রিক অথবা রেডিওঅ্যালার্জোসরবেন্ট (আরএএসটি)।
  • কালচার টেস্টের জন্য স্কিন সোয়াব।
  • ত্বকের বায়োপ্সি।


চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদাহের মাত্রা/উপসর্গের তীব্রতার উপর নির্ভর করে।
সাধারণত টপিক্যাল স্টেরোয়েড ক্রিম ব্যবহার করতে বলা হয়।
রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে প্রভাবিত করে এমন টপিক্যাল স্টেরোয়েড ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
লাইট ট্রিটমেন্ট বা ফটোথেরাপি ব্যবহার করা হতে পারে।

নিজের-যত্ন নেওয়ার টিপস:

  • প্রেস্ক্রিপশনে দেওয়া নেই এমন ওষুধ এবং অ্যান্টি-ইচ বা চুলকানিরোধী জিনিসগুলি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করুন।
  • ঠাণ্ডা বা ভেজা সেঁক ত্বকে আরাম দিতে পারে।
  • উষ্ণ পানিতে গোসল করে নিলে উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • প্রদাহ হওয়া ত্বকের জায়গাটি আঁচড়ানো অথবা ঘষা থেকে এড়িয়ে চলুন।


ডার্মাটাইটিসের ঘরোয়া চিকিৎসা:
এমন রোগে তথাতথিত চিকিৎসা ভালো কাজ দিলেও এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যা ডার্মাটাইটিসের প্রকোপ কমাতে বেশ কার্যকরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।

  • ভিটামিন- ই: সূর্যমুখীর বীজ, ভুট্টা প্রভৃতি ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে এই ভিটামিন রয়েছে এমন তেলও গায়ে লাগাতে পারেন।
  • নারকেল তেল: সামান্য় নারকেল তেল নিয়ে গরম করুন। তারপর সেটিকে হালকা ঠান্ডা করে ত্বকের যে যে জায়গা ডার্মাটাইটিসে আক্রান্ত, সেখানে লাগান। রোজ যদি এমনটা করা যায় তাহলে রোগ অনেকটাই কমে। কারণ নারকেল তেলে অ্যান্টিব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ রয়েছে, যা ত্বকের শুষ্কতা ও লাল ভাব কমিয়ে রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য় করে।
  • অ্যালো ভেরা: শরীরের বাইরে ও ভেতর থেকে রোগের প্রকোপ কমাতে অ্যালো ভেরা জেল দারুন কাজ দেয়। চামড়ার আক্রান্ত জায়গায় লাগানোর পাশাপাশি প্রতিদিন এটা পান করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে রোগ কমতে থাকবে।
  • অ্যাপেল সিডার ভিনিগার: এক চামচ পানির সঙ্গে এক চামচ ভিনিগার মিশিয়ে গায়ে লাগান। একমাস এমন করলে দেখবেন রোগ সারতে শুরু করেছে।
  • গোসল করুন: গোসলের পানিতে পরিমাণ মতো খাবার সোডা মিলিয়ে গোসল করুন। এমনটা করলে গায়ের চুলকানি কমবে।
  • ত্বককে ভেজা রাখুন: সব সময় ত্বকে ময়েসচারাইজার লাগিয়ে রাখবেন। এমনটা করলে ত্বকের শুষ্কতা কমবে। সেই সঙ্গে কমবে কষ্টও।


ডার্মাটাইটিস হল একটি খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা কারণ আপনার ত্বক অসংখ্য জিনিসের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা অবস্থাটিকে আরও বাড়াতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা সবথেকে বেশি সুবিধা প্রদান করতে পারে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে