এন্ডোকার্ডাইটিস কি?
হৃদযন্ত্রের তিনটে স্তর আছে, যাদের নাম, পেরিকার্ডিয়াম, মায়োকার্ডিয়াম, এবং এন্ডোকার্ডিয়াম। সবচেয়ে ভিতরের স্তরে, অর্থাৎ এন্ডোকার্ডিয়ামে প্রদাহকে এন্ডোকার্ডাইটিস বলা হয়। এন্ডোকার্ডিয়ামে প্রদাহ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য হয়। ব্যাকটেরিয়া মুখ দিয়ে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যায় এবং ধীরে ধীরে এন্ডোকার্ডিয়ামকে আক্রান্ত করে। এন্ডোকার্ডাইটিসে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, কারণ এর ফলে হৃদপিন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রাণসংশয় দেখা দিতে পারে।

এন্ডোকার্ডাইটিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভর করে, উপসর্গগুলো ধীরে বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, সেই অনুসারে, এটাকে গুরুতর অথবা দীর্ঘস্থায়ী হিসাবে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। এন্ডোকার্ডাইটিসের উপসর্গগুলো এর প্রবলতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় এবং পূর্বের কোনো চিকিৎসাগত বা হৃদযন্ত্রগত সমস্যার উপর নির্ভর করে। এর কিছু উপসর্গ নীচে উল্লেখ করা হল:

  • জ্বর ও সাথে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • শ্বাসকষ্ট (ডিস্পনিয়া)
  • শ্বাসগ্রহনের সময় বুকে ব্যথা
  • পায়ের পাতায় ফোলাভাব
  • পিটিচিয়া (ত্বকে ছোটো আলপিনের মাথার আকারের লাল দাগ)
  • ক্লান্তি
  • হাড়ের সন্ধিতে ও শরীরে ব্যথা।


এন্ডোকার্ডাইটিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
কিছু ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে হৃদপিন্ডে পৌঁছায়, ফলে এন্ডোকার্ডাইটিস হয়। ব্যাকটেরিয়া ছাড়া, কিছু ছত্রাকও এন্ডোকার্ডাইটিসের কারণ হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো রক্ত প্রবাহে নিম্নলিখিত উপায়ে পৌঁছায়।

  • মুখ থেকে
  • ত্বক বা মাড়িতে সংক্রমণের মাধ্যমে
  • জীবাণুমুক্ত নয় এমন সুঁচ বা সিরিঞ্জের ব্যবহার বা বাতিল সুঁচ বা সিরিঞ্জ পুনরায় ব্যবহার
  • চিকিৎসার সরঞ্জাম যেমন ক্যাথেটারস বা মুত্রনিষ্কাশনযন্ত্র এবং ল্যাপারোস্কোপস


যারা জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত, ও যাদের হার্ট ভাল্ভ ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, ইনস্টিলড প্রোস্থেটিক ভাল্ভস বা হৃদরোগের ইতিহাস আছে তাদের এন্ডোকার্ডাইটিস হবার সম্ভাবনা বেশী।

এন্ডোকার্ডাইটিস কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সঠিক চিকিৎসাগত ইতিহাস ও তার সাথে সঠিক শারীরিক পরীক্ষা সাধারণত এন্ডোকার্ডাইটিস নির্ণয়ে সহায়তা করে। শারীরিক পরীক্ষা হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক শব্দ উদ্ঘাটন করে যাকে মারমার বলা হয়। রোগের কারণ যে ব্যাকটেরিয়াটি তাকে সনাক্ত করা জরুরী এবং এন্ডোকার্ডিয়াম কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা জানাও জরুরী। কিছু পরীক্ষা এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়:

  • কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি)
  • রক্তের কালচার বা অনুশীলন করা সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা পরীক্ষা
  • সি-রিয়্যাকটিভ প্রোটিনের (সিআরপি) মাত্রা পরীক্ষা
  • ইকোকার্ডিয়োগ্রাম
  • সি টি স্ক্যান


এন্ডোকার্ডাইটিসের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হল-

  • ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা- বহু প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিক বা সেই ওষুধ যেগুলি কালচার রিপোর্ট অনুযায়ী খাবার জন্য বা শিরায় প্রয়োগের জন্য দেওয়া হয়। অনেক সময়, অ্যান্টিপাইরেটিকস দেওয়া হয় জ্বর কমাতে এবং শরীরের ব্যথা ও অস্বস্তিবোধ কমাতে।
  • সার্জারীর দ্বারা চিকিৎসা - এটা করা হয় যারা হার্ট-ভাল্ভে আঘাতে ভুগছেন যেমন মাইট্রাল স্টেনোসিস। হার্ট-ভাল্ভের কার্যক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্যই অপারেশন করা হয়। এটা করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ভালভকে মেরামত করে বা নকল একটি প্রতিস্থাপিত করে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে