ছত্রাক সংক্রমণ কি?
ছত্রাক সংক্রমণ, যা মাইকোসিস নামেও পরিচিত, ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ। শরীরের বিভিন্ন অংশ গতানুগতিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে; পৃষ্ঠীয়, ত্বকনিম্নস্থ এবং সমগ্র দেহ।

এটি অতি পরিচিত একটি সংক্রমণ। ফাঙ্গি নামক এক ধরণের উদ্ভিজ্জাণু এই সংক্রমণ ঘটায়। খুব সাধারণ ছত্রাক সংক্রমণগুলি হল এথলেট’স ফুট, ওড়াল থ্রাশ, জক ইচ, রিঙ ওয়ার্ম এবং টিয়েনা ভেরসিকালার। এই সংক্রমণ হালকা হতে পারে (ত্বকের উপরে) বা তীব্র (ত্বকের গভীরে)।

ফাঙ্গি সাধারণত বাতাস, মাটি, পানি, গাছ এবং প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়। ছত্রাক সংক্রমণ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশেও আছে এবং গাছ এবং প্রাণীদেরও এই সংক্রমণ হয়। মানুষের এই সংক্রমণ হয় যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আক্রমণকারী ছত্রাকদের প্রতিহত করতে পারে না। ছত্রাক সংক্রমণ কখনও কখনও শরীরের অন্য অংশে, যেখানে ছত্রাক সংক্রমণ হয়নি, সেখানে এলার্জীর মত বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে পায়ে ছত্রাক সংক্রমণের কারণে হাতে বা আঙুলে এলার্জীর র‍্যাশ হল, যদিও হাত বা আঙুল সংক্রামিত জায়গার সংস্পর্শে আসেনি। আমাদের এই গ্রহে প্রায় দুই মিলিয়ন ধরণের ছত্রাক পাওয়া যায় যাদের মধ্যে প্রায় ছয়শতটি অসুখের কারণ হয়।

ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার কারণ:
যে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়, ফলে সংক্রমণ হয়। ছত্রাকদের স্পোরগুলি সহজেই বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে এবং নিশ্বাসের সাথে ভিতরে গিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ:
ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ এবং উপসর্গ ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়।

  • সাধারণত উপরিভাগের সংক্রমণের সাথে ফুসকুড়ি হয়।
  • ত্বকের মধ্যে বা ত্বকের নীচে ছত্রাকের সংক্রমণে পিণ্ড এবং ত্বকের পরিবর্তন হতে পারে।
  • নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ বা মেনিনজাইটিস গভীর বা অন্ত্রের সংক্রমণও সাথে ঘটতে পারে।


ছত্রাক সংক্রমণ এর চিকিৎসা:
রোগ নির্ণয় সাধারণত লক্ষণ এবং উপসর্গ, মাইক্রোস্কোপি, সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে করা হয়, কখনও কখনও একটি বায়োপসি এবং মেডিকেল ইমেজিংয়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। ত্বকের কিছু উপরিভাগের ছত্রাক সংক্রমণ অন্যান্য ত্বকের অবস্থার মতো দেখা দিতে পারে যেমন একজিমা এবং লাইকেন প্লানাস। কিছু কিছু সংক্রমণ খুবই সামান্য এবং ওষুধ ছাড়াই এর তীব্রতা কমতে পারে। ত্বকের গভীরের সংক্রমণ মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা নানা রকমের হতে পারে।

চিকিৎসা সাধারণত ছত্রাকরোধী ওষুধ দিয়ে হয়, সাধারণত ক্রিম আকারে বা মুখের মাধ্যমে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সংক্রমণ এবং এর মাত্রার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ লাগিয়ে সারিয়ে তোলা যায়, কারও কারও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংক্রামিত টিস্যু কেটে ফেলার প্রয়োজন হয়।

ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়:
ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিছু বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

  • পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত ঘেমে গেলে জামাকাপড় পাল্টে ফেলুন ও পুরোনো জামা না ধুয়ে আর পরবেন না।
  • শরীর ও বিভিন্ন ভাঁজ শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন। অনেকের বগল, কুঁচকি ও ভাঁজগুলো বেশি ঘেমে সব সময় ভিজে থাকে। তারা ডিওডরেন্ট, ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
  • পরিবারে কারও হলে তাকে একটু আলাদা রেখে, বিশেষ করে শিশুদের থেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দিন।
  • গরম, বর্ষা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় প্রতিদিন গোসল করুন। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে