ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না থাকা কি?
খাবার ইচ্ছে কমে যাওয়াকে ক্ষুধামান্দ্য বলে। যাঁরা ক্ষুধামান্দ্যে ভুগছেন তাঁরা খাবার খাওয়ার বহু ঘন্টা পরেও ক্ষুধা অনুভব নাও করতে পারেন, খাবারের কথা ভেবে বা খাবার দেখে অসুস্থ বোধ এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। বেশ কিছু কারণ - শারীরিক এবং মানসিক - দুই কারণেই ক্ষুধামান্দ্য অনুভূত হতে পারে। যদিও শরীরেই এর প্রভাব দেখা যায়, তবে এটি মূলত একটি মানসিক রোগ। উঠতি বয়সী মেয়েদের মধ্যে যা বেশি দেখা যায়। যখন এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তখন এই অবস্থাকে অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্ষুধাহীনতা বলে।

ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না থাকার সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ক্ষুধামান্দ্যের লক্ষণগুলি মোটামুটি স্পষ্ট। খাবারের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা দেখা দেয়, যার ফলে খাবারের কথা ভাবলে বা খাবার দেখলে বমিভাব, খিদে আর ওজন কমে যেতে পারে। কেউ কেউ আবার জোর করে খাবার খেলে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই বমি করে ফেলেন। ক্ষুধামান্দ্য দীর্ঘদিন ধরে চললে, মাথা ঘুরতে পারে এবং বিচলিত, দুর্বল বোধ হতে পারে, বুকে চাপ অনুভূত হতে পারে আর শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা ও তাপমাত্রার পরিবর্তন অসহনীয় মনে হতে পারে।

অন্যান্য কিছু লক্ষণ:

  • ক্লান্তি লাগা
  • সব সময় শীতভাব বোধ হওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঢেঁকুর হওয়া
  • ত্বক শুষ্ক হওয়া
  • চুল পড়ে যাওয়া
  • যৌনস্পৃহা কমে যাওয়া স্বাস্থ্য সমস্যা
  • ক্ষুধামান্দ্য রোগীদের যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হলে হৃৎপিণ্ডের রোগ, পানিশূন্যতা, রক্তশূন্যতা, দাঁতের ও মাঢ়ির সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ইত্যাদি বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়।
  • যেহেতু রোগটি উঠতি বয়সীদের বেশি হয়, তাই এ বয়সের রোগীদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে হাড় সহজেই ভেঙে যায়।
  • শরীরের গঠন সুষম হয় না
  • যৌবন প্রাপ্তিতে বিলম্বিত হয়
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক স্বাভাবিক বয়সে শুরু হয় না
  • শরীরে ইস্ট্রোজেন কমে গিয়ে পরবর্তী সময়ে বন্ধ্যত্ব ঝুঁকি তৈরি হয়।


ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না থাকার প্রধান কারণগুলি কি কি?
বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত কারণের জন্য খিদে না থাকার সমস্য়া হতে পারে। সেটা তীব্র মাথাযন্ত্রণার মতো সাধারণও হতে পারে বা ক্যান্সারের মতো চরম অসুখও হতে পারে। অ্যাকিউট বা তীব্র এবং ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের রোগ থেকেই ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। অসুস্থতা অথবা আঘাতের কারণে যন্ত্রণার থেকে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। খিদে না থাকার সম্ভাব্য কারণগুলি হল:

  • মাইগ্রেন।
  • স্নায়ুর ক্ষতি।
  • অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা।
  • ক্লান্তি।
  • গর্ভাবস্থা।
  • হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা।
  • ঋতুস্রাবের পূর্বের লক্ষণ।
  • সর্দি।
  • মদ এবং মাদক ছেড়ে দেওয়া।
  • নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া।
  • উদ্বিগ্নতা, মানসিক অবসাদ এবং ধকল।
  • অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা অথবা বুলিমিয়া।


ক্ষুধামান্দ্য বা খিদে না থাকা কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
উপসর্গ, চিকিৎসার ইতিহাস আর শারীরিক পরীক্ষার গবেষণা প্রাথমিক নির্ণয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। এটি চিকিৎসককে অসুস্থতার সম্ভাব্য কিছু কারণ মূল্যায়ন এবং সেই অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষার পরামর্শ দিতে সহায়তা করবে। থাইরয়েডের সমস্যা, এইচআইভি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। হৃদরোগের জন্য ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), পেটের সিটি স্ক্যান এবং গ্যাস্ট্রিক পরীক্ষারও পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা করাই হলো প্রধান পদক্ষেপ। পাশাপাশি অবস্থার উপর নির্ভর করে ওষুধ থেরাপি ছাড়াও ডাক্তার বেদনানাশক ব্যবহারের নির্দেশও দিতে পারেন, যদি প্রয়োজন হয়। ব্যায়াম, বিশ্রাম, যথাযথ আহার এবং কাউন্সেলিং সহ জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে। ক্ষুধাবর্ধক এবং খাবারের স্বাদ পরিবর্তন করা হল খিদে বাড়ানোর কিছু কৌশল।

ক্ষুধামান্দ্য দূর করার ঘরোয়া উপায়:
গোলমরিচ

বহুদিন ধরেই হজম ও ক্ষুধা বাড়াতে গোলমরিচ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাকস্থলীর আরাম ও গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এটা ভালো কাজ করে। গোলমরিচ স্বাদ-ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপ্ত করে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ করে হজমে সাহায্য করে।

পদ্ধতি: এক চা-চামচ গুড়ে আধা চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে উপকার মিলবে।

আদা
বিভিন্ন রকমের রান্না ও ঔষধি গুণের জন্য আদা বেশ পরিচিত। এটা ক্ষুধা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া আদা পেট-ব্যথা উপশমেও সাহায্য করে।

পদ্ধতি: আধা চা-চামচ আদার রস এবং এক চিমটি ‘রক সল্ট’ মেশান। খাবারের এক ঘণ্টা আগে ১০ দিন এই মিশ্রণ পান করুন। চাইলে আদার চা খেতে পারেন।

আমলকী
ক্ষুধামান্দ্য এবং গ্যাসজনিত সমস্যা দূর করতে আমলকী বেশ কার্যকর। এটা হজমে সাহায্য করে এবং যকৃত পরিশোধন করে। আমলকী ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ব্যবহার: দুই চা-চামচ আমলকী ও লেবুর রস এক কাপ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

এলাচ
পাচক রস নিঃসরণ বাড়িয়ে ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করে।

পদ্ধতি: খাবারের আগে দু-তিনটি এলাচ চিবিয়ে খান। অথবা প্রতিদিন চা পান করার সময় তাতে এলাচ-গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন।

মনে রাখুন:

  • বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগ বেশি হয়। অথচ এ সময়টাই শরীর গঠনে সবচেয়ে জরুরি। তাই মা-বাবার উচিত সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং লক্ষ্য রাখা।
  • প্রতিদিন স্বাস্থ্যসম্মত ও সুষম খাবার খেতে হবে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হবে। সম্ভব হলে কিছুটা সময় ব্যায়াম করতে হবে।
  • প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। এতে শরীরের খনিজ লবণ-পানির ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
  • একাকিত্বের লক্ষণ দেখা গেলেই তার প্রতি পরিবারের বাড়তি নজর দিতে হবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে