,
মানুষ সমাজে বাস করে। এই সমাজ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন এর মতো মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করে থাকে। তথাপি প্রাপ্তির মাঝেও কিছু অপ্রাপ্তি থেকে যায়। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে সমাজ ব্যর্থ হয়। আর ক্রমাগত ব্যর্থতা মানুষকে হতাশায় জর্জরিত করে তোলে। সে তার বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। তপ্ত মরুভূমিতে পথিক যখন তৃষ্ণার্ত হয় তখন সে চারদিকে হন্যে হয়ে জল খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু সূর্যের প্রখর তাপে মরুভূমিতে জল পাওয়া সহজ নয়। মরুভূমির বালিতে তীর্যকভাবে সূর্যকিরণ পতিত হলে তা দূর থেকে পানির মতো দেখা যায়, যাকে মরীচিকা বলে। পথিকের কাছে মনে হয় সামনে পানি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু যখন সে সামনে এগিয়ে যায় তখন পানির মতো দেখতে মরীচিকা আরও দূরে সরে যায়। মানুষের জীবনও এরকম মরুভূমির মরীচিকার মতো। মরীচিকার পেছনে যেমন মরুভূমির পথিক বুদ্ধি-জ্ঞানহীনের মতো ছুটতে থাকে তেমনি কাক্সিক্ষত বস্তু না পাওয়ার বেদনায় মানুষ বিবেকহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃংখলা।
শিক্ষা: অভাব মানুষকে বিভ্রান্ত করে অনিশ্চিত জীবনের পথে ছুটতে বাধ্য করে। যা তাকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত প্রাপ্তিও আবার মানুষকে বিপথের দিকে ঠেলে দেয়। তাই মানুষের জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দুই-ই থাকা উচিত।
তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয়
মরীচিকা তখন সহজে ভোলায়
মূলভাব : কাঙ্ক্ষিত বস্তু যখন পাওয়া দুষ্কর হয়, তখন মানুষ বারবার ভ্রান্তির ছলনায় সহজেই প্রতারিত হয়।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ আশা নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে, জীবনধারণ করে এবং সম্মুখপানে এগিয়ে যায়। কিন্তু মানুষের সব আশা বা সব চাওয়া সবসময় পূর্ণতা পায় না। অনেক সময় বারবার চেষ্টা করেও মানুষ কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভে ব্যর্থ হয়। তখন সে চরম হতাশায় ভোগে। অনেক সময় বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি বিপদমুক্ত হওয়ার জন্য যে যা করতে বলে সে তাই করে। কারণ সে আশা করে, হয়ত এ কাজটি করলে তার বিপদ কেটে যাবে। কিন্তু তাতেও যখন ব্যর্থতা দেখা দেয়, তখন স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, তৃষ্ণার্থ ব্যক্তির কাছে যেমন জল আশাতীত হলে মরীচিকা তাকে সহজে ভোলায় বা ছলনায় ফেলে তাকেও তেমনটি করা হচ্ছে। জনমানবহীন মরুতে তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির বাঁচার একমাত্র অবলম্বন, পানি তখন তা পাওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে উঠে। পানি আহরণ করার জন্য সে চতুর্দিকে ছুটে। বালিকে তখন সে দেখে পানির সাগর রূপে। এভাবে সে মরীচিকার কবলে পড়ে বারবার। ব্যক্তি জীবনেও এর পরিচয় মেলে। একজন লোক যখন কোনকিছু পেতে তার জীবনের সর্বস্ব খোয়ায় এবং অবশেষে তা থেকে যখন সে বঞ্চিত হয় তখন সে নিথর ও নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সত্য ও সুন্দর বাণী তার কাছ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার যাতাকলে সে ক্রমশ ভ্রান্তিপথে অগ্রসর হতে থাকে। মরিচিকা তাকে সহজে ভোলায় বা ছলনায় ফেলে, তাকেও তেমনটি করা হচ্ছে। আশাহত মানুষ স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষায় অতিসহজেই প্রতারিত হয়।