শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
সমাজতাত্ত্বিকভাবে সাধারণত 'আদিবাসী' বলতে তাদেরই বুঝায় 'যারা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সে অঞ্চলের আদি বাসিন্দা বা ভূমিজ সন্তান। যারা কোন ভূখন্ড বা জনপদের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই সে স্থানের বাসিন্দা। যারা আদিম সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং আদিম সংস্কৃতির কোনো কিছুই ত্যাগ করেনি কিংবা সভ্যতার আলোকবর্তিকা যাদের দোরগোড়ায় পৌছায়নি, যারা অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ।' আদিম সংস্কৃতির বৈশিষ্ট হলো, শিকার ও সংগ্রহভিত্তিক অর্থনীতি, প্রাকৃতিক শ্রমবিভাগ, লিখিত ভাষা ও বর্ণমালা না থাকা এবং ইঙ্গিতে কথা বলা, অবাধ যৌনাচার ও গোষ্ঠীবিবাহ, লজ্জার চেতনা না থাকা, কাঠামোবদ্ধ পরিবার না থাকা, নিজস্ব সরকার ও বিচার ব্যবস্থা, প্রকৃতি পূজা প্রভৃতি।
'উপজাতি' এমন জন গোষ্ঠীগুলোকে বুঝায় 'যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু নিজস্ব একটি আলাদা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে।' মূলতঃ রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতি বা উপজাতি নির্দিষ্টকরণ হয়ে থাকে।
'নৃ-গোষ্ঠী বা নরগোষ্ঠী' হচ্ছে 'যে কোন স্বতন্ত্র মানবগোষ্ঠী।' নৃবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানে উপজাতি বা আদিবাসী বলে আলাদা কোনো শব্দ বা প্রত্যয় নেই। বরং Race বা নরগোষ্ঠী বা নৃ-গোষ্ঠী স্বীকৃত প্রত্যয়।
ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণীত বৃহৎ পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র ১১ টি নৃ-গোষ্ঠী মঙ্গোলয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ, উপজাতীয় লেখকদের নিজস্ব গ্রন্থ পর্যালোচনায় প্রমানীত যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সব নৃ-গোষ্টী আরাকান, ত্রিপুরা, মিজোরাম ইত্যাদি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে এ দেশে এসেছেন। চাকমারা বিজয়গিরি নামক একজন যুবরাজের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আরাকান ও চট্টগ্রামের একটি অংশ দখল করেন। এ দেশের চাকমারা মনে করেন, তারা বিজয়গিরির সেই আরাকান বিজয়ী সৈন্যদের বংশধর। ১৭১৫ সালে চাকমা রাজা জলিল খাঁন বা জালাল খাঁন (১৭১৫-১৭২৪) সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে মোগল কর্তৃপক্ষের সাথে ১১ মণ কার্পাস তুলা উপহার দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ১৭৩৭ সালে সেরগুস্ত খাঁন (১৭৩৭-১৭৫৮) আরাকানের পক্ষ ত্যাগ করে মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং দেওয়ান পদ লাভ করেন। মারমারা ১৭৫৬ সালে আরাকানে আশ্রয় লাভ করেন। ১৭৭৪ সালে রামু, ঈদগড়, মাতামুহুরী এবং সর্বপ্রথম ১৮০৪ সালে বান্দরবান শহরে বসতি স্থাপন করেন। ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা বোদপায়ার সেনাবাহিনী স্বাধীন আরাকান রাজ্য দখল করলে হাজার হাজার শরনার্থী কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী পালিয়ে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। দ্বিতীয় বৃহৎ উপজাতি সাঁওতালসহ অন্যান্য গোষ্ঠী এ দেশে এসেছেন সাঁওতাল বিদ্রোহের পর। বর্তমানে এরা সবাই এ দেশের নাগরিক বা বাংলাদেশী কিন্তু বাঙ্গালী নয়।
সাঁওতালরা এ দেশের ভূমিজ সন্তান নয়। এর অন্যতম প্রমাণ হলো এ দেশে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত খাঁটি অনার্য শব্দ সাঁওতাল ভাষায় নেই। এ দেশের খাঁটি বাংলা দেশি শব্দ অর্থই হলো অনার্য শব্দ। বাংলা ভাষায় অষ্ট্রিক শব্দের পাশাপাশি অনেক দ্রাবিড় শব্দ যেমন, বগুড়া, শিলিগুড়ি অর্থাৎ ড়া, গুড়ি যুক্ত নাম দ্রাবিড় ভাষা থেকে আগত। বাংলার বিভিন্ন ধরনের দেশীয় পাখি যেমন, কাক, দোয়েল, শালিক, পানকৌড়ি ইত্যাদি এবং বহু প্রানী যেমন, ইঁদুর, বিড়াল, খাটাশ ইত্যাদি অনেক শব্দ অনার্য এবং এ দেশি শব্দ। নৃ-গোষ্ঠীর ব্যবহার্য শব্দের সাথে এসব নামবাচক শব্দের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
উপরের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা থেকে এটা স্পষ্টত প্রমাণীত যে, সাঁওতালসহ অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ এ দেশে আগত, তারা বাংলাদেশের ভূমিজ সন্তান নয়। এ কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের আদিবাসি বলা যুক্তিসঙ্গত নয়। 
আদবাসিরা নিজ নিজ দেশের মূল বাসিন্দা এবং জনপদ সৃষ্টির প্রথম থেকেই স্থানীয় মাটির সাথে তাদের নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক সুগ্রথিত। এ অর্থে এ দেশের বাঙ্গালীরাই এ দেশের মূল বাসিন্দা। হিন্দু জাতিভেদ প্রথার নিম্নস্তরে অবস্থিত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রকৃত আদিবাসি। অনার্য জনগোষ্ঠী এবং প্রকৃতি উপাসক জনগোষ্ঠীর উত্তরপুরুষ হিসেবে বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ ধর্মান্তরিত মুসলিম। এরাই এ দেশের আদি বাসিন্দা। যে কারণে ২০১১ সালের দিকে বাংলাদেশ সরকার এসব ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষদের 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অর্থাৎ প্রায় তিন ডজনেরও অধিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী যেমন, পাঙ্গন, লাওয়া, বিনধ, গারো, চাক, চাকমা, তঞ্চংগা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, লুসাই, ডালু, খুমি, খিয়াং, হাজং, খাসিয়া, পাংখোয়া, মারমা, মণিপুরী, সাঁওতাল, রাখাইন, কোঁচ, কৈবর্ত, মং, বর্ম্মন, কন্দ, পাত্র, গন্ড, হো, রাজবংশী, উঁরাও, মুন্ডা, মাহালি, পাহাড়ি, মাহাতো, পাহান প্রভৃতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী'। 
ধন্যবাদ
(বিভিন্ন লেখকের লেখা, উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন অন-লাইন সাময়িকি, বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের সম্মিলনে প্রণীত উত্তর)



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আসলে উপজাতি, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দ গুলো সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই সাঁওতালরাও এই তিনটি নামেই পরিচিত।উপজাতি এমন জনগোষ্ঠীগুলোকে বুঝায় যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু নিজস্ব একটি আলাদা সংস্কৃতি গড়ে তুলেতে সমর্থ হয়েছে। মূলত‍ঃ রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতি বা উপজাতি নির্দিষ্টকরণ হয়ে থাকে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ