ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান সন্নিবেশিত করে ইলমুল ফিকহ সংকলন ও মাযহাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে চারজন মহাপুরুষ ও মুজতাহিদ মুসলিম জাহানের চির স্মরণীয়, বরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে আছেন। ইমাম শাফেয়ী রহঃ তাদের মধ্যে দ্বিতীয়।


 ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর নাম ও বংশপরিচয়ঃ-  তার নাম মোহাম্মদ। পিতার নাম ইদ্রিস। কুনিয়াত বা উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। মায়ের নাম উম্মুল হাসান বিনতে হামজা। নিসবত আশ শাফেয়ী। পূর্ণ নাম আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফেয়ী। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন ইমাম শাফেয়ী রহঃ ও সে বংশের সন্তান। ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বংশের ঊর্ধ্বতন নবম পুরুষ আবদে মানাফ। যিনি রাসূল সাঃ এর ঊর্ধ্বতন চতুর্থ পুরুষ। 


শাফেয়ী বলার কারণঃ-   তার পূর্বপুরুষ স্বনামধন্য উসমান ইবনে শাফে এর নামানুসারে তাকে শাফেয়ী বলা হয়। ইমাম শাফেয়ী রঃ এর জন্মঃ-  ১৫০ হিজরী সনে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক গাজা বা  আসকালান শহরে ইমাম শাফির জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, তার জন্মস্থান হল মদিনাতুল মুনাওয়ারা। উল্লেখ্য তিনি যেদিন জন্মগ্রহণ করেন ইমাম আযম আবু হানিফা রঃ সেদিন ইন্তেকাল করেন। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর শৈশবকালঃ-  ইমাম শাফেয়ী রঃ জন্মের দু'বছর পরে তার পিতাকে হারান। ফলে পিতৃহারা দুঃখ নিয়ে মায়ের কাছে লালিত পালিত হন। পবিত্র মক্কা নগরীতে তার শৈশব কাল অতিবাহিত হয়। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মেধা ও প্রতিভাঃ-  আর তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধা ও বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি যখন ৭ বছরের শিশু তখন পবিত্র কোরআন হেফজ করেন। ১০ বছর বয়সে মুয়াত্তায়ে মালেক মুখস্ত করেন। এরপর মক্কার প্রখ্যাত ফকিহ মুসলিম ইবনে খালেদ এর নিকট ৫ বছর যাবত ইলমে ফিকাহ অধ্যয়ন করেন। ১৫ বছর বয়সেই তৎকালীন ফকিহগন তাকে ফতোয়াদানের অনুমতি দেন। এরপর তিনি মদিনার ইমাম মালেক রহঃ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাকে মুয়াত্তায়ে মালেক কিতাব মুখস্থ শোনান এবং তার কাছে ইলমে ফিকাহ বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সেখান থেকে শিক্ষা সমাপন করে তিনি ইরাকে পাড়ি জমান এবং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর শ্রেষ্ঠ ছাত্র ইমাম মুহাম্মদের  নিকট হাদিস ও ফিকহুল হানাফিয়া অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি ১৮০ জন মুহাদ্দিসগনের নিকট থেকে হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করেন। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর কর্মজীবনঃ-  অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বাগদাদে দু'বছর অধ্যাপনা শেষ করে মক্কা শরীফ চলে আসেন। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ সরকারী পদে নিযুক্তঃ-  সেসময় বাগদাদের খলিফা হারুনুর রশিদ ইমাম শাফেয়ী রহঃ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন দেখে নাজরানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। অবশ্য বেশিদিন তিনি এ পদে বহাল না থেকে ১৮৪ সালে বাগদাদ ত্যাগ করেন। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ মক্কায় আগমনঃ-  ইরাক থেকে ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহ আলাইহি পবিত্র মক্কায় গমন করেন। জ্ঞানের অনুসন্ধানে আগত মিসরীয়, স্পেনীয়, আফ্রিকান ওলামায়ে কেরাম থেকে জ্ঞান অনুসন্ধান করেন। পুনরায় ইরাক গমনঃ- ১৯৫ হিজরীতে তিনি মক্কা হতে পুনরায় আগমন করেন। ওলামায়ে কেরামের বিশাল একটি দল তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে।


 ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মাযহাব প্রবর্তনঃ-  ইরাকে অবস্থানকালে তিনি হানাফি ও মালেকী মাযহাবের আলেমগণ এর সম্বন্ধে মধ্যপন্থী একটি মাযহাব প্রবর্তন করেন। এতে এটাকেই শাফেয়ী মাযহাব বলা হয়। 


মিশর গমন ও নতুন মাযহাব প্রতিষ্ঠাঃ-  ইরাকে স্বীয় মাজহাব প্রতিষ্ঠা করে তিনি ১৯৮ হিজরীতে মিশর চলে যান। এখানে পারিপার্শ্বিক অবস্থা লক্ষ করে তিনি তার মাযহাব ও গবেষণায় সংস্কার ও পরিবর্তন সাধন করে একটা সংশোধিত মাযহাব রচনা করেন। ইসলামী ইতিহাসে এটাকে শাফেয়ী মাযহাব বলা হয়। সুদীর্ঘ ৬ বছর কাল অবস্থানের মাধ্যমে তিনি তার মাযহাব কে প্রতিষ্ঠা করেন। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর হাদীসে অবদানঃ-  ইমাম আহমদ রহঃ ছিলেন ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর সুযোগ্য ছাত্র। ওস্তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ইমাম আহমদ মুসনাদে আহমদ নামক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।


 ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর রচিত গ্রন্থাবলীঃ-  ইমাম শাফেয়ী রহঃ কিতাবুল উম্মাহ নামে ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতির ওপর একটি প্রসিদ্ধ কিতাব রচনা করেন। এটাকে উসূলে ফিকহের প্রথম কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে। ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর রচিত কিতাবের সংখ্যা সর্বমোট ১১৪ খানা। 


ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর ইন্তেকালঃ-  জীবনভর জ্ঞান সাধনা ও জ্ঞানের বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠা করে, ইমাম শাফেয়ী রহঃ ২০৪ হিজরী মোতাবেক ৮২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মিশরের মাটিতে ইন্তেকাল করেন।


আরো পড়ুন....

ইমাম মালেক রহঃ এর জীবনী 

ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর জীবনী 




Share with your friends