শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Jamiar

Call

اَلَاۤ اِنَّہُمۡ ہُمُ الۡمُفۡسِدُوۡنَ وَ لٰکِنۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۲﴾

সাবধান! মূলত তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তা তারা বুঝতে পারে না। বিপর্যয় সৃষ্টি করা কী ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এ আয়াতেও মুনাফিকদের বর্ণনা রয়েছে এবং এই ধূলির ধরণীতে তাদের বিবাদ বিপর্যয় সৃষ্টি, কুফর এবং অবাধ্যতা সম্পর্কে মুসলিমগণকে হুঁশিয়ার ও সতর্ক করা হচ্ছে। এ দুনিয়ায় মহান আল্লাহর অবাধ্য হওয়া এবং অপরকে নাফরমান ও অবাধ্য হওয়ার আদেশ করাই হচ্ছে দুনিয়ার বুকে বিবাদ সৃষ্টি করা। আর যমীন ও আসমানের শান্তি রয়েছে মহান আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, যখন তাদেরকে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকতে বলা হয় তখন তারা বলে ‘আমরা তো সঠিক সনাতন পথের ওপরেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছি।’ সালমান ফারিসী (রাঃ) বলেন যে, এই স্বভাবের লোক আজ পর্যন্ত আসেনি। উদ্দেশ্য হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় তো এরূপ বদ স্বভাবের লোক বিদ্যমান ছিলোই কিন্তু এখন যারা আসবে তারা তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট হবে। এ কথা মনে করা যাবে না যে, সালমান ফারিসী (রাঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিলো যে, এরূপ বদ স্বভাবের লোক রাসূলের যুগে ছিলোই না। মুনাফিকদের বিপর্যয়ের ধরণ ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন যে, ঐ মুনাফিকদের বিবাদ ও গণ্ডগোল সৃষ্টি করার অর্থ হচ্ছে তারা ঐসব কাজ করতো যা করতে মহান আল্লাহ নিষেধ করেছিলেন এবং তাঁর ফরযগুলোও তারা অবহেলা করে নষ্ট করতো। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ সত্য ধর্মের প্রতি তারা সন্দেহ পোষণ করতো এবং তাঁর সত্যতার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতো না। মু’মিনদের কাছে এলে তাদের ঈমানের কথা তারা প্রচার করতো, অথচ তাদের অন্তর মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্বন্ধে সন্দেহে পরিপূর্ণ ছিলো। তারা সুযোগ সুবিধা পেলেই মহান আল্লাহর শত্রুদের সাহায্য ও সহায়তা করতো এবং তাঁর সৎ বান্দাদের বিরুদ্ধাচারণ করতো। আর এতোসব করা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সঠিক ‘আমলকারী মনে করতো। (তাফসীর তাবারী ১/২৮৯) কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করাকেও কুর’আন মাজীদে ফাসাদ বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ١ؕ اِلَّا تَفْعَلُوْهُ تَكُنْ فِتْنَةٌ فِی الْاَرْضِ وَ فَسَادٌ كَبِیْرٌ﴾ যারা কুফরী করছে তারা পস্পর পরস্পরের বন্ধু, তোমরা যদি উপর্যুক্ত বিধান কার্যকর না করো তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে ফিতনা ও মহা বিপর্যয় দেখা দিবে। (৮ নং সূরাহ্ আনফাল, আয়াত নং ৭৩) এ আয়াতটি মুসলিম ও কাফিরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলো। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ ﴿یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ١ؕ اَتُرِیْدُوْنَ اَنْ تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا مُّبِیْنًا﴾ হে মু’মিনগণ! তোমরা মু’মিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি মহান আল্লাহর জন্য তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও? (৪ নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ১৪৪) অর্থাৎ তোমাদের মুক্তির সনদ কেটে যাক এটা কি তোমরা চাও? তারপর তিনি আরো বলেনঃ ﴿اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ فِی الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ١ۚ وَ لَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِیْرًا﴾ নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনো তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। (৪ নং সূরাহ্ নিসা, আয়াত নং ১৪৫) মুনাফিকদের বাহ্যিক আচরণ ভালো ছিলো বলে মুসলিমদের নিকট তাদের প্রকৃত অবস্থা গোপন থেকে যায়। তারা মু’মিনগণকে মুখমিষ্টি অথচ অবান্তর কথা দিয়ে ধোঁকা দেয় এবং তাদের মিথ্যা দাবী ও কাফিরদের সাথে তাদের গোপন বন্ধুত্বের ফলে মুসলিমগণকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং বিবাদ ও হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী এই মুনাফিকরাই। অতএব যদি এরা কুফরের ওপরেই কায়িম থাকতো তাহলে তাদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও গভীর চতুরতা কখনো মুসলিমদের জন্য এতো ক্ষতিকর হতো না। আর যদি তারা পূর্ণ মুসলিম হয়ে যেতো এবং ভিতর ও বাহির তাদের এক হতো তাহলে তারা এই নশ্বর দুনিয়ার নিরাপত্তা লাভের সাথে সাথে আখিরাতের মুক্তি ও সফলতার অধিকারী হয়ে যেতো। এতো ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেঃ আমরা তো শান্তি স্থাপনকারী, আমরা কারো সাথে বিবাদ করতে চাইনা। আমরা মু’মিন ও কাফির এই দলের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে ঐক্য বজায় রাখতে চাই।’ (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম, ১/৫২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তারা বলতোঃ ‘আমরা দুই দল অর্থাৎ মুসলিম ও আহলে কিতাবের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী।’ (হাদীসটি য‘ঈফ) কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন যে, এটা শুধু তাদের মূর্খতা। যাকে তারা সন্ধি বলছে ওটাই তো প্রকৃত বিবাদ। কিন্তু তাদের বোধশক্তি নেই।

সংগ্রহীত, ইবনে কাসির।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ