শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটির মসনদে যিনি বসবেন, মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাকে কিন্তু ভোটাররা সরাসরি ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন ইলেকটোরেটরা, যারা তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত। মোট কথা, আজকের নির্বাচনে মার্কিন জনগণ বারাক ওবামা বা মিট রমনিকে সরাসরি ভোট দেবেন না, ভোট দেবেন ইলেকটোরেটদের। এই ইলেকটোরেটরা, যাদের মোট সংখ্যা ৫৩৮, একসঙ্গে ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত। সংখ্যাটা ৫৩৮ কেন? মার্কিন আইনসভায় উচ্চকক্ষ সিনেটে ১০০ আসন এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব কংগ্রেসে ৪৩৫ আসন আছে। এর সঙ্গে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির জন্য ৩টি ধরে সারা দেশের জন্য ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোট হচ্ছে ৫৩৮টি। হোয়াইট হাউসে থাকার জন্য লাগে ২৭০ ভোট। এই পদ্ধতি প্রয়োগের শুরুতে যুক্ত রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা কার্যকর থাকা এবং ছোট রাজ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বড় রাজ্যগুলোর তুলনায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়ে চিন্তা ছিল। এ ছাড়া কংগ্রেস নাকি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তা নিয়েও তর্ক ওঠে। এ বিষয়ে অনেক তর্ক-বিতর্কের পরে ১৮৮৭ সালের ‘কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন’-এ মাঝামাঝি একটি ব্যবস্থা হিসেবে ইলেকটোরাল কলেজপদ্ধতি চালু হয়। সময়ে-সময়ে নানা পরিবর্তন- পরিমার্জনসহ টিকে থাকা ইলেকটোরাল কলেজপদ্ধতি নানামুখী সমালোচনার মধ্যে পড়ছে এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ইলেকটোরাল কলেজের সমালোচকদের আপত্তির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে— এতে দেশব্যাপী ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিবর্তে অঙ্গরাজ্যভিত্তিক ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই বিবেচ্য। এ ছাড়া ৫০টির মধ্যে ৪৮টি অঙ্গরাজ্য (নেব্রাস্কা ও মেইন বাদে) এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে ইলেকটোরাল কলেজের ক্ষেত্রে ‘উইনার টেইক অল’ নিয়ম চালু আছে। ব্যাপারটা একটু আজব বটে। কীভাবে? ধরা যাক, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কথা। এখানে আছে ২৯টি ইলেকটোরাল ভোট। আজকে ভোটাররা ইলেকটোরেটদেরই ভোট দেবেন। তবে আলাদা আলাদা করে নয়। ভোট দেওয়া হবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নামের ব্যালটেই, যেখানে ইলেকটরদের নাম থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। তথাপি নির্বাচিত হবেন ইলেকটোরেটরাই! এখানেই শেষ নয়, এরপর আছে ‘উইনার টেক অল’ নিয়ম। ধরা যাক, নিউইয়র্ক রাজ্যে একজন প্রার্থী পেলেন ৫০ দশমিক ৫ ভাগ ভোট, অন্যজন ৪৯ দশমিক ৫ ভাগ। এ ক্ষেত্রে ইলেকটোরাল কলেজের ২৯টি ভোটের ভাগাভাগি কীভাবে হবে? ভাগাভাগিটা হবে তিন তাসের জুয়ার মধ্যে। ‘উইনার টেইক অল’! জো জিতা ওহি সিকান্দার! বিজয়ী প্রার্থীর ঘরেই চলে যাবে ২৯টি ভোট। অর্থাত্ ৪৯ দশমিক ৫ ভাগ ভোটের চার আনা দামও থাকবে না! এই নিয়মে দেশভিত্তিক সাধারণ ভোটারের ভোটে কম ভোট পেয়েও রাজ্যভিত্তিক ইলেকটোরেট ভোট বেশি পেয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব। অতীতে, যেমন— ১৮৭৬, ১৮৮৮ এবং সাম্প্রতিককালে ২০০০ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে সমালোচকরা মনে করেন, ইলেকটোরাল কলেজপদ্ধতির মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচন-ভিত্তিক গণতান্ত্রিকব্যবস্থার প্রধানতম নীতি, অর্থাত্ ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’ নীতির সুস্পষ্ট ব্যতয় ঘটে। ইলেকটোরাল কলেজপদ্ধতির অন্য একটি বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর (সুইং স্টেটস) মধ্যেই নির্বাচনি লড়াই মূলত সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং নির্বাচনে ওই দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর হাতেই নির্বাচনের ফল আটকে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। কোনগুলো দোদুল্যমান রাজ্য? যেসব রাজ্যে ভোটাররা শেষাবধি কোনও প্রার্থী বা দলের পক্ষে সুস্পষ্ট সমর্থন দেখান না, সেগুলো। এসব রাজ্যে ভোটের সামান্য সুইং বদলে দিতে পারে পুরো চিত্র। কেননা, ইলেকটোরাল কলেজপদ্ধতির কারণে সামান্যতম ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীই পেয়ে যাবেন অঙ্গরাজ্যের জন্য বরাদ্দকৃত সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট। এবার এ ধরনের অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে— ওহাইও, ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, কলোরাডো, নেভাদা, উইসকনসিন, আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ার। এগুলোয় মোট ইলেকটোরাল ভোট ১১০টি। অর্থাত্ মোট ইলেকটোরাল ভোটের (৫৩৮টি) বলতে গেলে ৫ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু হলে কী হবে? জিততে হলে তো দরকার ২৭০টি ভোট। এর মানে ৯টি দোদুল্যমান রাজ্য জিতে নিতে পারলে ৪০ ভাগ ভোট জেতা হয়ে গেল। বাকি ৪১টি রাজ্য থেকে জিততে হবে বাকি ৬০ ভাগ। ওবামা কিংবা রমনির দিকে তাকিয়ে দেখুন। গত কয়েক মাসে দুই প্রার্থীর যত দৌড়ঝাঁপের বেশির ভাগই এই ৯টি রাজ্যে। নির্বাচনি ব্যয়, প্রচারণা, মিডিয়ার আগ্রহ— সবকিছু দোদুল্যমান রাজ্যগুলোকে নিয়ে। সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণগুলো বাছাই করে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছেন দুই প্রার্থীই। উদাহরণ— ওহাইও। মাত্র ১৮টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে ওহাইও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের দোষ দেওয়ার উপায় নেই। এবারের সুইং স্টেটগুলোর বাইরে বাকি ৪১টি রাজ্যের কথা ধরা যাক। এগুলোর অনেকই ‘সেইফ স্টেট’। অর্থাত্ এই ৪১ রাজ্যের অনেকগুলোতেই কোন দলের প্রার্থী জিতবে বা হারবে, তা আগে থেকেই স্পষ্ট হয়ে থাকে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ