শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

নিজের মা-বাবাকে নিজ হাতে খুন করেন ঐশী। কফির সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ঘুমের ঘোরে তাদের ছুরি দিয়ে ক্ষত- বিক্ষত করে হত্যা করেন তিনি। আদালতে তিনি এই রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনাও দেন। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানিয়েছিলেন, এক বন্ধু উচ্চমাত্রার ঘুমের ট্যাবলেট এনে দেয় ঐশীকে। ঐশী ট্যাবলেটগুলো কফির সঙ্গে মিশিয়ে তার বাবা-মাকে পান করান। বাবা-মা দুজনই কফি পানে অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর ঐশী হত্যা করেন তার বাবা-মাকে। মা-বাবাকে হত্যার পর ঐশী গোসলও করেন। আরেক জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেন, প্রথমে তিনি মাকে হত্যা করেন। হত্যার পর তার লাশ লুকিয়ে রাখেন। মাকে হত্যার সময়ে বাবা বাইরে ছিল। বাবা ঘরে আসার পর তাকেও চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করেন তিনি। টুকরো করার জন্য বাসায় ধারালো অস্ত্র না পাওয়ায় লাশ টুকরো করতে পারেননি। ঐশী মেঝের রক্ত মুছে গোসলও করেন। ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট আদালত সূত্র জানায়, ‘ঐশী জানিয়েছে গত ১৪ আগস্ট আমি ছয় পাতা ঘুমের বড়ি কিনেছিলাম। রাত ১১টার পর তিন পাতা বাবার কফিতে মিশিয়ে পান করাই। আর মায়ের কফিতে তিন পাতা মেশাই। কফি পান করার পর তারা ঘুমিয়ে পড়েন। পরে আমি চাকু দিয়ে বাবাকে স্ট্যাব করি। এরপর বাবা মারা যান। বাবাকে হত্যার পর আমি হুইস্কি পান করি। বাবাকে হত্যার পর একইভাবে মাকে চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি। এক পর্যায়ে মা গোঙাতে থাকেন। এরপর মা আমার কাছে পানি চান। আমি তাকে পানি খাওয়াই। এরপরও মা যখন মারা যাচ্ছিলেন না তখন মায়ের গলায় চাকু দিয়ে স্ট্যাব করতে থাকি। পরে মা মারা যান। বাবা- মাকে হত্যার পর কাজের মেয়ে সুমিকে ডাকি। দুজনে লাশ টেনে বাথরুমে রাখি। পরে কৌশলে ছোট ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।’ তবে কাকে আগে খুন করা হয়েছিল বা খুন নিয়ে আদালতে তার জবানবন্দিতে একেক সময় একেক কথা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসে। আদালতে ঐশী আরও জানান, মা স্বপ্না রহমানকে হত্যার পর বটি দিয়ে চাবির গোছা কেটে চাবি নেন তিনি। এর পর লকারের তালা খুলে নগদ প্রায় লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে সকালে কাজের মেয়ে সুমি, ছোট ভাই ঐহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। হত্যার পর দেশের বাইরে চলে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেন ঐশী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ৮ম শ্রেণি থেকেই ঐশী মাদক গ্রহণ শুরু করে ক্রমেই বিপথগামী হতে থাকে। পরে তার মাদক গ্রহণ ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। বাবা-মা চেষ্টা করে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। যে কারণে বাবা-মার সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় তার। এ কারণেই হত্যার পরিকল্পনা করে। সূত্র জানায়, ঐশী সব ধরনের মাদকেই আসক্ত ছিল। হেরোইন, প্যাথেডিন ইঞ্জেকশন, ইয়াবা, অ্যালকোহল এমনকি গাঁজা সেবনেও অভ্যস্ততা ছিল তার। এসব কারণেই প্রতিমাসে নতুন নতুন কৌশলে বাবা-মাকে বলে হাত খরচ হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ঐশী।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ