এইচ.জি.ওয়েলস টাইম মেশিনের কথা বলেছিলেন ১৮৯৫ সালে। বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে দেখলেন যে টাইম মেশিন বানানো সম্ভব হতে পারে কিন্তু তা দিয়ে কেবল ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব ,অতীতে নয় ।কারণ ধরুন আপনি টাইম মেশিন দিয়ে অতীতে গেলেন আর কেউ তখন আপনাকে মেরে ফেলল ,তাহলে আপনি বর্তমানে আছেন কিভাবে কারন আপনিতো অতীতে মরে গেছেন । তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট
এটি একটি চতুর্মাত্রিক কাল্পনিক যান। তাই এটি ত্রিমাত্রিক জগতের যে কোন জায়গায় যে কোন টাইমের সাপেক্ষে চলতে পারে। অর্থাৎ অতীত বা ভবিষ্যতের যেকোন সময়ের গন্তব্যে পৌছতে পারে। আমাদের চিন্তা ভাবনা ত্রিমাত্রিক তাই গন্তব্য বলতে কোন স্থানকে বুঝি। কিন্তু চতুর্মাত্রিক যানের জন্য গন্তব্য হচ্ছে সময়। একইভাবে মহাশূন্যও চতুর্মাত্রিক। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, কোন বস্তু যদি আলোর বেগে চলে তবে তা থেকে টাইম মেশিন তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে যে থিওরিটা মানা হয় তা হল আমরা যা দেখি তা মূলত ১০ সেকেন্ড আগেই হয়ে গেছে অর্থাৎ আপনি এই উত্তরটি ১০ সেকেন্ড আগে দেখেছেন কিন্তু তা আপনার কাছে এইমাত্র মনে হচ্ছে। অত্যান্ত দ্রুত গতির বস্তু দ্বারা আপনি এই ১০ সেকেন্ড পর কি হবে অর্থাৎ যা হয়ে গেছে কিন্তু আপনি দেখেননি তা বুঝতে পারতেন। প্রাথমিক ভাবে ১০ সেকেন্ড হলেও ঐসব বিজ্ঞানীরা মনে করেন এসময় আরও বর্ধিত করা যাবে। তবে বাস্তবিকভাবে এমন কিছু না আছে আর না কোনো দিন হবে। এটা শুদু সায়েন্স ফিকশনেই ভালো মানায়। সূত্র: Science SET
টাইম মেশিন, ঃ দশ বছরের সেই কিশোরের জীবনে সেদিন নেমে এসেছিল অন্ধকার। এক মৃত্যু যেন কেড়ে নিয়েছিল সব আলো। বাবা, তার আবাল্য বন্ধু, চলে গিয়েছিলেন অকস্মাৎ। মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে। হার্টের অবস্হা ভাল ছিল না তেমন। তার উপর মদ ও ধূমপান। পরিণতি অকালমৃত্যু। শোকে তাই পাথর হয়ে গিয়েছিল সেই কিশোর। তার জগৎখানি ছিল ছোট। আর, তার কথায়, ‘‘সে-জগতে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত হত বাবাকে ঘিরে।’’ এহেন বন্ধু-বিয়োগে মোহ্যমান কিশোরটির হাতে হঠাৎই এসে গিয়েছিল একটি বই। ‘দি টাইম মেশিন’। এইচ.জি.ওয়েলস-রচিত বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান কাহিনী। টাইম মেশিন নামের এক যন্ত্রে চড়ে চলে যাওয়া সম্ভব অতীতে। কিংবা ভবিষ্যতে। সেই দুঃখী ছেলেটির মনে হয়েছিল, আসলেই যদি টাইম ট্রাভেল সম্ভব হত, সে চলে যেত অতীতে। আর সাবধান করে দিত বাবাকে। মদ বা সিগারেট স্পর্শ করতে দিতনা। সতর্ক হলে, নিশ্চয়ই অকালমৃত্যু হত না বাবার। যদি কেবল হাতে থাকত একটা টাইম মেশিন! পদার্থবিজ্ঞানী রোনাল্ড ম্যালেট-এর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল ওই বিষাদজনিত স্বপ্ন। কানেটিকাট ইউনিভার্সিটিতে থিওরেটিকাল ফিজিক্সের এই প্রফেসর জীবনের লক্ষ হয়ে দাড়িয়েছিল টাইম মেশিন আবিষ্কার করে বাবাকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা। এখনও গবেষণা করে চলেছেন সেই লক্ষ্যে। কৈশোরের সেই আবেগ হয়তো আজ আর নেই। চাইলেও এক্ষুনি যে রওনা হতে পারবেন না অতীতের উদ্দেশে, বুঝে গেছেন এতদিনে। তবু থেকে গেছে স্বেপ্নর রেশ। গবেষণার উপজীব্য হয়ে। কল্পবিজ্ঞানের সবচেয়ে লোভনীয় ধারণা বোধহয় টাইম মেশিন। এইচ.জি.ওয়েলস যার কথা বলেছিলেন সেই ১৮৯৫ সালে।টাইম মেশিন এক টাইম ট্রাভেলারের গল্প, যেখানে গল্পের মূল চরিত্র টাইম মেশিনে চড়ে অতীত-ভবিষ্যতে চলে যেতে পারে। ত্রিমাত্রিক পৃথীবিতে চতুর্থমাত্রা হিসাবে সময়কে চিন্তা করেন ওয়েলস। তার কল্পনে অনুযায়ী যে কোনও বাস্তব জিনিসেরই মোট চারটি মাত্রা থাকতে হবে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে স্থায়িত্ব। মাত্রা চারটে। স্পেস এর তিনটা , আর টাইমের একটা। আমারা প্রথম তিনটা থেকে চতুর্থটাকে আলাদা করি, কারণ আমাদের চেতনার গতি এগিয়ে চলে ওই চতুর্থ মাত্রা বরাবর। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। হকিং প্রচার করেছিলেন তার মতবাদ—Chronology protection conjecture। এই ব্রহ্মাণ্ডে ঘটনাবলির পরম্পরা নষ্ট হবে না কখনও। মূল ছবির-এর আগে তৈরি হবে না তার প্রতিলিপি। দাদী না থাকলে, নাতিও থাকবে না। Chronology protection conjecture অনুযায়ী, পদার্থবিদ্যার নিয়মকানুন কোনও না কোনও ভাবে রুখে দেবে অতীত ভ্রমণ। কোনও কোনও বিজ্ঞানী, যেমন ক্যালটেক- এর থর্ন কিংবা কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির ইগর নোবিকভ মনে করেন, অতীত ভ্রমণে গেলেও কারও পক্ষে সম্ভব হবে না ইতিহাস বদলানো। ধরা যাক, কেউ চলে গেল ১৯১২ সালে। উঠে বসল টাইটানিক জাহাজে। এবার চেষ্টা করলেও সে পারবে না ক্যাপ্টেনকে আসন্ন বিপদের কথা জানিয়ে টাইটানিকের যাত্রা থামাতে, নাতি চাইলেও পারবে না নানিকে খুন করতে। কিন্তু কিভাবে একজনকে এই কাজগুলো থেকে আটকে রাখা যায়? কিভাবে এক যাত্রীকে ক্যাপ্টেনের সাথে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে?একজন যদি তার নানিকে খুন করতে চায়, তাহলে কোন ঘটনা তাকে সেই কাজ থেকে আটকাবে? কে এই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রন করবে। আজব এসব প্রশ্নের ততোধিক বিচিত্র জবাব দিয়েছেন ডয়েশ। পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর আলোকে। ওই তত্ত্ব অনুযায়ী, ঘটার মতো সব ঘটনাই ঘটে, তবে একটা ব্রহ্মাণ্ডে নয়, অসংখ্য অগণ্য ব্রহ্মাণ্ডে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর এই ব্যাখ্যা ১৯৫৭ সালে প্রচার করেছিলেন বিজ্ঞানী হিউ এভারেট। যার মতে, ব্রহ্মাণ্ড কেবল আমাদের এই একটা নয়, রয়েছে এ রকম আরও অনেক। এমনকী, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্যারালাল ইউনিভার্স। কেন? এ জন্য যে, কোনও মুহূর্তে একটা ঘটনা ঘটতে পারে, আবার নাও পারে। এই দু’রকম সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে জন্ম নিচ্ছে দুটো বিশ্ব। যার একটাতে সেই ঘটনাটি ঘটছে, আর অন্যটিতে তা ঘটছে না। এ ভাবে প্রত্যেক ঘটনার জন্য এক একটা ব্রহ্মাণ্ড থেকে সন্তানসন্ততির মতো জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এইসব বিচিত্র তত্বের জন্যই অন্যতম প্রবক্তা নীলস বোর বলতেন, ‘‘এতে যে চমকে উঠবে না সে বুঝবে না তত্ত্বটির কিছুই।’’ ডয়েশ বলেছেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স মানলে উধাও হয়ে যায় অতীত ভ্রমণ সংক্রান্ত সব সমস্যা দূর হয়ে যায়। সমাধান হয় গ্র্যাণ্ডমাদার প্যারাডেক্স। কী ভাবে? নানিকে খুন করতে পারে নাতি। তবে অন্য ব্রহ্মাণ্ডে গিয়ে। সেখানে তিনি মারা যান কুমারী অবস্থায়। ফলে, তার মেয়ে কিংবা নাতি জন্মায় না। সরাসরি এই যুক্তি সমর্থন না করলেও হকিন্স কিন্তু এখন মেনে নিয়েছেন টাইম ট্রাভেল-এর সম্ভাবনা। তার বই ‘দি ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল’-এ আস্ত একটা অধ্যায় জুড়ে আলোচনা করেছেন এর সম্ভাবনার কথা। সম্ভাবনা কম-বেশী যাই হোক, বাস্তবায়নের উপায় কি? ইলেকট্রন আর পজিট্রন। সব কিছু এক-শুধু বৈদ্যুতিক চার্জ বিপরীত। প্রথমটা নেগেটিভ ,পরেরটা পজিটিভ। একটা আরেকটার অ্যান্টি পার্টিকল। বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইম্যান প্রমাণ করেছিলেন, সময়ের বিচারে ইলেকট্রন কণার বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এগোনো আসলে পজিট্রন কণার বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া। এটা প্রকৃতির নিজের ব্যবস্থা। ১৯৮৫ সালে কন্ট্যাক্ট ছবিটা বানানোর সময় কর্নেল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানলেখক কার্ল সাগান কিপ থর্ন-এর সাথে কথা বলেন। এই গল্পে নায়িকা মহাশূন্যে পাড়ি দেবে বিশাল দূরত্ব। সাধারণ মহাকাশযান সেই অভিযানের পক্ষে অচল। সাগান ভেবেছিলেন, তার নায়িকা একটা ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ঢুকে অন্য একটা ব্ল্যাক হোলের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেই দ্রুত পাড়ি দিতে পারবে সময়ের বিশাল একটা পথ। কিন্তু, এই কল্পনার বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি জানতে থর্ন এর কাছে জানতে চান সাগান। তার পাণ্ডুলিপি পড়ে থর্ন বুঝতে পারেন, সাগান যা চাইছেন তা হল ওয়ার্মহোল। আইনস্টাইন-এর জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি যার ইঙ্গিত দেয়। ওই তত্ত্ব অনুযায়ী প্রচণ্ড ভারী বস্তুর প্রভাবে তার চারদিকের স্পেস দুমড়েমুচড়ে যায়। ওই দুমড়ানোর পরিমাণ যদি খুব বেশি হয়, তবে একটা স্পেসটাইম সুড়ঙ্গ তৈরি হয়-এক বিচিত্র টানেল। যার নিজের দৈর্ঘ্য খুবই কম। কিন্তু, যা যুক্ত করতে পারে মহাশূন্যের বহু আলোকবর্ষ দূরের দুটি জায়গা। রিলেটিভিটির জটিল সমীকরন ঘেটে থর্ন আর তার ছাত্র মাইকেল মরিস দেখিয়ে দেন, ওয়র্মহোলের ভিতর দিয়ে এগোলে শুধু ব্রহ্মাণ্ডের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নয়, এক সময় থেকে অন্য সময়েও পৌছনো যায়। ওয়র্মহোল এতই বিচিত্র যে, তার এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরোলে, সেই প্রস্থানের সময়টা প্রবেশের আগে হয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে বিখ্যাত জার্নাল ‘ফিজিকাল রিভিউ লেটার্স’-এ থর্ন আর মরিস-এর প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে বিজ্ঞানীরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেন টাইম ট্রাভেল নিয়ে। ১৯৯১ সালে, গট ব্যাখ্যা করেন অতীত ভ্রমণের আর এক আইডিয়া। কসমিক ষ্ট্রিং কাজে লাগিয়ে। কসমিক ষ্ট্রিং প্রচণ্ড ভারী, কিন্তু সুতোর মতো। লম্বায় হতে পারে লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ। এখনও এর দেখা না পেলেও, ব্রহ্মাণ্ডে এর অস্তিত্ব আছে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। থর্ন বা গট-এর মতো জটিল উপাদান সম্বল করে নয়, ম্যালেট গবেষনা করছেন অতীত ভ্রমণে আলো ব্যাবহার করতে। ভবিষ্যৎ ভ্রমণের ব্যাপারেও গবেষনা চলছে আইনস্টাইনের দেখানো পথে। স্পেশাল রিলেটিভিটিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন গতির সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক। যে যত জোরে ছুটবে, তার সময় তত ধীরে বইবে। কেউ যদি ছুটতে পারে আলোর বেগে,তার বেলায় সময় যাবে থেমে।অর্থাৎ কেউ যদি ৩০০০ সালের পৃথিবীতে দেখতে চান। আলোর ১০০% গতিতে এখান থেকে ৫০০ আলোকবর্ষ দূরের কোনও তারার কাছে গিয়ে ফিরে আসুক, যাতায়াতে সময় লাগবে দশ বছর। কিন্তু, পৃথিবীতে ততদিনে কেটে যাবে ১০০০ বছর। জোরে যাবার কারনে ঐ স্পেস শ্যাটলে সময় অনেক ধীর গতিতে যাবে। টাইম ট্রাভেল যে সম্ভব, এটা প্রমাণ করা পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে এখনও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।ফ্যানটাসি আর ফ্যাক্ট এমন ভাবে মিশে যায় যে তাদের আলাদা কর খুবই কঠিন। ম্যালেটে, থর্ন, রিচার্ড গটের মত লোকরা দিনের পর দিন এই নিয়ে গবেষনা করে যাচ্ছেন। টাইম মেশিন বানানো সম্ভব হোক আর না হোক, খুব দ্রত কোন ফলাফল দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সূত্র: উইকিপিডিয়া