শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
manik

Call
 
ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক
 
শরীয়তে তালাক শব্দকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। তালাক শব্দ নিয়ে কেউ ঠাট্টা-মশকরা করতে পারে না। ছোট-খাটো পরিস্থিতিতে কেউ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারে না। এ কারণে তালাক শব্দ একমাত্র পাগল ছাড়া যে কেউ উচ্চারণ করলে তা কার্যকর হয়ে যাবে। তিন তালাক একসঙ্গে দেবার অনুমতি নেই। তাই কেউ তার স্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে কিংবা তার স্ত্রীর নাম ধরে অথবা তাকে সম্বোধন করে সাধারণভাবে এক বা দুই তালাক উচ্চারণ করলে তা তালাক ‘রজঈ’ বা প্রত্যাহারযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। স্বামী চাইলেই স্ত্রীকে যে কোনো মুহূর্তে ফিরে নিতে পারবেন।
অবশ্য কেউ শরীয়তের নিয়ম লঙ্ঘন করে তিন তালাক একসঙ্গে উচ্চারণ করলে তা কার্যকর হয়ে যাবে কী না এ ব্যাপারে দু’টি মত প্রসিদ্ধ।
এক. চার ইমাম তথা ইমাম আবু হানিফা, মালেক, শাফে‘ঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বলসহ শহুরে ইমামগণ বলেন, এতে করে তিন তালাকই পতিত হবে, তবে এর জন্য তালাকদাতা গুনাহগার হবে। কারণ সে বিদ‘আতচর্চা করেছে।  
দুই. অনেক সাহাবী, তাবে‘ঈ, তাবে তাবে‘ঈন ও সুক্ষ্নদর্শী অনেক আলেম যেমন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা, ইবনুল কাইয়্যেমসহ অধিকাংশ আহলে হাদীস বলেন যে, এর দ্বারা এক তালাক হবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রবন্ধটিতে আমরা দলীল-প্রমাণাদি দিয়ে ভারী করতে চাচ্ছি না, বিষয়টি ফকীহ ও জ্ঞানীদের সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং থাকবে।
কিন্তু একটি কথা অনস্বীকার্য যে, এ ব্যাপারে রাষ্ট্র চাইলে দু’টি মতের একটিকে রাষ্ট্রিয়ভাবে গ্রহণ করতে পারে। অথবা যারা তিন তালাক এক সাথে দিবে, তাদের এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া যে কোনো শাস্তিই দিতে পারে।
কিন্তু তা না করে শরী‘য়াতের দৃষ্টিভঙ্গীর তোয়াক্কা না করে আমাদের দেশে তিন তালাককে এক তালাক হিসেবে চালানো এবং মৌখিক তালাক অগ্রহণীয় বলে যে আইন করা হয়েছে তা নারী-পুরুষের নিপুণ স্রষ্টা এবং সর্বোচ্চ কল্যাণকামী আল্লাহর সঙ্গে মাতব্বরী ও অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে।  
কেউ যদি রাগের মাথায় কিংবা আবেগের বশে কাউকে গুলি করে বা কারো গলায় ছুরি চালায় তবে কি সে আহত বা নিহত হবে না? ভুল করে যদি কেউ কাউকে সজোরে চপেটাঘাত করে তবে কি সে গালে যাতনা অনুভব করবে না? নাকি স্যরি বললে মনের জ্বালার সঙ্গে গাল জ্বলাও তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে? তাহলে কি করে মুখের তালাককে অকার্যকর ধরে তালাকের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ শরঈ বিধানকে অসম্মান করা হবে। যত্রতত্র এ বিধানকে প্রয়োগযোগ্য করা হবে?
তালাক যেভাবেই উচ্চারিত হোক শরীয়ত সেটাতে সিরিয়াসলি নেয় নারীকে শায়েস্তা করতে নয়; তার সম্মান রক্ষার্থে। এটা তার জন্য শাস্তি নয়, বরং তার জন্য রহমত। স্ত্রী হিসেবে নারীর যে সম্মান, তালাক তা কমিয়ে দেয়। যে স্বামী কথায় কথায় বা রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, সে মূলত স্ত্রীকে অসম্মানই করে। এটা অনেকটা এরকম যে, আপনি একটা খেলনার পুতুল দিয়ে ইচ্ছে মতো খেললেন, এরপর যখন মন চায় ভেঙে ফেললেন।
স্ত্রী নিশ্চয় খেলনা নন। স্ত্রী হলেন জীবনসঙ্গীনী। জীবন বলতে জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মান-সম্মান স্ত্রী সবকিছুরই অংশীদার। বিনা অজুহাতে, রাগের মাথায় তাকে তালাক দেয়ার অর্থ তাকে অসম্মান করা। তালাক হলো আল্লাহ তা‘আলার হালাল করা সবচে অপ্রিয় বিষয়। ইবন উমরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ»
‘আল্লাহ আ‘আলার কাছে সবচে অপ্রিয় হালাল বিষয় হলো তালাক।’ [আবূ দাউদ : ২১৭৮; ইবন মাজা : ২০১৮, শায়খ আলাবানী হাদীসটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন।]
অর্থাৎ তালাকের অনুমতি দেয়া হয়েছে একমাত্র অনন্যোপায় হলে। যে ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর কোনোভাবেই একসঙ্গে থাকা সম্ভব হয় না, তখন তালাক দেয়া যায়। এই নিকৃষ্ট হালালকে যখন যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়, তখন তা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান তখন ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়।
 
নারীর মর্যাদা রক্ষায় তালাক
 
ইসলাম মনে করে নারীর একটা সম্মানজনক জীবন আছে। যে জীবনে বারবার তাকে তালাক শুনতে হবে না, বরং সম্মানের সঙ্গে সে জীবন যাপন করতে পারবে। এ জন্যই ইসলাম একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক তালাকের অনুমতি স্বামীকে দিয়েছে। এর অর্থ, স্ত্রীকে সতর্ক করার জন্য স্বামী সর্বোচ্চ তিনবার এই শব্দ ব্যবহার করার অনুমতি পাবে। প্রথম দু’বার ব্যবহারের পর ভুল শুধরে ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু তৃতীয়বার আর সেই অবকাশ নেই। একসঙ্গে তিন তালাক দেয়াকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পুণ্যাত্মা সাহাবীগণ প্রচণ্ড রকম অপছন্দ করতেন। এ জন্য একসঙ্গে তিন তালাককে বিদ‘আতী তালাক বলা হয় ফিকহের পরিভাষায়।
মূলত তালাক দেয়ার সুন্নাহ সমর্থিত নিয়ম হলো, একবার কেবল এক তালাক দেয়া। এরপর তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি বনিবনা হয়ে যায়, তাহলে এর মধ্যে ঋতু পরবর্তী পবিত্রতাকালীন সময়ে স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি বনিবনা না হয়, তাহলে তিন ঋতু অতিবাহিত হলে বিবাহ ভেঙে যাবে। তবে দেখুন ইসলামের মাহাত্ম্য.. এখন আবার স্বামী-স্ত্রী বিবাহ করতে চাইলে মাঝখানে অন্য কোনো বিয়ে লাগবে না। স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে বিয়ে করে নিতে পারবে। এভাবে আবার প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় তালাক দিতে পারবে স্বামী। এরপর আবার তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। চাইলে ফিরিয়ে নিবে, না ফেরালে বিয়ে ভেঙে যাবে। বিয়ে ভাঙ্গার পর চাইলে অন্য কোনো বিয়ে ছাড়াই আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। দেখুন, দুই দুই বার তালাক দেয়ার পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে ছাড়া ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা ইসলাম রেখেছে।
তালাক মানে কী? জীবনের এক বড় বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়া। বন্ধন ভেঙে গেলে বা ভেঙে দিলে তা কয় বার জোড়া লাগতে পারে? একবার? দুইবার? এরপরও যদি এই বন্ধন ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে তা আর জোড়া লাগার অবকাশ রাখে না। জোড়া লাগলেও সে বন্ধনের আর মূল্য থাকে না। তখন তা নিছক বালিকার হাতের পুতুল হয়ে যায়। চাইলে সে তাকে নিয়ে খেলে, চাইলে তা ভেঙে ফেলে।
এজন্য তৃতীয়বার তালাক দেয়ার পর বিয়ে পুরোপুরি ভেঙে যায়। তখন আর তিন ঋতু পর্যন্ত ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে না। তখন বরং ইসলাম নারীর পক্ষে থাকে। স্বামীর অত্যাচার থেকে সরিয়ে নিতে ইসলাম নারীকে পছন্দমতো দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করার সুযোগ দেয় এবং প্রথম স্বামী আবার ফিরিয়ে নিতে চাইলেও তাকে সহজে এ সুযোগ দেয়া হয় না। বরং দ্বিতীয়বার সে নারীর অন্যত্র বিয়ে হলে এবং সে স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দিলে ইদ্দত পার হবার পরেই কেবল প্রথম স্বামী তাকে গ্রহণ করতে পারে। এই স্বাভাবিক বিয়েই যখন হয় কেবলই প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসার জন্য তখন সেটাকেই ‘হিল্লা বিয়ে’ নামে নামকরণ করা হয়। এটি একটি অপপদ্ধতি। এটি কোনো ইসলামী পদ্ধতি নয়। সুতরাং এর জন্য ইসলাম দায়ী হতে পারে না। দায়ী হবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণই।

দেখুন, এ বিধান যদি না থাকত, তাহলে প্রতিদিনই স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিত। কথায় কথায়, রাগের মাথায় সবসময়ই ‘তালাক তালাক’ বলত। এরপর প্রতিদিনই আবার মায়া করে তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিত। এভাবে মায়ার এ বন্ধন আর বন্ধন থাকত না। তা হয়ে যেত খেলার পুতুল। কোনো নারী নিশ্চয় এতকিছু বোঝার পর ইসলামের এই সুন্দর বিধানকে অসম্মান করবেন না। বরং নিজের সম্মান যদি নারী বুঝেন তাহলে ইসলামের এ বিধান পেয়ে নিজেকে সম্মানিতই মনে করবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
LawsLawyers

Call

আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে এই চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখুন

https://www.youtube.com/channel/UC8lEHwkyKBgsUZg-XcO8NhA

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ