মূলত শব্দটা হলো ইলমুল গায়েব।গায়েব ইলম নয়। ইলমে গায়েবের পরিচয়সহ এ ব্যাপারে কিছু লিখার চেষ্টা করতেছি। ইলমে গায়েবের অর্থ কী? অনেকেই না বুঝে এর বাংলা অর্থ করেছে, অদৃশ্য জ্ঞান। ফলে, বাংলা ভাষা-ভাষীদের মাঝে ব্যাপক বিভ্রান্তি জন্ম নিয়েছে। মনে রাখবেন, গায়েবের সকল জ্ঞান অদৃশ্য হলেও সকল অদৃশ্য জ্ঞান গায়েব নয়। যেমন- আওয়াজ, গন্ধ, বাতাস, সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, ঘৃণা, জ্ঞান, বুদ্ধি, আদর্শ, পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সবই অদৃশ্য, কিন্তু ইলমে গায়েবের অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজেই, গায়েবের একটি অর্থ অদৃশ্য হলেও ইলমে গায়েবের বাংলা অর্থ “অদৃশ্য জ্ঞান” মনে করাটা বেঠিক ও বিভ্রান্তিকর। এর সঠিক বাংলা অর্থ হচ্ছে, অতীন্দ্রিয় জ্ঞান; অর্থাৎ যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় বা ইন্দ্রিয় যেসব জ্ঞানের নাগাল পায় না – তাই হচ্ছে, ইলমে গায়েব। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, নাসিরুদ্দীন বয়দ্ববী, শাইখ ইসমাঈল হাক্কী আফেন্দী, কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী প্রমুখ (’আলাইহিমুর রাহমাহ) গায়েবের এ অর্থই লিখেছেন। তাই, এটিই এর সঠিক অর্থ। কুরআন মজীদে “ইলমুল গাইব” কথাটি একটি (সূরা নাজম:৩৫) এবং “আনবাউল গাইব” কথাটি তিনটি (সূরা আলে ইমরান:৪৪, সূরা হুদ:৪৯ ও সূরা ইউসূফ:১০২) জায়গায় রয়েছে। “আনবাউ” শব্দটি “নাবা” শব্দের বহুবচন – যার অর্থ হলো, খবর, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি। সুতরাং “আনবাউল গায়েব” মানে, অতীন্দ্রিয় খবরাখবর। লক্ষণীয় যে, কুরআন করীমে “আনবাউ” (খবরাদি) তথা এ বহুবচন বাচক শব্দটি “গায়েব” শব্দের সঙ্গে (মুদ্বাফ হিসেবে) ব্যবহৃত হলেও গায়েবের বিপরীত “শাহাদাত” শব্দের সঙ্গেও কখনো ব্যবহৃত হয় নি! সুতরাং আল-কুরআন বলছে, “আনবাউ” শব্দটি গায়েব বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সঙ্গেই সম্পৃক্ত; শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। আর তাই, “নাবা” শব্দ থেকে উৎপন্ন নবী শব্দের অর্থ হচ্ছে, গায়েব বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের খবরদাতা।