জনাব আমি আলহামদুলিল্লাহ নিয়মিত মেসওয়াক করার চেষ্টা করি। এ কথাটা শোনার পর থেকে আমার মেসওয়াক এর উপর আরও জোর বেরে যায় কিন্তু আমি এ কথাটির কোনও রেফারেন্স পাচ্ছি না।এর কোনও দলিল থাকলে আমাকে জানান?


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মেসওয়াক ছিল রাসুল সা. এর গুরুত্বপূর্ণ এক আমল। ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও রাসূল সা. মেসওয়াক করেছেন। রাসুলুল্লাহ সা. মিসওয়াকের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছেন, আমার উম্মতের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না করলে আমি মেসওয়াক করা ফরয করে দিতাম। আল্লামা হাসকাকী রহ. ‘দুররে মোখতার’ কিতাবে লেখেছেন, মেস্ওয়াক মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদাত স্মরণ করিয়ে দেয় এবং মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের আরোগ্য দানকারী। নেহায়াতুল আমল কিতাবে আছে, মেসওয়াকের ৭২টি উপকারিতা রয়েছে। আল্লামা তাহতাবী রহ. ‘মারাকিউল ফালাহে’র টিকার মধ্যে মেসওয়াকের উপকারিতা বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখেছেন, ইমামরা মেসওয়াকের যে সমস্ত ফযীলত হযরত আলী (রাঃ) হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) ও হযরত আতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন তা হল এই। তাঁরা বলেন-তোমরা অবশ্যই মেসওয়াক করবে। এর ব্যাপারে কখনও উদাসীন হবে না এবং নিয়মিত মেসওয়াক করবে। কেননা মেস্ওয়াক করলে, ১. আল্লাহর সন্তুষ্টির ওয়াদা রয়েছে। ২. নামাযের সাওয়াব নিরানব্বই অথবা চারশত গুণ বেড়ে যায়। ৩. নিয়মিত মেস্ওয়াক করার ফলে সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। ৪. জীবিকা নির্বাহ সহজ হয়ে যায়। ৫. মুখ পরিষ্কার হয়। ৬. মাড়ি ব্যথা ও মাথার সর্বপ্রকার রোগ সেরে যায়। ৭. মাথা ব্যথা ও মাথার সর্বপ্রকার রোগ সেরে যায়। ৮. কোন নিশ্চল রগ নড়াচড়া করে না এবং নড়াচড়াকারী কোন রগ নিশ্চল হয় না। ৯. কফ দূর হয়। ১০. দাঁত শক্ত হয়। ১১. দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার হয়। ১২. পাকস্থলী ঠিক হয়। ১৩. শরীর শক্তিশালী হয়। ১৪. মানুষের বাকপটুতা মুখস্ত শক্তি ও জ্ঞান বাড়ে। ১৫. অন্তর পবিত্র হয়। ১৬. পুণ্য বেড়ে যায়। ১৭. ফেরেশতারা খুশি হন। ১৮. চেহারার জ্যোতির কারণে তার সাথে ফেরেশতারা মোছাফা করেন। ১৯. যখন সে মসজিদ থেকে বের হয়, তখন ফেরেশতারা তার পেছনে পেছনে চলে। ২০. নবী ও রাসূলগণ তার জন্য ক্ষমা পার্থনা করেন। ২১. মেস্ওয়াক শয়তানকে অসন্তুষ্ট করে ও তাকে তাড়িয়ে দেয়। ২২. পাকস্থলী পরিস্কার করে। ২৩. খাদ্য হজম করে। ২৪. অধিক সন্তান জন্মায়। ২৫. চুলের ন্যায় সরু পুলসেরাত বিজলীর ন্যায় পার করে দেবে। ২৬. বার্ধক্য পিছিয়ে দেয়। ২৭. আমলনামা ডান হাতে দেবে। ২৮. আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে শরীরে শক্তি দান করে। ২৯. শরীর থেকে উষ্ণতা দূর করে। ৩০. পিঠ মজবুত করে। ৩১. মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদাত স্মরণ করিয়ে দেয়। ৩২. মৃত্যু কষ্ট অতি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ৩৩. দাঁত সাদা করে। ৩৪. মুখে সুঘ্রাণ আনে। ৩৫. কন্ঠ পরিস্কার করে। ৩৬. জিহ্বা পরিস্কার করে। ৩৭. বুদ্ধি তীক্ষ- করে। ৩৮. আর্দ্রতা বন্ধ করে। ৩৯. দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ন করে। ৪০. প্রয়োজন পূর্ণ হতে সাহায্য করে। ৪১. কবর প্রশস্ত করে দেয় এবং মৃত্যুর জন্য সমবেদনাশীল হয়ে যায়। ৪২. যারা মেসওয়াক করে না তাদের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হয়। ৪৩. বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ৪৪. ফেরেশতাগণ তার জন্য প্রতিদিন বলতে থাকে এ ব্যক্তি নবীদের অনুসারী। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী। ৪৫. তার জন্য দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৪৬. মেস্ওয়াককারী দুনিয়া থেকে পবিত্র হয়ে যায়। ৪৭. মৃত্যুর ফেরেশতা তার কাছে এমন আকৃতিতে হাজির হয় যেরূপ কোন অলি-আল্লাহ বা নবীদের নিকট হাজির হয়। ৪৮. মেস্ওয়াককারী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজ হতে পানি পান করার আগে মৃত্যুবরণ করবে না। ৪৯. সর্বোপরি ফযীলত এই যে, মেস্ওয়াককারীর প্রতি আল্লাহ্ তা’য়ালা সন্তুষ্ট হন। ৫০. মেসওয়াক করলে মুখ পরিষ্কার হয়। মেস্ওয়াকের আরও বহু উপকারিতা হাদীস ও ফেকাহর কিতাবে উল্লেখ আছে। ৫১. আল্লামা তাহতাবী একটি নতুন কথা লিখেছেন যে, মেসওয়াক করলে বেশি পরিমাণ মনী (বীর্য) সৃষ্টি হয়। মেসওয়াক কেমন হবে? মেসওয়াক এর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উত্তম। পীলু বা যয়তুন গাছের কাচাঁ ডালের হওয়া, হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মত মোটা হওয়া, প্রথমে এক বিগত পরিমান হওয়া, নরম হওয়া, কম গিরা সম্পূর্ণ হওয়া। (রদ্দুল মুখতার)। যেভাবে মেসওয়া করবেন প্রথমে উপরের দাঁতের ডান দিক তারপর বাম দিক, তারপর নিচের দাঁতের ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে, তারপর দাঁতের ভিতরের দিকে অনুরূপভাবে ঘষতে হবে। (রদ্দুল মুখতার) মেসওয়াক দাঁতের উপর চওড়াভাবে ঘষা নিয়ম। ইমাম গাযালী রহ. উপর-নিচ ঘষার কথাও বলেছেন। (মাফাতিহুল যিনান) ব্রাশ মেসওয়াকের বিকল্প কি? মেসওয়াক না থাকলে মেসওয়াকের বিকল্প হিসেবে ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। এতে মেসওয়াকের ডাল বিষয়ক সুন্নাত আদায় না হলেও মাজা ও পরিস্কার করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (দরসে তিরমিযী) মেসওয়াকের করার দোয়া মেসওায়াক শুরু করার সময় বিসমিল্লহ বলে এই দোয়া পড়বে। ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺳِﻮَﺍﻛِﻲْ ﻫﺬَﺍ ﻣَﺤِﻴْﺼًﺎ ﻟِّﺬُﻧُﻮْﺑِﻲْ ﻭَﻣَﺮْﺿَﺎﺓً ﻟَّﻚَ ﻭَﺑَﻴِّﺾْ ﺑِﻪ ﻭَﺟْﻬِﻲْ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﻴّﻀْﺖَ ﺃَﺳْﻨَﺎﻧِﻲْ . উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মাজআল সেওয়াকি, হাযা মাহিসান লিযুনুবী, ওয়া মারাদতান লাকা, ওয়া বাইয়্যিজ বিহী ওয়াজহি কামা বাইয়াজতা আসনানী। অর্থ- হে আল্লাহ, এই মেসওয়াক করাকে আমার পাপ মোচনকারী ও তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যম বানাও, আর আমার দাঁতগুলিকে যেমনি তুমি সুন্দর করেছ, তেমনি আমার চেহারাকেও উজ্জ্বল (সুন্দর) কর।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ