শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল পুরো বিশ্ববাসী যার নাম ছিল পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ। এ মহৎ কার্যটি সাধন করেছিল আমেরিকা তাদের পারমাণবিক শক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে এবং পরীক্ষাস্থলটি ছিল জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি নামক দুটি শহরে। ঘটনাটি ঘটেছিল 1945 এর 6ই আগষ্ট। টানা ছয় মাস জাপানের অন্যান্য 67টি শহরে বোমা বিস্ফোরণের পর পারমাণবিক বোমা"লিটল বয়"তার আশ্রয় খুজে পায় নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। সময়টি ছিল সোমবার 6ই আগষ্ট,1945। এ ঘটনার ঠিক 3 দিন পর আরো একটি পারমাণবিক বোমা"ফ্যাট ম্যান"আছড়ে পড়ে নাগাসাকিতে। এ দুটি দিনই আমরা আমাদের মানবিকতার সবচেয়ে বড় উদাহরণটি বিশ্ববাসীর নিকট জানিয়ে দেই। এ বোমা বিস্ফোরণে কত লোক মারা গিয়েছিল? সংখ্যাটি জানা খুব আশ্চর্যজনক হবে।হিরোসিমাতে মারা গিয়েছিল 1,40,000 জন এবং নাগাসাকিতে 80,000 জন। তবে মানুষগুলো মারা যাওয়ার আগে বিশ্ববাসীর বিবেক মারা গিয়েছিল যার কোন সংখ্যা জানাতে পারলামনা বলে দুঃখিত। পরবর্তিতে মৃত মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে গিয়েছিল পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকারক রেডিয়েশন এবং ইনজুরির কারণে যার সংখ্যা মনে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি ইতিহাস। দুঃখের কথা হচ্ছে এ বিস্ফোরণে নিহত মানুষগুলোর বেশিরভাগই ছিল সাধারণ মানুষ।হায়রে মানবিকতা। এ বিস্ফোরণের ছয় দিন পর 15ই আগষ্ট জাপান আত্নসমর্পণ করে নেয়। এবার জানা যাক কি ছিল সেই বোমাটিতে। পুরো প্রজেক্ট টির নাম ছিল ম্যানহ্যাটেন প্রজেক্ট। এবং এ মহান আবিস্কারটি পরিচালিত হচ্ছিল যার দ্বারা তিনি হলেন আমেরিকান পদার্থবিদ j.robert oppenheimer.পারমাণবিক বোমা"লিটল বয়" তৈরী হয়েছিল ইউরেনিয়াম-235 এর আইসোটোপ দিয়ে এবং "ফ্যাটম্যান" তৈরী হয়েছিল প্লুটোনিয়াম-239 দিয়ে। এ বোমা বিস্ফোরণ কিন্তু নিছক হঠাৎ করে করা হয়নি। অনেক পরিকল্পনা এক্ষেত্রে ছিল। হিরোশিমা এবং নাগাসাকি এ দুটি শহরকেই তারা বেছে নিয়েছিল কারণ এর চারপাশ ছিল পাহাড় ঘেরা এবং এর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একটি নদী। তারা ভেবেছিল এ পাহাড়গুলো তাদের জন্য focussing effect হিসেবে কাজ করবে এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে।মানব চিন্তাবিদদের এমন সূ্ক্ষ পরিকল্পনাকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারলাম না। এবার জানা যাক সেই সময়কার কথা। 6ই আগষ্ট,1945। পারমাণবিক বোমা বহনকারী বীরবেশে এগিয়ে আসছে হিরোশিমার দিকে। যুদ্ধবিমানটির পরিচালনায় ছিলেন ক্যাপ্টেন william persons and his assistant morris jeppson.এ দুজন ছিলেন ইতিহাসের সেই ঘটনার সাক্ষী যা এ পৃথিবীকে তারা উপহার দিতে যাচ্ছিলেন। হিরোশিমা সময় সকাল 8টা 15 মিনিটে ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এ বোমাটির ওজন ছিল 60 কেজি,এটি সময় নেয় 57 সেকেন্ড তার নিজস্ব গন্তব্যে পৌছাতে এবং অতিক্রম করে 600 মিটার দূরত্ব। এ বিস্ফোরণটে ছিল 13 কিলোটন tnt এর সমান এবং সে সময় তাপমাএা হয়েছিল 3900 degree celcious.এ বিস্ফোরণের পর 1 মাইল ব্যাসার্ধের এলাকা জুড়ে ধ্বংসলীলা শুরু হয় এবং হিরোশিমার প্রায় 90 ভাগ বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ঠিক এক ঘন্টা আগে জাপানের রাডারে ধরা পড়েছিল দুটি যুদ্ধবিমান জাপানের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবেশ করছে।তারা রাডারে যে বিমানগুলো দেখেছিল তা ছিল ছোট এবং সংখ্যায় 3টি। এ কারনে তারা বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি যা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। এদিকে টোকিওতে জাপান সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানতে পারে হিরোশিমা থেকে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারে উওর হিরোশিমার প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। তারা সাথেসাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হিরোশিমার হেড কোয়ার্টারে। কিন্তু সেখানকার অসীম নিস্তব্ধতা তাদেরকে হতবাক করে দেয়। তৎক্ষণাৎ একজন যুবক অফিসার হিরোশিমার উদ্দেশ্যে তাদের বিমান বাহিনী রওনা হতে বলেন এবং যথাসমম্ভব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তাদের উডডয়নের তিন ঘন্টা পর তারা পৌছে হিরোশিমা থেকে 100 মাইল দূরবর্তী এলাকায় এবং এত দূর থেকে তারা দেখতে পায় সাদা ধোয়ার এক বিশাল কুন্ডলী। তারা হিরোশিমা পৌছানোর পর হতবাক হয়ে যায় সেখানকার পরিস্থিতি দেখে। রৌদ্রজ্জল হিরোশিমার নিস্তব্ধ মানুষগুলোর দেহাবশেষ নিয়ে ফাকা হিরোশিমা জ্বলছে আর চিৎকার করে কাদছে। এবার জানা যাক ধ্বংসলীলা সম্পর্কে। এ বিস্ফোরণে সাথেসাথে মারা যায় 70,000 মানুষ। 1945 সালের শেষ দিকে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় 1,40,000 জন এ। 1950 সাল নাগাদ এ সংখ্যা আরো বেড়ে দাড়ায় 2,00,000 জন এ যাদের মাঝে ছিল ক্যানসার ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বিশাল ছিল যে বিস্ফোণ সংঘটনের প্রায় 10 মাইল দূরের মানুষদেরও শরীরের চামড়া খসে পড়ছিল। এ থেকে ধরে নেওয়া যায় বিস্ফোরণস্থলের মানুষ গুলোর কথা। তার কিছুদিন পরই নাগাসাকি এলাকার মানুষগুলোর ভাগ্যে ঘটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং মানবতা বোধের সম্পূর্ণতা ঘটে। এ লেখার উদ্দেশ্যে হল আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানানো, আমরা যে সভ্যতার উপর ভিত করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারের কারণে দিতে হয়েছে অনেক গুলো প্রাণের আত্মহুতি। নিজের ইতিহাসকে আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা নিজেদের আত্মঅহংকার বোধের কারণে এমন কিছু ভুল করেছি এবং করে চলেছি যার মাশুল হয়তো গুনতে হবে আমাদের প্রজন্মকে যেমনটি গুনছে হিরোশিমা-নাগাসাকির মানুষগুলো। পার্থক্য হবে আমরা ভুল করে মাশুল গুনব আর তারা ভুল না করেই এখনও মাশুল গুনছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
ontu

Call

পরমাণুর বিভাজন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে যে বিশেষ ধরনের বিষ্ফোরক বোমা আবিষ্কৃত হয়েছে তাকে পারমানবিক বোমা বলে। একটি পারমাণবিক বোমার বিষ্ফোরনে হাজার হাজার কিলোটন টি.এন.টি বিষ্ফোরণের সমান বিধ্বংসী শক্তি উৎপন্ন হয়। পারমানবিক বোমা আজ এক মহা আতঙ্ক।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ