প্রচলিত পাসপোর্টের মতোই দেখতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)। কেবল পার্থক্য হলো এই পাসপোর্টে থাকা তথ্য এয়ারপোর্টে থাকা কম্পিউটার পড়তে পারে । দেশের বাইরে যেতে বা প্রবাসীদের দেশে ফেরার সময় এয়ারপোর্টের ভোগান্তি এড়াতেই চালু করা হয়েছে এই পাসপোর্ট। এপ্রিলে চালু করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও যারা আগের পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তাঁদের পুরোনো পাসপোর্টেই চলবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
কেমন দেখতে নতুন পাসপোর্ট
যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বিভিন্ন দেশের উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাসপোর্টের আদলে তৈরি। এ পাসপোর্টে উন্নত দেশগুলোর পাসপোর্টের মতোই বিশেষ কাপড়ের কভার ব্যবহার করা হয়েছে। হাতে লেখা পাসপোটের মতোই শুরু থেকে ৫ থেকে পঞ্চম পৃষ্ঠা পর্যন্ত ছবিসহ প্রয়োজনীয় এক পাতায় আছে। আছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরও।
এ পাসপোর্টে এক পাতার এসব তথ্যের পাশাপাশি একপাশে আছে বিশেষ সাংকেতিক নম্বর, যাকে ‘যন্ত্রে পাঠযোগ্য এলাকা’ বলা হয়। এই নম্বরের মধ্যেই থাকছে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য, যা কম্পিউটার পড়তে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটিই চলছে আন্তর্জাতিক মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের অনুমোদন সংস্থা আইসিএভি-এর নির্দেশনা অনুসারে।
কীভাবে পাবেন আবেদনপত্র
আগের মতোই ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে ফরম সংগ্রহ করা যাবে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেই (www.dip.gov.bd) এই ফরম পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে ১০টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকেও সংগ্রহ করা যাবে এই ফরম এবং বিনামূল্যেই। তবে, ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত এমআরপির আবেদন ফরমটি নামিয়ে প্রিন্ট করে তাতে হাতে লিখতে হয়।
যা যা আছে নতুন আবেদনপত্রে
চার পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে আবেদনকারীকে নাম, বাবার নাম, মার নাম, তাদের পেশা, জাতীয়তা, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, জন্ম সনদপত্র নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, যোগাযোগের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এসব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাক্ষর ও তারিখ লিখতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীকে একটি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি ফরমে আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে, দুটি আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
যারা সত্যায়িত করতে পারেন
১. সাংসদ
২. সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর
৩. গেজেটেড কর্মকর্তা
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
৫. উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
৬. পৌরসভার মেয়র
৭. বেসরকারি কলেজের শিক্ষক
৮. বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
৯. দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক
১০. পৌর কাউন্সিলর
১১. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের সপ্তম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তারা।
কত খরচ হবে
এমআরপির জন্য নতুন ফি : সাধারণ পাসপোর্টের জন্য তিন হাজার টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ছয় হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। টাকা জমা দিতে হবে সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায়।
কাগজপত্র যা যা লাগবে
আবেদন ফরমের সঙ্গে প্রার্থীকে নিজের একটি রঙিন ছবি আঠা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে। সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদপত্রের ফটোকপি। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছরের কম) আবেদনকারীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের একটি করে রঙিন ছবি লাগবে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে
আবেদন পত্র জমা দেওয়ার আগেই তা নির্দিষ্ট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা এটি ভেরিফিকেশন করবেন। ভেরিফিকেশন করানোর আগে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদটি আঠা দিয়ে আবেদন পত্রের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে। এ ছাড়া আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ছবিটিও যথাযথ কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করে নিতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপিটিও সত্যায়িত হতে হবে। যদি কারও জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে তাহলে পাসপোর্ট ফরমের তৃতীয় পৃষ্ঠায় নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসরত এলাকার জনপ্রতিধি দ্বারা প্রত্যয়ন করিয়ে নিতে হবে। এমআরপির আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে দেশের ১০টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসের অধীনে রয়েছে কয়েকটি জেলা। আঞ্চলিক অফিসগুলো হলো-
ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, যশোর ও গোপালগঞ্জ।
জমা দেবার নিয়মকানুন
আবেদন পত্রটির ভেরিফিকেশন করে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবেদনপত্র যাচাই করে সিলসহ স্বাক্ষর করবেন। এরপর আবেদনপত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসেই বেশ কয়েকটি বুথ আছে, সেখানেই জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রটি জমা দেবার সময় পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত ব্যাক্তি আপনার তথ্যগুলো কম্পিউটারে এন্ট্রি করে রাখবেন। এরপর তিনি আপনাকে একটি টোকেন দেবেন। সে টোকেনসহ আবেদনপত্রটি নিয়ে ছবি তোলার জন্য আরেকজন কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য যেভাবে ছবি তোলা হয়েছিলো, এখানেও একইভাবে নির্দিষ্ট মাপের ছবি তোলা হবে। এছাড়াও দুই হাতের আঙ্গুলের ছাপও দিতে হবে ইলেকট্রনিক মেশিনে । এরপর নেয়া হবে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর। তবে, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর আবেদন পত্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে যেনো মিল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই প্রক্রিয়া শেষে কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য একটি আলাদা ডকুমেন্ট দেবে এবং আবেদনপত্রটি রেখে দিয়ে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার তারিখও জানিয়ে দেবেন।
পাসপোর্ট সংগ্রহ
কর্তৃপক্ষের দেয়া তারিখে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা যাবে। তবে, এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হতে হবে। পাসপোর্ট দেবার আগে ডিবি পুলিশ বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানায় ভেরিফিকেশন করে। আর পুলিশের রিপোর্ট প্রদানের পরই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।