শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

অনেক উদ্ভিদের পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পোকামাকড়। আবার অনেক প্রজাতির খাদ্য হিসেবে এসব পোকামাকড় কাজে লাগে। পতঙ্গজগতের এ রকমই এক সদস্য মশা। ক্ষুদে, কিন্তু ধ্বংসলীলা ঘটানোয় সক্ষম এক প্রাণী।

বিশ্বব্যাপী ভয়ংকরতম মহামারিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির সূত্রপাত পোকামাকড়ের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে আতঙ্ক তৈরি করা ভয়াবহ মহামারির ভাইরাস জিকার বিস্তৃতিও ঘটে মশার মাধ্যমে। জিকা ভাইরাস এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ও এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে অনেকেই পোকামাকড়, বিশেষ করে মশার বংশ পৃথিবী থেকে নির্মুলের চিন্তা করছেন।

কিন্তু পরিবেশের কী হবে যদি সত্যিই সব মশা পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়? খাদ্য শৃঙ্খলে বিপর্যয় ঘটবে এটা নিশ্চিত, তবে বিপর্যয়ের মাত্রা নিরুপণ মুশকিল। কারণ, সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশার প্রতিটিই প্রকৃতিতে নিজ নিজ ভূমিকা রাখে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুরুষ মশা ফুলের মধু খাওয়ার সময় ফুল ও শস্যসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পরাগায়ন করে। আবার মাছ, কচ্ছপ, ফড়িং, যাযাবর পাখি, বাদুড় প্রভৃতির খাদ্য হিসেবেও কাজে লাগে সব ধরণের সব বয়সের মশা। আর এদের মধ্যে সম্ভবত বাদুড়ই মশার ওপর  একটু বেশি নির্ভরশীল। তবে পৃথিবী থেকে মশা বিলীন হয়ে গেলে বাদুড়ই যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে, বিষয়টা তা না। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদুড় বিশেষজ্ঞ ভিনি ফ্রেড ফ্রিকেরও তাই দাবি। তিনি বলেন, বিষয়টা সেরকম নয়। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ বাদুড় সাধারণ শিকারি। অর্থাত হাতের কাছে যা পায় তাই ধরে খায়। সেটা মশাও হতে পারে, আবার গুবরে পোকা বা অন্যকিছুও হতে পারে। কোনো বাদুড়ের প্রজাতিই মশার ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল নয়।

তিনি আরো জানান, কয়েক প্রজাতির মশা দিনের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে। এ সময় বাদুড়ের কপালে মশা জোটে খুব কম। মজার বিষয় হল, এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাসসহ সময়ের মারাত্বক ভাইরাস জিকা বিস্তারকারী মশার প্রজাতিগুলো দিনের বেলায়ই কামড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের মত্স্য ও বন্যপ্রাণী সেবার সর্বজনীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান ফ্রসকাউয়ার বলেন, সম্পূর্ণভাবে মশা নির্মূলের পরিণতি অন্যান্য প্রজাতির ওপর যে কি হতে পারে তা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। খাদ্যশৃঙ্খলে মশার ভূমিকা আমরা পুরোপুরিভাবেও জানিই না।

বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন-সিংহ বা বাঘের খাদ্য তালিকা উন্মুক্ত করার জন্য প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং এটা ভালো যে ক্ষদ্রাকায় মশার চেয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করা অনেক সহজ। কারণ মশারা বেশিরভাগ সময় অস্থায়ী জলাশয়ে বংশবৃদ্ধি করে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ বাস্তুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ মার্ম কিলপ্যাট্রিক বলেন, এটা ঠিক যে, পৃথিবী থেকে কোনো প্রাণীকে বিলীন করলে বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাবে অল্প সংখ্যক মানুষ। আমরা জানি না এর পরিণতি কী হবে। কিন্তু ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?

যাইহোক, রোগ সংক্রমণের দিক থেকে মশার নির্মূল বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।

মশা না থাকলে মানুষ আর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে না এটা নিশ্চিত। কারণ, রোগটির জীবাণু সংক্রমণ একমাত্র মশার মাধ্যমেই ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা গেছে।

একইভাবে, এডিস মশা জিকা ভাইরাসের জন্য দায়ী। পুরো বিশ্বের জন্য এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে জিকা। এ এডিস মশার কারণেই ডেঙ্গু ও পীত জ্বরও হয়ে থাকে। প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রায় ২২ হাজার ও পীত জ্বরের কারণে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। আর শুধু মানুষই নয়, পশুপাখিও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

১৮০০ সালের আগে হাওয়াইয়ান দ্বীপে মশার অস্তিত্ব ছিল না। তাই সেখানে বন্যপ্রাণীদের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই ছিলনা। মানুষ যখন প্রথম জাহাজে করে মশা সেখানে পৌছে দিল, তখন স্থানীয় বেশ কিছু প্রজাতির পাখি এভিয়ান পক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নির্মূল হয়ে যায়।

সম্পূর্ণভাবে মশা নির্মূল সম্ভব কিনা জানা নেই। সম্ভবত সম্ভব নয়। এ বিষয়ে জীববিজ্ঞানী ই.ও. উইলসন বলেন, বিশ্ব পরিচালনায় অতি ক্ষুদ্র জিনিসের অবদানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সম্পূর্ণভাবে মশা নির্মূল কি প্রভাব ফেলবে তা বোঝা কঠিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ