তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত তবে নফল ইবাদতের মধ্যে এটি অন্যতম একটি ইবাদত। এই নামাজ ঘুম নষ্ট করে গভীর রজনীতে পড়তে হয় তার জন্য এর সওয়াব ও ফজিলত বেশি। অনেকে চান মনের বাসনা পূর্ন করতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে কিন্তু নিয়ম সময় বা নিয়ত না জানা থাকায় পড়তে পারেন না।

তাহাজ্জুদ নামাযের সময়ঃ রমজান মাস ও অন্যান্য সময় তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের পরে পড়তে হয়। মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন রোজাদার মুমিন বান্দা ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগি করেন এবং সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। অবশ্য তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের আগে পড়লে সওয়াব কম পাওয়া যায়। রাতের শেষাংশে পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।

তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়মঃতাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব সময় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলেও ছোট যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায় করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই নামায আদায় করতে হবে। তবে প্রতি রাকাতে সুরা এখলাস তিন বার পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাযের রাকআত সংখ্যাঃসর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকআত পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামায আদায় করার পরে, বিতর ৩ রাকাত নামায পড়া। বেশিরভাগ সময় রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায ৮ রাকাত পরতেন এবং এর পর বিতরের নামায পরে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন।

১। অতঃপর দু’রাকাত করে, তাহাজ্জুদের নামায সাত রাকাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে । (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

২। তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায়। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Unknown

Call

হজরত হাসান বসরি (রা.) বলেন, এশার পরে পড়া হয় এমন প্রত্যেক নামাজকে তাহাজ্জুদ বলা যায়। তবে প্রচলিত পদ্ধতির কারণে কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর পড়ার অর্থে বোঝা দরকার। এর সারমর্ম এই যে, তাহাজ্জুদের আসল অর্থে নিদ্রার পরে হওয়ার শর্ত নেই এবং কোরআনের ভাষায়ও এরূপ শর্তের অস্তিত্ব নেই; কিন্তু সাধারণত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তাই এভাবে পড়াই উত্তম। (ইবনে কাসির)।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে থাক। এ নামাজ তোমার জন্য অতিরিক্ত। শিগগিরই আল্লাহ তোমাকে মাকামে মাহমুদ দান করবেন। (বনি ইসরাইল : ৭৯)।

রাসূল (সা.) যেভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন- কখনও মধ্যরাতে, কখনও তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মিসওয়াক ও অজু করে নামাজ পড়তেন। অর্ধ রাতের পরে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর পড়লে তাহাজ্জুদের সুন্নত আদায় হবে। তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন দু’রাকাত। সর্বোচ্চ আট রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। দু’রাকাত দু’রাকাত করে যথাসম্ভব রুকু, সেজদা ও কেরাত লম্বা করে একাগ্রচিত্তে পড়া ভালো। 

যেহেতু তাহাজ্জুদ নফল নামায তাই আপনি যত পড়তে চান-নিষেধ নেই। তবে রাসূল ﷺ সাধারণত আট রাকাত পড়তেন। যেমন, হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يُصَلِّي إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ـ تَعْنِي فِي اللَّيلِ ـ يَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذَلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأسَهُ، وَيَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الفَجْرِ، ثُمَّ يَضْطَجِعُ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ حَتَّى يَأتِيَهُ المُنَادِي للصَلاَةِ

আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ এগার রাকাত (আট রাকাত তাহাজ্জুদ এবং তিন রাকাত বিতর) নামায পড়তেন, অর্থাৎ রাতে। তিনি মাথা তোলার পূর্বে এত দীর্ঘ সেজদা করতেন যে, ততক্ষণে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারবে। আর ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকাত সুন্নত নামায পড়ে ডান পাশে শুয়ে আরাম করতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকট নামাযের ঘোষণাকারী এসে হাযির হত।’ (সহীহুল বুখারী ৬২৬, ৯৯৪, ১১২৩, ১১৩৯, ১১৪০, ১১৬০, ১১৬৫, ৬৩১০)

আট রাকাতের কম পড়লে তা তাহাজ্জুদ হবে না, বিষয়টি এমনও নয়। বরং দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ নামায হিসেবেই গণ্য হবে। সময় কম থাকলে দুই রাকাত পড়তে পারেন। যেমন, হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالاَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: إِذَا أَيْقَظَ الرَّجُلُ أهْلَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّيَا – أَوْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيعاً، كُتِبَا فِي الذَّاكِرِينَ وَالذَّاكِرَاتِ

আবূ সাঈদ রাযি. হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগিয়ে উভয়ে নামায পড়ে অথবা তারা উভয়ে দু’ রাকআত করে নামায আদায় করে, তবে তাদেরকে (অতীব) যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের দলে লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূ দাউদ: ১৩০৯, ইবনু মাজাহ :১৩৩৫ )

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ বলেছেন, صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى রাতের নামায দু’ দু’ রাকাত করে। (সহীহুল বুখারী: ৪৭২, ৯৯৩,১১৩৭, মুসলিম: ৭৪৯) 

তাহাজ্জুদের নামাজ ঘরে পড়া উত্তম। তবে মসজিদে পড়লেও ক্ষতি নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ