হে টিনএজ বালিকা,
ভোরের মৃদুমন্দ বাতাসের মদ্ধতম জীবন ছিল তোমার। বাবা-মায়ের কোমল মমতার বাহুডোর ছিল তোমার আশ্রয়। সন্ধ্যে নামলেই চোখে নামতো ঘুম। প্রদীপের মৃদু আলো এসে ছুঁয়ে যেতো তোমার এলোকেশ। গণ্ডদেশে আল্পনা আঁকতো জোনাকির দল ঝাঁকে ঝাঁকে। বাঁশঝাড় গলে নেমে আসা জ্যোৎস্নার বিশুদ্ধ স্পর্শের চেয়েও বিশুদ্ধ ছিলে তুমি। ছিলে ঝর্ণার মতো উচ্ছ্বল।

তোমার আঙিনায় খেলা করতো কেবল শালিক পাখিরা। আর কারোর প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে। আঁধারের যাত্রীরা তখনো নাগাল পায়নি তোমার। বাবা-মায়ের ভালোবাসা দিয়ে তৈরি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনী ডিঙিয়ে বাইরের ক্লেদাক্ত দুনিয়ার সঙ্গে তোমার পরিচয় ঘটেনি তখনো। তোমার জীবন ছিল কবিতার মতো শুভ্র, গোধূলির আকাশের মতো স্নিগ্ধ, সুবহে সাদিকে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের মতো পবিত্র।

হে পথহারা তরুণী,
একদিন এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যা। টিনের চালে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের ঝংকার। হঠাৎ অজান্তে অবচেতনে বদলে গেলে তুমি। ভেঙে ফেললে বাবা-মায়ের ভালোবাসা দিয়ে গড়া নিরাপত্তা-বলয়। হার মানলে নিজের কাছে। যে জানালা ছিল প্রজাপতির রঙ দিয়ে মাখানো, সে জানালা দিয়েই তাকালে বাইরের ক্লেদজ ধরণীতলে। অতঃপর নিজেকে তুলে দিলে তরুণ নামক কতক নরপশুদের হাতে, মিথ্যে মায়ার জাল বিছিয়ে যারা ডেকেছিল তোমাকে। তাদের হাতে তুলে দিলে তোমার পবিত্রতা।

তরুণী, তুমি জানলে না তোমার জন্য কোনো শুভ্র অবয়বের নিষ্কলুষ যুবকের প্রতীক্ষার কথা। তুমি জানলে না—কোনো ঝলমলে চরিত্রের তরুণ স্ত্রী হিসেবে তোমার খোপায় তারার ফুল গুঁজে দেবার স্বপ্ন বুনেছে বহুকাল। তোমার সঙ্গে ঘর সাজাবার স্বপ্ন দেখে দেখে কেটে গেছে তার কতটা প্রহর! হে ভাগ্যাহত তরুণী, তুমি তার কিছুই জানলে না। এক পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ পাবার সৌভাগ্য তোমার হলো না। তুমি অপেক্ষা করতে পারলে না আর একটু। তোমার সমস্ত বসন্তের আয়োজন অপাত্রে তুলে দিয়ে পদদলিত করলে।

হে ভুল পথের যাত্রী,
তোমার জন্য আজ কেবল করুণা। যে বিষাক্ত রজনীগুলো তুমি কাটিয়েছ ভুল মানুষদের সঙ্গে ফোনালাপ করে, সেই মুহূর্তগুলোতেও কেউ তোমাকে পবিত্র জেনে বুনেছে স্বপ্নের জাল। দূর থেকে কেউ তোমাকে ভালোবেসে গেছে। কাছে গিয়ে বিশুদ্ধ সেই অনুভূতিকে কলুষিত করতে চায়নি সে কখনো। সে অধীর হয়ে অপেক্ষা করেছে তোমার জন্য, তোমাকে পবিত্রভাবে পাবার জন্য। পেছন পেছন ঘুরে ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দেয়নি। বরং দিনে দিনে তৈরি করতে চেয়েছে নিজেকে। পোকাদের হাতে আত্মসমর্পিত তরুণী, তুমি এসবের কতটা জানো?

কেউ একজন তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দিতে চেয়েছে একটি আস্ত জনম। তোমার মাতৃত্বকে উদযাপন করতে চেয়েছে। গভীর ভালোবাসা আর যত্নে এগিয়ে নিতে চেয়েছে নতুন এক পরিচয়ের দিকে। অথচ তুমি গোপনে নষ্টদের বীজ ধারণ করেছ গর্ভে। ভ্রুণ হত্যার মতো মহাপাপে জড়িয়ে নিজেকে নিক্ষেপ করেছ আস্তাকুঁড়ে। কোনো পবিত্র যুবকের বুকের গহীন প্রদেশে জমিয়ে রাখা মায়ায় অবগাহন করার সৌভাগ্য তোমার কি কখনো হবে হে তরুণী? দূর থেকে বেসে যাওয়া নীরব ভালোবাসাগুলোর মতো শুভ্র আর কিছু নেই, তরুণী তুমি তা জানো না।

'তরুণী, তোমার জন্য'


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে