একাডেমিকরা মনে করেন চুম্বন হলো আর একটি প্রাকৃতিক স্ফুর্তি সঙ্গীকে মূল্যায়ন করার জন্য, যা তার এরোটিক ফায়ারওয়ার্কে চার্মিং দিয়ে থাকে এবং মেটিং গেমে জয় লাভ করে। কিন্তু আঠারটি সংস্কৃতির ৪০% সাম্প্রতিক স্টাডি করে দেখেছেন, নারী ও পুরুষ উত্তেজনাদায়কভাবে একে অন্যকে কিস করে _ দীর্ঘ সময় একে অপরের ঠোঁট স্পর্শ করে যতক্ষণ না মুখের লালা এক্সচেঞ্জ হয়। এবং অধিকাংশ সমাজ জটিল কৃষি ও শিল্পভিত্তিক। প্রকৃতপক্ষে ওয়েস্টার্নদের স্পর্শের পূর্বে সোমাল, সিক্কিমের লেপচা , সাউথ আফ্রিকার সিরিনো কিস করাকে বিরক্তিকর মনে করতো (Gray and Garcia 2013) । এরোটিক কিসিং বিশ্বজনীন কোন মানব বৈশিষ্ট্য নয়। আর এ জন্য অনেকে মনে করেন, এটি আসলে পেয়ার-বন্ডিং এর আসক্তি তৈরি করার জন্য বিবর্তিত হয়নি। কিন্তু আবার কোথাও কোথাও ভিন্ন ইস্যু রয়েছে, ওয়েস্টার্নরা বলেন, চুম্বন আসলে পার্টনারদেরকে একে অন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসে। তারা এটাকে ঠিক মনে করে।দীর্ঘকালীন সম্পর্কে আবদ্ধ সঙ্গীরা যখন একে অন্যকে কিস করে তখন তাদের মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন তৈরি হয়, অক্সিটোসিন হলো এমন একটি নিউরো-কেমিকাল যা আস্থা, বন্ধন ও ইমোশনাল ইউনিয়নের সাথে জড়িত। এছাড়া চুম্বনের ফলে স্ট্রেস হর্মোন কর্টিসোল হ্রাস পায় যা Feeling of attachment এ কন্ট্রিবিউট করে। চুম্বন আমাদের পালস ও ব্লাড প্রেসার বুস্ট করে, চোখের পাতা ডাইলেটস করে ও নিঃশ্বাস গভীর করে৷ যেগুলো হলো সেকচুয়াল রেসপন্স যা আপনার সহবাসকে ত্বরাণ্বিত করে। এবং আপনি জানেন, অর্গাজমের সাথে অক্সিটোসিনের একটি স্রোত আসে যা আরো বেশি Feeling of attachment তৈরি করে।

চুম্বন সুক্ষ্মভাবে আপনার মধ্যে প্রজনন ও সন্তান লালন পালনের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু চুম্বন মাঝেমাঝে সেডাকশনের কারণ হয়। মুখের লালার মধ্যে টেস্টাস্টোরণ থাকে __ যা আকাঙখার সেকচুয়াল হর্মোন। মূলত, চুম্বনের মাধ্যমে আপনি কোন একজন পুরুষ বা নারীকে বিছানায় নেয়ার জন্য তার মস্তিষ্কে কেমিক্যাল ইনজেক্ট করে দিতে পারেন। নারী নিশ্বাস ও লালা ঋতুচক্রের সময় পরিবর্তন হয়ে যায়। এই লালাগুলোর মস্তিষ্কে কতটুকু অক্সিটোসিন তৈরি করে তার উপর নির্ভর করে পুরুষ নারীর উর্বরতা সম্পর্কে জানতে পারে। (Vice versus) আর এভাবে চুম্বন হলো এডাপ্টিভ সেকচুয়াল প্রলোভন যা Pair-bond ও Reproduction’ কে সুবিধা দেয়। প্রথম কিস রোম্যান্টিক ভালোবাসা ট্রিগার করে। কারণ নতুন যেকোনো কিছু মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেম ট্রিগার করে। আর আপনি জানেন যে ডোপামিন ফিলিং অব রোম্যান্সের সাথে জড়িত। অতএব প্রথম কিস যদি উত্তেজনাদায়ক হয়, তবে এটি আপনাকে মেটিং এর শুরুতেই_মারাত্মক প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। অতএব আমি মনে করি যে, কিসিং একটি বায়োলজিক্যাল ম্যাকানিজম। এটি যুগল প্রেমের সম্পর্ক প্রবর্তন ও ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এই সহযাত ম্যাকানিজম বিকৃত হয়ে গিয়েছিল আমাদের পূর্বসূরীদের কিছু সোসাইটিতে, যা এখন যৌনসজ্জা হিসেবে ব্যাবহারিত হচ্ছে।



চুম্বন ও মৃত্যু
চুম্বন হতে পারে খুবই ডেঞ্জারাস। এই সামান্য একটি কাজের মাধ্যমে আপনি আপনার সঙ্গী সম্পর্কে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনি যেনো তার মস্তিষ্কের ভেতরের ক্রিয়াকলাপ পরিস্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন, যেখানে রয়েছে তার স্মেল ও টেস্ট। আপনি তাকে শুনবেন এবং অনুধাবনও করতে পারবেন। একটি কিস হতে পারে অন্য একটি মহাবিশ্বের সিগনাল। আপনার প্রেমিক যখন আপনার ঠোঁটে তার ক্ষুদার্থ মুখটি ডুবিয়ে দেবে, দু-ঠোঁটের অন্তরালে উঠিয়ে নেবে জিহবা, আপনার সেন্স থেকে এ সিগনালটি ১২ টি করোটিক নার্ভের মধ্যে ৫’টি নার্ভ গ্রহণ করবে এবং সরাসরি মস্তিষ্কের দিকে ছুটে যাবে। এখানে এসে এ সিগনালটি বিস্ফোরিত হবে, আর সাথেসাথে আপনার মস্তিষ্ক তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে যাবে, জেনে যাবে আপনার খাদ্যাভ্যাস, পানীয় ও স্মোকিং হেভিট সম্পর্কে, আর এ জন্য তাদের State of mind থেকে একটি কিস শুধুমাত্র কিস নয়__ হেলেন ফিশার বলেন। একবার কল্পনা করুন, আমি এ আর্টিকেলের শুরুর দিকে বলেছিলাম, সেক্স হলো এমন একটি প্রসেস যার মাধ্যমে আমরা সঙ্গীর শরীর ও মস্তিষ্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি, সেক্সের মাধ্যমে একজন নারী একজন পুরুষকে যতটা গভীরভাবে জানতে পারে তা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একজন পুরুষের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক খোলা কাগজের মতোই নারীর মস্তিষ্কের নিউরনে প্রকাশ হয়ে যায়, জিভ চুষে বা ঠোঁট সাক করে নারী ও পুরুষ একে অন্যের মস্তিষ্কের সাথে নিউরো-কেমিক্যালি কমিউনিকেট করে, শব্দ ছাড়াই তারা একে অন্যের ব্রেন স্টেট ও শরীরের বিস্তারিত তথ্য গুলো পেয়ে যায়। আর এ জন্য সেক্সের পর দুজনের ভালোবাসা অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে আবার হুট করে অনেক বছরের অত্যন্ত দারুণ একটা সম্পর্ক আকস্মিক হালকা হয়ে যেতে পারে। দেখা যাবে আপনার girlfriend “কে একদিন কিস করেছেন আর সেদিন থেকে আপনার প্রতি তার গুরুত্ব কাজ করছেনা, সে এখন অন্য কোনো ছেলের সাথে ফেচবুকে চ্যাট করে, আপনার কল রিসিভ করতে চায়না, অন্য কোন ছেলের সাথে রিক্সায় ঘুরে বেড়ায়! মূলত, কিস করার সময় আপনার লালা থেকে যে অক্সিটোসিন নির্গত হয়েছিল তা আপনার প্রেমিকার ব্রেন কেমিক্যালি অনুবাদ করে ফেলেছে, আর এজন্য আপনার সম্পর্কে তার থটও চেব্জ হয়ে গেছে। সে জানেনা যে কেন আপনার প্রতি তার মস্তিষ্ক রেসপন্স করেনা, সে এখন শুধু বিরক্ত হয়। আর আপনার থেকে একা থাকতে চায় কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো অন্যদের সাথে সে অনেক কেমিস্ট্রি নিয়ে কথা বলে! তাহলে কী আমরা প্রেমে পড়ার পূর্বেই কিস করবো? সেক্স করে তার মাইন্ড এক্স-রে করে নেবো! রিচার্ড ডকিন্স তার Selfish Gene গ্রন্থে লিখেছেন, লং টার্ম রিলেশনের পূর্বে কিছু প্রাণী সেক্সের মাধ্যমে সঙ্গীর শরীরকে বোঝার চেষ্টা করে! কিন্তু মানুষ কখনো বাচবিচারহীনভাবে সেক্স করে? রোম্যান্টিক এট্রাকশ, প্রেমে পড়া, কোর্টশিপ আরো কত আনুষ্ঠানিকতা মানবীয় সম্পর্কগুলোতে! বলতে পারেন, অন্তত তো কিস করতে পারি? ২০০৭ সালে Sex difference in romantic kissing College Studentsনামক কটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় সেখানে হিউজেস বলেন, প্রথম কিস অনেক সময় ভয়ানক দুর্যোগ নিয়ে আসে। তার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৮ জন পুরুষ ও ১২২ জন নারীর মধ্যে ৫৯% পুরুষ ও ৬৬% নারী বলেছেন প্রথম কিসের পরেই তাদের রোম্যান্স শেষ হয়ে গেছে!! এটি ছিলো The Kiss of Death! সবাই অবশ্যই কিস করতে পছন্দ করেনা। কিছু সংস্কৃতিতে চুম্বন পাওয়ার জন্য নারী ও পুরুষ বিদ্রোহ করে। কুকুর অন্য কুকুরের ঠোঁট ও মুখ চুষে। মোলরা নাক। হাতিরা অন্য হাতির মুখে তাদের ধড় রাখে, আলব্যাট্রোস একসাথে আলতো চুম্বন করে, আমাদের নিকটবর্তী শিম্পাঞ্জি বনোবো, খুব ভালো মৌখিক শিল্প জানে, তারা ফ্রেন্স কিস করে!



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে