শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম, রক্ত দেওয়া হারাম। জায়েজ করার জন্য নয়, জানার জন্য প্রশ্ন করছি- যদি কারোর একান্তই রক্তের প্রয়োজন হয় তখন ঐ ব্যক্তির কি করণীয়? জানালে উপকৃত হতাম। 

উত্তরঃ وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته بسم الله الرحمن الرحيم ____________ • 

*** ইসলামে রক্তদানের নিয়মঃ রক্ত সাধারণত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নাপাক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় (প্রয়োজন ও কোনো কারণ ছাড়া) একজনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা হারাম। রক্ত গ্রহণের বিকল্প নেই, এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে- 


| এক | যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ছাড়া বাঁচানোর কোনো পন্থা থাকে না, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম রক্তদানে উৎসাহ দিয়েছে। 

| দুই | রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা নেই, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়; এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া আবশ্যিক জায়েজ। 

| তিন | যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে; তখন অযথা রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

| চার | যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, বরং শুধু শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্য থাকে; সে অবস্থায় ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক রক্তদান জায়েজ নয়।

 ____________ 

***** রক্ত ক্রয়-বিক্রয়ের বিধানঃ 

রক্ত বিক্রি জায়েজ নেই। কিন্তু যে শর্তের ভিত্তিতে প্রথম দৃষ্টান্তে রক্ত দেওয়া জায়েজ সাব্যস্ত হয়েছে, ওই অবস্থায় যদি কাক্সিক্ষত রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া না যায়, তখন তার জন্য মূল্যে দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে যে রক্ত দেবে তার জন্য রক্তের মূল্য নেওয়া জায়েজ নেই। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৩৮)

 _______________ 

 অমুসলিমের রক্ত গ্রহণের বিধানঃ অমুসলিমের রক্ত মুসলিমের শরীরে স্থানান্তর জায়েজ। মুসলিম আর অমুসলিমের রক্তে কোনো প্রভেদ নেই। কিন্তু শরিয়তসিদ্ধ কথা হলো, কাফের-ফাসেকের স্বভাবে মন্দ ও নিন্দনীয় প্রভাব রয়েছে। কারণ তাদের নাপাক ও হারাম খাদ্য গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে খাবারের প্রভাব রক্ত-মাংসে পড়ে। তাই সে ক্ষেত্রে অমুসলিমের মন্দ স্বভাব-চরিত্রের প্রভাব মুসলিমের স্বভাব-চরিত্রে রক্তের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। (এজন্য শিশুর জন্য পাপাচারী নারীর দুধ পান করা মাকরুহ করা হয়েছে।) সুতরাং এসব ক্ষতির দিকে লক্ষ করে, অমুসলিমের রক্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিত। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৪০)

 _____________ 

 স্বামী-স্ত্রীর রক্তদানের বিধানঃ স্বামীর রক্ত স্ত্রীর শরীরে, স্ত্রীর রক্ত স্বামীর শরীরে প্রবেশ করানো জায়েজ। তারা একে-অপরের জন্য অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মতো। তারা একে-অন্যকে রক্ত দিলে বিয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। বৈবাহিক সম্পর্কও যথারীতি বহাল থাকে। কেননা ইসলামি শরিয়তের সূত্র মতে, রক্ত নেওয়া ও দেওয়ার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মাহরামের সম্পর্ক তৈরি হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, খ-: ২, পৃষ্ঠা: ৪০) 


- মুফতি মুহাম্মাদ ইমদাদুল হক 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ