শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

নিরাপদ যৌনতা হলো এইচ আই ভির মত যৌন রোগ প্রতিরোধের জন্য মানুষের মধ্যে সংঘটিত হওয়া সতর্কতামুলক যৌন কর্ম কান্ড একে সুরক্ষিত যৌনতা বা প্রতিরক্ষামুলক যৌনতা হিসেবেও সুচিত করা হয়। অনিরাপদ অথবা অসুরক্ষিত যৌনতা বলতে সতর্কতা মুলক যৌন কর্মকান্ড বিশেষ করে কনডম ব্যবহার ব্যতিরেকে যৌন ক্রিয়া করাকে বুঝায়।  

নিঃসঙ্গ যৌনতা 

এটি আত্মরতি হিসেবে পরিচিত, নিঃসঙ্গ যৌনাচরণ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। উদাহরণস্বরুপ, হস্তমৈথুন নিজের জননেন্দ্রিয়কে উতেজিত করার একটি সহজ উপায়। যেহেতু অন্য কারো সাথে এখানে শারীরিকভাবে মিলন হয় না, তাই এটি নিরাপদ। মোবাইল যৌনতা ও সাইবারসেক্স এর মত বিষয়ে; সঙ্গীরা যৌন কর্মকাণ্ডে একই কক্ষে না থেকেও মিলিত হতে পারে; যার ফলে তরল পদার্থের বিনিময় না হওয়ায় ঝুঁকি হ্রাস পায়।  

অনাভেদী যৌনক্রিয়া    

যৌন ক্রিয়ার একটা সীমানা যাকে অনেকসময় বহিঃসঙ্গম বলা হয়, যা সংক্রামক রোগ অথবা গর্ভাধান রোধ করার জন্য চর্চা করে উপভোগ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিংটনের শল্যচিকিৎসক জয়চেলিন এল্ডার্স এইধরনের সঙ্গমকে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় কর‍তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়, এমনকি হোয়াইট হাউজও একই ভাবে তার বিরুদ্ধে যায়। যার ফলস্বরুপ ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি ক্লিংটন তাকে চাকরীচ্যুত করে।  

অনাভেদী যৌনক্রিয়া চুম্বন, পরস্পর একত্রে হস্তমৈথুন, শরীরে একে অপরকে কর্ষণ (ঘষা) অথবা নিজে নিজে হস্তমৈথুন করাকে বুঝায়। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ মতে এই ধরনের যৌনাচার গর্ভাধান এবং বেশিরভাগ যৌন সংক্রমক ইনফেকশন হওয়াকে রোধ করে। তবে হার্পস ও জিনিটাল ওয়ার্ট এর মত সংক্রমক চর্মরোগ কে এই ধরনের যৌনাচার আটকাতে পারে না।  

বেষ্টনী প্রতিরক্ষা  

নিরাপদ যৌনাচারণের সময় কিছু প্রতিরক্ষা মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়; যাতে করে রক্ত, যোনিয় ফ্লুইড, সিমেন অথবা অন্য সংক্রামক এজেন্টের সংস্পর্শ এড়ানো যায়। যৌনাচারণের সময় ডিভাইস ব্যবহার করা হলে, একে বলা হয় প্রতিরক্ষামুলক যৌনতা (protected sex)   

  • কনডম যৌনাচারণের সময় শিশ্নকে আবৃত করে রাখে। এগুলো বেশিরভাগই ল্যাটেক্স দ্বারা তৈরী এবং সিন্থেটিক উপাদান পলিইউরেথিন দ্বারা তৈরী করাও হয়ে থাকে।
  • নারী কনডম সঙ্গমের পুর্বে যোনিতে প্রবেশ করানো হয়।
  • ডেন্টাল ড্যাম (সাধারণত দাতেঁর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়) হচ্ছে ল্যাটেক্সের শিট; যা মুখ লেহনের সময় ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহৃত হয়, মুখ ও স্ত্রীযোনিদ্বারের মধ্যে যোনীলেহনের সময় প্রতিরক্ষা হিসেবে। ব্যবহৃত হতে পারে মুখ ও পায়ুর মধ্যে প্রতিরক্ষা হিসেবে মুখ পায়ু যৌনাচারের ক্ষেত্রে।
  • মেডিক্যাল গ্লোভ ল্যাটেক্স, ভিনাইল, নাইট্রিল অথবা পলিইউরেথ্রিন দিয়ে তৈরী। হাতে অনেকসময় অদৃশ্য ক্ষত থাকতে পারে। তখন সেই ক্ষত দিয়ে রোগজীবানু প্রবেশ করতে পারে, বা হাতে ক্ষত থাকায়, তা সঙ্গীর শরীরের প্রত্যঙ্গকে দূষিত করতে পারে।
  • আরো একটি উপায় আছে, রোগ সংক্রমণ থেকে বাচাঁর আর তা হলো, পরিস্কার ডিলডো এবং অন্যান্য যৌন খেলনা ব্যবহার করা।

যখন ল্যাটেক্স বেষ্টনী ব্যবহার করা হয়, তৈল নির্ভর লুব্রিকেশন ল্যাটেক্সের গঠনকে ভেঙে দিতে পারে এবং যে কারণে এটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।    কন্ডম (পুরুষ অথবা নারী) ব্যবহার করা হয়, এসটিআইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য, এবং গর্ভনিরোধের জন্য কণ্ডম ছাড়াও স্পার্মিচাইড ব্যবহার করা হয়।[১২] যাইহোক, যদি দুইটা কন্ডম একত্রে ব্যবহার করা হয়, (যেমন পুরুষ কন্ডম, পুরুষ কন্ডমের উপরে অথবা নারী কন্ডমের অভ্যন্তরে পুরুষ কন্ডম) তাহলে এই সম্ভাবনা আছে যে, কন্ডম ব্যবহারে কোনো ফলই হবে না।[১৩][১৪]    প্রতিরক্ষা বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবহার করতে চাইলে, তা পরিষ্কার রাখতে হবে। তার পৃষ্ঠতল পরিষ্কার রাখতে হবে, যত্ন করতে হবে।    ল্যাটেক্স কণ্ডমের উপর পরীক্ষার পর জানা গিয়েছে যে, যৌনতার চর্চা করা সময়, তা ভাঙা বা ছেদ হবার পরিমাণ ১.৪৬% থেমে ১৮.৬০% হয়।[১৫] কন্ডম অবশ্যই কোনো শরীর নিঃসৃত তরল বিনিময় হবার পূর্বে পরিধান করতে হবে এবং তা অবশ্যই মুখ লেহনের সময়ও ব্যবহার করতে হবে।[১৬]    নারীর কন্ডম ২টি নমনীয় পলিইউরেথ্রিন রিং দ্বারা তৈরী এবং একটি লুস ফিটিং পলিইউরেথ্রিন কোষ থাকে।[১৫] ল্যাবটেস্টের মতে, নারীর কণ্ডম শরীরের তরল বিনিময়ে বেশ ফলপ্রসূ একই সাথে ফলপ্রসূ এইচআইভি ও এসটিয়াই প্রতিরোধে। কিছু গবেষনা দেখিয়েছে যে, ৫০ থেকে ৭৩ শতাংশ নারী যারা এই কণ্ডম ব্যবহার করে, তারা পুরুষের চেয়ে বেশি আরাম অনুভব করে। কিন্তু নারীদের এটি ব্যবহারে অনীহা দেখা যায়; কারণ এর মুল্য পুরুষের কণ্ডমের চেয়ে বেশি।। প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে; যাতে নারীর কন্ডম একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। গবেষণা থেকে দেখানো হয়েছে যে, নারীর কণ্ডমে যেহেতু পলিইউরেথ্রিন ব্যবহার করা হয়, তা ৫ বারের মত ব্যবহার করা যায়। তথাপি, গবেষকরা নারীর কণ্ডম একবারই ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন  

পূর্ব প্রতিরক্ষা 

পুর্ব প্রতিরক্ষা হচ্ছে এমন একপ্রকার ড্রাগের ব্যবহার; যার ফলে, এইডস/আইচআইভি না থাকলেও ব্যক্তি এটি গ্রহণ করে; যাতে তার রোগটি না হয়। এটি সাধারণত এইচআইভি নেগেটিভ ব্যক্তিরা গ্রহণ করে; যাতে করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এটি অন্য যৌন রোগ প্রতিরোধ করতে বা গর্ভধানকে নিরোধ করতে পারে না।      

সাম্প্রতিক সময়ে যে কোনো স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো ট্রুভাডা নামক ড্রাগ ব্যবহারকে অনুমোদন করে। ডিজিজ কন্ট্রোল সংস্থা বলতে গিয়ে বলেছে, এইচআইভি প্রতরোধের জন্য এটি শক্তিশালী ড্রাগ। যা কন্ডমের সাথে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু যে এই ড্রাগ গ্রহণ করা শুরু করে, তাকে প্রতিদিনই এটি নিতে হয় এবং প্রতি ৩ মাস পরপর নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়।  

চিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে অনেকে কণ্ডম ব্যবহার না করে, শুধুমাত্র এই ড্রাগ গ্রহণ করে; তারা সাধারণত অনিরাপদ সঙ্গম করতে আগ্রহী হয়ে থাকে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে সামাজিক গ্রুপ আছে, যেখানে একপক্ষ একে সমর্থন করে এবং অপরপক্ষ করে বিরোধিতা।  

অন্যান্য সতর্কতা    

পুর্বসতর্কতা যৌন রোগ নিয়ন্ত্রণে শতভাগ কার্যকরী এমনটা বলা যায় না, তবে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অন্তত কিছু সুরক্ষা দেয়।

  • কিছু ভাইরাসগত সংক্রমনের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকরী। সবচেয়ে সাধারণ ভ্যাকসিন হলো,হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন ও এইচপিভি ভ্যাক্সিন, যা জরায়ুমুখ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়।
  • পুরুষের মুসলমানী এবং এইচআইভি : কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে; পুরুষের মুসলমানী এইচআইভির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারী-পুরুষে এইডস সংক্রমণ হ্রাসের জন্য এই কর্মপন্থা বাস্তবায়নে আহ্বান জানিয়েছে। আফ্রিকান কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে; পুরুষের মুসলমানী, তাদের এইডসের ঝুকিঁ ৬০ শতাংশের উপর হ্রাস করতে পারে। কিছু গ্রুপ এই গবেষনাকে প্রত্যাখান করেছে। কন্ডমের ব্যবহার ও স্বভাবের কিছু পরিবর্তন; যৌন রোগ হ্রাসে অনেক বেশি ফলপ্রসু ও সহজলভ্য মুসলমানির মত অপারেশনের তুলনায়;- এমনটাই উপ-সাহারীয় আফ্রিকার কিছু স্থানে দেখা গিয়েছে।
  • কিউবার পর্ন অভিনেতাদের পুনরাবৃত্তভাবে এসটিআই পরীক্ষা করা বাধ্যতামুলক। এইডসের মহামারীর পূর্বে কিউবা এই কার্যাবলী করতে চাপ প্রয়োগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের পর্ন চলচ্চিত্র শিল্পে, কিছু কোম্পানী ক্লামিডিয়া, এইচআইভি, গনোরিয়া পরীক্ষা দেখা ছাড়া অভিনেতা ভাড়াই করে না। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল যদি ৩০ দিনের চেয়ে বেশি পুরাতন হয় বা অন্যান্য সংক্রামক রোগ যেমনঃ এসটিআইয়ের পরীক্ষার ফলাফল যদি ৬ মাসের বেশি পুরাতন হয়, তাহলে সে ফলাফল গ্রহণযোগ্যই হবে না। এইম মেডিকেল ফাউন্ডেশনের দাবী অনুসারে; এর ফলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত যৌন রোগ সংক্রামকের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে। সাবান ও পানি দিয়ে যোনীতে ডুচিং করলে (ধৌত করলে) তা ভ্যাজিনাল ফ্লোরার (যোনীতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া; সাধারণ ভ্যাজিনাল ফ্লোরা যোনীকে স্বাস্থ্যকর রাখে) কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করে এবং তা সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • একগামী অথবা বহুগামী, উভয়ই যৌন রোগের প্রকোপে থাকতে পারে, কারণ, তাদের সঙ্গী যদি অবিশ্বাসযোগ্য হয়, বা বিভিন্ন ড্রাগ যা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া হয়; সেসব ব্যবহার করে; তবে তাদের, যৌন রোগ থাকার একটা আশঙ্কা থাকে।
  • যারা বহুগামী, তাদের যৌনসঙ্গী বাছ বিচার না করে নির্বাচন করা উচিত নয়। তাদের যৌন সঙ্গীর পরিমাণ কমানো উচিত। তাহলেই এসটিআই হবার সম্ভবনা হ্রাস পায়। একই সাথে তাদের সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া উচিত; যারা বিশ্বাসযোগ্য। এ উপায়টি বিভিন্ন পর্ন অভিনেতা ও বহুগামী ব্যক্তি গ্রহণ করে।
  • কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে যৌন সংক্রামক রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।যেমনঃ বয়সের বিভেদ যদি পাচঁ বছরের অধিক হয়, সঙ্গীর যদি অতীতকাল থেকে এসটিআই বহন করে থাকে;অন্য অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অপর সঙ্গীরও যৌন রোগ তৈরীর সম্ভাবনা হয়।
  • একজন ব্যক্তির সাথে যৌনাচারণ করাটাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। এতে করে সঙ্গী; সঙ্গমের পুর্বে কোন ধরনের নিরাপত্তা নিবে, তা আগে থেকে আলোচনা বা যোগাযোগের মাধ্যমে ঠিক করা রাখে।
  • যদি একজন ব্যক্তি যৌন ভাবে অনেক সঙ্গীর সাথে সঙ্গমে সক্রিয় থাকে তবে নিয়মিত চিকিৎসকের দ্বারা যৌন কোনো রোগ আছে কি না; তা পরীক্ষা করা উচিত। কোনো ধরনের অসচরাচর লক্ষণ দেখলে তা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।এইচআইভি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের লক্ষণ সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ নাও পেতে পারে, একে বলে নলক্ষণায়িত বৈশিষ্ট্য; এমতাবস্থায় চিকিৎসকের কাছে না গেলে শারীরিকভাবে হিতে বিপরীত হতে পারে। এন্টিবায়োটিক বিরোধী রোগ তৈরী হয়ে যাওয়ায়; অনেক সময় যৌন রোগের চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয় না। তখন অতিরিক্ত অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।  
  • সূত্রঃ উইকিপিডিয়া 
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ