শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

আমাদের রোজকার জীবনে গুটিশুটি ফিরে চলা আদুরে প্রাণী বিড়াল। ছোট্ট ছোট্ট বিড়াল ছানা খেলে বেড়ায় আমাদের ঘরে-বাইরে। ছোটরা তো বটেই, আমরা বড়রাও সুযোগ পেলে আদর করে দিই এই তুলতুলে ছানাদের। কিন্তু এই আদরের ছলে হঠাৎ করেই বিড়ালের ধারালো নখ লেগে কেটে যেতে পারে হাত, ছড়ে যেতে পারে চামড়া। আর আপনি ওদের আরেকটু খেপিয়ে দিলে কামড়ে রক্তারক্তি কান্ডও হয়ে যেতে পারে। বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড়ালে অনেকেই ভীত থাকেন, ভাবেন জলাতঙ্ক হতে পারে- তাই ইনজেকশন নিতে ছুটে যান ডাক্তারের কাছে। আবার অনেকে ভয়াবহ কামড়কেও পাত্তা না দিয়ে ঘরে বসে থাকা পক্ষপাতি। আসলে কী করা উচিৎ তা জেনে নেওয়া যাক।


প্রথম ধাপ- দেখুন আপনি কতখানি আহতঃ
এটআ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিড়ালের আঁচড় চামড়ার একেবারেই উপরিভাগে থাকে, রক্তও গড়িয়ে পড়ে না। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ভয় না পেলেও চলে।

আবার কিছু কিছু সময় দেখা যায় বিড়ালের আঁচড় গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে- এক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। আর বিড়াল কামড়ালে তা নিয়ে অবশ্যই অবহেলা করবেন না।
দ্বিতীয় ধাপ- সাবান পানির ব্যবহারঃ
সাবান-পানি, শুনতে হাস্যকর মনে হতে পারে অনেকের কাছে, কিন্তু সত্য হলো জলাতঙ্কের জীবানু (Rabis Virus) কে ঠেকাতে যে কোন ধরণের এন্টিবায়োটিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সাবান পানি। এই ভাইরাসের চারদিকে স্নেহ-জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে যা সাবানের মাধ্যমে খুব সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়- যা অনেক এন্টিবায়োটিক সলিউশন করতে পারে না। তাই যত গভীর ক্ষতই হোক না কেন তা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
তৃতীয় ধাপ- এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও রক্তপাত প্রতিরোধঃ
এইসব ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয় অন্যসব ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমন ঠেকাতে। এজন্য তরল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ভালো, যেমনঃ স্যাভলন, ডেটল ইত্যাদি। তবে ১০ সেকেন্ড ধরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিশন বা পভিসেপ (আয়োডিন সলিউশন) ব্যবহার করলে তার উপকারিতা হবে সবচেয়ে বেশি। যদি খুব বেশি রক্ত পড়ে তবে রক্তপাত ঠেকাতে ছোট ব্যান্ড এইড বা গজ ব্যবহার করতে পারেন; তবে লক্ষ্য রাখুন যেন রক্ত বন্ধ হলেই ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়। কারণ ক্ষতে বাতাস আসা-যাওয়া করলে সেখানে টিটেনাসের (ধনুষ্টংকার) জীবানু বাসা বাঁধার সুযোগ পায় না। এন্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম না দেওয়াই ভালো কারণ ঠিকমত পরিষ্কার না হলে অনেক সময় ক্ষতে জমে থাকা ময়লা থেকে ক্রিমের নিচে বাতাসহীন পরিবেশে টিটেনাসের জীবানু বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

চতুর্থ ধাপ- সংক্রমনের চিহ্নগুলো লক্ষ্য করুনঃ
যদি ক্ষত খুব গভীর নাও হয় তবে লক্ষ্য করুন এতে অন্য জীবানু সংক্রমন করছে কি না। সংক্রমন (ইনফেকশন) বোঝার উপায় হলো- ক্ষতস্থান যদি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, তীব্র ব্যথা করে বা ওই স্থান থেকে ক্রমাগত বিরামহীনভাবে রক্ত চুঁইয়ে পড়ে তবে বুঝবেন আর দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাবার সময় হয়েছে।
পঞ্চম ধাপ- জ্বর এলো কী না লক্ষ্য করুনঃ
বিড়ালের আঁচড়ে বড়দের কিছু না হলেও অনেক সময় বাচ্চাদের জ্বর হয়। বিশেষ ধরণের এই জীবানু ঘটিত এই রোগকে বলে "ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ"। এসময় বাচ্চার কাঁপুনি দিয়ে বা কাঁপুনি ছাড়াই জ্বর হতে পারে, আক্রান্ত স্থানে ছোট ফোসকা পড়তে পারে, পিঠ ব্যথা বা পেট ব্যথা থাকতে পারে। বিড়ালের আঁচড়ের সাথে সাথে না হলেও সাত থেকে চৌদ্দদিনের মাঝে এমন সব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।
ষষ্ঠ ধাপ- গভীর ক্ষত বা মুখে ক্ষত হলেঃ
যে ক্ষত খুব গভীর বা যদি ক্ষত মুখে হয় তবে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার আপনার ক্ষতটি ভালো করে ধুয়ে দেবেন ও প্রয়োজন হলে আরও চিকিৎসা দেবেন।
বাড়তি সচেতনতাঃ
উপরোক��ত বিষয় ছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া ভাল। যেমনঃ
-আপনার বিড়ালে এলার্জি থাকলে বিড়াল থেকে দূরে থাকুন। কারণ সেক্ষেত্রে বিড়ালের আঁচড়ে আপনার চামড়ার বেশি ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও বিড়ালের লোম থেকেও এলার্জিকদের হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
- সবাইকে বিশেষত গর্ভবতী মায়েদের বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে দূরে রাখুন। কারণ এর মাধ্যমে টক্সোপ্লাজমোসিস নামে ভয়াবহ রোগ হতে পারে। টক্সোপ্লাজমোসিসে গর্ভবতী মায়ের ফ্লু- এর মত লক্ষণ দেখা দিলেও গর্ভের বাচ্চার এনকেফাইলাইটিস ( মস্তিষ্কে সংক্রমন), বা বাচ্চার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কান, চোখ ইত্যাদিতে দেখা দিতে পারে জন্মগত ত্রুটি। তাই এই ব্যাপারেও সাবধান থাকা অত্যন্ত জরুরি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ