ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ কি?
ডিমেনশিয়া একটি মানসিক রোগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব লোপ পায় এবং রোগ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং হঠাৎ করেই অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষিত হয়। মস্তিষ্কের কোষ সংখ্যা (নিউরন) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে শারীরিক রোগব্যাধি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ভন্ডুল করে দেয়, একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় স্মৃতিভ্রং বা ইংরেজি পরিভাষায় ডিমেনশিয়া বলে। স্মৃতিভ্রংশের সবচাইতে প্রচলিত রূপ হল আলঝেইমার্স রোগ।

ডিমেনশিয়া প্রকারভেদ:
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের বিভিন্ন প্রকারভেদ :

  • আলঝেইমার্সজনিত ডিমেনশিয়া যা বংশগত
  • ভাসকুলার ডিমেনশিয়া
  • লিউই বডি ডিমেনশিয়া
  • ফ্রন্টো টেম্পোরাল ডিমেনশিয়া
  • পারকিনসন্সজনিত ডিমেনশিয়া।


ডিমেনশিয়ার সাথে যুক্ত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক বিস্তার খুবই ধীরে হয়, এমনকি মাস কিংবা বছর ধরেও হতে পারে। ভুলে যাওয়ার কারণে রোগী হতাশা, নিদ্রাহীনতা ও অন্যান্য সমস্যায় ভোগে এবং আস্তে আস্তে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

সাধারণভাবে যুক্ত লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া।
  • ব্যক্তিত্ব এবং মেজাজ পরিবর্তন।
  • চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া।

প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গগুলি: বিষন্নতা এবং উদাসীনতা।
পরবর্তী পর্যায়ের উপসর্গগুলি: অধীরতা, রাগের প্রবণতা, বিভ্রম এবং ভুল বকা।
অন্তিম পর্যায়ের উপসর্গগুলি: অসংযম, চলাফেরায় অসুবিধা, খাবার গিলতে সমস্যা এবং পেশিতে খিঁচুনি।

ডিমেনশিয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
স্নায়ু কোষগুলির ব্যাপক ক্ষতি ডিমেনশিয়ার উপসর্গগুলি সৃষ্টি করে। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল আলঝেইমার্স রোগ যা স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির ঘাটতির সাথে যুক্ত।

ডিমেনশিয়ার অন্যান্য সাধারণ কারণগুলি হল:

  • ভাসকুলার (সংবহনতান্ত্রিক) ডিমেনশিয়া: এটি মস্তিষ্কে সরবরাহকারী রক্তবাহী কোষগুলির ক্ষতির ফলে ঘটে।
  • লিউই বডি ডিমেনশিয়া: লিউই বডিগুলি অস্বাভাবিক প্রোটিনের বোঝাই হয় যা মানুষের বৌদ্ধিক কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।
  • ফ্রন্টো টেম্পোরাল ডিমেনশিয়া: মস্তিষ্কের এলাকার স্নায়ু কোষগুলির অবনতি যা ব্যক্তিত্ব, ভাষা এবং আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মিশ্র ডিমেনশিয়া: গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ বছর এবং তার বেশি বয়সী মানুষের উপরে উল্লিখিত ডিমেনশিয়ার মিশ্র প্রভাব রয়েছে।
  • অন্যান্য বিরল কারণগুলি: হান্টিংটনের রোগ, পারকিনসনের রোগ, আঘাতমূলক মস্তিষ্কের ক্ষত, বিপাকীয় এবং এন্ডোক্রাইন রোগ, ওষুধগুলি থেকে বিপরীত প্রতিক্রিয়া, বিষ এবং মস্তিষ্কে টিউমার।


ডিমেনশিয়া রোগের হারঃ
মূলত প্রবীণ ব্যক্তিরাই এ রোগে ভোগেন। ৬০ বছরের কম রোগীদের হার ০.১ শতাংশ, ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ১ শতাংশ, ৬৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ৩ থেকে ১১ শতাংশ এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ২৫ থেকে ৪৭ শতাংশ।

ডিমেনশিয়া কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডিমেনশিয়ার নির্ণয়ের জন্য রোগীর মেডিকেল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

পরামর্শের সময় বৌদ্ধিক কার্যকারিতার মূল্যায়ন করা হয়, কিন্তু অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনও হতে পারে।

মিনি-মেন্টাল স্টেট এক্সামিনেশন (এমএমএসই) হল বৌদ্ধিক কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত পরীক্ষা।

প্রয়োজন হলে, আরও অনুসন্ধান অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন:

  • রক্ত পরীক্ষা।
  • মস্তিষ্কের এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
  • ইইজি (ইলেক্ট্রোএন্সেফালোগ্রাম)।


চিকিৎসা:
কিছু কিছু ওষুধ যেমন donepezil, nemantidine, এবং tacrine রোগীর চিন্তাশীলতা ও শনাক্তকরণ ক্ষমতা বাড়ায়। এসব ওষুধ স্মৃতিভ্রংশের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অনেকে ভেবে থাকেন যে ডিমেনশিয়া হলে আর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো হয় না। কিন্তু এটি ভুল ধানণা। এ রোগটি হলে তার অবস্থার উন্নতি ধীরে ধীরে হয়ে থাকে। তবে স্মৃতিভ্রংশ রোগটি অত্যান্ত জটিল হয়ে গেলে রোগীর সেরে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে