ফেসিয়াল প্যারালাইসিস (মুখ বেঁকে যাওয়া বা মুখের প্যারালাইসিস) কি?
হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া এক ধরনের প্যারালাইসিস। এতে করে মুখমণ্ডলে মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এটা এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা বা স্নায়ুরোগ, যা ফেসিয়াল পালসি বা মুখের পক্ষাঘাত (ফেসিয়াল প্যারালাইসিস) নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে একে বেলস পালসিও বলা হয়। এর ফলে, রোগী মুখ নাড়াচাড়া করে খেতে পারে না বা কথা প্রকাশ করতে পারে না। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে মুখের একপাশের পেশীগুলি হঠাৎ শক্ত হয়ে যায় এবং অবশ হয়ে যায়। এতে ব্যক্তি মুখের একটি অংশ নাড়াতে পারেন না। মুখের ওই অংশে হাসতে বা চোখ বন্ধ করতেও সমস্যা হয়।
আমাদের ৭ তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। এটি যখন আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন তাকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা পালসি বলে। জন বেল নামের এক ভদ্রলোক এই রোগটি প্রথম আবিস্কার করেন সেজন্য একে বেলস পালসিও বলে।
ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আক্রান্ত রোগীর মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যায়
- চোখের পাতা বন্ধ করতে বা পিট্ পিট্ করতে না পারা
- চোখ দিয়ে পানি পড়ে
- মুখ নাড়তে না পারা
- মুখ নিচের দিকে ঝুলে যাওয়া
- মুখের পরিকাঠামোর ভারসাম্য হারানো
- ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে, রোগী তার ভ্রু কোঁচকাতে পারেন না
- কথা বলতে ও খাবার খেতে অসুবিধা হয়
- পুরো মুখবায়বের নড়াচড়া করানোয় সমস্যা।
- কুলি করতে গেলে অন্য পাশে চলে যায়
মুখ ব্যবহার করে অভিব্যক্তি প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে, এটি সাধারণত রোগীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। সেই কারণে, কার্যকর ফলাফল দেখতে চিকিৎসা অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা বেলস পালসি কাদের বেশী হয়?
এটি যেকোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগটি বেশী দেখা যায়।
ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হঠাৎ হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও হতে পারে। ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মুখের স্নায়ুতে সংক্রমণ অথবা প্রদাহ
- মাথায় টিউমার
- ঘাড়ে বা গলায় টিউমার
- মস্তিস্কের স্ট্রোক
- মানসিক আঘাত বা মানসিক চাপ
- মধ্য কর্নে ইনফেকশন
- ঠান্ডা জনিত কারনে।
এটি অন্যান্য কারণেও ঘটতে পারে; যেমন;
- মুখে আঘাত লাগা
- লাইম রোগ সংক্রমণ (পোকার দ্বারা মানুষের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াগত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে)
- ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
- ভাস্কুলাইটিসের মতো অটোইমিউন রোগগুলি
- ভুলভাবে করা দাঁতের চিকিৎসা যা কিছু মুখের স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
- বিরল ক্ষেত্রে, জন্মের সময় শিশুগুলিও মুখের প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারে (যা পরবর্তীকালে সেরে যায়)
ফেসিয়াল প্যারালাইসিস কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
আপনি যদি উপরের উল্লিখিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে আপনাকে অবশ্যই অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। মুখে অসাড় অবস্থা এবং দুর্বলতা ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক উপসর্গ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে ও রোগীর ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করতে পারেন, তবে অনেক সময় কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন:
- রক্ত পরীক্ষা (রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা জানার জন্য)
- লাইম টেস্ট
- স্নায়ু ও পেশীর কাঠামো পরীক্ষা করার জন্য ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (ইএমজি)
- এক্স-রে অফ টি এম (টেম্পরো-মেন্ডিবুলার) জয়েন্ট
- মাথার সিটি স্ক্যান/এমআরআই।
রোগের নির্ণয়ের পরে, ডাক্তার বিভিন্ন বিষয় (যেমন রোগীর বয়স, কারণ এবং রোগের তীব্রতা) বিবেচনা করার পরে আপনাকে প্রাসঙ্গিক চিকিৎসার বিকল্পগুলি উল্লেখ করবেন। ঔষধ কারন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন, তবে সবক্ষেত্রেই ঔষধের পাশাপাশি মুল চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
এই রোগে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্লান করে থাকে তার মধ্যে-
- প্রোপ্রাইওসেপ্টিভ নিউরো মাস্কুলার ফ্যাসিলিটেশন
- ইনফ্রা রেড রেডিয়েশন থেরাপি
- ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি
- এক্টিভ ও প্যাসিভ ফ্যাসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ
- স্পীচ রি-এডুকেশন থেরাপি
- ব্যালুনিং এক্সারসাইজ
- রিঙ্কলিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি
তবে এই রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২ থেকে ৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।