হাইপারক্যালসেমিয়া কি?
ক্যান্সার রোগীদের বিপাকজনিত বিভিন্ন সমস্যা হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা হাইপারক্যালসেমিয়া। ক্যান্সার রোগীদের এটি অনেক বেশী দেখা যায়। তবে শুধু ক্যান্সারের রোগীরই নয়। অন্যদেরও এই সমস্যাটা হতে পারে।

হাইপারক্যালসেমিয়া বলতে সংশোধিত মোট সিরাম ক্যালসিয়ামের মানকে বোঝায় যা স্বাভাবিক স্তরের থেকে উপরে হয় বা হাইপারক্যালসেমিয়ার ক্ষেত্রে, রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অত্যধিক ক্যালসিয়াম শরীরের মূল অঙ্গ যেমন হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি করে এবং হাড়গুলোকে দুর্বল করে।

হাইপারক্যালসেমিয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
সাধারণ উপসর্গগুলি:

  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পদ্ধতি: অসাড়তা, ঝিমুনি, কোমা, মানসিক পরিবর্তন, সাইকোসিস।
  • পাচন পদ্ধতি: অ্যানোরেক্সিয়া, অ্যাসিড পেপ্টিক রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্যানক্রিয়াটাইটিস।
  • কিডনিতে: নেফ্রোলিথিয়াসিস, পলিউরিয়া।
  • মাস্কুলোস্কেলেটাল পদ্ধতি: আর্থ্রালগীয়া, মায়াল্জিয়া।
  • সংবহনতান্ত্রিক পদ্ধতি: হাইপারটেনশন।
  • বমিভাব, বমি, পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়া, বার বার প্রসাব হওয়া, পানি স্বল্পতা, তন্দ্রা ভাব, ঘনঘন পিপাসা লাগা, দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি।


মাঝে মাঝে হওয়া তীব্র উপসর্গগুলির মধ্যে থাকতে পারে:

  • সাইনাস।
  • হার্টের পরিবহনে ব্যাঘাত।
  • এমন কিছু উপসর্গ যা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের অনুরূপ।


হাইপারক্যালসেমিয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
হাইপারক্যালসেমিয়ার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • গ্রন্থির বড় হয়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত সক্রিয় প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি।
  • প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির একক বৃদ্ধির কারণে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন।
  • ফুসফুস এবং স্তন ক্যান্সারের মতো ক্যান্সার যা ক্যান্সারের মেটাস্ট্যাটিক বিস্তারের সাথে হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  • যক্ষ্মারোগ এবং সারকয়েডোসিসের মত রোগগুলি।
  • বংশগত বিষয়গুলি।
  • অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টস, লিথিয়াম ও ডিউরেটিক ওষুধ নেওয়া।
  • অচলতা যেখানে একজন শয্যাশায়ী বা অনেক সপ্তাহ ধরে নিষ্ক্রিয় থাকে।
  • দীর্ঘকালস্থায়ী কিডনির রোগ।
  • প্রবল ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)।
  • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলাদের হাইপারক্যালসেমিয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে।


হাইপারক্যালসেমিয়া কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
হাইপারক্যালসেমিয়া ডায়াগনসিসের জন্য খুব ভালভাবে ইতিহাস জেনে নিতে হবে। তবে ইতিহাস এবং রুগী পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। শতভাগ নিশ্চিত হবার জন্য ক্যালসিয়ামের পরিমান রক্তে মাপা হয়।

আপনার ডাক্তার কোন সন্দেহজনক অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য অবস্থা নির্ণয়ের জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষার সুপারিশ করতে পারেন। যেমন:

  • সিরাম ক্যালসিয়াম, প্যারাথাইরয়েড হরমোন এবং ভিটামিন ডি-র মাত্রার মূল্যায়ন করার জন্য পরীক্ষা।
  • প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম মাত্রা মূল্যায়ন করার জন্য পরীক্ষা।


রক্তে ক্যালসিয়াম খুব বেশী হলে বিপদ হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডাক্তার ওষুধ খেতে পরামর্শ দিতে পারেন। ০ দশমিক ৯% স্যালাইন শিরায় দিলে অবস্থার উন্নতি হয়। শিরায় বিসফসফোনেট দিলে রক্তে ক্যালসিয়াম কমে যায়। বিসফসফোনেট এর মধ্যে জোলেনড্রানিক এসিড এবং পামিড্রোনেট ব্যবহার করা হয়। যদি ক্যালসিয়াম খুব বেড়ে যায় তবে মাংসে বা চামড়ার নিচে ক্যালসিটোনিন দেয়া হয়। কিডনির ব্যার্থতার ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার ডায়ালিসিস করার পরামর্শ দিতে পারেন। ক্যান্সার রুগীদেও হাইপারক্যালসেমিয়া প্রায়ই হতে দেখা যায়। তাই চিকিৎসার সময়ে বিষয়টি স্মরণে থাকা উচিত।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে